অভিমানে তুমি,পর্বঃ১১

0
2502

অভিমানে তুমি,পর্বঃ১১
ফারিয়া আফরিন ঐশী

সাদি সোফাতে বসে ল্যাপটপের কি-বোর্ড এ ব্যস্ত ভঙ্গিতে আঙ্গুল নড়াচড়া করছে।তীক্ষ্ণ চোখ দুটো ল্যাপটপের স্ক্রিনে আবদ্ধ।কাজের ফাঁকেই দরজা ঠেলে ভেতরে এলো মিথি।মিথিকে চোখ তুলে দেখেই সাদি ল্যাপটপ টা সোফাতে রেখে উঠে গিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল–কি রে জান!!!মুখটা ওমন ভার কেন??
মিথি মুখে ভারী ভাবটা রেখেই বলল–সাদি ভাই,দেখো বাইরে কি দারুণ ওয়েদার।।চলো না ঘুরতে যাই।।
সাদি হুট করে মিথির কোমড় ছেড়ে শক্ত কন্ঠে বলে–থাপড়ে তোর দাঁতের পাটি খুলে দিবো, অসভ্য মেয়ে!!কোন জন্মের ভাই মনে তোর আমাকে!!!
মিথি–না মানে ওই আরকি!!
সাদি–আমাকে ভাই ডাকিস ইন ফিউচার আমাদের বাচ্চাকে তো তুই আমায় মামা ডাক শিখাবি।ফাজিল।।
মিথি ভ্রুকুটি করে বলে–নাহ নাহ!!তা কেনো!!
সাদি–তাহলে ডাফারের মতো ভাই ডাকিস কেনো??তোকে কয়েক হাজার বার বারণ করেছি তাও তোর কানে যায় না।
মিথি নাক ফুলিয়ে বলে–আমাকে এখন ঘুরতে না নিয়ে গেলে আমি তোমাকে সাদি ভাই ই বলে ডাকবো সাদি ভাই।
সাদি বিরক্ত হয়ে বলে–উফফ!!!তুই জানিস এই বৃষ্টি র ছিপছিপে ওয়েদার আমার জঘন্য লাগে।
মিথি–ওসব আমি জানি না।।ঘুরতে না নিয়ে গেলে ভাই ই ডাকবো।।।
সাদি –ওকে!!যা রেডি হয়ে আয়,,আমি বাইরে আছি।।
মিথি সাদির সম্মতি পেয়ে লাফাতে লাফাতে চলে যায়।
সাদি ও একটু ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে দেখে তার মা টিভি দেখছে।
সায়মা–কি রে!!বেরোচ্ছিস??
সাদি–কি আর করব বলো??তোমার বৌমা বায়না ধরল এখনই ঘুরতে যাবে।তাই অগত্যা —
সায়মা–তা বেশ!!ও তো তেমন বের হয় ই না।যা ওকে নিয়ে একটু ঘুরে আয়।
সাদি–হুমম।।আমি বাইরে আছি।তোমার বৌমাকে দ্রুত পাঠাও।
সায়মা–আচ্ছা,,তুই যা।।
সাদি অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ২০ মিনিট পর মিথি বের হলো।সাদিকে দেখে এগিয়ে এসে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল–আমরা কই যাচ্ছি সাদি ভাই??
সাদি চোখ গরম দিয়ে বলে– জাহান্নামে।।
মিথি কান ধরে বলে– সরি!!আর হবে না!!
সাদি–এই আর হবে না কথাটা লাস্ট ৪ মাসে ৪০০০ বার বলেছিস।।এবার তোকে আমার স্টাইলে ঠিক করবো।।বি রেডি।।
বলেই ২ জনে গাড়িতে উঠে সাদি গাড়ি স্টার্ট দেয়।

