তুমিময়_অসুখ ২ পর্ব-১০

0
3854

তুমিময়_অসুখ ২ পর্ব-১০
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া

২৬.
বান্দরবান থেকে এসেছি কয়েকমাস কেটে গিয়েছে। আমার ভেতর বেড়ে উঠছে ছোট্ট একটা প্রাণ! কতকিছু সহ্য করতে হয়েছে ওর জন্য, এখন শেষ অবধি সব ঠিক থাকলেই হলো। আর অভ্র ভাইও এখন বেশ বুঝদার হয়েছেন। আমার খেয়াল রাখা ছাড়া যেন দুনিয়াতে আর কোনো কাজ নেই। তবে কথা দিয়েছে আমি সুস্থ হয়ে গেলে ওনি নিয়মিত অফিস যাবেন সাথে গ্র‍্যাজুয়েটটাও কমপ্লিট করবেন। সারাক্ষণ কিছু না কিছু খাওয়ানোর ধান্দায় থাকেন ওনি, আর আমিও ওনার কেয়ারে এখনো পর্যন্ত ফিট আছি। মামা-মামানি আর এই ছেলে তিনজন মিলে আমার এতোই খেয়াল রাখছে যেন আমি ঘরের দামি শোপিস! দিদা নিয়মিত নামাজ পড়ে আমাকে এসে দোয়া পড়ে ফুঁ দিবেনই। বড়-মা হবে বলে কথা! সবার কান্ড দেখে রীতিমতো হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাই। আব্বুও এখন ওনাকে ভরসা করেন!

সন্ধ্যাবেলা আমি বিছানায় বসে ওনার মোবাইল দেখছিলাম! অভ্র ভাইকে নিয়ে মামু একটু অফিসে গিয়েছে। হঠাৎ করেই পেটব্যথা শুরু হলো, বুঝতে পারলাম না কিসের জন্য এমন হচ্ছে। ক্রমশই ব্যথা বাড়ছে। এদিকে ডেলিভারির ডেটও খুব নিকটে। এই কথাটা মনে আসতেই ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। তাহলে কি আমার লেবা..র পেই..ন হচ্ছে?

ব্যথায় গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছিলো না। সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিতেই সেটা ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে গেলো! আমি চিৎকার করে বললাম, ‘দিদা…মামানি!’

ওরা দৌড়ে এলো। আমাকে ব্যথায় কাতরাতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হয়েছে বাবুনিটা?’

আমি কান্না কর‍তে করতে বললাম, ‘পেটে ব্যথা।’

দিদা বললো, ‘মনে হচ্ছে লেবার পেইন!’

মামানিও মাথা নাড়ালো। এদিকে আমার অবস্থা কাহিল, মনে হচ্ছে মরে যাচ্ছি। চোখে সব অন্ধকার, কালো, বিমর্ষ দেখছি। চেষ্টা করছি সজাগ থাকার, যদি মরে যাই তাহলে? আর কাউকে দেখতে পাবোনা। জোর করে চোখ খোলার চেষ্টা করে সামনে থাকা দিদা আর মামানিকে আধো আধো দেখলাম। ওনারা আমায় মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। কিন্তু কি বলছেন আমি শুনতে পাচ্ছিনা।

২৭.
কত্ত পাগলামি করেছেন এই ক’টা মাস! আমাকে পুরো মাথায় করে রেখেছেন। প্রতিরাতে আমার পেটে কান লাগিয়ে বেবিদের নড়াচড়া টের পেতেন। কথা বলতেন, গান গাইতেন। ওনার এগুলো দেখে আমি কত হাসতাম। ‘মা’ হওয়ার সময়টা পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের কাজ। এর চেয়ে বড় আনন্দ দ্বিতীয়টি নেই। সবকিছু এক নিমিষেই স্মৃতির পাতায় খেলে গেলো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কান্নারত চিৎকার, চেঁচামেচি, আর্তনাদ ওনাকে দেখতে চাইনা। না ওনাকে আমার কষ্টের ভাগীদার কর‍তে চাই। এমনিতেই লোকটা বেশ সেনসিটিভ। আমাকে হারানোর ভয়ে প্রথম দিকে যা পাগলামো করেছিলো সেগুলো আমার মনে পড়ছে। আর সেজন্যই ওনাকে এই খবর জানাতে চাইনা। সবকিছু ঠিকঠাক হলে জানানো যাবে, আপাতত নয়।

মামানি প্রথমেই ওনাকে ফোন করতে গেলে আমি এসব বলে আটকাই। মামাকে ফোন করে সবটা জানানো হয় এবং অভ্র ভাইকে কিছু না জানাতেও বলে দেওয়া হয়। তারপর আব্বু-আম্মুকে ফোন করা হয়!

