নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব – ২,৩

0
3955

নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব – ২,৩
তানজিলা
পর্ব -২

চারদিকে পিনপতন নীরবতা। ইনায়ার বারবার হাত আর পায়ের বাঁধন খোলার ব্যার্থ প্রচেষ্টা দেখে ওর সামনে রাখা চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসা কালো মাস্ক পরা ব্যাক্তিটি আচমকাই নিজের হাতে থাকা ছুরিটা ওর গলায় ধরলো। মুখে লাগিয়ে রাখা স্কচটেপটা এক টানে খুলে তীক্ষ্ণ কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
-“শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করছি হাবিব কোথায়?”
ছুরির ধারে গলায় তীব্র ব্যাথা অনুভব করছে ইনায়া। আর সহ্য করতে পারছে না। দুইদিন যাবৎ এই অন্ধকার ঘরে না খেয়ে কাটিয়েছে ইনায়া। শরীরে আর কোন জোর অবশিষ্ট নেই। চিৎকার করতে চেয়েও পারছে না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।
-“আমি সত্যি কিছু জানি না। প্লিজ আমাকে যেতে দিন!”
ইনায়ার এই আকুল আবেদন যেন লোকটিকে পৈচাশিক আনন্দ দিচ্ছে। ইনায়ার গলা থেকে ছুরিটা নামিয়ে ঘরে আলো জ্বালিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
-“অনেক সহ্য করেছি আর না। কিছু বলবে না তো! ঠিক আছে, হাবিব সাহেবকে একটা স্পেশাল গিফট দিতে চেয়েছিলাম সামনাসামনি। কিন্তু আফসোস! গিফটটা হয়তো সামনাসামনি দিতে আরও সময় লাগবে!”
লোকটার মুখে মাস্ক থাকার কারণে পুরো চেহারা না দেখতে পেলেও চোখে স্পষ্ট হিংস্রতা দেখতে পাচ্ছে ইনায়া। সবকিছু দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। এই হয়তো চোখ খুলে নিজেকে নিজের বাড়িতে খুঁজে পাবে ইনায়া। কিন্তু তা আর হলো না। ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে ও।
-“আমি সত্যি কিছু জানি না। প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করবেন না! আমি আপনার ব্যাপারে কাউকে কিচ্ছু বলবো না!”
ইনায়ার অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে লোকটার চোখ কিছু সময়ের জন্য নরম হয়ে গেল। ইনায়ার মনে কিছুটা আশা জমলেও তা স্হায়ী হলো না। মুহূর্তেই আবারও হিংস্র রূপ ধারণ করে লোকটা ওর দিকে আগাতে শুরু করলো। ইনায়া চোখ বন্ধ করে আরও পিছিয়ে দেয়ালের সাথে মিশে যাচ্ছে। হাত পা বারবার মোচড়ানোর কারণে খানিকটা ছিলে গেছে। সেদিকে কোন ভ্রু ক্ষেপ নেই ওর।

-“ইনায়া কেউ তোমার ক্ষতি করবে না এখানে, চোখ খুলো!”

রেহান ইনায়ার রুম থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে ওর রুমে গিয়ে দেখে ইনায়া ঘুমের মধ্যেই কান্না করছে আর কাকে যেন চলে যেতে বলছে। রেহান ওকে জাগিয়ে দিতেই ও রেহানকে দেখে চিৎকার করে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
-“গায়ে হাত দিবি না! চলে যা আমার সামনে থেকে!”
ইনায়া ধাক্কা দিতেই রেহান দু কদম পিছিয়ে যায়। ইনায়াকে এই প্রথম যে ঘুমের ঘোরে এভাবে চিৎকার করতে দেখছে তা নয়। এর আগেও একবার এরকম করেছিল। কিন্তু তখন এরকম কর্কশ কন্ঠে কোন কথা বলেনি ইনায়া। ইনায়া কাঁথা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে চিৎকার করে কাঁদছে আর বিড়বিড় করে রেহানকে চলে যেতে বলছে। রেহান দেরি না করে দ্রুত ঐ রুম থেকে বেরিয়ে দরজার বাইরেই ধপ করে বসে পরে। না চাইতেও চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ইনায়া হয়তো বুঝতেও পারছে না ওর এই ভয়ার্ত আর্তনাদ রেহানকে কতটা কষ্ট দিচ্ছে। এতদিন নিজের মায়ের ঘৃণাভরা চাহনি সহ্য করেছে আর এখন ইনায়ার। আচ্ছা, ও কি কখনও এই ঘৃণা থেকে মুক্তি পাবে না! ইনায়ার ওকে ভয় পাওয়াটা রেহান সহ্য করতে পারে না দেখেই ওর থেকে দূরে দূরে থাকে। তাও যেন স্বস্তি পায় না।

কিছুক্ষণ পর ইনায়া শান্ত হলে রেহানকে বলা কথাগুলো মনে হতে থাকে। নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এখন। এভাবে কতদিন মানুষটা ওকে সহ্য করবে!

