অভিমানে তুমি,পর্বঃ১৭

0
2633

অভিমানে তুমি,পর্বঃ১৭
ফারিয়া আফরিন ঐশী

সাদির সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে ইশান।।সবটা জানার পর যেন একেবারে শিথিল হয়ে আছে সে।নীরবতা ভেঙে সাদি জিজ্ঞেস করল,,
সাদি–সবই বুঝলাম!!মিথির পেছনে কেন পড়ে আছিস??
ইশান–আমি যখন মাত্র কলেজ শেষ করলাম,তখন একদিন মা মিথির ছবি দেখিয়ে বলেছিল তার এমন একটা বৌমা চাই।তখন ওতটা পাত্তা দি নি মায়ের কথায়।তারপর একদিন একটা কাজে মিথিদের গ্রামে যাই,,মিথি খুব সম্ভব তখন স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে।ওকে দেখেই মনে হয়েছিল আমার জীবনে ওকে খুব দরকার।।নিজে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তুু লাভ হয়নি।।অপমান করা হয়েছিল বারবার।।তারপর জানতে পারি তুই মিথিকে ভালোবাসিস।।তোদের ক্ষতির চিন্তা করতে করতে মিথি আমার জেদে পরিণত হয়।তারপর বাকিটা তুই জানিস।।
সাদি–একবার সত্যিটা জেনে নিতিস।।থাক সেসব কথা!!!
২ জন অফিসার ইশানকে নিয়ে যেতে থাকলে ইশান থেমে ঘুরে সাদিকে বলে–মিথির খেয়াল করিস,,আয়মান চৌধুরী কিন্তুু আমার থেকেও ভয়াবহ।।
সাদি কপাল কুঁচকে বলে–ওসব তোর না ভাবলেও চলবে।।
এরপর সাদি নিজের কেবিনে এসে দেখে একটা বাচ্চা সোফার ওপর বসে চকলেট খাচ্ছে।। সাদি বাচ্চাটার পাশে বসে গাল টেনে বলল–তোমার নাম কি??
বাচ্চা –ইভান।
সাদি–নাইস নেম।।।
ইভান উত্তরে মুচকি হাসি দিয়ে আবার চকলেট খাওয়াতে মনোযোগ দিল।
এরইমধ্যে সাদির ফোন বেজে উঠল,সাদি ফোন বের করে দেখে মিথি,সকাল থেকে ৬০+ কল করেছে।।বিরক্ত হয়ে সাদি ফোন কেটে বন্ধ করে রাখল।
এরই মাঝে তিশাকে নিয়ে রুহি এলো।।তিশা ইভানকে দেখে ছুটে ইভানকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল।তারপর সাদির দিকে তাকিয়ে বলল–থ্যাংক ইউ।
সাদি–হুমম,,তোমার জামিন হয়ে গিয়েছে।। তো কোথায় যাবে??
