সত্যি ভালোবাসো,part_14
writer Fatema Khan
রাত ১ঃ০০বাজে।রেজোয়ানের পুরো বাড়ি পুলিশ ঘেরাও দিয়ে রেখেছে।তারপর নিচ থেকে একজন পুলিশ মাইক দিয়ে তাকে নিচে নেমে আসতে বললো। তাকে কিছুক্ষন সময় দেয়া হলো,কিন্তু সে নিচে না নেমে উল্টো পুলিশের উপর গুলি করা শুরু করলো।পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লো।এক পর্যায়ে পুলিশ বাড়ির ভিতরে ডুকে যায়।দুইদিকের পাল্টা আঘাত কমছেই না।তবে এতো পুলিশের সাথে একলা রেজোয়ান কতক্ষণই বা টিকে থাকতো।তাই সে চিন্তা করে তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাবে।তারা পিছন দরজা দিয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালে একটা গুলি এসে রেজোয়ানের স্ত্রীর গায়ে এসে লাগে।আর সাথে সাথে তিনি মাটিতে ঢলে পরেন।রেজোয়ান তাকে তার পায়ের উপর রেখে কান্না করতে থাকে।সে তার স্ত্রী ও সাথে অনাগত বাচ্চা দুইটাই হারাতে বসেছে।তার স্ত্রী তার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তারপর রেজোয়ান তাকে রেখে পালিয়ে যায়।
রেজোয়ান পালিয়ে সোজা আমার বাড়িতে আসে।কলিংবেল বাজতেই আমার ঘুম ভেঙে যায়।আর আমার মনে ভয় জাগে এতো রাতে কে আসবে।তূর্যের মা যেন ঘুম থেকে না উঠে তাই আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে নিচে চলে আসলাম।দরজা খুলে দেখি রেজোয়ান দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভয় পেয়ে যাই,তারপর সে বাড়িতে ঢুকে সোফায় বসে।তার হাতে রক্ত দেখা যাচ্ছে এবং একটি পিস্তলও আছে।আমি কিছু বললাম না অন্য সোফায় গিয়ে বসলাম।
রেজোয়ানঃকেনো করলি আমার সাথে এমনটা?তোর কোনো ক্ষতি করেছি আমি,একটু ভালো করে জীবন কাটাতে চেয়েছি।
আরমানঃভালো করে জীবন কাটা কিন্তু সৎ পথে কাজ করে।এমন বেয়াইনি কাজ করে নয়।তাও নারী পাচারের মতো জঘন্য একটা কাজ।পুলিশের কাছে ধরা দে,নিজের সব দোষ শিকার কর তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। নিজের কথা না ভাব অন্তত ভাবি আর নিজের সন্তানের কথা ভাব একটু।
রেজোয়ানঃস্ত্রী সন্তান আমার সব শেষ হয়ে গেছে।শুধু তোর জন্য আমার পরিবার আজ ধ্বংস হয়ে গেলো।
আরমানঃমানে কি বলতে চাস তুই?তোর ভালোর জন্যই বলছি নিজে থেকে ধরা দে।
রেজোয়ানঃআরমান,একটা কথা জানিস।আমার হাতে এই রক্ত কিসের?
আরমানঃকিসের?
রেজোয়ানঃআমার স্ত্রী আর সন্তানের।
আরমানঃকি বাজে বকছিস(সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বললাম)
রেজোয়ানঃবাজে বকছি না পুলিশের গুলিতে ওরা দুইজন মারা গেছে।কিন্তু আমি এখানে কেনো এসেছি জানিস
আরমানঃনিশ্চই আমাকে মারার জন্য।
রেজোয়ানঃনা ভাই, আমি তোকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি মনে করতাম।কিন্তু তুই একনিমিষে আমার সব কেড়ে নিলি।
আরমানঃআমাকে না মারলে তুই করতে চাস কি?
রেজোয়ানঃসেটা সময় হলে বুঝতে পারবি।
আরমানঃমানে?
