তুমি আমারই থাকবে,Part:11

0
3537

তুমি আমারই থাকবে,Part:11
Writer:Zunaisha Mahira

তানহার পিছে তনয় রুমে চলে আসে। তানহা কিছু না বলে বেডে বসে। তনয়ও ওর পাশে গিয়ে বসে। তানহা সেটা দেখে একটু সরে বসে। তনয় ভ্রু কুচকে ওর দিক তাকিয়ে এগিয়ে যায়। তানহা আবার সরে, তনয় আবার এগিয়ে যায় ওর দিকে। শেষে তানহা সরতে সরতে পড়ে যেতে নিলে তনয় হাত দিয়ে ওর কোমর ধরে নিজের দিক টেনে আনে এবং বলে,

-কি সমস্যা তোমার বলো তো?
-আপনাকে কেন বলব আমি?
-আশ্চর্য! আমার উপর রাগ দেখাচ্ছো আবার বলছো আমাকেই কেন বলবে? (বিরক্ত হয়ে)
-আপনি আমাকে কিছু বলেন যে আমি আপনাকে বলব? (অন্যদিক হয়ে)
-কি বলিনি আমি তোমাকে?(অবাক হয়ে)
-মিশা আপুর সাথে আপনি কাল দেখা করেছিলেন, তাইনা? (তনয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে)

তানহার মুখে মিশার কথা শুনে তনয় অনেক অবাক হয়ে গেলো। তানহাকে তো সে বলতে চেয়েছিলো কিন্তু ভুলে গেছে পরে। এখন সে ভাবছে তানহা কিভাবে জানলো মিশার কথা! তনয়ের ভাবনার মাঝে তানহা বলে,

-কি হলো বলুন!
-ওহ হ্যাঁ, করেছিলাম দেখা মিশার সাথে! কিন্তু বাসায় এসে তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছি।
-তা তো ভুলবেনই। আমি তো কেউ না। আমাকে তো আর বন্ধু মনে করেননা আপনি যে আমাকে সবকিছু বলবেন!
-এইভাবে বলছো কেন? আমি কাল রাতে বলতে চেয়েছিলাম তোমাকে মনে আছে?

এবার তানহা কিছু বলেনা কারণ তনয় সত্যিই রাতে বলতে চেয়েছিলো পরে দুইজনই ভুলে গিয়েছে।
এবার সে বলে,
-আমাকে বন্ধু ভাবেন সত্যিই?
-সত্যি।
-তাহলে আমাকে আপনার আর মিশা আপুর কাহিনি শুনান।
-হোয়াট? এটা শুনে কি করবা তুমি?
-বলুন না প্লিজ। আমি শুনবো প্লিজ।

তারপর তনয় তানহাকে ওর আর মিশার কাহিনি বলল,কিভাবে ওদের রিলেশন শুরু হয়েছে তা বলল। সব শুনে তানহা ভাবলো,ননদিনী আমার ঠিকি বলেছে এই ছেলের কাছে সম্পর্ক দায়িত্ব ছাড়া কিছুই না।তাহলে তো মিশার ভুত এর মাথা থেকে নামানো যাবে! ভাবতে ভাবতে তানহা হেসে ফেললো!

তানহাকে হাসতে দেখে তনয় বলল,
-আজকেও তুমি একা একা হাসছো?তোমার কি মাঝেমধ্যে পাগল হওয়ার রোগ আছে?
তনয়ের কথা শুনে তানহা ওর হাতে আলতো করে মেরে বলল,
-আমি খালি এগুলো বলেন আমাকে। আপনি খুব খারাপ। আস্ত একটা খাটাশ!!
-এই আমাকে খাটাশ বললা কেন তুমি? আমি প্রতিদিন গোসল করি।
-ছিইই। আপনি তাও একটা খাটাশই থাকবেন।
-আরেকবার যদি খাটাশ বলেছো না তাহলে..
-কি করবেন হ্যাঁ? খাটাশকে খাটাশ বলব না তো কি বলব? আপনি একটা..