তিশা–আপাতত আমার বাবার বাড়িতে যাবো।।তারপর এই শহর ছেড়ে দূরে।।আর না এখানে।।।
সাদি–ওকে৷ বাট যাওয়ার আগে ইভানকে একবার দাদু আর মায়ের সাথে দেখা করিয়ে নিয়ে যেও।
তিশা–ওকে।।
সাদি এবার রুহিকে উদ্দেশ্য করে বলল–তিশাকে ড্রপ করে দিও।
রুহি সম্মতি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে তিশাকে নিয়ে চলে গেল।
তারপর বিভিন্ন কাজে সাদির বাড়ি ফিরতে ১২ টা নাগাদ বেজে যায়।।সে বারবার বেল দিলেও কেউ দরজা খুলছে না।।বিষয়টি সাদির কাছে বেশ সন্দেহজনক লাগে।তাই সে বাইরে থাকা গার্ডদের বলে দরজা ভেঙে ফেলতে।৩ জন গার্ড বারকয়েক ধাক্কা দিতেই দরজা ভেঙে যায়।তারপর সাদি ড্রইংরুমে এসে দেখে সব মেইডরা নিচে পড়ে আছে।।গার্ডরা চেক করে জানায় তারা সেন্সলেস।সাদি নিজের মা আর দাদুর ঘরে গিয়ে দেখে তারাও অচেতনের মতো ঘুম।এবার সাদির সন্দেহ হলো যে কেউ একজন এই কাজ ইচ্ছে করে করেছে।।কিন্তুু কারণ কি!!তখন ইশানের শেষ কথা মনে করতেই সাদি মিথিকে খুঁজতে লাগল।নিজের ঘরে এসে আলো জ্বালাতেই সাদি কয়েকমুহুর্তের জন্য থমকে যায়।ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় মিথি পড়ে আছে।।মিথির মাথায় কেউ সজোরে আঘাত করার কারণে মিথির মাথা ফেটে রক্ত ধারা বয়ে যাচ্ছে।। সাদি দ্রুত পায়ে মিথির কাছে এগিয়ে গিয়ে মিথির মাথা কোলে তুলে নিল।।কিন্তুু মিথি ততক্ষণে নিজের জ্ঞান হারিয়েছে।। সাদি দ্রুত মিথিকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
হাসপাতালের করিডোরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাদি,তার গায়ে থাকা সাদা শার্ট মিথির রক্তে লালবর্ণ ধারণ করেছে,চুল গুলো এলোমেলো আর চোখ দুটো অশ্রুভেজা লাল।
এরই মধ্যে রিদান এসে জানায় যে এই কাজে বাড়ির কিছু মেইড জড়িত ছিল তবে মাস্টারমাইন্ড কে এখনো জানা যায় নি।বাড়ির সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তারপর মিথির ওপর অ্যাটাক করে তারা।।
সাদি সবই শুনল তবুও নীরবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।।সময়টা রাত ৩ টা বেজে ১৯ মিনিট।।ডাক্তার ওটি থেকে এখনো বেরোই নি।।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হলে সাদি ডাক্তার এর দিকে এগিয়ে গেলো।।।
ডাক্তার জানালো মিথির অবস্থা তেমন ভালো না।।৭২ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখা হবে।।
সাদি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।।
সকালের আলো ফুটেছে তা অনেকক্ষণ হয়েছে।।ঘুম ভাঙার পর সায়মা আহমেদ রুহির থেকে সব জেনে কাঁদতে কাঁদতে হসপিটালে আসেন।।মিথির কেবিনের সামনে মাথা নিচু করে সাদিকে বসে থাকতে দেখে সাদির পাশে বসে সাদির কাঁধে হাত রাখলেন।।মাকে দেখে সাদি আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারল না।।মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।তারপর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে লাগল–ও মা!!তুমি মিথিকে বলো আমার কাছে ফিরে আসতে প্লিজ। আমি অভিমান করে কয়েকদিন কথা বলি নি বলে ও আমাকে এমন শাস্তি দেবে।।ও মা ওকে বলোনা আমার কাছে ফিরে আসতে।।আমি ওকে সরি বলবো।।
সায়মা আহমেদ সাদিকে শান্ত হতে বললেও তিনি মনে মনে অস্থির হয়ে আছেন।।সায়মা আহমেদ শুধু আল্লাহ কে ডাকছেন আর বলছেন–আল্লাহ,, তুমি রহমতের মালিক!!দয়া কর আমার ছেলের ওপর।।মিথির কিছু হলে আমার ছেলে পাগল হয়ে যাবে।।খোদা তুমি দয়া কর আমার সন্তানের ওপর!!!