সকালে রেহানকে ওর সাথে বসে নাস্তা খেতে দেখে খানিকটা অবাক হলো ইনায়া। ইনায়াকে এভাবে তাকাতে দেখে রেহান খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
-“দাদু আজকে দুপুরে ওখানে যেতে বলেছে।”

রেহানের কথা বলার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন রাতে ওর সাথে ইনায়া কোন খারাপ ব্যবহার করেইনি! পরক্ষনেই মনে পড়লো ওর দাদী-শাশুড়ি কাল ফোন করেছিল এই ব্যাপারে। এ কথা বলতেই রেহানের রুমে গেছিলো ইনায়া। কিন্তু কিছু বলতে আর পারেনি।

-“আ..আসলে..”

রেহান খাবার টেবিলে হাত দিয়ে সজোরে আঘাত করে বসলে ইনায়া আর বাকি কথা বলতে পারলো না। রেহান চোখ বন্ধ করে থরথর করে কাঁপছে যেন নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। রেহানকে আচমকাই এভাবে রাগতে দেখে ইনায়া খাবার টেবিল থেকে উঠে গেলে রেহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-“এক পা ও আগাবে না। চুপচাপ চেয়ারে বসো!”
-“আ..আমার ক্ষিদে নেই।”
-“তোমার ক্ষিদে আছে না-কি নেই আমি জানতে চাই নি। বসতে বলেছি তোমাকে!”
ইনায়া আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে পড়লো।
রেহান কিছুক্ষণ পর ইনায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“আমার সাথে কথা বললে হয় ভালোভাবে কথা বলবে আর না হয় নিজের মুখ বন্ধ রাখবে। এই ভয় পাওয়ার ঢং আমার সামনে এসে করবে না!”
ইনায়া এক দৃষ্টিতে নিজের খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।

-“আমার কথা কানে যাচ্ছে তোমার!”

রেহানের কর্কশ কন্ঠ কানে যেতেই হকচকিয়ে রেহানের দিকে তাকায় ইনায়া। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে প্লেট নিয়ে উঠে যায় ও। রেহান আরও কিছু বলতে যেয়েও বললো না। ইনায়ার সাথে কোন কথা বলার ইচ্ছেই ওর এখন নেই।

লিফট থেকে নেমে সামনেই এই বিল্ডিংয়ে থাকা কিছু আন্টি সামনে পড়ে যায়। ইনায়াকে দেখেই নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কি যেন বলছিল। তবে ইনায়ার পেছনে রেহানকে আসতে দেখে তার নিজেদের কথা থামিয়ে ওদের পাশ কাটিয়ে চুপচাপ চলে গেল। এখনো কোন প্রতিবেশির সাথে তেমন কোন কথা হয়নি ইনায়ার। তবে রেহানকে যে সবাই একটু আলাদা চোখে দেখে তা বুঝতে পারে ইনায়া। সবাই কেমন এড়িয়ে চলে ওদের।
গাড়িতে উঠেই নিজের সিটবেল্ট লাগিয়ে একবার রেহানের দিকে আড়চোখে তাকায় ইনায়া। রেহান একবার ইনায়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

হাইওয়ের কাছাকাছি এসেই গাড়ি ব্রেক করে রেহান। ইনায়া জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকালে রেহান কিছু না বলে নিজের সিটবেল্টটা খুলে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। রেহানকে বের হতে দেখে ইনায়াও গাড়ি থেকে বের হয়।
-“এ..এখানে গাড়ি কেন..!”

রেহানকে রাগী চোখে ওর দিকে তাকাতে হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে ইনায়া। রেহান কটমট করে বলে,
-“তোমাকে গাড়ি থেকে বের হতে বলেছি আমি! চুপচাপ গাড়িতে বসো আর গাড়ি ভেতর থেকে লক করে নাও!”

এই বলে রেহান সামনে এগোতে নিলে কে যেন পেছন থেকে ওর শার্টের হাতা ধরে ওকে আটকায়। পিছনে ফিরে দেখে ইনায়া রেহানের শার্টের হাতা এমনভাবে টেনে ধরেছে যাতে ওর হাতে স্পর্শ না লাগে। ইনায়া কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলে উঠল,
-“আপনি কি আমাকে একা এখানে ফেলে যাবেন! রা..রাতের ব্যাপারটার জন্য!”
ইনায়ার এমন প্রশ্নে রেহান প্রথমে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইনায়ার দিকে। তারপর মুখে হালকা বাঁকা হাসি এনে বলে,
-“তুমি কি চাও আমি তোমাকে এই জনমানবহীন রাস্তায় একা ফেলে যাই?”

