গল্পের নামঃ খেলাঘর,পর্বঃ০১

0
6327

গল্পের নামঃ খেলাঘর,পর্বঃ০১
লেখকঃ শাওন

-“আই এম প্রেগন্যান্ট,ফারাজ!”
-“হুয়াট!!কি বলছো তুমি?তোমার কি মাথা ঠিক আছে?”
-“কেন?কি হয়েছে?”
-“আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি আর তুমি এখনি বলছো তুমি প্রেগন্যান্ট!”
-“হুম বলছি,কারণ তুমি যা করেছো তারজন্যই আজকে এই মুহুর্ত তৈরী হয়েছে।এখন সবার জানাজানি হওয়ার আগেই চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
-“অসম্ভব!!আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না”
-“বিয়ে করতে পারবে না,মানে!!তাহলে কি করবো আমরা?”
-“আমার সাথে এখনি হসপিটালে চলো,এখনি বাচ্চা টাকে নষ্ট করে ফেলি।নয়তো পরে ঝামেলা হয়ে যাবে।”
ফারাজ এই কথা বলার সাথে সাথে লাজ কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। গালে হাত দিয়ে লাজের দিকে তাকালে লাজ বলে,” এত সহজে বলে ফেললে তুমি এই কথা! ছিহ, ফারাজ! আমার ভাবতেও ঘৃনা লাগছে তোমার মন মানুষিকতা এতটা নিচ। তুমি যখন বাচ্চা টা মেনেই নিতে পারবে না তাহলে কেন ঐসব করেছিলে? নিজের চাহিদা মেটাতে নাকি আমাকে ভোগ করতে?”
-“তুমি আমাকে ভুল বোঝছো লাজ, আমি এমন কিছু বলিনি আমি শুধু বলছি বাচ্চাটাকে…”
-“চুপ একদম চুপ! তোমার মুখ থেকে আমি আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না।আমি আমাদের এই সম্পর্কটা এখানেই শেষ করলাম আর রইলো বাকি বাচ্চার কথা, আমি এই বাচ্চাকে এই পৃথিবীর মুখ দেখাবো কিন্তু ভয় পাবেন না কাউকে জানতে দিবো না এটা আপনার বাচ্চা।”
লাজ কথাগুলো বলে চলে যাচ্ছিল কিন্তু পিছনে কারো অট্ট হাসি শুনে ফিরে তাকালো। ফারাজ হো হো করে হাসছে। লাজ অনেকটা অবাক হলো ফারাজের হাসির কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে। ফারাজ হাসতে হাসতে ওর সামনে এসে বলল,” সম্পর্ক! তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে সত্যি সত্যি সম্পর্কে ছিলাম? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো তোমার স্ট্যাটাস কোথায় আর আমার স্ট্যাটাস কোথায়? তোমাকে তো আমি শুধু বাজিতে জিতার জন্য ব্যবহার করেছিলাম। আর বাজিটা জিতেও গিয়েছিলাম ঐদিন পার্টিতে কিন্তু ভাবলাম তোমার সাথে আরেকটু মজা নেওয়া যাক। তাই কিছু বলিনি কিন্তু আমি কি করে জানতাম তুমি বাচ্চা নিয়ে নিবে আমি তো ভেবেছিলাম আর পাঁচ মেয়ের মতো তুমিও নষ্ট করে ফেলবে।”
-“তার মানে তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসো নি? সবকিছু তোমার অভিনয় ছিলো?”
-“হুম সবকিছুই অভিনয় ছিলো, কলেজে সবার সামনে আমার বাবা’কে তুমি অসম্মান করেছিলে না ঐটার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই আমি এই বাজিটা ধরে ছিলাম নয়তো তোমাদের মতো মধ্যবিত্ত মেয়েদের সাথে মিথ্যে প্রেমের নাটক করতেও আমার ইগো লাগে সেখানে বেডে নিয়ে…”
-“জাস্ট শাট আপ!”
-“কি শুনতে খারাপ লাগছে? যার জিনিস পেটে নিয়ে ঘুরছো তার কথা শুনতেই এত খারাপ লাগছে তাহলে পরে পাড়াপ্রতিবেশি’র কথা কি করে শুনবে তুমি। এমনও হতে পারে তাদের কথা সহ্য করতে না পেরে তুমি আত্মহত্যা করে ফেলেছো।”
ফারাজের কথা শুনে লাজ ওর দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো তারপর কষিয়ে থাপ্পড় মারতে নিলে ফারাজ তার হাত ঘুড়িয়ে পিছনে চাপ দিয়ে ধরে। লাজ ব্যাথায় আহ করে উঠে। ফারাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,” এতক্ষণ ভালোই ভালোই বলেছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না, তাই তোকে এখন এই বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলাম। এই এই নে টাকা যদি ইচ্ছে হয় বাচ্চা নষ্ট করে দিস।”
কতগুলো টাকা লাজের সামনে উড়িয়ে দিয়ে তাকদিয়ার ম্যানসনের দরজা বন্ধ করে দিলো ফারাজ।
লাজ নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে সে তার ফ্লাটে ফিরে এলো। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরলো। সে যাকে এত বেশী ভালোবেসেছিল সে তাকে এত ভালো ভাবে ঠকালো? শুধু মাত্র একটা প্রতিশোধ আর বাজি ধরার জন্য?সে কল্পনায় ডুব দিল…..

