তুমি আমারই থাকবে,Part: 24
Writer: Zunaisha Mahira
?
তানহা আয়নার সামনে বসে চুড়ি খুলছিলো হাত থেকে আর জানালায় আওয়াজ পেলো কিছুর। চমকে উঠে সেদিক তাকাতেই দেখলো জানলায় কেউ ঠোকা দিচ্ছে মনে হচ্ছে। কৌতুহলবশত জানালা খুলে দিতেই তনয় সেদিক দিয়ে লাফ মেরে ঢুকলো রুমের ভিতরে!
তনয়কে দেখে তানহার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, সে বলল,
–আপনি?
–তো? আর কাকে এক্সপেক্ট করছিলে? (ভ্রু কুচকে)
–কাউকেই না। আপনি এখানে কেন এলেন?আর জানালা দিয়েই বা কেন? (অবাক হয়ে)
–তো কি করব? তোমার বাবা যে রেগে আছেন আমার উপর, গেইট দিয়ে আসলে ঢুকতে দিত?
–ঠিক করতো। ঢুকতে দেওয়াও উচিত না আপনাকে।
–এইরকম করে বলছো কেন সুইটহার্ট? (কাছে এসে)
–এই আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেন? (চিল্লিয়ে)
–আস্তে চিল্লাও, তোমার ননদ বাইরে ব্যস্ত রেখেছে আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে।কিন্তু তুমি যে হারে চিল্লাচ্ছো তাতে ও বেশিক্ষণ আটকিয়ে রাখতে পারবে বলে মনে হচ্ছেনা!
–কিহ? শ্রেয়াও এসেছে বাসায়? ও মা-বাবাকে ব্যস্ত রেখেছে?
–হ্যা বউ। এখন কি করব বলো। তোমার সাথে দেখা করতে না দিলে এভাবেই আসতে হবে বাসায়।
–দেখুন, আপনি কিন্তু একদম ঠিক করছেন না। এমনিতেই বাবা যে রেগে আছে আপনার উপর তার মধ্যে আপনাকে এখানে দেখলে আরও রেগে যাবে। চলে যান এখান থেকে।
–উফফ,তুমি আমার কত চিন্তা করো।শ্বশুরজি আমার উপর রেগে যাবে তুমি সেটা চাচ্ছোনা (কোমর জড়িয়ে ধরে)
–এই আমাকে ধরছেন কেন আপনি? সরুন!
–আমি না ধরলে কে ধরবে? ওই ছেলে যার সামনে আজ হিরোইন সেজে বসেছিলে? (দাতে দাত চেপে)
–ছিঃ আমি সেটা বলিনি। অবশ্য ধরতেও পারতো। আপনি না এলে বিয়ে ঠিক হয়েই যেত আমার।
–ধরার জন্য হাত অবশিষ্ট থাকলে তো ধরতো সুইটহার্ট! (বাকা হেসে)
-আপনি আসলেই খুব খারাপ। ছাড়ুন আমাকে (বলে তানহা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে ধরে তনয়কে)
তনয় ওর কোমর জড়িয়ে ধরায় তানহাকে নিয়েই বেডে পড়ে যায় দুইজনে! তনয় উপরে আর তানহা ওর নিচে।
–এটা কি হলো?কেউ এসে পড়বে সরুন
–উফফ তুমি টেনশন করলে তো অনেক কিউট লাগে তোমাকে!মন চাচ্ছে খেয়ে ফেলি। (নাকে কামড় দিয়ে)
–ছিঃ আপনি একটা অসভ্য লোক! (নাকে হাত দিয়ে)
–আচ্ছা? তাহলে তো…
তনয় কিছু বলবে তার আগেই দরজা খুলার শব্দ হয় আর অবাক হয়ে তনয় হুড়মুড় করে তানহাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়! সে দেখে শ্রেয়া এক কানে হাত দিয়ে ইশারায় স্যরি বলছে ওকে আর তানহার বাবা রেগে লাল হয়ে তাকিয়ে আছেন ওর দিকে!
–বেয়াদব ছেলে, বিকেলে তামাশা করেও শান্তি হয়নি তোমার তাইনা? এখন আবার আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছো?
–নিজের বউয়ের সাথে তো যেকোন সময় দেখা করতে পারি আমি শ্বশুর মশাই।
–ছেড়ে দেওয়ার সময় সেটা মনে ছিল না যে ও বউ তোমার?
