হতে পারি বৃষ্টি ❤️,পর্ব-২

0
2928

হতে পারি বৃষ্টি ❤️,পর্ব-২
লেখনীতে-মৌশ্রী রায়

“আমি রায়া।সিদরাত রহমান রায়া।আর দাদীমা তো বললো তুমি আমার মা হবে।আমি তোমাকে মা বলে ডাকি?ইভিনিং স্টার তো আমাকে ওনাকে বাবা ডাকতে দেয়না।তবে তুমিও কি আমায় মা ডাকতে দেবেনা?”

রায়ার মুখে এমন কথা শুনে চরম অবাক হল ঐশী।এসবের কি মানে তার কিছুই বোধগম্য হল না তার।রায়া তাকে মা ডাকবে মানে?আর সায়াহ্নকেই বা কেন বাবা ডাকতে যাবে সে?
সায়াহ্নের যে কোন মেয়ে আছে তা তো ঐশী জানতো না।এতবড় কথাটা কি ইচ্ছে করেই জানানো হয়নি তাকে।এতবড় সত্যিটা লুকানোর কি খুব প্রয়োজন ছিল তার থেকে।তাকে কি এক প্রকার ঠকানো হলনা!!
কথা গুলো বারবার মস্তিষ্কের প্রতিটি স্নায়ুতে বাহিত হতে থাকলো ক্রমাগত।আর বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে সে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।অনড়,নিষ্পলক ভাবে।

খানিকবাদে রায়ার ডাকে ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এলো ঐশী। পিটপিট করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল তার নিষ্পাপ মুখপানে।তারপর আবার হাসির তোরে কানায় কানায় ভরে উঠল তার মুখমন্ডল।

কালবিলম্ব না করেই হাটুমুড়ে বসে পরলো রায়ার সামনে।উভয়ের মধ্যকার দুরত্বের ফারাক টুকু ঘুচে গেল তাতে।রায়ার নরম তুলতুলে গাল দুটোতে নিজের হাত বসিয়ে নমনীয়তার স্বরে প্রশ্ন ছুড়লো ঐশী,
“তুমি কি সায়াহ্নর মেয়ে রায়া?”

রায়া ঐশীর প্রশ্নে খেই হারা নৌকার মতো এলোমেলো পলক ঝাপটালো।এ প্রশ্নের জবাব জ্ঞান হবার পর থেকেই তার কাছে গোলমেলে।
তবুও অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সে এই অস্বস্তিকর প্রশাের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এলো।
মিহি স্বরে জবাব দিল,
“আগে বল,তোমাকে মা ডাকা যাবে না?”
ঐশীর চোখ জোড়া টলমলিয়ে উঠলো।সে নিজেও যে অনাথ। মা-বাবা কাউকেই সে পায়নি কোনকালে।ছোট থেকেই অনাথ আশ্রমে মানুষ। এরপর একটু বড় হতেই টিউশন করেই দিনাদি পার করতো সে।স্নেহ মমতা,আদর ভালোবাসা কোনদিনই জোঁটেনি তার ভাগ্যে।তাই সে জানে মা না থাকার কষ্ট কত খানি।তাইতো জগতের সবার সামনে শ্কত মেয়ে রুপে পরিচিত তার চোখের জলও আজ বাঁধ মানেনি।রায়ার কোমল কন্ঠের মাতৃত্বের আবাহনে শুষ্ক কপোল ভিজিয়েছে।
নিজেকে সামলে নিয়ে ঐশী আবার বলতে শুরু করলো,
“তুমি যদি আমাকে মা ডাকতে চাও তো ডাকতে পার।আমার কোন আপত্তি নেই রায়া। এবার তবে এটা বল তোমার বাবা হন সায়াহ্ন? ”