হসপিটালে নিয়ে যাওয়ায় পরে ডাক্তার দেখলো আমাকে, জানালেন সিজার করতে হবে। কারণ আমার টু-ইন বেবি হবে। মামা, আব্বু ডাক্তারের কথায় সায় দিলেন। আমাকে ওটি’তে নিয়ে যাওয়ার পরে অনেক রিকুয়েস্ট করলাম যাতে সিজার না করা হয়। একসময় বাধ্য হয়ে ওরা আমার কথা মেনে নিলো।

_________

২৮.
বেশ কিছু সময় পরে আমি আবছা চোখে দেখলাম ডাক্তারের কোলে বেবি, আরেকজন নার্সের কোলে। চিৎকার দিয়ে ওরা কান্না করছে। আমার কাছে মনে হলো এর থেকে মধুর মুহূর্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই! ব্যথায় তখন আস্তে আস্তে জ্ঞান হারালাম।

তখন রাত প্রায় নয়টা। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর অভ্র ভাইকে ফোন করে জানানো হলে ওনি এতই অবাক হলেন যে ফোনে কয়েক মিনিট কিছু বলতেই পারলেন না। সাথে সাথেই রওনা দিলেন অফিস থেকে। হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে এসেই রেগেমেগে একাকার হয়ে গেলেন। কেন তাকে জানানো হয়নি, কি করে সব হলো। সবাই ওনার কান্ড দেখে হাসাহাসি করছে!

একসময় দিদা খুশিখুশি গলায় জানালেন, ‘যে তাদের ফ্যামিলিতে একটা দু’জন এসেছে! ওনি অবাক হয়ে বললেন, ‘কখন ঘটলো এসব?’

মামানি বললো, ‘সন্ধ্যার দিকে ব্যথা হচ্ছিলো প্রচুর। আমরা পরে হসপিটালে নিয়ে আসি। এখানে নিয়ে আসার পর ডাক্তার ইমিডিয়েট সিজার করতে বলে,নইলে মা-বাচ্চা দুজনের জন্যই রিস্ক! আমরাও সিজারে সম্মতি দিয়েছিলাম, কিন্তু ইরু বারবার মানা করে ডাক্তারদের। জোর করে অনেক সিজার না করতে, ও নাকি পুরো মাতৃত্বের স্বাদ নিতে চায়। জানিস, তখনও ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদছিলো। মেয়েটার কত সাহস দেখলি! আর এসব ও অপারেশন থিয়েটারে নাকি ডাক্তারদের বলেছে। আমরা জানলে কখনোই হতে দিতাম না। আমি তো এখনো শুনে কাঁপছি!’

অভ্র ভাইয়া রেগে বললেন, ‘আব্বু জানতো? আমাকে তো বলেনি?’

মামানি বললো, ‘তুই ইরু’র এই অবস্থা দেখে কষ্ট পেতিস! তাই ইরু না করেছে।’

‘ আমি কি বাচ্চা নাকি? আমার ইরু মা হয়েছে, আমি বাবা হয়েছি আর আমিই নেই? তোমরা কিন্তু আমার সাথে ফ্রট করলে! ইরুনিকে জাস্ট ভালো হতে দাও, এতো সাহস নিয়ে ঘুরে। হাত-পা কেটে রেখে দেবো। আর কখনো যাতে বাচ্চাবাচ্চা না করে!’

মামানি মুচকি মুচকি হাসছেন। সাথে আব্বু-আম্মুও। ইতস্তত করে মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়ে…বেবিরা কোথায়?’

‘অবজার্ভেশন রুমে আছে। একঘন্টা পর দিয়ে দেবে আমাদের কাছে!’