–আমি তো ওকে ছাড়িনি বাবা। আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল।
–অনেক কস্ট দিয়েছো তুমি আমার মেয়েকে। আমি চিনি ওকে, ছোট বিষয় হলে ও কখনোই এভাবে আসতো না।
–আমাকে মাফ করে দিন। একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন, আমি তানহাকে আর কখনও কস্ট দিব না।
–আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাচ্ছিনা তনয় এখন। তুমি কি যাবে না আমি বের করে দিব?
–তানহা, তুমি কিছু বলো প্লিজ।
–আমিও কিছু শুনতে চাইনা। আপনি প্লিজ বাসায় চলে যান। (কেদে)
–উফফ, আচ্ছা, আমি যাচ্ছি। তুমি কেদো না।
,
,
,
তনয় বাসায় যাওয়ার পর শ্রেয়ার কান টেনে ধরে বলল,
–একটা কাজ দিয়েছিলাম সেটাও করতে পারলিনা ঠিকমতো।
–স্যরি ভাই। কিন্তু আমার কোন দোষ নেই। কথা বলতে বলতেই তোমার খচ্চর শালা ভাবীর নাম নিয়েছে আর তোমার শ্বশুরের মনে পড়লো যে ভাবী রুমে একা আছে তাই ওকে ডেকে আনতে চলে গিয়েছিলো তখন।
–শালাবাবু নিজের অজান্তেই আমার প্ল্যানের ১২ টা বাজায় দেখি সবসময়।
–ঠিক বলেছো। আস্ত একটা খাটাশ লোক।
–তোর সাথে কি করেছে যে তুই খাটাশ বলছিস ওকে? (ভ্রু কুচকে)
–আ..আমার সাথে কি করবে আবার? ওইতো তোমার প্ল্যান ফ্লপ করে দিলো ওইজন্য বললাম। (মাথা নিচু করে)
–ঠিক আছে কিন্তু তোর ভাবীকে ঠান্ডা মাথায় কোথাও ডেকে বুঝাতে হবে, ওর সাথে শান্তিমতো কথা বলতে হবে যাতে আমার তখনকার পরিস্থিতি বুঝতে পারে ও আর আমি ওর অভিমান ভাংগাতে পারি।
–তাহলে যা, ফোন দে ভাবীকে আর বুঝানোর চেস্টা কর।
.
.
তনয় যেতেই শ্রেয়া ভাবতে লাগলো আদিবের কথা।
তানহাদের বাসার গেইটে ঢুকতেই কারও সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল শ্রেয়া। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখল একটা লম্বা,সুদর্শন ছেলে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
–এই যে, আপনি কি চোখ পকেটে রেখে ঘুরেন নাকি?
–এক্সকিউজ মি! আমি চোখ পকেটে রেখে ঘুরলে আপনি কি? নিজেই তো ধাক্কা খেলেন।
–আমি কি ইচ্ছা করে ধাক্কা খেয়েছি নাকি?
–যে পাটকাঠির মতো শরীর। একটু ধাক্কাতেই পড়ে যায় তার সামনের দিকে নজর রেখে হাটা উচিত! (বাকা হেসে)
–আমি পাটকাঠি?? আর আপনি একটা প্রচন্ড ফালতু লোক!
–আমার বাসায় এসে আমাকেই ফালতু বলছেন?
–কি? এটা আপনার বাসা? এটা তো ভাবীর.. এক মিনিট, আপনি ভাবীর ভাই?
–হ্যা, ভাবী বলছেন মানে আপনি তানহার ননদ? তনয়ের বোন?
–জি। সরুন ভিতরে যাব আমি।
–তোমার ভাই যা করেছে তা শুনে ওকে সহ্য হচ্ছেনা আমার
–আমার ভাইকে নিয়ে কিছু বলবেন না। ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল জাস্ট। না জেনে কিছু বলা ঠিক না।
–তাহলে বলো শুনি কি হয়েছিলো?
–তা না হয় পরে বলব, এখন আমার ভিতরে যাওয়া দরকার না হলে প্রব্লেম হবে।
বলে আদিবকে কিছু বলতে না দিয়ে শ্রেয়া ভিতরে চলে গেলো তানহার বাবা-মার সাথে দেখা করতে আর তাদের ব্যস্ত রাখতে!
,
,
,
–তানহা, আমার কথাটা তো শুনো
–আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাচ্ছিনা এখন।
–একটু শুনো প্লিজ তানহু বেবি!
–ইশশ ঢং দেখলে বাচিনা।
–কেবল তো শুরু। আরও কত কি দেখাবো তোমাকে, এখনি না বাচলে হবে বেবি?