রায়া এবার একগাল হেসে মাথা নাড়লো।গালময় বিস্তৃত হাসিকে সঙ্গী করে বলে উঠল,
“এই প্রশ্নের জবাব ভীষণ এলোমেলো মা।একদম একটু আগে ছড়িয়ে থাকা তোমার অগোছালো কুচি গুলোর মতো।
আমি জ্ঞান হবার পরে থেকেই দাদীমার কাছে শুনি ইভিনিং স্টার আমার বাবা।তবে ইভিনিং স্টার সবসময় বলেন আমি ওনার কেউনা।ছোটবেলা থেকে আজ অবধি আমাকে কখনোই জড়িয়ে নিজের বুকে আগলে নেয়নি উনি।কোলেও নেইনি কখনো।
আমি একবার বাবা বলে ছুটে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরাতেই আমাকে ছিটকে সরিয়ে দেন ওনার কাছ থেকে।চিল্লিয়ে বলে আমি যাতে আর কখনো ওনাকে বাবা না ডাকি।আমি ওনার কেউনা।শুনে সেদিন খুব কেঁদেছিলাম দাদীমার কাছে গিয়ে।
দাদীমা আমাকে বুঝিয়ে শান্ত করে বলেন,যে বাবার নাম সায়াহ্ন। সায়াহ্ন মানে সন্ধ্যা। আর সন্ধ্যা মানে ইভিনিং।বাবা আমার সাথে অলওয়েজ সন্ধ্যা তারার মতোই থাকবে।কিন্তু আমাাকে ব্রেভ বানানোর জন্য এভাবে দুরে দুরে থাকছে আমার থেকে।যাতে আমি নিজের ওপর নির্ভরশীল হই।এ জন্যই আমি বাবাকে ইভিনিং স্টার বলে ডাকি।এই যা।”

ঐশী শান্তভাবে রায়ার বলা প্রতিটা কথা শুনলো,বুঝলো।সব বুঝে তার মনে হল এই মেয়েটির জীবন তার চেয়েও বেশি অগোছালো, কষ্টসিক্ত।

তার তো কেউই ছিলনা।জন্মের পরই মাকে হারিয়েছে আর তারপরে বছর না ঘুরতেই বাবাকে।চাচা-চাচিরা কেউ তার দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে চায়নি বলেই তাকে ফেলে রেখে আসে অনাথআশ্রমে।তবে এতে তার কোন দুঃখ নেই, সে জানে এ পৃথিবী খুব কঠিন, এখানে নিজের মা-বাবাও পর হয়ে যায়, সেখানে অন্যের সন্তানের দায় কে নেবে কাঁধে??কেউনা।নির্দয়ভাবে এটাই সত্য।
ঐশীর হঠাৎই মনে হল প্রকৃতই কেউ না থাকার কষ্টের চেয়ে কেউ থেকেও না থাকার কষ্ট অনেক বেশি যন্ত্রণা দায়ক।
ঐশী সহাস্যে হাত বোলাল রায়ার মাথায়।তার খানিক পুর্বেই করা প্রার্থনা এত দ্রুতই যে মঞ্জুর হয়ে যাবে তা সে ভাবেনি,ভাবতে পারেনি।
সত্যি সত্যিই এখন এই মেয়েটা তার মেয়ে।সে তাকে প্রকৃতপক্ষেই সারাক্ষণ মা মা ডেকে যাবে ভাবতেই মনের মাঝে পুলক খেলে গেল তার।
সে হাসি হাসি মুখে রায়াকে বললো,
“তুমি কিছু খেয়েছ মা?”
রায়া ঘাড় নেড়ে সায় জানালো যে সে খেয়েছে,এখনে আসার পরপরই দাদীমা তাকে খাইয়ে দিয়েছে।