রেজোয়ানঃমানে তোর থেকে তো প্রিয় জিনিস কেড়ে নিবো আমি।আচ্ছা এখন চলি আমি।কোনো একদিন দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
(বলেই সে উঠে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো)
সেদিন রাতে আর আমি দু’চোখের পাতা এক করতে পারি নাই।সকালে নিউজ চ্যানেল খুলে দেখি নিউজ হেডলাইন হলো রেজোয়ানকে নিয়ে।নিউজ হেডলাইন হলো পুলিশের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন রেজোয়ান।
এরপর থেকে আজ অবদি রেজোয়ানের নাম পর্যন্ত শোনা যায় নি কোথাও।
বর্তমান,,,
এতো বছর যাকে মৃত ভেবে এসেছি সে জীবিত।আর তোমাদের যখন বলেছে আমার থেকে তার পরিচয় লুকাতে তার মানে অনেক বড় প্ল্যান আছে তার।
(আমরা সবাই বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।বাবার চোখে পানি।ভাবতেই অবাক লাগে যাদের মাঝে ভাইয়ের মতো বন্ধুত্ব ছিলো আজ তারা সবচেয়ে বড় শত্রু।)
_________________________________
(সারাদিন ভালোই ছিলো শুধু রেজোয়ান আংকেলের কথাটা শুনে মন খারাপ ছিলো। একটা ভুল কাজের জন্য সব হারাতে হলো তাকে।কিন্তু সে নিজের ভুল বুঝতে না পেরে উল্টো বাবাকে ভুল বুঝলো।এখন সব ঠিক হলেই হলো।নিজেই কথাগুলো ভাবছিলাম তনিমা আপুর ডাকে চমকে উঠলাম।)
তনিমাঃকিরে তুই এখানে কি করছিস, তারাতাড়ি ছাদে চল।
তাহিয়াঃছাদে যাবো কেনো?
তনিমাঃসবাই আমরা আড্ডা দিবো সারারাত।কাল সবাই চলে যাবো তাই।এখন চল।
তাহিয়াঃওকে চলো।
(তারপর দুইজনে ছাদে চলে গেলাম)
ছাদে মাদুর বিছিয়ে সবাই বসে আছে।আমি গিয়ে আরিশের পাশে বসে পরি।আরিশ আমাকে দেখে তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
আরিশঃকেমন মায়াবী লাগছে আজ তোমাকে আমি বলে বুঝাতে পারবো না।
তাহিয়াঃসেই তো।তুমি আমাকে বলে বুঝাতে পারবে না কিছু করেও বুঝাতে পারবে না।কি করে বুঝাতে পারবে বলো তো।(আমার কথা শুনে জোরে হেসে দেয় আরিশ,আর সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর বুঝার চেষ্টা করছে কি এমন বললাম আমি যাতে আরিশ এভাবে হাসছিলো)
আরিশঃএকদিন করলাম তো।বাকিটা বড় হলে বুঝাবো এখনো অনেক ছোট তুমি আমার কিউট বউ।(আমার কানের কাছে এসে বললো)
রাসেলঃআরে তাহসিন কোথায়,ওকে দেখছি না যে?
তূর্যঃ হুম ইদানীং যে কি হলো ছেলেটার কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছে।
তাহিয়াঃ ভাইয়া আসলে তাহসিন ভাইয়া না একটা মেয়ে……..(আরিশ আমার হাত চেপে ধরলে আমি চুপ করে যাই আর আরিশের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাই)
আরিশ;এমনি এমনি তোমাকে পিচ্চি বলি আমি।(একটু রেগেই কথাটা বলে আমার হাত ছেড়ে দিলো)
তনিমাঃআমি দেখছি,হয়তো ওর রুমেই আছে আমি নিয়ে আসছি।
_______________________________
তনিমাঃতুই এখানে কি করছিস তোকে না বলে গেলাম উপরে যেতে।তাহলে এখানে কি?আর সবাই তোকে নিয়ে কথা বলছে যে তোর হঠাৎ এমন কি হলো যার জন্য তুই পুরো চেঞ্জ হয়ে গেলি।
(তাহসিন মাথা উপরে তুললে তনিমা দেখে সে কাদছে।তনিমার খুব কষ্ট হচ্ছে যতই হোক তার বেষ্টফ্রেন্ড। আর সে এতো কষ্ট পাচ্ছে।সবকিছুর জন্য তার দোষ যে সবচেয়ে বেশি তা সে ভালো করেই বুঝে।তখন মুখ ফুটে বাবাকে রাসেলের কথা বলতে পারলে হয়তো তাহসিনের এমন অবস্থা হতো না)
তাহসিনঃকি ভাবছিস?