নিস্তব্ধ বিচরণ
তানজিলা
পর্ব – ৩

রেহানের কথা শুনে মুহুর্তেই ইনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। একবার চারপাশে চোখ বুলালো ইনায়া। দু একটা গাড়ি চলছে। এছাড়া মানুষ তেমন একটা নেই এখানে। রেহানের শার্টের হাতা আরও শক্ত করে টেনে ধরলো ইনায়া। রেহান ইনায়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“তোমার কি আসলেই মনে হচ্ছে যে আমি এমন মূল্যবান কিছু এই শুনশান জায়গায় ফেলে চলে যাব!
ইনায়া অবাক চোখে তাকায় রেহানের দিকে। রেহান গাড়ির দিকে ইশারা করে এক ভ্রু উঁচু করে বলে,
-“আমি আমার গাড়ির কথা বলছি!”

রেহানের কথাটা কেন যেন ইনায়ার ভালো লাগলো না। না চাইতেও একরাশ অভিমান এসে ভর করলো ইনায়ার মনে। এই গাড়িটা কি ওর থেকেও বেশি প্রিয় রেহানের কাছে! প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেতেই সাথে সাথে নিজের মাথা দুইদিকে ঝাকাতে শুরু করলো ইনায়া। এমন প্রশ্ন কেন এলো ওর মনে! রেহান ইনায়াকে ঘৃণা না করলেই ওর জন্য অনেক!
ইনায়া রেহানের শার্টের হাতা নিজে থেকে ছেড়ে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো। রেহান কি যেন মনে করে গাড়ির কাছে এলো।
-“গাড়ির দরজাটা ভেতর থেকে লক করে নাও। আমি না আসা পর্যন্ত খুলবে না। কোন প্রবলেম হলে ফোন করবে!”
রেহান একটু সিরিয়াস ভয়েজে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চলে গেল। ইনায়াকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। এমনিও ইনায়া রেহানের সাথে তেমন একটা ভালো ভাবে কথা বলেনি। রেহান চলে যেতেই গাড়ির ভেতর থেকেই আশপাশটা ভালোভাবে দেখছে ইনায়া।

প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেছে। রেহানের আসার কোন খবর নেই। ইনায়া ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফোনের দিকে দ্বিধা ভরা চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ফোনটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। এই শুনশান জায়গায় একা বসে থাকতে ভিষণ অস্বস্তি লাগছে ওর।
হঠাৎ গাড়ির জানালার কাচে কেউ ধাক্কা দিতেই চিৎকার করে ওঠে ইনায়া। জানালার দিকে তাকাতেই দেখে এক মধ্য বয়স্ক লোক ওকে গাড়ির জানালার কাচ নামানোর জন্য ইশারা করছে। ইনায়া দ্রুত কিছুটা সরে বসলো। লোকটার পড়নে ছেঁড়া জামা কাপড় আর চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। দাত বের করে কেমন পাগলের মতো হাসতে হাসতে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে রেহানের নাম্বারে ডায়াল করছে ইনায়া। ফোন রিসিভ না হওয়ার আবারও ডায়াল করে রেহানের নাম্বারে। লোকটা এবার ক্রমাগত গাড়িতে লাথি দেয়া শুরু করলো। ইনায়া গাড়ির সিট থেকে আরও সরে বসলো। ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে ওর। বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ইনায়া। তাও যেন দম ফুরিয়ে যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। ফোনের ওপাশ থেকে রেহানের আওয়াজ শুনে ফোনটা কানে নিয়ে কথা বলতে গেলেও কেন যেন মুখ থেকে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না। লোকটার আর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ইনায়া গাড়ির জানালার কাচে তাকাতেই হাত থেকে ফোনটা ধপ করে পড়ে গেল।
লোকটা ইতিমধ্যে চলে গেছে। কিন্তু ইনায়ার চোখ এখনও গাড়ির জানালার কাঁচে স্থির হয়ে আছে।
পাশে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে খানিকটা লাফিয়ে উঠলো ইনায়া।

-“ফোন করেছিলে..!
রেহান কিছু বলতে গিয়েও থেমে থেমে গেল। গাড়ির জানালায় রেড মার্কার দিয়ে লেখা,

-“DON’T TRUST YOUR HUSBAND”

রেহান দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে লেখাটা মুছে গাড়ি স্টার্ট করলো। পূর্বের তুলনায় গাড়ির স্পিড এখন একটু বেশি মনে হচ্ছে ইনায়ার কাছে। শক্ত করে সিটবেল্টটা ধরে আছে। মনে একইসাথে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতিরা জমাট বেধেছে। ভয়, আশঙ্কা! রেহান চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। চেহারায় কেমন কাঠিন্যের ভাব। রেহানের চেহারায় কোন আকস্মিকতা বা বিস্ময়ের ছিটেফোঁটাও নেই।

হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ার টনক নড়লো ইনায়ার। এতক্ষণ নিজের মনে জেগে ওঠা প্রশ্নেই মগ্ন ছিল ইনায়া। রেহানের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবে বলে মনোস্থির করলো ও। বিয়ের প্রথম থেকেই রেহানের কিছু ব্যবহার ভিষণ ভাবিয়েছে ওকে।

-“এখানে সারাদিন বসে থাকার প্ল্যান আছে নাকি তোমার?”

রেহান গাড়ির দরজা খুলে ইনায়ার দিকে বিরক্তির নজরে তাকিয়ে আছে যেমনটা সবসময় থাকে। ইনায়া গাড়ি থেকে নামলো না। ঘটনাটা ওর মাথা থেকে বেরই হচ্ছে না। আর সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে রেহানের ব্যবহার। ইনায়া একটু শক্ত চোখে রেহানের দিকে তাকালো। তাকালো বলতে চেষ্টা করলো।
-“আ..আপনি..!”
বাকিটা আর বলতে পারলো না। রেহান হুট করে ইনায়ার খুব কাছে এসে পড়ায় ইনায়ার মুখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই রেহান সরেও গেল। ইনায়ার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। কি হলো কিছুই বুঝতে পারলো না। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিজের দিকে খেয়াল করে দেখলো সিটবেল্টটা খোলা। রেহান ততক্ষণে বাড়ির দরজার কাছে চলে গেছে। ইনায়া গাড়ি থেকে নামতেই সামনে থাকা ডুপ্লেক্স বাড়িটার দিকে নজর গেল। রেহান ধনী পরিবারের সন্তান। কিন্তু পরিবারের কারো সাথে খুব কমই কথা বলতে দেখেছে রেহানকে। বিশেষ করে রেহানের মায়ের সাথে।

রেহানের বাবা সম্ভবত ইনায়াকে তেমন একটা পছন্দ করেন না। রেহান ওর বাবার বিরুদ্ধে গিয়েই ইনায়াকে বিয়ে করেছে। আর রেহানের মা ইনায়ার সাথে ভালোভাবে কথা বললেও রেহানের থেকে দূরে দূরেই থাকে। প্রথম প্রথম বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা না ঘামালেও আজ এই পরিবারের সকল উদ্ভট বিষয় ওর মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। রেহানকে শুধু ওর দাদীর সাথেই কথা বলতে দেখেছে ইনায়া। নাজনীন সম্পর্কে ইনায়ার ননদ। ওকেতো বিয়েতে বা তার পরেও দেখেনি ইনায়া। আজই প্রথম দেখলো ওকে। ইনায়া তো জানতোই না রেহানের ছোট বোন আছে। সবকিছু এতটাই এলোমেলো হয়ে গেছিলো যে রেহানের ব্যাপারে ও কোন কিছু জানার চেষ্টাও করে নি। চাচা চাচীর মতকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়েতে হ্যাঁ বলেছিল। নিজ চিন্তায় ইনায়া এতটাই মগ্ন ছিল যে ওর শ্বাশুড়ির কথা ওর কানেই যাচ্ছিল না। হঠাৎ কাধে হাত পড়ায় পিছনে ফিরে তাকায় ইনায়া।

-“রেহানকে কফিটা দিয়ে আস।”
-“আমি?”
ইনায়ার প্রশ্নের জবাবে রেহানের মা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে।
-“আমি বাকিদের জন্য চা করে আনছি। রেহান চা পছন্দ করে না।”
ইনায়া কথা না বাড়িয়ে কফির মগটা রেহানের মায়ের হাত থেকে নিয়ে এসে দেখে রেহান নেই। ড্রইং রুমে শুধু রেহানের বাবা আর দাদী। রেহানের বাবা স্বভাবতই ইনায়াকে ইগনোর করে নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে আছে। রেহানের দাদাী ইনায়াকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
-“রেহান আমার রুমের বারান্দায় গেছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই প্রথম রুমটা আমার।”
ইনায়া রেহানের দাদীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সিঁড়ির দিকে গেল। রুমে ঢুকে নিঃশব্দে বারান্দার কাছে যেতেই রেহানের ফিসফিস করে বলা কথা কানে এলো ইনায়ার।

-“জান্নাত আমি এখনই ইনায়াকে তোর ব্যাপারে বলতে পারছি না। ও হয়তো…!”

পিছনে ফিরে ইনায়াকে দেখেই কথা থামিয়ে দিল রেহান।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here