তুমি আমারই থাকবে,Part: 23

0
3500

তুমি আমারই থাকবে,Part: 23
Writer: Zunaisha Mahira

?

তানহা ভার্সিটি থেকে বাসায় এসেছে অনেকক্ষণ কিন্তু সে দেখছে আজ অনেক লেট হয়ে গেছে তাও তনয় আসছে না। তানহা দরজার দিকে উকি দিচ্ছে, এমন সময় মা বলে,
–কি রে? দরজার দিকে তাকাচ্ছিস কেন? তনয়কে খুজতেছিস?
–না মা। এমন কোন কথা না। এমনি তাকাচ্ছিলাম।
–ওই বয়স আমরাও পার করে এসেছি মা। সব বুঝি। তোর স্বামী আসবেনা এক সপ্তাহ।
–মানে? কোথায় গেছেন উনি? (অবাক হয়ে)
–সুইজারল্যান্ডে গেছে আজকে।

তনয় সুইজারল্যান্ড গেছে শুনে বেশ অবাক হলো তানহা। এক সপ্তাহের জন্য বাইরে গেছে তাও ওকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না একবারও? সত্যিই কি তাহলে তনয়ের জীবনে ওর কোন গুরুত্ব নেই? (হতাশ মনে একরাশ কস্ট নিয়ে এসব ভাবছে তানহা)

রাতে তাই সিদ্ধান্ত নিল তানহা যে তনয় যখন চায় ও চলে যাবে ওর জীবন থেকে,তাহলে তাই হবে। তনয় থাকলে ওকে ছেড়ে যাওয়া কস্টকর হতো। কিন্তু সে যখন না জানিয়ে চলে গিয়েছে, তানহাও চলে যাবে।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। পরেরদিন সকালে তানহা চলে এলো অনেক ভোরে, কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠার আগে। বাসায় পৌঁছাতেই তানহার মা গেইট খুলে অবাক হয়ে গেলেন,
–কি রে, তুই এত সকালে এসেছিস যে?
–ভিতরে তো আসতে দেও মা।
তানহাকে ব্যাগ নিয়ে ভিতরে আসতে দেখে ওর মা অবাক হয়ে বলে,
–কয়দিন থাকার জন্য এসেছিস তুই?
–যদি বলি আর যাবোনা তাহলে?
–কি বলছিস এসব?আর জামাই জানে এগুলো? (চিল্লিয়ে)
–জানে। দুইজনের মিলিত সিদ্ধান্তেই এসেছি আমি।

এতক্ষণে তানহার ভাই আর বাবাও চলে এসেছে তানহার মায়ের চিল্লানো শুনে।
–ওগো দেখো তোমার মেয়ে কি বলছে। ও নাকি একবারে চলে এসেছে! (মা)
–এসব কি মা? তোমার মা যা বলছে তা কি ঠিক? (বাবা)
–হ্যাঁ, বাবা। কিন্তু ও বাসায় কেউ জানেনা এখনও। জানলে আমাকে আসতে দিতো না তাই না বলে চলে এসেছি।
–এটা কি ঠিক করলি মা? এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। তনয় কোথায়? তোকে আসতে দিলো?
–উনিই থাকতে চান না আমার সাথে বাবা। আমি ভেবেছিলাম উনি আমায় ভালোবাসেন কিন্তু হয়তো আমি উনার মনের মত হতে পারিনি। (কেদে)
–কি বলেছে ও তোকে?ও কি কোন খারাপ ব্যবহার করেছে তোর সাথে? (রেগে)
–না বাবা। উনি খারাপ ব্যবহার করেননি আমার সাথে কিন্তু উনি আমাকে ভালোবাসেন না। আমাদের ডিভোর্স এর কথা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আমিও জেনে শুনেই গিয়েছিলাম তার সাথে।

এসব শুনে তানহার বাবা প্রচন্ড ক্ষেপে গেলেন। যাওয়ারই কথা। কোনও বাবা-মাই চাইবে না তাদের সন্তানেরা জেনে-শুনে তাদের থেকে এত বড় একটা কথা লুকিয়ে রাখুক।