তনিমাঃকই কিছু না।
তাহসিনঃঠিক আছে তুই একটু বস আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে আসছি।
_________________________________
(তাহসিন আর তনিমা ছাদে এসে দাড়ালে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে বলে এতোক্ষণে সময় হলো আসার।আমি তাদের দিকে তাকাতেই দেখি তাহসিন ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।অনেক অভিমান হয়েছে কালকের ঘটনার জন্য আর এখন অবদি আমাকে সরি বলে নাই।)
(তনিমা গিয়ে রাসেলের পাশে বসলো।তাহসিন তাকিয়ে দেখলো তাহিয়ার কাছে জায়গা খালি আছে আর সবাই গোল করে বসাতে তাহসিনকে সেখানেই বসতে হলো।)
তারা গল্প করতে থাকলো প্রায় রাত ৩টা পর্যন্ত।তনিমা রাসেলের কাধে ঘুমিয়ে আছে,তাহিয়ারও ঘুম ঘুম পাচ্ছে।তূর্য দূরে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছে।রাসেল তনিমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলো।
আরিশঃতাহিয়া যাও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
তাহিয়াঃওকে। (বলেই নিচে চলে এলাম)
ছাদে আরিশ আর তাহসিন ছাদে আমরা যা নিয়েছি সব গুছিয়ে রাখলো।
তাহসিনঃআপনি খুব ভাগ্যবান ভাইয়া যে আপনি আপনার ভালোবাসাকে পেয়েছেন।
আরিশঃতাই নাকি।
তাহসিনঃ সত্যি অনেক ভাগ্যবান আপনি।আর তার চেয়েও বড় কথা তাহিয়া খুব ভালোবাসে আপনাকে।
আরিশঃ তাহিয়া এখনো ছোট ওর এখন যাকে ভালো লাগবে তাকেই তার ভালোবাসা মনে হবে।ওকে আরো বুঝতে হবে সবকিছু।মানুষের মনের কথা চোখ দেখে বুঝতে হবে।আর ওকে বলে দিলেও সে বুঝে না।
তাহসিনঃমানে? তাহিয়া যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। মাঝে মাঝে বোকা বোকা কথা বলে এই আর কি।
আরিশঃলেখাপড়ায় ভালো হলে হয় না।বুদ্ধিও থাকতে হয়।আর সে যদি সব বুঝতো তাহলে সবার আগে তোমার চোখের ভাষা বুঝতে পারতো।
তাহসিনঃআমার আবার কি হবে যে আমার চোখের ভাষা বুঝতে হবে ওকে।(হকচকিয়ে বলে উঠলো তাহসিন)
আরিশঃএকটা কথা বলি
তাহসিনঃ জ্বি বলুন।
আরিশঃ #সত্যি_ভালোবাসো তাহিয়াকে?
তাহসিনঃ(নিশ্চুপ।তার চোখের পানি ছলছল করছে,যেনো চোখের পাতা ঝাপটালেই পানি গড়িয়ে পরবে)
তূর্যঃকি হলো সবাই কই গেলো?আর তোরাই বা কি বলছিলি?
(তূর্যের কথায় তাহসিন আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলো।)
আরিশঃনা তেমন কিছু না। তাহলে চল ঘুমিয়ে পড়ি।
তারপর যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।সবাই ঘুমিয়ে গেলেও দুইজনের চোখে ঘুম নেই।আরিশ আর তাহসিন তাদের চোখে ঘুম নেই,তাদের চোখে বিষাদময় অনুভূতি।আরিশের কিউট বউকে হারানোর আর তাহসিনের তার প্রেয়সী হারানোর বিষাদময় অনুভূতি।
চলবে,,,,