অভিমানে তুমি,পর্বঃ১৯

0
3758

অভিমানে তুমি,পর্বঃ১৯
ফারিয়া আফরিন ঐশী

সাদি আর ইশান এসে টেবিলে বসতেই ৭ বছর বয়সী একটা ছোট্ট মেয়ে, সাদা শর্ট ফ্রকের সাথে কালো প্লাজু পরিহিতা কোমড়ে হাত রেখে সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলল–পাপা,তুমি আমাকে রেখেই ডিনার করতে বসে গিয়েছো??
সাদি পেছন ফিরে মুচকি হেসে মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বলে–একদমই না।।পাপা কি কখনো তার সামিরা বেবি কে ছাড়া খেতে পারে!!
সামিরা–নো!!
এরপর ইশানকে উদ্দেশ্য করে বলে–চাচুমণি তোমার হাতে ব্যাথা ছিলো না!!কমেছে??
ইশান সামিরার গাল টেনে বলে–হুমম,বেবি কমেছে।।
ডিনার টেবিলে বসে সবাই ডিনার করতে লাগল।।
সামিরার মা সামিরাকে খায়িয়ে দিচ্ছে।। আর সামিরা মাঝে মাঝে খাবে না বলে জেদ করছে।।
সোহেল আহমেদ –আহা!!নাতবৌ ওকে জোর করে খাওয়াচ্ছিস কেন??ও যা খেতে চায় তাই দে।।।
সায়মা–হুমম।।জোর করিস না মা,, বাচ্চা মানুষ।।
সাদি–মিথিপাখি,ওকে জোর করিস না। যা খেতে চাইছে ওটাই দে।।
মিথি একটু রাগী ভাব নিয়ে বলল–তোমার মেয়ে শুধু চকলেটস আর চিপস চায় খেতে।।
সাদি–তা তো চাইবেই,,তার মা যে চকলেট পাগলী ছিলো তাই।।
সবাই হেসে ওঠে।।মিথি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সাদির দিকে তাকাল।।
সবাই হাসলেও ইশানের মুখে যেন হাসি নেই।।
তা দেখে সায়মা আহমেদ বললেন–কি রে বাবা!!তোর মন খারাপ কেন??
ইশান–আসলে চাচিমনি আজ হসপিটালে তিশাকে দেখলাম।।
সাদি অবাক চোখে তাকিয়ে বলে–কি বলিস!!ওকে যে কত খুঁজেছি।।কিন্তুু পেলাম নাহ।।
ইশান–মেবি আজ কালের মধ্যে এসেছে ঢাকা।।
সায়মা–কথা বলেছিস??
ইশান–চেষ্টা করেছি বাট ও কথা বলতে রাজি হয়নি।।
মিথি–ইভু কে দেখলে নাকি ভাইয়া??
ইশান–নাহ ভাবি।।
সাদি–তুই চিন্তা করিস না আমরা কথা বলবো তিশার সাথে।।
সায়মা–হুমম,, মন খারাপ করিস না বাবা।।
ইশান খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে থাকে–তিশা কি আমাকে ক্ষমা করবে!!ও ফিরিয়ে দিলেও বারবার যাব ওর কাছে আমার দরকার ওদের।।আমার ছেলেকে আমার চাই।।
মিথি ঘরে এসে দেখে সাদি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।।
মিথি পেছন থেকে গিয়ে বলে–কি পাও এটা খেয়ে বুঝি না??
সাদি ঘুরে সিগারেট ফেলে মিথিকে কাছে টেনে বলে–তেমন কিছুই না।।সামিরা কই??
মিথি–আর বলো না,,ওকে এতো বললাম আমাদের সাথে ঘুমুতে এলোই না।।সে নাকি তার দাদির সাথেই ঘুমোবে।।
সাদি–ভালোই।। আমার মেয়ের আমার মতোই বুদ্ধি আছে।
মিথি ভ্রু কুঁচকে বলে–মানে!!
সাদি–ওতো মানে বুঝতে হবে না।।
এর সাদি মিথিকে কোলে নিয়ে দোলনাতে বসে পড়ে।।
মিথি–আরে!!কি করছ তুমি!!
সাদি–দেখতেই তো পাচ্ছিস।।
মিথি–হুমম।।
সাদি-মিথিকে কোলে নিয়ে দোলনাতে বসে চাঁদ দেখছে।।ঠিক তখনই মিথি বলে–আচ্ছা,, সেদিন স্ট্রোক করে যদি আমার কিছু হয়ে যেত তাহলে তুমি কি করতে??
সাদি–ওই দিনগুলোর কথা মনে করতে চাই না।।
ওই দিন তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেও বেঁচে থাকতাম না কারণ তোকে ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতে পারি না।।
অতীত,,,
সেদিন মিথির স্ট্রোকের পর সাদি থমকে যায়।।
ডাক্তার জানায় মিথিকে ২৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জ্ঞান আসলে ভালো।।এই ২৪ ঘন্টা সাদি শুধু মিথির প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে।।লাস্ট আওয়ারে মিথির কিছুটা সেন্স আসে।।ডাক্তার জানায় প্রোপার কেয়ার মিথিকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে পারে।।এরপর মিথি ২ সপ্তাহ হসপিটালে ছিল।।সাদি একটা মুহূর্তের জন্য ও মিথিকে ছেড়ে যায়নি।।পুরোপুরি সেন্স আসার পর মিথিকে দেখতে সবাই আসে।।সবাই বেরিয়ে গেলে সাদি গিয়ে মিথির সামনে বসে।মিথি মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে ব্যস্ত।।নীরবতা ভেঙে মিথি বলে–আমি জানি আমি ভুল করেছি,,এই ভুলের ক্ষমা হয় না৷।। আর–
সাদি মিথিকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে বলল–ভুল আমিও করেছি,,তোকে অবহেলা করে।।তোর আজকে এই অবস্থা আমার জন্য।।
এরপর সাদি মিথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।।
তারপর বলে–সরি মিথিপাখি,, আর এমন হবে না।।
মিথিও জড়িয়ে ধরে বলে–আমিও সরি।।আর আমি আর ভার্সিটি যাবোই না।।ঘরে থাকব তাই ভালো।।
সাদি মিথিকে ছেড়ে কপাল কুঁচকে বলে–ভার্সিটি যাবি না কেন??
মিথি–ভার্সিটি গেলাম বলেই তো এতকিছু।।।
সাদি–চুপ!!ভার্সিটিও যাবি আর স্টাডিও কমপ্লিট করবি৷
মিথি মুখ ফুলিয়ে থাকে।।সাদি মিথির একটু কাছে সরে এসে মিথির মুখে চুমু দেয়।।তারপর আবারও জড়িয়ে ধরে।।।
এরমধ্যে ইশানের সাজার শুনানি হয়।।
রংপুরের সার্চ করে আয়মান চৌধুরী কেও ধরা হয়।।আয়মান চৌধুরী কে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।।
২ মাসের মাথায় মিথি সম্পূর্ণ সুস্হ।।
এরকমই একদিন সাদি ছাদের সোফাতে বসে কাজ করছে ল্যাপটপে৷ হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে।।এরমধ্যে মিথি এসে সব কিছু সরিয়ে সাদির কোলে বসে পড়ে৷
সাদি মুখ ঘুরিয়ে দেখে মিথির মুখ ফুলানো।
সাদি হালকা হাতে জড়িয়ে ধরে বলে–কি হয়েছে?? এমন মুখ ফোলানো কেনো??
মিথি–আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে প্লিজ।।
সাদি–অবশ্যই নিয়ে যাবো।।বল কোথায় যাবি??
মিথি–ওসব আমি জানি না।।তুমি ঠিক করো।।
সাদি–আমাদের তো হানিমুন হয়নি।।এইতালে চল হানিমুন সেড়ে আসি।।
মিথি–ধুর!!
সাদি–ধুর না!!আমি হাতের কাজ সেড়ে রেডি হচ্ছি।।আর দেখছি কোথায় যাওয়া যায়।।
মিথি কিছু একটা চিন্তা করে বলল–ওকে।।