‘ ওহ! আর ইরুনি? কোথায় এই মহিলা?’

‘ কেবিনে শিফট করা হয়েছে। অবজারভেশনে ছিলো কিছুক্ষণ। নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে প্রবলেম নেই।’

আমি আকাশপাতাল ভাবছি। আমিও আজ মা হয়ে গেলাম, কিন্তু ওদেরকে এখনো দেখিনি। ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে কিছুই জানতে পারছিনা। একহাতে স্যালাইন লাগানো, বেডে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো আমার, কারণ আমি অনেক ক্লান্ত!

এক সময় কেবিনের দরজা খুলে অভ্র ভাই ঢুকলেন। দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে আছেন। তবুও বোধহয় নিজেকে সামলে নিলেন। ওনি আমার পাশে বসে বললেন, কিরে, আমাদের যে দু’জন এসেছে, জানিস তো?

আমি হাসিহাসি মুখ করে বললাম, জানি।

‘ মন খারাপ নাকি?’

‘ নাহ তো!’

‘ তাহলে কৃত্রিম হাসি দিচ্ছিস কেন?’

‘ কই.. না তো!’

‘ আর কিন্তু বাচ্চা নিবিনা, ওকে?’

আমি রেগে বললাম, ‘ আসলে আপনি এখনো ওদের মেনে নিতে পারেননি, তাইনা? আপনি খুব খারাপ লোক, বাবা হবার যোগ্যতা নেই!’

ওনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আরে রাগছিস কেন!’

‘ খুশিতে, ঠ্যালায়। দূর হন সামনে থেকে!’

‘ তোর সাহস আজকাল বড্ড বেড়েছে।’

‘ বাড়বেই তো। বখাটের বউ বলে কথা।’

‘ এরকম বলতে পারলি?’

‘ এমনি বললাম, স্যরি। আচ্ছা আপনি ওদের দেখেছেন?’

ওনি না জানার ভান করে বললেন, ‘কাদের?’

আমি একটু রাগী চোখে তাকালাম। বললাম, ‘আমার বাচ্চাদের।’

‘ ওহহ, না। তোর বাচ্চাদের দেখিনি। কিন্তু আমার বাচ্চাদের দেখেছি।’

আমি হেসে বললাম, ‘কেমন দেখতে ওরা?’

‘ মনে হয় কিছু খায়না ওরা। দেখতে ক্যাঙারুর মতো। বুঝলাম না, এতো এতো খাওয়ালাম তোকে
আর এমন ক্যাঙারু হলো কেন? তারপর আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো, ‘তুই মনে হচ্ছে ওদের কিছু খেতে দিসনি, সব একাই সাবাড় করেছিস তাইনা? খাদক একটা!’

২৯.
আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝলাম না। দরজা খুলে দুজন নার্স ঢুকলো। দুজনের কোলেই দুটো বাচ্চা, নিশ্চয়ই আমার! ওদের দিকে তাকাতেই শিরশির করে উঠলো শরীর। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, ‘আমার বাচ্চারা!’

দুজনের একজনকে আমার পাশে শুইয়ে দেওয়া হলো খুব সাবধানে। আরেকজনকে নার্স অভ্র ভাইয়ের কোলে দিতেই ওনি ভয়ে ভয়ে নিলেন। আমার দিকে অসহায় চোখে তাকালেন। কারণ ওনি ছোট্ট বাচ্চা কোলে নিতে পারেন না। নার্স হেসে বললেন, ‘আপনার মেয়েকে আপনি ভালো করে কোলেই নিতে পারছেন না। সামলাবেন কিভাবে?’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ কি হয়েছে আমার?’

‘ একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। আপনার পাশেরজন ছেলেবাবু।’

আমি তাকিয়ে দেখি মিটিমিটি চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার ছেলে। আমি ওর আঙুল ধরতেই শক্ত করে ধরলো। ওদিকে ওনার কোলে আমার মেয়ে ঘুমিয়ে আছেন। বাবা-মেয়েকে দেখতে কি সুন্দরই না লাগছে।

নার্স আমাকে বললো, ‘নিন খাওয়ানোর ট্রাই করুন।’

আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কি খাওয়াবো? আমি তো জানিনা।’

নার্স আড়চোখে একবার ওনাকে দেখে নিয়ে বললো, ‘ফিডিং করাতে বলেছি।’

আম্মু আর মামানি এলো এমন সময়। বললো, ‘দাঁড়া আমি সাহায্য করছি।’

অভ্র ভাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমার ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে যাই। কি লজ্জ্বা…ইয়া খোদা!