সেদিন কলেজে একটা ফাংশন ছিলো, আর সেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে এসেছিলেন বিশিষ্ট এম পি ফারিদ তাকদিয়ার। তিনি নিজের মতো বানিয়ে মিথ্যা মিথ্যা এলাকা আর কলেজ উন্নয়নের কথা বলছিল। সবাই ওনার কথা মতো গেলেও লাজ সবার মাঝে একা বড় গলায় বলে,” সবই তো বোঝালাম, কিন্তু তা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে মাননীয় এমপি সাহেব। আজ থেকে তিন বছর আগে নির্বাচনের আগে আপনি আমাদের কে এসব আশা দেখিয়েছিলেন কিন্তু আজকে তিনবছর পরও তার কোনো বাস্তব রুপ আমি দেখতে পেলাম না, আমি কেন? আমরা! আমরা কোনো বাস্তবায়ন দেখতে পেলাম না। খুব তো বলেছিলেন প্রত্যেকটা মহল্লার প্রত্যেক টা মেয়ের শিক্ষা পাবে আর তার ব্যবস্থা আপনি স্বয়ং নিবেন কিন্তু কোথায়? আজ পর্যন্ত কোনো একটা মেয়েকে তো দেখলাম না কোনো ভাবে শিক্ষায় সাহায্য করতে তাহলে আমরা কি করে আপনার কথাটা বিশ্বাস করি বলুন তো?”
লাজের কথাগুলো তে সবাই জেগে উঠলো, একের পর এক চ্যানেলে তার বলা কথাগুলো লাইভ দেখানো হচ্ছে। এমপি সাহেব’কে তাদের লোকজন কলেজের অফিস রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। এমপি সাহেব রাগে কিটিমিট করে প্রিন্সিপাল স্যার কে বলল,” আপনার কলেজের মেয়ে আমাকে এতগুলো মানুষের সামনে প্রেসের লোকের সামনে অপমান করলো আর আপনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখছিলেন?”
-“সরি স্যার, আমি বোঝতে পারিনি ও এমন কিছু করবে?”
-” ভুল যেহেতু করেছে শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে।”
-“মানে?”
-“আপনাকে এত মানে বোঝতে হবে না। আপনি শুধু মেয়েটাকে এই কলেজ থেকে টিসি দিয়ে বের করেন বাকি টুকু আমার লোকে দেখে নিবে।”
-“কিন্তু..”
-“আপনাকে যা করতে বলেছি তাই করেন।”