বলার আগেই তনয় তানহার হাত ধরে টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে যায় আর শাওয়ার চালু করে।
-এইই করছেনটা কি আপনি? (চিল্লিয়ে) আমি ভিজে যাচ্ছি!
-এটাই তোমার শাস্তি! আর বলবে আমাকে খাটাশ? (বাকা হেসে)
-আপনাকে তো আমি.. (বলে তানহাও তনয়ের হাত ধরে শাওয়ারের নিচে নিয়ে আসে)
-হাহাহা। এখন কেমন লাগে? (দুষ্টু হেসে)
-তানহা,,,উফফ অসহ্য! আমাকেও ভিজিয়ে দিলা তুমি!
-হয়েছে এখন সরুন। বেশিক্ষণ ভিজলে ঠান্ডা লাগবে আবার।
বলে তানহা যেতে লাগে কিন্তু পা পিছলে পড়তে নেয় আর তনয়ের শার্ট আকড়ে ধরে ভয়ে আর তনয় আচমকা টান লাগায় তানহার কোমর ধরে ওকে সামলানোর চেস্টা করে। যার ফলে তানহার পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় আর তনয়ও ওর দিক ঝুকে পড়ে। তানহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ খুললে সে দেখতে পেতো যে এখন তনয় ওর কতটা কাছে..!!

শাওয়ারের নিচে দুই যুবক-যুবতী, সম্পর্কে যারা স্বামী-স্ত্রী। হয়তো তারা মানেনা এই সম্পর্ক কিন্তু অনেক সময় জীবনে এমন অনেক মুহুর্ত আসে যখন আবেগের কাছে বিবেক হেরে যায়। তনয় নিজেকে যতই কন্ট্রোল করে রাখুক তবুও তার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে চোখ বন্ধ করে রাখা মুখটির মায়ায় সে পড়েই যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে সে নিজেও জানেনা, হয়তো জানতে চায়না!

একটু পর তানহা চোখ খুলে দেখে তনয় ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল যার জন্য সে বেশিক্ষণ ওর চোখে তাকিয়ে থাকতে পারেনা। লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। আর তানহার লজ্জা পাওয়া দেখে তনয় যেন তার আরও একটু কাছে চলে আসে। তানহা আবার উপরে চোখ তুলে দেখে তনয় ওর দিকে ঝুকে আসছে। সে বুঝতে পারলো তনয় এখন নিজের বশে নেই। হয়তো এখন সে কিছু করলে পরে আফসোস করবে! তাই তনয় যখন ওর ঠোঁট তানহার একদম কাছে নিয়ে আসে তখন তানহা চোখ বড় বড় করে মুখ অন্যদিকে সরিয়ে নিলো। ব্যস, তনয়ের হুশ ফিরে আসার জন্য এটিই যথেষ্ট ছিল! সে বুঝতে পারলো সে কি করতে যাচ্ছিলো।

একরাশ অনুশোচনাবোধ তার মধ্যে এসে ভর করলো। সে অন্যদিক হয়ে বলল,
-আম স্যরি। আম রিয়েলি স্যরি। বিশ্বাস কর আমি সত্যিই জানিনা আমি কিভাবে ওটা করতে যাচ্ছিলাম!
তনয়ের কথা শুনে তানহাও কিছু মনে করেনা। কারণ ও বুঝতে পেরেছিলো তনয় নিজের মধ্যে নেই। তাই সেও অন্যদিক মুখ করে বলে,
-আ,আমি বুঝতে পেরেছি আপনি নিজের মধ্যে ছিলেন না। তাই,,(ওর প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছিলো এখন তনয়ের সাথে কথা বলতে)

তনয়ও সেটা বুঝতে পারলো আর ওখান থেকে যেতে নিলো কারণ ওর নিজেরও নিজের প্রতি প্রচুর রাগ হচ্ছিলো! কিভাবে পারলো সে নিজের উপর কন্ট্রোল হারাতে?

তনয় যখন চলে যেতে নিলো তানহা ওর হাত ধরে আটকিয়ে বলল,
-আমি জানি আমাদের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো নয়। কিন্তু আমাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেন সবসময় ঠিক থাকে, আমরা যতদিন একসাথে আছি বন্ধুর মতই সব সুখ-দুঃখ একে অপরের কাছে শেয়ার করব। কথা দিন আমায়? (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

তনয় ভাবছে সে কি করবে। তার মন বলছে সাড়া দিতে কিন্তু মাথা কিছু চিন্তা করতে পাচ্ছেনা। অবশেষে মনের কথা শুনে সে তানহার হাতে হাত রেখে মাথা নাড়লো।

