সত্যি ভালোবাসো,part_29

0
4102

সত্যি ভালোবাসো,part_29
writer Fatema Khan

আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।চোখ মেলে বাইরে তাকিয়ে দেখি বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার।উঠে নামাজ পড়ে নিলাম।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি।স্বচ্ছ আকাশ ধীরে ধীরে রস্তিম বর্ণ ধারণ করছে।পুরোপুরি সূর্যদয় হয়ে গেছে।এ যেন এক নতুন দিনের আগমনের সাথে সাথে যেনো সবার জীবনেও নতুন কিছুর আগমন ঘটে।দূরের এক কৃষ্ণচূড়া গাছে একটি কোকিল ডাকছে।এই কোকিলকে দেখে খুব হিংসে হচ্ছে আজ।জানিনা কেনো এমনটা হচ্ছে কিন্তু খুব হিংসে হচ্ছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের ভিতরে চলে আসি।রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা তনিমা আপুর রুমে চলে যাই।আমি আমাদের বাড়িতে আছি।ওই বাড়ি থেকে এসেছি তিনদিন হলো।আপু সোফায় বসে আছে।আপুর পাশে গিয়ে বসি।হঠাৎ আপুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই,আপুও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের পানি বিসর্জন দেয়।

তাহিয়াঃআপু এমন কেনো হলো,সবকিছু এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।কেনো ও চলে গেলো আমাদের ছেড়ে।এমন না হয়ে সবকিছু অন্যরকম হতে পারতো।

তনিমাঃআমাদের হাতে কিছু থাকে না।যা থাকে সবকিছু আল্লাহর হাতে।আমরা চাইলেও ফিরিয়ে আনতে পারবো না,যে চলে যাবার সে চলে গেছে।

তাহিয়াঃরাসেল ভাইয়া কোথায়?

তনিমাঃঅফিসে গেছে এই কয়দিন অনেক দৌড়াদৌড়ির উপর ছিলো তাই যেতে পারে নি।আজ কিছু ফরেইনার ক্লাইন্ট আসবে তাই যেতে হলো।

তাহিয়াঃঅহহ।আমি তাহলে যাই তুমি তাহলে রেস্ট নাও।

তনিমাঃঠিক আছে যা।আর আজ তাহসিন আর জারার গায়ে হলুদ মনে আছে তো

তাহিয়াঃ হুম মনে আছে,তুমি যাবে না

তনিমাঃনা আমি যাবো না এই অবস্থায়।আর গেলে রাসেল খুব বকবে।তোরা যা আর তাহসিনকে আমার শুভকামনা জানাতে ভুলিস না।আর ওর সাথে মোবাইলে কথা তো হবেই

তাহিয়াঃআচ্ছা তাহলে আমি যাই

__________________________________

বিকালে আমরা সবাই তাহসিনের বাড়িতে গেলাম।একসাথে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।আমাদের উপর এতো কিছু হয়ে যাবার ফলে ওরা ডেট আরও পরে নেয়ার কথা বলেছিলো কিন্তু আমরাই মানা করে দিয়েছি।কলাপাতা রঙের শাড়ি পরেছে সব মেয়েরা তাই আমিও পরেছি।আর ছেলেরা সেইম কালারের পাঞ্জাবি।তাহসিনকে কোনো রাজপুত্রের চেয়ে কম লাগছে না।কাচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছে।খুব মানিয়েছে।জারাকেও পুরো রাজকন্যা লাগছে খুব সুন্দর লাগছে ওকে।তাহসিনের সাথে ম্যাচিং লেহেঙ্গা পরেছে।আমার ভাবনার মাঝেই তূর্য ভাইয়া বলে উঠলো-

তূর্যঃআরিশের বাড়ি থেকে কেউ এখনো আসে নি কেনো একটা কল দিয়ে দেখ তো

তাহিয়াঃআচ্ছা ভাইয়া আমি কল করছি।(বলেই এক কোণায় এসে মোবাইল বের করলাম কল দেয়ার জন্য।ঠিক তখনই কেউ আমার হাত টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে আসলো।আর ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।সে আমার গলায় মুখ ডুবালো। একমুহূর্তে খুব ভয় পেয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই পরিচিত সুগন্ধে বুঝতে বাকি রইল না সামনে থাকা ব্যাক্তিটি কে।আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ সে।)

তাহিয়াঃকোথায় ছিলে এতোক্ষন আমি অপেক্ষা করছিলাম তো

আরিশঃরাগ হয়েছে বুঝি আমার বউয়ের

তাহিয়াঃতা নয়তো কি(অভিমানী কন্ঠে)

আরিশঃএই দেখো কানে ধরছি আর কখনো দেরি হবে না।

তাহিয়াঃতুমি জানো না তোমার থেকে একমুহূর্ত দূরে থাকতে পার না আমি তাহলে কেনো দেরি করে আসলে

আরিশঃআর কখনো হবে না বউ(আমাকে জড়িয়ে ধরে)

অতীত,,,,,,

অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছি আমি।এখনো লাল বাতি জ্বলছে।মনে হচ্ছে এক ছুটে আরিশের কাছে চলে যাই।চোখের পানি এখন আর ঝরছে না তারাও হয়তোবা শুকিয়ে গেছে।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে আমরা সবাই তাকে ঘিরে ধরি।

রায়হানঃডাক্তার আমার ছেলে কেমন আছে?