আম্মু আমার কাছে আসতেই বললাম, ‘ওনাকে বলো এখান থেকে যেতে। প্লিজ!’

‘ মানে? আমি এখান থেকে যাবো কেন? আজব!’

মামানি ধমকে বললো, ‘যা বলছি। বাইরে গিয়ে বসে থাক। তোর এখানে কাজ কি?’

‘ বাচ্চা আমার, বউ আমার। আর আমিই চলে যাবো? যেতে হয় তোমরা যাও।’

‘ বুঝছিস না কেন? ওদেরকে খাওয়ানোটা খুব দরকার। তুই গিয়ে রসগোল্লা নিয়ে আয়, বাবা হয়েছিস আর আমরা মিষ্টিমুখ করবোনা?’

অগত্যা ওনাকে বেরুতেই হলো। আম্মু, মামানি আর আমি হেসে দিলাম।

______

৩০.
হসপিটাল থেকে একমাসের উপর হলো এসেছি। এই ক’দিন বাড়ির আলাদা রুমে থেকেছি আমি, মামানি আর বাচ্চারা। দুজনের নাম রাখা হয়েছে “তুতুন-পুতুন।” পুতুন বেশ শান্তশিষ্ট, আমার মতোই। বাপের কলিজা সে। আর তুতুন বাপের মতো রাগী, চিল্লিয়ে বাসা মাথায় তুলে। ওকে আমি আমার কলিজা বানিয়ে ফেলেছি। কারণ ওনি যখন রোমান্স করার উদ্দেশ্যে এই রুমে আসেন তখন তুতুনের চিৎকারে বেচারা বোকা হয়ে যায়। এতোদিনেও বাচ্চা কোলে নেওয়াটা শিখতে পারেনি। দু-ভাইবোন সারাদিন এইরকমই করে। এখন একটু বড় হয়েছে যদিও। পুতুন বাবার মেয়ে, দেখতেও ওনার মতো। তুতুন আমার মতো। গালগুলো টকটকে লাল। এই ছেলে যে বড় হয়ে বাপের মতোই আউলাঝাউলা হবে সেটা আমি নিশ্চিত।

কিন্তু আজ, সন্ধ্যা থেকেই অভ্র ভাই গো ধরেছেন এই রুম বাদ দিয়ে ওনার রুমে গিয়ে থাকতে। কিন্তু আমি মানা করাতেই ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেললেন। একপর্যায়ে বললেন,

‘ তোর বরটা একা ঘুমাতে যাবে কেন বউ-বাচ্চা থাকতে? সে রাতে ভয় পায়।’

‘ ওহহ! তাই বুঝি?এত দরদ? বাহ!’

‘ হবেই তো।একটা মাত্র বউ আর দুইটা মাত্র বাচ্চা আমার! এতোবড় ঘর থাকতে ওরা কেন আলাদা ঘরে থাকবে? আমি স্রেফ বলে দিচ্ছি আমি আমার মেয়ের সাথে থাকবো, গট ইট??’

আমি কটমট করে ওনার দিকে তাকালাম। মামানি হেসে বললেন, ‘আজ থেকে রুমেই থাকতে পারিস। রাতে “তুতুন-পুতুন” কান্না করলে আমাকে ডাকিস।’ অতঃপর সেই রুম থেকে বেরিয়ে আমার আর অভ্র’র ঘরে চলে এলাম। পেছন থেকে দিদা হাসছেন। আমি রুমে এসেই ওদের বিছানা ঠিকঠাক করে খাইয়ে শুইয়ে দিলাম। নিজেও শুয়ে পড়লাম।আর ওনি ওয়াশরুম থেকে গোসল করে এসেছেন। রাত-বিরেতে এই গোসল দেওয়ার অভ্যাসটা এখনো আগেরমতোই আছে। ওনি টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে চুল ঝাড়ছেন। তারপর আ।আমার পাশে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, ‘কি হয়েছে আমার বউটার?’