অতঃপর তানহার বাবা তনয়ের বাবার সাথে কথা বললেন।তনয়ের বাবা তো বলছেন তনয় আসুক একবার ওর খবর নিবেন উনি।
দুইজনই প্রচন্ড রেগে আছে তনয়ের উপর। বিশেষ করে তানহার বাবা। তিনি ভাবতেও পাচ্ছেন না তার মেয়েকে এভাবে ছেড়ে দিবে তনয়। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তনয় যদি মনে করে তার মেয়েকে সে ছেড়ে দিলে কেউ বিয়ে করবেনা তাহলে তিনি ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত করে দিবেন। তাই তানহাকে আবার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি।

কয়েকদিন খোজ-খবর নিয়ে ছেলেপক্ষ আসতে চেয়েছে শুনে তানহাকে জিজ্ঞেস করলেন ওর মতামত নেওয়ার জন্য। যেহেতু তানহাও তনয়ের উপর রেগে ছিলো তাই সেও রাজি হয়ে গেলো। দুইদিন পর ছেলেপক্ষের আসার কথা।
,
,
,
আজ তনয় বাসায় পৌঁছিয়েছে বিকালে। সে রুমে ঢুকতেই অবাক। তানহা নেই কেন? তবে কি তানহা সত্যিই চলে গিয়েছে? যে ভয় নিয়ে তনয় এই কয়টা দিন সুইজারল্যান্ডে কাটিয়েছে সেই ভয় কি তবে সত্যি হলো? রুম থেকে বের হতেই দেখে ড্রয়িংরুমে ওর বাবা,মা,শ্রেয়া সবাই দাড়িয়ে আছে। তনয় ওখানে যেতেই ওর বাবা ওর গালে ঠাস করে এক চড় মেরে দিলেন। তনয় অবাক হয়ে বলে উঠলো,
-বাবা (গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে)
–তোর উপর মেজাজ খুব খারাপ আছে আমার। বউমাকে ছয় মাসের জন্য নিয়ে এসেছিলি বাসায় তাইনা? খুব বড় হয়েছিস যে এতবড় সিদ্ধান্ত কাউকে না জানিয়েই নিতে গেলি? (ধমক দিয়ে)
–তুমি সব জেনে গেছো? (মাথা নিচু করে)
–জানবো না? বউমা চলে যাওয়ার পর কিছু জানার বাকি আছে? তোর কোন ধারণা আছে আমার বন্ধুর সামনে কিরকম লজ্জা লাগছিল ওই মুহুর্তে আমাকে। শুধু তোর জন্য সব।
–তানহা চলে গিয়েছে? শ্রেয়া আমি তোকে বলেছিলাম না ওকে যেকোন ভাবেই হোক আটকিয়ে রাখতে? কেন রাখিস নি? (চিল্লিয়ে)
–ভাবী কোন ছোট বাচ্চা না ভাইয়া যে আমি ওকে আটকিয়ে রাখব। ভুলটা যখন তোর, রাগ তোকেই ভাংগাতে হবে।
–তুই যদি বউমাকে না নিয়ে আসিস তাহলে আমি তোর সাথে কথা বলব না তনয় (বাবা)
–আমি এখনি যাব। ওকে কিছুতেই যেতে দিবনা আমি।
–গেলে তাড়াতাড়ি যা। ভাবীকে দেখতে আসছে আজ।

এটা শুনে যেন তনয়ের শ্বাস আটকে গেলো।কোনমতে নিজেকে সামলে সে ছুটে গেল তানহার বাড়ির উদ্দেশ্যে!যত দ্রুত সম্ভব ড্রাইভ করে পৌঁছে গেল তানহার বাসায়।