–চলে যেতে বলার আগে এগুলো কোথায় ছিলো? তখন মনে হয়নি একবারও যে আমার কথা একটা বার শুনতেন? আমার খারাপ লাগবে এটা মাথায় ছিল আপনার? (ধরা গলায়)
–তানহা,আম রিয়েলি রিয়েলি স্যরি। এই শেষবার মাফ করে দেও প্লিজ।
–আপনি প্রতিবারই তাই বলেন তনয় কিন্তু রেগে গেলে আপনার হুশ থাকেনা আর সব ভুলে যান।
–আমি জানি আর মানিও সব। কিন্তু আমার কথা তো শুনো।
–এবার তানহা ফোন কেটে দিলো। সে তনয়কে একটু বুঝাতে চায় কেউ কিছু বলতে চাইলে তার কথা না শুনলে কেমন লাগে!
–হ্যালো, ফোন কেটে দিলো ধুর।
.
.
–শ্রেয়ায়ায়া….
–উফফ, ঠসা হয়ে যাইনি আমি ভাই। এত চিল্লাচ্ছিস কেন?
–তানহা ফোন ধরছে না। কোথায় ভাবলাম বুঝাবো উল্টো ও তো ফোন কেটে দিল রাগ করে।
–এখন কি হবে?
–আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।শোন।
তনয় শ্রেয়াকে ওর প্ল্যানের কথা বলল। সব শুনে শ্রেয়া বলে,
–বাহ, তোর বুদ্ধি আছে তাহলে।
–আমি বুদ্ধি প্রদর্শন করতে আসলে তুই আমার বুদ্ধির নিচে চাপা পড়ে যাবি। (ভাব নিয়ে)
–হ্যা ওইজন্যই ভাবীর সাথে সবসময় ভুল বুঝাবুঝি হয় তোর।
–ধ্যাত, সবাই পাইছে এক বিষয়। আরে ভাই হইছে ভুল একবার মানছি আমি, তাই বলে বারবার খোটা দিতে হবে? (বিরক্ত হয়ে)
–ওকে ফাইন। কিন্তু আমাকে কি করতে হবে এখানে বুঝলাম না।
–তুই এখন আমার ফোন থেকে আদিবকে ফোন করবি। বাবা আমাকে ডেকেছে আমি ওখানে যাচ্ছি, তুই আদিবকে প্ল্যানের কথা বল একটু। আমি আসছি এখনি।
— কিন্ত ভাইয়া আমি.. (শ্রেয়া কিছু বলার আগেই তনয় হাওয়া হয়ে গেলো)
–ওই ফালতু লোকের সাথে আবার কথা বলতে হবে আল্লাহ! বাট ভাইয়া-ভাবীর জন্য এটুক করাই যায়! কাম অন শ্রেয়া- বলে সে আদিবকে কল দিলো।
–হ্যালো
–হ্যালো, আদিব বলছেন?
–জি, আপনাকে তো চিনলাম না।
–আমি শ্রেয়া, তনয় ভাইয়ার বোন।
–ওহ মিস পাটকাঠি। বলো কি জন্য ফোন দিয়েছো? নাম্বার কিভাবে পেলে আমার? ক্রাশ-ট্রাশ খাওনি তো আবার?
–ফালতু কথা অফ রাখেন। অনেক বেশি বকেন আপনি দেখি।
–তো বলো কি জন্য কল দিয়েছো।
–শুনুন তাহলে। ভাইয়া ভাবীর সাথে শান্তিমত কথা বলতে চায় তাই ওর সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে চাচ্ছে কারণ আপনার বাবা বাসায় কখনোই তাদের কথা বলতে দিবেনা। আর ভাবীকে এটা বললে ও রাজিও হবেনা। তাই আপনি ভাবীকে কোন বাহানায় রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসবেন তারপর ভাবীর অভিমান ভাংগানোর দায়িত্ব ভাইয়ার! বুঝেছেন?
–সব তো বুঝলাম। কিন্তু তনয়ের সাথে তানহার দেখা করতে দেওয়া ঠিক হবে? আমার বোন রাজি না হলে ওকে জোর করে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা।
–আপনি কি চান না আপনার বোনের সংসার টিকে থাকুক? ভাবী খুশি থাকুক?
–তা তো অবশ্যই চাই। নিজের বোনের খুশি চাইব না আমি?
–তাহলে ভাবীকে কোন বাহানায় নিয়ে আসুন রেস্টুরেন্টে। কারণ ভাবীর খুশি ভাইয়ার সাথে আর বাকিটা ভাইয়া ম্যানেজ করে নিবে।
–ওকে ফাইন। আমি দেখছি ব্যাপারটা।
চলবে…?