মিথির অবস্থার কোনো প্রকার উন্নতি নেই।।বিকালের দিকে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে সাদি প্রবেশ করে মিথির কেবিনে।কেবিনে ঢুকে বেডে শুয়ে থাকা মিথিকে দেখে সাদির বুক ধক করে ওঠে।।বেডে অচেতন ভাবে পড়ে আছে মিথি।।মাথায় মোটা পরদের ব্যান্ডেজ,হাতে স্যালাইন চলছে,চোখ মুখে একটা ফ্যাকাশে ভাব চলে এসেছে।।সাদি মিথির কাছে গিয়ে একটু ঝুঁকে মিথির কপালে গভীরভাবে চুম্বন করে।।তার সাথে সাদির চোখের পানি গড়িয়ে মিথির মুখে পড়ে।।তারপর বেডের পাশে রাখা চেয়ারে বসে মিথির হাতটা আলতো করে ধরে কয়েকটা চুমু দিল।।
সাদি–জানিস মিথিপাখি আমি তোকে খুব ভালোবাসি।।কখনো হয়তো তোর মতো করে প্রকাশ করতে পারিনি কিন্তুু সবসময় তোকে অনুভব করানোর চেষ্টা করতাম।।কি করি বলতো!!আমি তো এমনই।।আমি তো তোর ওপর একটু অভিমান করেছিলাম।।
আমার তো সকল #অভিমানে_তুমি।।আর কার ওপর আমার অভিমান হবে তুই ছাড়া!!আচ্ছা,,, আমি সরি।।আর করবো না এমন।।তুই যা বলবি তাই হবে তাও তুই আমার কাছে ফিরে আয় প্লিজ!!
সাদির চোখ থেকে অনবরত পানি গড়াতে থাকল।
এরই মাঝে একজন নার্স এসে জানালো ডাক্তার সাদিকে ডাকছেন কথা বলার জন্য।।
সাদি কেবিন থেকে বেরিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে ডাক্তারের কেবিনে গেল।।।
ডাক্তার –মিঃআহমেদ দেখুন আপনাকে মিথ্যা ভরসা দিব না।।আসলে মিসেসঃআহমেদের যা কন্ডিশন তাতে কোনো রকমে কিছু বলা যাচ্ছে না।আমরা আমাদের বেস্ট ট্রাই করছি বাকিটা সৃষ্টি কর্তার হাতে।
সাদি–প্লিজ ডক্টর,, সেভ হার,,আই অনলি নিড মাই ওয়াইফ প্লিজ।।
ডাক্তার –উই আর ট্রায়িং।
তারপর সাদি বেরিয়ে আবার মিথির কেবিনের সামনে চলে যায়।
ঠিক তখনই সাদির ফোন আসে,, সাদি চেক করে দেখে রবিনের ফোন।।রিসিভ করতেই–
রবিন–বৌমা কেমন আছে সাদি??
সাদি–নো চেন্জ স্যার।।এখনো সেম কন্ডিশন।
রবিন–ইশান ওয়ান্টস টু টক উইথ ইউ।
সাদি কিছু একটা চিন্তা করে বলে–আম কামিং।।
রিদানকে হসপিটালের দিকটা দেখতে বলে সাদি অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়।।
অফিস পৌঁছে ইশানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে –বল কি বলবি??
ইশান–আমি তোকে বলেছিলাম,মিথির খেয়াল রাখিস,,আয়মান চৌধুরী এখনো বাইরে আছে।।
সাদি–তোর দেওয়া ইনফরমেশনে সার্চ করা হয়েছে ওখানে উনি নেই।
ইশান–তুই রংপুরে সার্চ অপারেশন চালানোর ব্যবস্হা কর।।আয়মান চৌধুরীর মূল ঘাটি ওখানে।।ইফ আম নট রঙ,, উনি ওখানেই গা ঢাকা দিয়েছেন।।
সাদি–ওকে।।
সাদি বিষয়টা রবিনকে জানালে রবিন বলে –ওটা নিয়ে কাল আলোচনা হবে।।এত বড় মাফিয়া গ্যাং,১০ বার চিন্তা করতে হবে।।
সাদি সম্মতি দিয়ে পুনরায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।মিথির কেবিনের সামনে গিয়ে দেখে ডাক্তাররা দৌড়াদৌড়ি করছেন।।রিদান জানায় যে মিথি ব্রেন স্ট্রোক করেছে।।অবস্হা আরও খারাপ।।
সাদি যেন সবকিছু থমকে যায়,,,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here