ডাক্তারঃগুলি টা বুকে লাগাতে অনেক কমপ্লিকেটেড হয়ে গেছিলো প্লাস অনেক রক্ত ক্ষরণ হওয়ার ফলে আমরা রুগির বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।এখন উনি আশংকা মুক্ত।

তাহিয়াঃআমি দেখা করতে পারি আরিশের সাথে

ডাক্তারঃজ্ঞান না ফিরা অবদি কেউ দেখা করতে পারবে না।জ্ঞান ফিরলে আপনারা সবাই দেখা করতে পারবেন।

ছয় ঘন্টা পর আরিশের জ্ঞান ফিরে আসে।একে একে সবাই আরিশের সাথে দেখা করেছে।কিন্তু আমি যাচ্ছি না।কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে।কি করে তাকে ভুল বুঝলাম।আবার না দেখেও থাকতে পারছি না।তাই অনেক ভেবে ভিতরে গেলাম।আরিশ চোখ বন্ধ করে আছে।আমি ভিতরে আসছি টের পাইনি হয়তো।না হয় এতোক্ষনে চোখ খুলে তাকাতো একবার হলেও।

আরিশঃএই সময় হলো তোমার আমার কাছে আসার।এই ভালোবাসো আমাকে

তাহিয়াঃআসলে আ আমি

আরিশঃআ আমি কি,তোতলানো বন্ধ করে সোজা কথা বলতে পারো না

তাহিয়াঃআমাকে দেখে কেমন রিএক্ট করবে তাই আসতে ভয় করছিলো

আরিশঃকেনো রিএক্ট করবো

তাহিয়াঃআমি তোমার সাথে এমন করেছিলাম,ভুল বুঝেছি,তোমার কোন কথা না শুনেই সবকিছু বিচার করেছি তাই

আরিশঃএমন করাটাই কি স্বাভাবিক ছিলো না।তূর্য তোমার ভাই তাকে যদি কেউ আঘাত করে তুমি তার বিরুদ্ধে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না।

(আমি আরিশকে জড়িয়ে ধরি আরিশও আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।আমি সত্যিই ভাগ্যবতী যে আরিশের মত স্বামী পেয়েছি)

আরিশঃআচ্ছা রেজোয়ান হোসেনের কি হলো?

তাহিয়াঃওনাকে জেলে নিয়ে গেছে।আর ওনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরিশঃঅহ ভালোই হলো

(দুইদিন আরিশকে হসপিটাল থাকতে হলো।তারপর আমরা আরিশকে বাসায় নিয়ে এলাম।সবার সেবা-যত্নে এখন সে অনেকটাই সুস্থ।সবকিছু ঠিক হওয়ার ফলে তাহসিন ভাইয়া আর জারার বিয়ের দিন ফেলা হয় এক সপ্তাহ পরে)

_________________________________

দুইদিন পর,,

রাসেলঃতনিমা তারাতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বের হউ।তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আমি অফিস যাবো।

তনিমাঃআসছি তো

রাসেলঃআর পাঁচদিন পরে তো বিয়ে তাই আজ শপিংয়ে যেতে হবে।আজ তো মেয়েদের শপিং সারাদিনে শেষ হবে কিনা আল্লাহ ভালো জানে।

তনিমাঃহয়ে গেছে আমার

(হঠাৎ তনিমা চিৎকার দিয়ে উঠলো। রাসেল ভাইয়া তারাতাড়ি দরজায় কড়া নাড়তে থাকে কিন্তু আপুর কান্নার বেগ বাড়তে থাকায় রাসেল ভাইয়া দরজা ভেঙে ফেলে।আর ভিতরে আপুকে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।আপুকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হলে জানা যায় আপুর মিসকেরেজ হয়েছে।আপু খুব ভেঙে পরে তাই আপুকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়।সাথে আমি আর রাসেল ভাইয়াও চলে আসি।এখন আপু অনেকটা সুস্থ কিন্তু কষ্ট তো আর শেষ হয়ে যায় না।)

বর্তমান,,,,

তাহসিনঃআজ আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে

জারাঃথ্যাংকস।আপনাকেও খুব ভালো লাগছে

তাহসিনঃধন্যবাদ(তখন আরিশ আর তাহিয়া তাহসিন আর জারাকে হলুদ পরাতে আসলো)

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়া আজ থেকে কিন্তু তুমি জারার আচলে বেধে গেলে।এখন থেকে জারার কথাই শেষ কথা তোমার কথার কোনো মুল্য নেই বুঝলে।(সবাই হাসলো)