এমপি সাহেবের কথামতো বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যায় লাজকে কলেজে ডাকলো প্রিন্সিপাল। একটা পেপার লাজের সামনে ধরে বলে,” তুমি আর কালকে থেকে এই কলেজে আসবে না। এই নাও তোমার সব কাগজ।”
-” কিন্তু স্যার কেন? আমার অপরাধ টা কি?”
-” আমি তোমাকে এত কিছু বলতে পারবো না, তুমি আজকে যা করেছো তার ফল এটা হওয়ারই যোগ্য!”
-“তারমানে আমার অপরাধ হলো আমি কেন সবার সামনে সত্য কথাগুলো বললাম তাই তো?”
-” আমি তোমাকে একবার বলেছি না এতকিছু আমি বলতে পারবো না। যাও আমার এখান থেকে।”
-” আমি তো যাচ্ছি ঠিক আছে, কিন্তু শেষবারের মতো যাচ্ছি না। এর শেষ আমি দেখেই ছাড়বো।”
লাজ নিজের কাগজগুলো নিয়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে আসলো। একটা রিকশায় করে বাড়ি ফিরছিল তখনই কতগুলো লোক ওর রিকশার সামনে এসে দাঁড়ায়। লোকগুলো কে দেখে রিকশাওয়ালা ভয় পেয়ে পালায়। রাস্তায় কোনো মানুষ নেই, লাজের কিছুটা ভয় হলেও মনের মাঝে সাহস আনলো। নিজের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে রিকশা থেকে দৌড় দিতে নিবে তার আগেই আরো কতজন লোক তার সামনে এসে দাঁড়ালো। লাজ পিছিয়ে পিছিয়ে আবার রিকশার সামনে চলে আসলো। লোকগুলো তাকে ঘিরে আসছে নিজের ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে সামনের লোকটাকে কোনো মতে বাড়ি মেরে দৌড় দেয় সে। পিছন পিছন আসতে থাকে লোকগুলো, অচেনা গলির ভিতর দিয়ে দৌড়তে দৌড়তে নদীর পাশে এসে থামলো লাজ। আর কোনো পথ নেই সামনে এগোনোর পিছনে তাকিয়ে দেখে লোকগুলো কেমন বাঁকা হাসি দিচ্ছে। একজন বলল,” খুব বড় বড় কথা বের হচ্ছিল আজকে সকালে মুখ থেকে, এখন দেখবো শরীরে কত তেজ আছে।”
এই বলেই তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো, আপ্রান চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছে না লাজ। হঠাৎ করে কেউ একজন তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো, লাজ লোকটিকে দেখে বলল,” প্লিজ, আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচান, ওরা আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে প্লিজ আমাকে বাঁচান।”
লোকটিকে দেখে গুন্ডারা একটু ভয় পেয়ে গেল। লোকটি ইচ্ছে মতো মারলো গুন্ডা গুলোকে তারপর লাজকে তার গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেল।লাজ ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যেতে নিলে লোকটি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,” ও হ্যালো, আপনার আবার বিপদে পরার ইচ্ছে আছে নাকি! যদি না থাকে তাহলে গাড়িতে এসে বসুন আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।”
লাজ লোকটির কথা শুনে থেমে গেল। সে ভেবে দেখলো সত্যি আরেকবার ঐ গুন্ডা গুলো হামলা করবে না তা কি করে শিউর হতে পারে।তাই সে চুপচাপ আবার গাড়ির কাছে চলে গেল। লোকটি গাড়ির দরজা খুলে দিলে গাড়িতে উঠে বসে।
লোকটি গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,” তোমার নামটাই জানা হলো না!যদি কিছু মনে না করো নামটা জানতে পারি?”
লাজ একটু শান্ত স্বরে উত্তর দিলো,” লাজ!”
-“ওহ নাইস নেইম, আমার নাম ফারাজ। লন্ডন থেকে আজকেই বাংলাদেশে ফিরলাম। আর ফিরেই দেশের যা অবস্থা দেখলাম তাতে মেজাজটাই গরম হয়ে গেল।”
-“এখানেই দাঁড়ান!”
লাজের কথা শুনে ফারাজ কষিয়ে ব্রেক করলো, লাজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” কেন?”
-“আমার বাড়ি চলে এসেছে।”
লাজ নেমে সোজা চলে যাচ্ছিল পিছন থেকে ফারাজ ডাক দিয়ে বলল,” হে ম্যাডাম একটা থ্যাংক্স তো দিতে পারেন!”
লাজ পিছন ফিরি ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়িতে ঢুকল। ভিতরে ডুকতেই বাবা মার একশ প্রশ্ন এত দেরী কেন হলো? প্রিন্সিপাল এত আর্জেন্ট ভাবে কেন ডেকেছে এসব আরও অনেক প্রশ্ন কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। ব্যাগ থেকে নিজের ফোনটা বরে করে টেবিলের উপর সেট করে লাইভে গেল সে…..
-“হে দেশবাসী আশা করি ভালো আছেন আপনারা, আমি ভালো নেই। আজকে সকালের পর থেকে হয়তো আমাকে এখন মোটামুটি সবাই চিনে গেছেন তার কারণ একটা এমপি কে কিছু চরম সত্য কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম বলে। সেটাই আমার অপরাধ হয়েছে। সত্যি বলে মুখ খুললেই সহ্য করতে হয় নানা ভাবে অত্যাচার।যেমন আজকে আমাকে সহ্য করতে হচ্ছে। আমাকে আমার প্রিন্সিপাল কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে শুধু মাত্র আমার এই কয়েকটা প্রশ্নের জন্য, আমাকে এমপি এর লোকদিয়ে অপহরণ করার চেষ্টা করছে এই প্রশ্নগুলোর জন্য। কেন? আমাদের কি এতটুকু অধিকার দেয়নি আমাদের সরকার? আজকে আমাকে যেমন কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হলো আর অপহরণ করার চেষ্টা করা হলো কে বলতে পারে তেমন আপনাদের সাথেও হবে না। তাই বলছি সময় থাকতে সবাই সতর্ক হোন আর সঠিক লোক যাচাই করুন।আসসালামু আলাইকুম। ভালো থাকবেন।”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here