ঐশী আবার দুর্দান্ত হাসলো।রায়ার ছোট্ট মস্তিষ্ক খেয়াল করলো,তার মায়ের সাথে তার অদ্ভুত এক মিল রয়েছে। আর তা হল,তারা কথায় কথায় হাসে,সুখ দুঃখ, হাসি কান্না,রাগ অভিমান যাই হোক, তারা সব ভুলে গাল ভরে হাসে।
তার এই চমৎকার ভাবনাটির কথা সে ঐশীকে জানাতেই ঐশী তার কপালে ছোট্ট করে ঠোঁট ছোঁয়ায়।মনে মনে আওড়াতে থাকে,
“এ জগতে যাদের বুকে চাঁপা কষ্ট বেশি থাকে,যাদের ভেতরে তিলতিল করে বড় হয় এক বিশাল শুণ্যতা, তারাই এমন কারণে অকারণে হাসতে পারে।কেননা,তাদের না থাকে নতুন করে কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা আর না থাকে পুরনো কিছু হারানোর ভয়।তাদের মনে শুরু থেকে শেষ কেবল একরাশ শুণ্যতাই বাস করে।যা হয়তো চিরকাল শুণ্যই থাকে।সে স্থান তারা ভরতেও চেষ্টা করেনা।কারণ কিছু কিছু শুণ্যতা আজীবনস্থায়ী।তা কখনো পুরণীয় নয়!কখনো না!”
.
খিটখিটে মেজাজে গোজা ব্যালকনিতে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দুহাতে নিজের চুল মুঠো করে চেয়ারে বসে পড়ে সায়াহ্ন। রাগের মাথায় সে বিরাট বড় ব্লান্ডার করে ফেলেছে। ল্যাপটপটাতে তাঁর অনেক পুরোনো নতুন ইনফরমেশন ছিল।সেটাকেই সে নির্দয় ভাবে আছাড় মেরে কয়েক টুকরো করে ফেলেছে। এখন তার ভাবনা তার কি হবে?
কি হবে?
চিন্তায় মাথার সব ঘিলুই হয়তো জট পাঁকিয়ে যাচ্ছে।
প্রজেক্ট হেড সেই ছিল।তাই সবরকমের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা তার কাছেই ছিল।এখন সে কি থেকে কি করবে কিছুই ভেবে পেলনা সে।
চিন্তারত মুখে নিশ্চুপ রোবটের মতো বসে রইল সেই আরামকেদারায়।তবে তাতে আরাম বিন্দুমাত্রও পাওয়া গেলনা।কেবল টর্নেডোর গতিতে ভাবনারা তান্ডব চালালো তার নিরীহ মস্তিষ্কে।

