তুমি আমারই থাকবে,part: 3

0
5613

তুমি আমারই থাকবে,part: 3
Writer: Zunaisha Mahira

“তনয়” নামটি তানহার মাথায় ঘুরছে তখন শুধু…ভাবছে যে তনয়ের নাম সে ছোট থেকে শুনে আসছে এই ছেলেই কি সেই তনয়??

হঠাৎ এক মহিলার আওয়াজে ধ্যান ভাংগে তার,

-আরে, তানহা না? আমি তনয়ের মা।অনেক বছর পর দেখলাম তোমাকে।ছোটবেলায় তো চকলেটের জন্য পাগল ছিলে। আমরা বাসায় আসলেই চকলেট চাইতে। এখন তো অনেক বড় আর সুন্দরী হয়েছো বটে!(তানহার গালে হাত রেখে)

সবার সামনে এভাবে চকলেটের কথা বলায় লজ্জা পেলো তানহা। সামনে তাকিয়ে দেখে তনয়ও একিভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তানহা বুঝতে পারে সেও তাকে এখানে এভাবে দেখবে আশা করেনি।
এদিকে তনয় আর তানহাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আকরাম সাহেব বলেন,

-চলো তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই। বাবা তনয়,এটা আমার মেয়ে তানহা আর তানহা এটা হলো তোমার ইকবাল আংকেলের ছেলে তনয়।

তানহা আর তনয় শুধু চেয়ে আছে একজন আরেকজনের দিকে।

-তানহা মা,কেমন আছো? কতদিন পর দেখলাম তোমাকে!

-ভালো আছি আংকেল। আপনাদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো খুব!

-আমরাও খুব খুশি তোমাদের সাথে আবার দেখা করে।

তারপর সবাই গল্প-আড্ডা শুরু করলো।খাওয়া-দাওয়ার পর হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে গেলেন আকরাম সাহেব ও ইকবাল সাহেব।

-তানহা ও তনয়, তোমাদের দুইজনকে অনেক গুরুত্বপুর্ণ কথা বলার জন্য আজকে দেখা করেছি।

তানহা কিছু বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে। তনয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সেও একিভাবে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে।

-তোমরা এখন যথেষ্ট বড় হয়েছো। তাই তোমাদের থেকে এই বিষয়টি আর লুকিয়ে রাখা উচিত না বলে মনে করি।

লুকিয়ে রাখা বিষয় শুনে বড়সড় এক ঢোক গিললো তানহা। ইকবাল সাহেব বললেন,

-আমার খুব শখ ছিলো যে আমার একটি মেয়ে হবে কিন্তু তনয় হয়েছিলো তখন। তার কয়েকবছর পর আকরামের এক ফুটফুটে মেয়ের জন্ম হয়।আমিই আকরামকে বলে তার মেয়ের নাম রাখি তানহা, তনয়ের নামের সাথে মিল রেখে!
তানহা আর তনয় দুইজনের দিকে চেয়ে আছে শুধু..

-তারপর ইকবালের বিজনেসের জন্য শহর ছেড়ে যেতে হয়।ইকবালের খুব ইচ্ছা ছিলো তানহাকে ছেলের বউ করবে বড় হলে কিন্তু ভবিষ্যতে কবে দেখা হবে না হবে এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলোনা দেখে তখনই তনয় আর তানহার বিয়ের কাবিন করে রাখা হয়।(আকরাম সাহেব)

তানহা আর তনয় যেন আকাশ থেকে পড়লো এটা শুনে।

-ওগুলো আমি কি শুনছি বাবা? (তনয়)
-হ্যা রে বাবা,এটাই সত্যি।(ইকবাল সাহেব)
-কিন্তু তুমি জানো আমি মিশাকে পছন্দ করি?
-পছন্দ করা আর ভালোবাসা এক কথা নয় বাবা। তানহা তোমার বউ। আমি তো জানতাম না তুমি আরেকজনকে পছন্দ কর, যখন জেনেছি তখনই তোমাকে নিয়ে এসেছি এই কথা বলার জন্য।

-বাবা তুমিও আমাকে বলোনি কেন কিছু? (তানহা ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে)
-আমি বলতে চেয়েছিলাম মা কিন্তু ইকবাল বলেছিলো তোকে আর তনয়কে একসাথে বলবে তাই আমিও বলিনি আর।

তানহা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। সে একজনের বউ কিন্তু সেটা সে জানতোও না। তখনই ওর মনে পড়লো তনয় তো বলেছিলো ওর গার্লফ্রেন্ড আছে। না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো তানহার।

এত বছর পর যখন জীবনের সবচেয়ে বড় এক সত্যের সাথে তার পরিচয় হলো সেও অন্য একজনকে ভালোবাসে! যদিও এখানে তনয়ের দোষ নেই কারণ সে নিজেও জানতো না যে ওর সাথে তানহার জীবন জড়িত আছে।

এক মাস আগে এই শহরে ফিরে এসেছে ইকবাল সাহেবের পরিবার তাই ছেলের বউকে এখন বাড়িতে নিয়ে যেতে চান তিনি। এইজন্যই ছুটে এসেছেন তানহাদের বাসায়।

তানহা আর তনয়কে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য সময় দিলেন তারা। ছাদে গেলো তনয় তানহার সাথে..

