নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব -১৬

0
2335

নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব -১৬
তানজিলা

দুপুরের দিকে পড়ে গিয়ে পা মচকে বসে আছে রেহানের দাদী জেরিন। খবর পেয়ে সবাই ছুটে আসে। ডাক্তার সম্পূর্ণ রেস্টে থাকতে বলেছে। নাজনীন জেরিনের পাশেই বসে আছে। রেহান আর ইনায়াও মাত্র এলো। দুপুরের দিকে ইনায়াকে নিতে গিয়েছিল রেহান। তখনই ওর দাদীর খবরটা শুনেই ইনায়াকে নিয়ে সোজা এ বাড়িতে এসেছে। জান্নাতকে একটু দেরিতে আসতে দেখেই মুখটা কালো করে সরিয়ে ফেললো জেরিন।

-“এতক্ষণ পর আসার সময় হলো! সারাদিন ঐসব পাগলদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকলে সময় হবেই বা কিভাবে!”

জান্নাত হাসিমুখেই ওর দাদীর সামনে গিয়ে বসলো। এসব কথা ওর জন্য নতুন কিছু না। জান্নাত পেশায় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট। এছাড়াও বেশ কয়েক বছর যাবৎ একটা মেন্টাল হেলথ্ অরগানাইজেশানের সাথে কাজ কাছ করছে ও। বিষয়টা জেরিন একদমই ভালো ভাবে নেয় না।
-“এই যে তোমার পা মচকানোর সাথে সাথে তোমার ছেলে বেস্ট ডাক্তার বাসায় নিয়ে এলো। সে যেই কাজ করে আমিও তাই করি। শুধু ধরণটা আলাদা। সে শারিরীক রোগের চিকিৎসা করে আর আমি মানসিক। ব্যাপারটাকে এতো তুচ্ছ ভাবে নিও না দাদী।”

জেরিন ঝাড়ি মেরে বললো,
-“আমাকে বুঝাতে আসিস না। তোর থেকে বেশি দুনিয়া দেখেছি আমি। একটাই ভয়, কবে না জানি তুই নিজেই পাগল হয়ে বসে থাকবি! তাহলে যদি একটু শান্তি হয় তোর!”
জান্নাত জানে এখন কিছু বললে শুধু কথাই বাড়বে। লাভ হয়তো হবে না।

তিন ভাই বোনের মধ্যে রেহানই শুধু জেরিনের চোখের মণি। ওর দিকে তাকিয়ে কোন কিছুতে মানা করতে পারে না। ইনায়ার ব্যপারটায় জেরিনের আপত্তি থাকলেও রেহানের ওপর কিছু বলতে পারেনি। ইনায়াকে খুব বেশি অপছন্দ করে তাও না। কিন্তু তারপরও মনে খুঁতখুঁত লেগেই আছে। বিশেষ করে ঐদিনের পর থেকে। ইনায়ার আর কোন সমস্যা আছে কি-না এ নিয়ে বেশ টেনশনে আছে জেরিন। বিয়ের পর কয়েকদিন মোটামুটি স্বাভাবিক মনে হয়েছিলো ওকে। সেজন্য ওতটা মাথা ঘামায় নি জেরিন। রেহানের জন্য অনেক কষ্টে মেনে নেয় ইনায়াকে।
কিন্তু বারবার এটা পারবেনা। এই বাড়ির মান সম্মান তো অর্ধেক গেছে। বাকি অর্ধেকও যাবে মনে হচ্ছে! এখন যদি ইনায়ার কোন মেন্টাল প্রবলেম থাকে তাহলে হয়তো অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে!দাদী হয়ে চোখের সামনে ছেলেটার জীবন এভাবে নষ্ট হতে কি করে দেখতে পারে ও! তারউপর জান্নাতও যদি উল্টাপাল্টা কিছু বুঝিয়ে দেয় ইনায়াকে! এই বাড়ির ছেলের বউ পাগল আর বাড়ির মেয়ে পাগলের ডাক্তার! কেমন বিচ্ছিরী দেখায় ব্যাপারটা!

রেহান আর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিলো জেরিন হঠাৎ ইয়াসমিনের কথায় টনক নড়লো।
-“মা, দুপুরের খাবার হয়ে গেছে প্রায়! এখনি খাবেন? তাহলে আপনার খাবারটা এখানেই দিচ্ছি।”
জেরিন মৃদু কন্ঠে ইয়াসমিনকে ঠিক আছে বলে রেহানকে নিজের কাছে এনে বসালো। নাজনীন, ইনায়া আর জান্নাত ইয়াসমিনের পিছু পিছু চলে গেল।

-“রেহান, কয়েকটা দিন এখানে থেকে যাবি?”
জেরিনের চাহনি দেখে না করতে পারলো না রেহান। খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে জেরিনের মুখে। ইনায়া চোখের সামনে থাকলেই বুঝা যাবে। যাই মেনে নিক কোন পাগলকে এই জেরিন বেগম কখনোই মেনে নেবে না। সেই ভয়ানক স্মৃতি মনে পড়লেই মাথা নাড়া দিয়ে ওঠে ওর। জান্নাতকে তো সামলাতে পারলো না। এখন যদি ইনায়াও সেই দলের হয়! মনে হতেও মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে জেরিন বেগমের। আবার মনে হয় ইনায়া তো স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে সবার সাথে। ভাঙা পা নিয়ে নিজ চিন্তার শহরে ডুবকি দিয়ে বসে আছে জেরিন।

ইনায়া সেই কখন থেকে ওর শ্বাশুড়ি ইয়াসমিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু জান্নাত আর নাজনীন সাথে থাকায় কিছু বলতে পারছে না। অপরদিকে হুট করে কোথা থেকে যেন মারিয়া এসে ইনায়ার ওড়না টানতে শুরু করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় ইনায়াও প্রথমে চমকে উঠেছিল পরে নিচে তাকিয়ে দেখে মারিয়া।
মারিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ইনায়ার দিকে। কিন্তু কিছু বলছে না। চুইংগাম খেতে খেতে ওড়না টেনে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে ইনায়াকে। স্টোর রুমে এসে থামলো ও। ওপরের একটা তাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,
-“আমাকে ওই বল টা নামিয়ে দাও!”
মারিয়ার মুখে চুইংগাম থাকায় কথাটা বুঝতে কিঞ্চিত সময় লাগে ইনায়ার।

একটা ছোট্ট টুলের ওপর দাড়িয়ে তাকের মধ্যে থাকা বলটা নিতে গিয়েও মনে হলো টুলটা কেমন যেন নড়বড়ে। হঠাৎ ঠাস করে নিচে পড়ে গেল ইনায়া। টুলের এক পায়া খানিকটা নড়বড়ে ছিল যেটা ইনায়া খেয়ালও করেনি। পায়ে ভিষণ চোট লেগেছে। মনে হচ্ছে মচকে গেছে। নিজ থেকে উঠতে গিয়েও পারছে না। ওপরদিকে ইনায়াকে হঠাৎ করেই এভাবে পড়ে যেতে দেখে মারিয়া বেশ ঘাবড়ে গেছে। ইনায়ার আগে মারিয়া নিজেই ছুটে গেলো চিৎকার করে পুরো ঘর এক করতে!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here