সায়াহ্ন যখন চিন্তা ভাবনার অকুল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে, তখনই রায়ার হাত ধরে তার রুমে প্রবেশ করলো ঐশী।
সায়াহ্নর চেহারার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা, সাদা জিন্স ভিজে দৃশ্যমান ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখে কপালে সরু চিন্তার ভাজ পড়লো ঐশীর।সে ভাবলো লোকটা ভীষণ অদ্ভুত । অন্যকারো ওপরে রেগে গিয়ে নিজের কষ্টের টাকায় কেনা জিনিস ভাঙার কি দরকার?নিজের হাত পা কেটে রক্তারক্তি কান্ড ঘটানোরই বা কি প্রয়োজন??
কিন্তু ভাবনাগুলোকে নিজের মনেই রেখে দিল সে।প্রকাশ করলেই বিপদ।
তাই কিছু না বলেই ঐশী রায়ার হাত ছেড়ে দিয়ে সায়াহ্নর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। সায়াহ্ন তখন দুহাতে মাথার চুল খামছে ধরে চোখ বুজে বসে আছে। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ভাঙা ল্যাপটপের চিন্তা। তাই হয়তো সে খেয়াল করেনি তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর উপস্থিতি।
ঐশী নিঃশব্দে মেঝেতে ছড়ানো ভাঙা চোড়া টুকরো গুলো পরিষ্কার করে ফেলল।কাচ বিঁধে নিজের হাতের দু এক জায়গাতেও রক্ত ঝড়ালো।
সবটা পরিষ্কার করে ফার্স্ট এইড বক্স এনে সায়াহ্নর হাটুতে হওয়া ক্ষত নিরাময়ের উদ্দেশ্যে যেই সে সায়াহ্নকে ছুঁয়েছে অমনি তড়িৎ গতিতে সায়াহ্ন প্রায় লাফিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
কি হচ্ছে তা কিছুক্ষণ বুঝে নিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে সে,
“হোয়াট দা হেল আর ইউ ডুয়িং হেয়ার?হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?আর তুমি এ ঘরে কি করছ?আমাকে সেবা করতে এসছো?এসে কি প্রুভ করতে চাইছ?আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ?আর আমাদের মাঝে সম্পর্ক খুব ভালো?তুমি ভীষণ দায়িত্বশীল স্ত্রী? এসব করে আমার মনে জায়গা করে নিতে চাইছ নাকি?শোন,তোমার এসব নাটক মা-বাবার সামনে গিয়ে দেখাবে।আমাকে দেখাতে আসবেনা।এসব নাটকে সায়াহ্ন রহমান ভুলবেনা।”
ঐশীকে প্রাণভরে এই অপমানজনক কথা গুলো শোনানোর পর সায়াহ্নর চোখ পড়লো একটু দুরেই নতমুখে দাঁড়িয়ে থাকা রায়ার দিকে।
মাথায় জ্বলন্ত রাগের আগুন এতে আরো দাউদাউ করে উঠলো।রায়ার দিকে আঙুল তাক করে সে দ্বিগুণ চেঁচানো সাবরে বলে উঠল,
“এই মেয়েটা কেন এসেছে আমার সামনে?ওকে তো আমি বারণ করেছিলাম যাতে আমার আশেপাশে না আসে।তাও কেন এসেছে।এই মেয়ে এই বেরোও আমার সামনে থেকে। যাও চলে যাও!”
রায়ার বরাবরই এসব শোনার অভ্যেস আছে তাঁর বাবার থেকে। জ্ঞান হওয়া অন্তর বাবার কাছে থেকে এমন ব্যবহারই পেয়ে আসছে সে।তাই এখন আর তার এসবে খারাপ লাগেনা।কষ্টও হয়না।সবটাই সয়ে গেছে।
তাছাড়াও তার শিশু হৃদয় এটাই বিশ্বাস করে যে তার দাদীমা যা বলেছে তাই ঠিক।তার বাবা তাকে স্ট্রং গার্ল বানাতে চায় বলেই এত রুঢ় ব্যবহার করে তার সাথে।
নইলে সে তো দেখেছে,তার কোন বান্ধবীর বাবাই তাদের সাথে এমন করেনা।খুব আদর করে।আর সেজন্যই তার সব বান্ধবীরাই ভীষণ নরম স্বভাবের। একটু কিছুতেই কেঁদেকেটে ভাসিয়ে দেয় তারা,নালিশ ঠোকে বাবার কাছে গিয়ে।কিন্তু সেখানে সে তো এমন করেনা।ফ্যাচফ্যাচিয়ে কাঁদার স্বভাব রায়ার কোনদিনই নেই।সে নিজের পরিস্থিতি নিজেই সামলাতে পারে,নিজেকে নিজে সামলাতে পারে,কথায় কথায় বাবার কাছে এসে তাই নালিশ ঠুকতে হয়না তার,করতে হয়না কোন বায়না।
আর নিজেকে এতটা সামলানোর ক্ষমতা,সাহস তো রায়া তার বাবার এমন রুঢ় ব্যবহারের জন্যই পেয়েছে। তাই বাবার কোন কথাতেই কষ্ট হয়না তার।বরং সে দিব্যি এত এত বকা খেয়ে,হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকে। এই যেমন এখনো হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে সে।