-শক খেয়েছো নিশ্চয়ই এখানে আমাকে দেখে,তাইনা?(তনয়)

তানহা চমকে উঠে তাকালো ওর দিকে যে কত সাধারণভাবে এখনও কথা বলছে তনয় যেন বিয়ের কথা শুনেইনি সে!

-হুম।তা তো বটেই! আপনি অবাক হননি আমাকে দেখে?

-হয়েছি কিন্তু যখন শুনলাম তুমিই তানহা তখন অত অবাক হইনি কারন তোমার কথা বাবা অনেক সময়ই বলতো বাসায় কিন্তু কখনও জানতাম না যে তুমিই আমার ব..(থেমে গিয়ে)

তনয়ের দিকে তাকিয়ে তানহা ভাবছে যে ছেলে ওকে বউ বলতেও ইতস্তত করছে সে কিভাবে এই বিয়ে মেনে নিবে?

তানহার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে তনয় বলে উঠে,
-তুমি আমাদের সাথে বাসায় যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যাও।

-কেন? আপনি তো এই বিয়ে মানেন না তাই না? তাহলে বাসায় যেতে বলছেন কি জন্যে?

-দেখ তানহা, এখন আমরা দুইজন মানা করলেও কেউ রাজি হবেনা। কিন্তু আমাদের বাসায় যেয়ে সবার সামনে এমন বিহেভ করব যেন আমাদের মধ্যে কোন মিল নেই, সারাদিন ঝগড়া হয়েই থাকে তাই আমাদের একসাথে থাকা সম্ভব না। তখন নিজেরাই আমাদের বিয়ে ভেংগে দিবে আর ৬ মাস পর এমনিই হবে ডিভোর্স।

তনয়কে শুধু চেয়ে দেখছে তানহা। এইটুকু সময়ে কিরকম একটা বুদ্ধিই না বের করলো এই ছেলে।

-আই হোপ তোমারও কোন আপত্তি নেই,রাইট? তোমার লাইফেও হয়তো অন্য কেউ আছে তাইনা?(তানহার দিক চেয়ে)

তনয়ের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো তানহা।সারাজীবন ভেবেছিল স্বামীকে ভালোবাসবে আর আজকে তার স্বামীই তাকে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা বলছে!!

-কি হলো কি ভাবছো?

-কিছুনা, কিন্তু এতে সবাই কস্ট পাবে। আপনার কি মনে হয়না যে এটা ঠিক নয়?

-দেখো,আমি বাবাকে যতদূর জানি, আমরা যদি এখন ডিরেক্ট মানা করে দেই তাহলে তারা জোর করে হলেও আমাদের একসাথে রাখার চেষ্টা করবে কারণ আমরা এখনও লিগ্যালি হাসবেন্ড ওয়াইফ। তাই তাদের মনে করতে দেও যে,আমরা রিলেশনটাকে একটা চান্স দিয়েছি কিন্তু সেটা টিকেনি।

-(চুপ)

-রাজি হচ্ছো না?চিন্তা করোনা।আমি ডিভোর্স এর সময় সবাইকে বলব যে এটা আমার প্ল্যান ছিলো আর তুমি আমার হেল্প করেছিলে।প্লিজ আমার এই হেল্পটা কর।

-আপনার কাছে হয়তো সবার ফিলিংস এর মূল্য না থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আছে। স্যরি তনয়।

-তুমি এখন আমাকে যেরকম ভাবছো আমি অতটাও খারাপ না তানহা। বাবার কথা আমি অমান্য করতে পারব না আবার নিজের জীবনের এত বড় ডিসিশন হুট করেই নিতে পারব না আমি। তুমি সবাইকে যতটা ভালোবাসো আমিও সবাইকে ততটাই ভালোবাসি কিন্তু এইবার আমি হেল্পলেস। আমার অবস্থাটা একটু বুঝো প্লিজ?

তানহা কিছু না বলেই নিচে চলে গেলো।

তানহা কি তনয়ের প্ল্যানে রাজি হবে? নাকি অন্য কোন ডিসিশন নিবে? কি মনে হয়?

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here