ওরা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই শ্রেয়া রুমে ঢুকে পড়ে ভাইয়া বলে আর ওদের একসাথে ভেজা কাপড়ে বের হতে দেখে চোখে হাত দিয়ে বলে,
-স্যরি স্যরি, আমি কিচ্ছু দেখিনি! (চিল্লিয়ে)
শ্রেয়াকে দেখে তানহা প্রচুর লজ্জা পায়। না জানি কি ভাবছে সে আর তনয় যেয়ে শ্রেয়ার কান ধরে বলে,
-কিছু হলে তো দেখবি। দেখার মতো কিছু তো করিই নি।
-বাহ ভাইয়া, তুই তো ভালোই এডভান্সড। এখনি এতকিছু করে ফেলতে চাইছিস!
-তবে রে,,দাড়া তুই বলে তনয় শ্রেয়াকে ধাওয়া করে।

এদিকে ওদের ভাইবোনের এইসব লাগামছাড়া কথা-বার্তা শুনে তানহা লজ্জায় কুকড়ে গেলো। সে তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে চলে গেল।
সে বের হয়ে এসে দেখে তনয়ও চেঞ্জ করে ফেলেছে।
-বাবা আমাদের ডেকেছে নিচে! (তনয়)
-হঠাৎ করে কেন ডাকছেন বাবা?
-তা তো জানিনা। শ্রেয়া প্রেত্নী ওটাই বলতে এসেছিলো!
-আচ্ছা চলুন তাহলে।

ওরা নিচে যেয়ে দেখে ইকবাল সাহেব বসে আছেন। আর হাতে একটি খাম। তনয়কে দেখে তার হাতে খামটি ধরিয়ে দিয়ে উনি বললেন,
-এটা কক্সবাজারের টিকেট। তুমি আর বউমা ঘুরতে যাচ্ছো কালকে!
তনয় বেশ অবাক হয় সাথে তানহাও।
-হঠাৎ করে ঘুরতে কেন বাবা?(তনয়)
-আরে ভাইয়া, নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে। হানিমুনে যাবিনা? (শ্রেয়া)
-এইসবের কোন দরকার নেই বাবা। আমরা কোথাও যাবনা। (তানহা)
-আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করিনি বউমা। তোমরা যাবে আর এটাই ফাইনাল। আর তনয়, তুমি অফিসের টেনশন করবেনা আমি তোমার ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি তুমি ওকে সব বুঝিয়ে দিলেই হবে।

এবার আর কেউ কিছু বলতে পারেনা। তনয় বাবার সাথে অফিসের কথা বলতে লাগলো সোফায় বসে আর তানহা মায়ের সাথে রান্নাঘরে গেল।
রান্নার মাঝে ওখানে শ্রেয়া এসে হাজির।
-কি ভাবী? কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?
-এটা তোমার আইডিয়া ছিল তাইনা? (হাতের উপর হাত ভাজ করে)
-উফফ ভাবী, কোথায় তুমি একটু থ্যাংকস দিবে তা না! এইজন্যই বাঙালির ভালো করতে নেই। কই আমি তোমাদের মিশার থেকে দূরে থেকে রোমান্সের সুযোগ করে দিলাম আর তুমি একটা ধন্যবাদও জানালে না! (দুঃখি মুখ করে)
-তবে রে দুষ্টু! (বলে শ্রেয়ার কান টেনে ধরলো তানহা)
-আহ ভাবী, কান ছাড়ো। লাগছে তো! আর শুনো ওখানে যেয়ে ভাইয়ার সাথেই থাকবে সবসময়। মিশা ফোন দিলেও কথা বলতে দিবেনা ভাইয়াকে!
-আচ্ছা সে দেখা যাবে।
-আর শুনো, যেকোন হেল্প লাগলে আমাকে ফোন দিবে। বুঝেছো?
-ওকে আমার প্রিয় ননদিনী (শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে)

শ্রেয়াকে ছেড়ে তানহা মনে মনে ভাবলো আল্লাহ হয়তো সত্যিই ওর কথা শুনেছে।তাই ওর সাহায্য করার জন্য শ্রেয়াকে পাঠিয়েছে! এসব ভাবতে ভাবতে তানহা ব্যাগ গুছাতে রুমে চলে গেলো।
,
,
,
পরেরদিন সকালে সবার থেকে বিদায় নিয়ে তানহা-তনয় এয়ারপোর্টে চলে যায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে!

?
-হ্যালো ম্যাম, তনয় স্যারকে তো এয়ারপোর্টের দিকে যেতে দেখলাম।
-রিয়েলি? কোথায় যাচ্ছে সে খোঁজ নেও এন্ড আমাকে জানাও। ফাস্ট।
বলে মিশা ফোন রেখে দেয়।
-আমাকে না বলে তুমি কোথায় যাচ্ছো তনয় বেইবি? আমি তোমাকে খুজেই বের করব! ওয়েট এন্ড ওয়াচ!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here