পাত্রপক্ষের সামনে বসে ছিল তানহা। হঠাৎ করেই তনয় দৌড়ে এসে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খায় তানহা চোখে মুখে। পাত্রসহ রুমে উপস্থিত সবাই হতবাক তনয়ের ব্যবহারে।
তানহার বাবা চিল্লিয়ে উঠে তনয়কে ধরতে যাবেন এমন সময় তনয় তানহাকে ছেড়ে সোফায় বসে বলে,
-“রিল্যাক্স শ্বশুরজী। এই বয়সে এত হাইপার হইলে আমার শাশুড়িমার সাথে বেশিদিন কেমনে থাকবেন?” (চোখ টিপ মেরে)
তানহার বাবা চিল্লিয়ে উঠে বলেন,
-“বেয়াদব ছেলে,কেন এসেছো এখানে? এতকিছু করেও শান্তি হয়নি তোমার যে আমার মেয়ের বিয়েটাও এখন ভাঙতে এসেছো?”
তনয় হেসে উঠে তানহার হাত চেপে ধরে বলে,
-আপনার মেয়ের বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে একবার। এত হ্যান্ডসাম, ফিট এন্ড ফাইন জামাই থাকতে আপনি আবারও জামাই খুজছেন? নট ফেয়ার শ্বশুরমশাই!”(বাকা হেসে)
তানহার বিয়ে হয়ে গিয়েছে শুনে পাত্রপক্ষ তানহার বাবার আর কোন কথা না শুনেই সেখান থেকে চলে গেলো এবং তানহার বাবাও তনয়ের দিক তাকিয়ে রেগে বাসার ভেতরে চলে গেলেন।
তনয় তখন তানহার গাল চেপে ধরে বলল,
-“খুব শখ হয়েছে না তোর আবার বিয়ে করার? আমাকে আর ভাল্লাগে না তাই না? এইজন্যই তো এত ঢ্যাংঢ্যাং করে পাত্রের সামনে এসেছিস?”
-কেন করছেন আপনি আমার সাথে এমন? মুক্তি চেয়েছিলেন না আপনি? দিয়েছি তো মুক্তি আপনাকে। (অশ্রুভরা চোখে)
-এই, একদম কাদবা না আমার সামনে। আর কিসের মুক্তি হ্যাঁ? ডিভোর্স হয়নি এখনও আমাদের।
-হয়ে যাবেই তো কয়দিন পর। তখন আপনি আপনার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তা..
আর কিছু বলার আগেই ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তনয় বলে,
– আমার ধৈর্যর পরীক্ষা নিয়োনা সুইটহার্ট। তোমাকে আমি ছাড়বো না। দেরিতে হলেও বুঝেছি তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তাই তুমি আমার না হলে তোমাকে আর কারও হতে দিবেনা এই তনয়।
(তারপর তানহার শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেল)
তানহা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে কেন করলো তনয় এমন..ও তো নিজেই মুক্তি চেয়েছিলো তানহার থেকে।

তানহা রুমে বসে ভাবছে তনয়ের হঠাৎ এমন করার মানেটা কি? যখন মন চায় ভালোবাসে, যখন মন চায় দূরে ঠেলে দেয়। এদিকে তনয় বাসায় এসেই ঘুম দিল একটা। জার্নি করে এসে না ঘুমালে হয়না ওর আর আজকে বাসায় পৌঁছাতেই তানহার জন্য সব ছেড়ে ছুটে গেছে।

–তুমি আমার অভ্যাস বদলে দিয়েছো তানহু বেবি। নট ফেয়ার। ঘুম থেকে উঠে তোমার খবর নিতে আসছি আমি, রেডি থেকো!
বলে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো সে।

তানহা আয়নার সামনে বসে চুড়ি খুলছিলো হাত থেকে আর জানালায় আওয়াজ পেলো কিছুর। চমকে উঠে সেদিক তাকাতেই দেখলো জানলায় কেউ ঠোকা দিচ্ছে মনে হচ্ছে। কৌতুহলবশত জানালা খুলে দিতেই তনয় সেদিক দিয়ে লাফ মেরে ঢুকলো রুমের ভিতরে!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here