আমি রেগে বললাম, ‘ আপনার জন্য আমি মামানির কাছে থাকতে পারিনি।সব দোষ আপনার!’

‘আহা! এতো রাগ করতে নেই। আমি যে এতোদিন একা থেকেছি সেটার কোনো দাম নেই, তাইনা?’

আমি চুপ করে আছি। ওনি হঠাৎ রেগে বললেন, ‘তোর কি আমার কাছে থাকতে ভালো লাগেনা? ওহহ… লাগবে কিভাবে? তুই আসলে যেরকম দেখাস সেরকম তো নস! তুই তো অন্য কাউকে ভালোবাসিস, সেজন্যই তো আমার সন্তানদের মারতে চেয়েছিলি!’

আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘মানে?’

‘ তোর একটা বয়ফ্রেন্ড আছেনা? যার সাথে তুই থাকতে চাস?’

‘ কি আজব। উল্টাপাল্টা কথা বলছেন কেন?’

ওনি ওনার মোবাইল এনে আমাকে কিছু ম্যাসেজ দেখালেন। যেগুলো আনিশা আপু বলেছিলো। আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘সিরিয়াসলি? আপনি এতো বোকা?’

‘ খুব হাসি পাচ্ছে?’

‘ পাবেই তো। কারণ এই বিষয়টা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। এটা আনিশা আপু ছিলো, যিনি আমার বয়ফ্রেন্ড সেজে আপনার মাথা থেকে পাগলামির ভূত সরিয়েছিলো। আর দেখুন, আপনি সত্যি সত্যিই এগুলো বিশ্বাস করে কেমন করে আমাকে, আমাদের বাচ্চাদেরকে মেনে নিলেন। সবকিছু ইলহাম আর আপুর প্ল্যান ছিলো।ল। হা হা হা!’

ওনি বোকা বনে গেছেন। ভাবতেই আমি হাসি চেপে রাখতে পারছিলাম না। হেসে দিলাম।

ওনি গাঢ় নিঃশ্বাস ফেললেন। মনে হচ্ছে বুক থেকে বহুদিনের চেপে দেওয়া পাথর নামালেন। আমার দিকে নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ডুবিয়ে বললেন, ‘আমি কিন্তু বিশ্বাস করিনি এসব। কিন্তু একটা ছোটখাটো সন্দেহ ছিলো। যদি সত্যিই তুই এরকম করতি তাহলে আমি পাগলই হয়ে যেতাম। তুতুন-পুতুনের আব্বুকে আর দেখতি না তুই। আচ্ছা, সেদিন হসপিটালে ফিডিং করানোর সময় আমাকে সবাই তাড়িয়ে দিলো কেন? আমি তো তোর বরই।

উনার কথা শুনে আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। এসব কি বলার কথা ওনাকে? আজব লোক।ইশ…কি লজ্জ্বায় পড়লাম রে বাবা!

আমি হুট করে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। ওনি বললেন, ‘কি হয়েছে?’

‘ আমি যাচ্ছি। দিদার ঘরে থাকবো। বাচ্চাদের আপনি খেয়াল রাখবেন একটু।’

আমি আর কিছু বলতে যাবার আগেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি হাত-পা ছুড়ছি নামানোর জন্য, কিন্তু অসভ্যটা ছাড়ছেই না।

‘পকপক বন্ধ কর। নইলে আছাড় মারবো। এতদিন থেকেও আশ মেটেনি? পা কেটে রেখে দেবো। বলেই বিছানার উপর ধপাস করে ফেলে দিলেন উনি।

ওফফ! তুই কি বোকা ইরু! এতো লজ্জ্বা পাওয়ার কি আছে? আর আমি তো দেখেছিই কিভাবে ফিডারিং করাস।

আমি চোখ বড়বড় করে বললাম, মানে? আপনি কি লুনুষ! নিশ্চয়ই লুকিয়ে লুকিয়ে তাইনা?

‘ এখানে লুনুষের কি হলো? রোমান্স…..’

‘ লাগামহীন কথাবার্তা বন্ধ করুন তো!’