রাতে ফিরে সাদি জানায় যে তারা পরশুদিন চট্টগ্রাম যাবে।।মিথিতো অনেক খুশি।।পরদিন সাদি মিথি কিছু শপিং করতে বের হয়।রাতে মোটামুটি সবই গুছিয়ে নেয় তারা।পরদিন সকালে তারা রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।। চট্টগ্রাম পৌঁছে হোটেলে গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নেয় তারা।

পরেরদিন সকালে,,
মিথি উঠে দেখে সাদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে।।।
মিথিকে উঠতে দেখে বলে–গুড মর্নিং, মিথিপাখি।।
মিথি–গুড মর্নিং।
সাদি-দ্রুত উঠে রেডি হয়ে নে।।বেরোবো আমরা।।
মিথি উঠে ফ্রেস হয়ে নেয় তারপর বের হয়ে যায় তারা।।
১ম এ যায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখতে।।মিথি তো পানিতে দাঁড়িয়ে খানিক লাফালাফি করে নিল।।
সাদি ও কিছু মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করে ফেলল।
তারপর চট্টগ্রামের আরও কিছু জায়গা ঘুরে ফেরার সময় গিফট পেপারে মোড়া একটা বাক্স দিল মিথির হাতে।তারপর হোটেলে ফিরে সাদি মিথিকে বলে বেরিয়ে যায়।।মিথি বক্সটা খুলে দেখে সাদা,কালো মিশ্রনের জামদানী আর কিছু গহনা।।মিথি মুচকি হেসে ফ্রেস হতে যায়।।বেশ ঘন্টাখানিক পর সাদি রুমে এলো,এসে মিথিকে খুঁজতে লাগল।।হঠ্যাৎ জানালার দিকে চোখ যেতেই সাদির চোখ আটকে গেল–

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here