হ্যাঁ ৪ মাস কেটে গিয়েছে,,,

অন্যদিকে,,
কানাডার একটি ব্যয়বহুল ফ্লাটের একটি রুমের জানালার সামনে গরম ধোঁয়া ওঠা কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ইশান।।ফোনে টুন করে আওয়াজ হতেই কফিটা রেখে ফোন চেক করে।ফোনে দেখে সাদি আর মিথি একটি পার্কে বসে আছে।সাদির কাঁধে মিথির মাথা রাখা।।আর এক হাতে সাদি মিথির কোমড় জড়িয়ে রেখেছে।ছবিটা দেখে ইশান একটা ডেভিল হাসি দিয়ে ফোনটা বিছানাতে ফেলে,আবার কফি হাতে নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে–তুই কি ভেবেছিস সাদি!!আমার দেশে ফেরার সব রাস্তা বন্ধ করে তুই খুব সুখে থাকবি।।৪ মাস ওয়েট করেছিস আর একটু ওয়েট কর।।বড় ধামাকা হজম করার জন্য তৈরি হয়ে যাহ!!!বলে ইশান কফিটা শেষ করে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ইভানের কাছে যায়।জ্বরটা চেক করে দেখে যে জ্বর নেই।আর ছোট্ট ইভান সে তো গভীর ঘুমে ব্যস্ত।
তারপর ইশান ছেলেকে ভালো করে কম্বল দিয়ে ঢেকে ওয়ামরুমে চলে যায়।
৪ মাস আগে,মিথি সাদিকে ভালোবাসার কথা জানানোর পর, সাদি বুঝতে পেরেছিল যে ইশান এবার মিথিকে অ্যাটাক করবে তাই ইভান কে খুঁজে বার করে জানতে পারে ইভানকে ইশান বেশ ভালো রেখেছে।।সপ্তাহ খানিক পর ইভান একটু অসুস্হ হয় ওই অসুস্থতা র ফেক রিপোর্ট দেখে ইশান ছেলেকে নিয়ে রওনা হয় কানাডাতে।।এতে করে সাদি দ্রুত ইশানের পার্সপোর্ট সিল করার ব্যবস্হা করে দেয় যাতে সব কিছু সাদির কন্ট্রোল এ আসার আগে ইশান ফিরতে না পারে।।ইশান কানাডা যাওয়ার ২ দিনের মধ্যেই ব্যাপারটা বুঝে যায় কিন্তুুু দেড়ি হয়ে যাওয়া আর দেশে ফিরতে পারেনি।।তবে ইশান চেষ্টা করছে দ্রুত ফেরার।
বর্তমান,,
সাদি-মিথি বেশ ঘোরাঘুরির পর বাড়িতে ফিরল।ফ্রেস হয়ে নিচে নামতেই সায়মা আহমেদ তাদের বলেন তার পাশে বসতে।।তারপর,,
সায়মা–সাদি-মিথি দেখ ৪ মাস হয়ে গিয়েছে।। এখন আমি চাই খুবই দ্রুত তোদের বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলতে।
সাদি–আমার তো কোনো অসুবিধা নেই,,আমি অলওয়েজ রাজি বিয়ে করতে।।
সায়মা আহমেদ ভ্রুকুটি করে বলে–বেহায়া ছেলে একটা আমার!!
মিথি একটু মন খারাপ করে বলে–কিন্তুুু ফুপি বাবা-মা তো এখনো আমার সাথে কথা বলছে না।তাহলে!!
সায়মা আহমেদ–ওসব তুই ভাবিস না।।আমি মেনেজ করে নিবো।।
মিথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
আবার সায়মা আহমেদ বলেন–সাদি,,আমি চাইছি আগামী ১৫ তারিখ তোদের বিয়ের কাজটা মেটাতে।
সাদি-নো প্রবলেম মা।।তাহলে তো ১৩ তারিখ মেহেন্দী আর ১৪ তারিখ হলুদ রাখতে হবে।
সায়মা–হুমম।।আর শোন ১১ তারিখ তোদের এনগেজমেন্ট করাতে চাই।।এতে আমাদের পরিচিত সবাই মিথির সাথে পরিচিত হয়ে যাবে।।তুই কি বলিস??
সাদি–তুমি যা ঠিক করবে তাই।
সায়মা –আচ্ছা, সব আমরা ঠিক করছি,তোর মতামত কি তাও আমাদের জানা মিথি মা।।
মিথি–তোমরা যা ঠিক করবে তাই হবে ফুপি।।
সায়মা আহমেদ মিথির মাথায় হাত রেখে বলেন–সোনা মেয়ে আমার।।
সাদি–ও মা!!ও সোনা হলে আমি তো হীরা বলো??
সায়মা–মোটেই না!!তুই বাঁদড় ছেলে।
মা -ছেলের খুনসুটি দেখে মিথি হেসে দেয়।
তারপর সায়মা আহমেদ বলেন–শোন সাদি,তাহলে তুই মিথিকে নিয়ে শপিং টা সেরে ফেল আর কার্ড অর্ডার করে ডে।।তারপর দাওয়াত শুরু করব।।
সাদি–ওকে মা।।আমি তাহলে কাল ওকে নিয়ে বের
।।
সায়মা–ঠিক আছে।।

১১ তারিখ,.দুপুর ১২ টা ৩৬ মিনিট,,
আহমেদ বাড়িতে লোকজন ভর্তি।সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত।কেউ বা আড্ডাতে।।সাদি ডেকোরেশন দেখতে ব্যস্ত।।সায়মা আহমেদ মিথি কে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ব্যস্ত।সাদির ফোন আসাতে সাদি ওপরে নিজের ঘরে চলে যায়।
রিদান–স্যার,ইশানের আপডেট তো ট্রেস করা যাচ্ছে না।।
সাদি–হুমম,,জানি।।এটাই তো ভয় রিদান।।বিয়েটা ভালোভাবে হলে হয়।তুমি সিকিউরিটি টাইট করে দাও।
রিদান–ওকে স্যার।।বাট ভয় কিসের স্যার??এটা তো ভালো খবর।।
সাদি–না রিদান।।ইশান কিছু করছে না এটাই ভয়ের।ও বড় কিছুর প্লান করছে।।
রিদান–স্যার,আমি ইশানের আপডেট নেওয়ার চেষ্টা করছি।তবে ইশান মেবি দেশে আসার ট্রাই করছে।
সাদি–হুমম।।বাট নো ওয়ারিজ।। ও আসার আগেই আমার আর মিথির বিয়ে হয়ে যাবে।
কথা শেষ করে সাদি ফোন কাটতেই দেখে মিথি কফি নিয়ে এসেছে।
মিথি–তোমার কফি,,খেয়ে নাও।।
সাদি –টেবিলে রাখ।
মিথি টেবিলে রেখে যেতে নিলেই সাদি মিথির হাত চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।।তারপর বলে –সুন বি মিসেস!!আপনার ফিলিংস কেমন আপনার বিয়ে নিয়ে।
মিথি একটু লজ্জা পেয়ে বলে–জানি না।।
সাদি হেসে বলে –বিয়েতেই এই হাল,,বাসর রাতে কি করবি!!!
মিথি সাদিকে ধাক্কা দিয়ে বলে–ধুর,, সারাক্ষণ লাগাম ছাড়া কথাবার্তা।
তাদের কথার মাঝখানেই সায়মা আহমেদ প্রবেশ করে বলে—

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here