‘ তাহলে আমার ইচ্ছেটার কি হবে? বাঁকা হাসি দিয়ে আমার দিকে এগুতে এগুতে বললেন!’

‘ওফ, সরুন তো। সবসময়….’

‘ ভয় পাচ্ছিস নাকি?’

‘ মোটেও না!’

‘ মোটেও হ্যাঁ।’

উনি আমার মুখ চেপে ধরে বললেন, ‘হু…স.স! একদম চুপ করে থাক!’

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি আমার ঠোঁটের কাছে আসতে নিলেই অমনিই “তুতুন” চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। তুতুনের চিৎকারে “পুতুন” ও ওঠে গেলো। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, কাঁদছেনা। ভাইয়ের দিকেও ঘুরে ঘুরে দেখছে, ভাই তো চিল্লিয়ে বাপকে হারিয়ে দিলো!

ওনি আমার দিকে, আর আমি ওনার দিকে তাকালাম। বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছেন তুতুনের দিকে। বেচারা বাপের উপর হিসু করে বসে আছে। আমি এদিকে হাসতে হাসতে শেষ! এখন আবার ওনাকে শাওয়ার নিতে হবে। রোমান্সের চব্বিশটা বাজিয়ে দিয়েছে তুতুন। এই না হলে বাপের ব্যাটা?

আমি সবকিছু দেখে হাসলাম। এরকম তুমিময় অসুখে কে না পড়তে চায়? একজনকে হারানোর ভয়ে অন্যজন সারাক্ষণ পাগল পাগল হয়ে থাকে, তারপরও বিশ্বাস করতে চায়না যে সে তুমিময় অসুখে আক্রান্ত! পৃথিবী চলতে থাকুক এমন অসুখে, যেই অসুখ ভালোবাসার অসুখ। যে অসুখ কখনো দূরে যেতে দেয়না, সেই অসুখ তো আদিকাল থেকেই চলে আসছে। স্রষ্টা ছাড়া এই অসুখ কেউ মন থেকে, জীবন থেকে মুছতে পারেনা।

___

সিজন(৩) আনার ইচ্ছে আছে। এটা তাড়াহুড়ো করে শেষ করার জন্য দুঃখিত। অগোছালো লেখা, ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকলেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আর গল্পের স্বার্থে কিছু এডাল্ট কথা লিখে ফেলেছি। সেগুলোও ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো থাকবেন।

?”ইসলামী নিয়মে রাস্তায় টাকা পেলে- রাস্তায় টাকা-পয়সা পাওয়া গেলে খোঁজা খুঁজির পরও মালিকের সন্ধান না পেলে কি করা যায়। এ ব্যাপারে অনেকেই বলে থাকেন ওই টাকা মসজিদে দিয়ে দেওয়া যায়।

কিন্তু বিজ্ঞ আলেমরা বলছেন, রাস্তা-ঘাটে পাওয়া টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, যদি টাকার পরিমাণ এত কম হয় যে, মালিক তা অনুসন্ধান করবে না বলে মনে হয় তবে কোনো ফকীরকে তা সদকা করে দিবে।

আর যদি অনেক টাকা বা মূল্যবান কোনো বস্তু পাওয়া যায় এবং মালিক এর খোঁজে থাকবে বলে মনে হয় তাহলে ঐ স্থান ও আশপাশ এবং নিকটবর্তী জন-সমাগমের স্থানে

(যথা মসজিদের সামনে, বাজারে, স্টেশনে ইত্যাদিতে) প্রাপ্তির ঘোষণা দিতে থাকবে এবং প্রকৃত মালিক পেলে তার কাছে হস্তান্তর করে দিবে।

কিন্তু এরপরও যদি মালিক না পাওয়া যায় এবং মালিকের সন্ধান পাওয়া যাবে না বলে প্রবল ধারণা হয় তাহলে তা কোনো গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দিবে। প্রাপক দরিদ্র হলে সে নিজেও তা রেখে দিতে পারবে।

আর কুড়িয়ে পাওয়া টাকা মসজিদে দেওয়া যাবে না। কেউ মসজিদে দিয়ে দিতে বললে সেটা ঠিক নয়!”

~ সূত্র: ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৭৮; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৭১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here