তাহসিনঃসবসময় ভালো থাকিস।তোকে এভাবেই হাসি খুশি দেখতে ভালো লাগে।

জারাঃভাইয়া আপু দোয়া করবে আমাদের জন্য

আরিশঃঅবশ্যই,আমাদের দোয়া সবসময় তোমাদের সাথেই থাকবে

(আমি আর আরিশ হলুদ দিয়ে উঠে আসলাম।তাহসিন ভাইয়া স্টেজ থেকে উঠে গেলো তার পিছনে জারাও উঠে কোথায় যেনো গেলো)

তাহসিনঃভালো থাকো প্রেয়সী ,আমার বাস্তবে তুমি আমার নও কিন্তু আমার দিক থেকে একান্ত ব্যক্তিগত অস্তিত্বে তোমার বসবাস থাকবে চিরকাল।কারণ তোমার স্থান আমি অন্য কাউকে দিতে পারবো না প্রেয়সী।কিন্তু কথা দিলাম জারাকে খুশি রাখবো আর নিজেও সুখি হবো জারার সাথে।তাকে যে আমি একটু হলেও ভালোবাসি।তবে তোমার স্থানটা তোমারই থাকবে।বাকিটা জুড়ে জারা থাকুক।(আকাশের দিকে তাকিয়ে এগুলো বলে চোখের কোণের পানিটুকু মুছে ফেললো,তবে তা জারার দৃষ্টিগোচর হলো না কারণ তাহসিনের পিছনেই জারা ছিলো।)

জারাঃখুব ভালোবাসেন তাই না(কাধে হাত দিয়ে)

তাহসিনঃ হুম অনেক।প্রথম ভালোবাসা নাকি ভুলা যায় না।হয়তো কথাটি সত্যি।কিন্তু আবারও ভালোবাসা যায়।মন থেকে চাইলে বাসা যায়।

জারাঃমানে

তাহসিনঃআপনাকে আমি ভালোবাসি।তাহিয়াকে ভুলা আমার পক্ষে পসিবল না।কিন্তু আপনার সাথে আমি সারাজীবন থাকতে চাই।বৃদ্ধ হতে চাই আপনার সাথে।হবেন কি আমার সাথে

জারাঃ আমিও যে খুব ভালোবাসি আপনাকে।হবো আপনার সাথে আমি সারাজীবন থাকবো।এত্তোগুলো বাচ্চার মা হবো আবার বুড়োও হবো।?

(তারপর দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো)

_________________________________

তূর্য আর আরিশ বসে কথা বলছে।

তূর্যঃতুই একলা এসেছিস,আংকেল আন্টি আসে নি কেনো

আরিশঃকাল বিয়েতে আসবে আর আমি একলা আসি নাই

তূর্যঃতাহলে কে এসেছে তোর সাথে

আরিশঃদাড়া ডাকছি তাকে(মুখে বাকা হাসি দিয়ে)

তূর্যঃকাকে ডাকছিস

আরিশঃসামনে আসলেই দেখতে পাবি।(পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেনো কল করল আর ওরা যেখানে আছে সেখানে আসতে বললো)

কিছুক্ষণ পর একটা মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠলো -ভাইয়া ডাকছিলে আমায়।তূর্যের যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না সে ঠিক শুনছে তো।

আরিশঃ হুম রোজা এইদিকে আয় দেখ কে এসেছে।

তূর্যঃরোজা তুমি(অনেকটা অবাক হয়ে)

রোজাঃ……..

(কিছুক্ষণ পর তাহিয়া সেখানে আসলে সবাই বিভিন্ন কথা বলে।কিন্তু তূর্য আর রোজা একে অপরের সাথে কোনো কথা বলছে না দেখে আরিশ তাহিয়ার হাত ধরে উঠে অন্য সাইডে চলে গেলো।)

তূর্যঃকেমন আছো তুমি

রোজাঃযেমন রেখে চলে এসেছিলে তেমন(রোজা আর তূর্যের আগে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো।যা তূর্য নিজের ভেঙে দেয়।কারণ সে তার অনিশ্চিত জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চায় নি।তাহিয়াকে কিছু করলে তার জীবন অনিশ্চিত ছিলো।কিন্তু এখন সব ঠিক আছে।)

তূর্যঃএখনো রেগে আছো আমার উপর।সবকিছু কি আগের মত ঠিক করক যায় না

রোজাঃআমার দেরি হচ্ছে, আমাকে যেতে হবে।

তূর্যঃকাল বিয়েতে আসবে তো

রোজাঃবলতে পারছি না(আমাকে যে আসতেই হবে।তোমাকে দেখার তৃষ্ণা কি আমি মিটাতে পারবো না আসলে)

তূর্যঃঅহহ

রোজাঃআচ্ছা আসছি।(আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে গেলো এখান থেকে)

চলবে ,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here