তবে রায়ার খারাপ না লাগলেও সায়াহ্নর ব্যবহারে ঐশী ভীষণ রেগে যায়।নিজের মেয়ের সাথে এমন দুর্ব্যবহার কোন বাবা কি করে করতে পারে, ঐশী তাই ভেবে কুল পায়না।
ইতিমধ্যেই সায়াহ্নর আগ্রাসী গলার আওয়াজে নিচ থেকে ওপরে চলে এসেছে সায়াহ্নর মা,মিসেস সাহানা রহমান এবং সায়াহ্নর বাবা আনোয়ার রহমান।
ছেলের এমন রাগের সাথে তারা পরিচিত আজ ছয় বছর যাবৎ। তবে আজ হঠাৎ এভাবে রাগার কারণটা কি তা জানতেই ওপরে এসে তারা দেখলেন রায়া দাঁড়িয়ে আছে সায়াহ্নর সামনে।
মুহুর্তেই তারা বুঝতে পারলেন কি হয়েছে!

সায়াহ্নর মা তার দিকে এগিয়ে এসে কিছু বলতে নেবেন তার আগেই সায়াহ্ন আবার চেঁচিয়ে উঠলো,
“কি হল?বেড়িয়ে যাও!এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?”

সায়াহ্ন র কথায় রায়া রুম থেকে প্রস্থান করবে এমন সময়ে ঐশী গিয়ে পেছন থেকে রায়ার হাত ধরে আটকে দিল তাকে।
রায়া দাঁড়িয়ে পড়ে পিছু ফিরে মায়ের মুখের দিকে চাইলো।ঐশী হালকা হেসে চোখের ইশারায় তাকে যেতে বারণ করে সায়াহ্নর দিকে তাকালো।
হাসি মুখে ভীষণ শক্ত কন্ঠে বলে উঠল,
“আমি যতদুর জানি এ বাড়িটা বাবার সায়াহ্ন। তাই এ বাড়িতে কখন,কে কোথায় থাকবে না থাকবে তা ঠিক করার কোন রাইট হয়তো আপনার নেই। আপনার মতো রায়াও এ বাড়িরই সন্তান,তাই আপনার এ বাড়িতে যতটা অধিকার,রায়ার অধিকার তার চেয়ে কোন অংশে কম না।তাই যদি আপনার খুব সমস্যা হয়,তো আপনি চলে যান এ বাড়ি থেকে। রায়া কোথাও যাবে না।”

ঐশীর এমন কথায় কিছুক্ষণ নিষ্পলক তার দিকে তাকিয়ে রইল সায়াহ্ন। শুধু সে নয়, সাথে রুমে উপস্থিত বাকি তিনজন মানুষও।সায়াহ্নকে যে মুখের ওপর কেউ এভাবে বলতে পারে তা সায়াহ্ন সহ বাকিদেরও ভাবনার উর্ধ্বে ছিল।
খানিকক্ষণ অবাক নয়নে তাকিয়ে থেকে ঐশীকে উত্তরে মারাত্মক কঠিন কিছু শব্দ উপহার দিতে চেয়েও সায়াহ্ন পারলো না।তার মস্তিষ্ক শব্দহীন হয়ে পড়েছে বলে মনে হল।
তাই কিছু না বলেই সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে গাড়ির চাবিটা নিয়ে গটগট পায়ে সে বেড়িয়ে যাবে এমন সময় ঐশী আবার বলে উঠল,
“আপনি রায়ার সাথে থাকবেন না বলে বেড়িয়ে যাচ্ছেন ভালো কথা কিন্তু এ বাড়ির সব গাড়িও তো বাবার তাই না!তারমানে তাতেও রায়ার অধিকার আছে।আর যে জিনিসে রায়ার অধিকার আছে সে জিনিস আপনি ব্যবহার করবেন তাতে আপনার এলার্জি হবে না?”

সায়াহ্ন এবার বিস্ময়ে বাকহারা হয়ে পড়লো।তার সাথেও কেউ এভাবে কথা বলতে পারে তা যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তবুও অবিশ্বাস্য এই ঘটনা তো ঘটে গেল।তাই রাগের মাথায় গাড়ির চাবিটা ছুড়ে মারলো মেঝেতে। তারপর রাগী চোখে ঐশী কে আপাদমস্তক পরখ করে নিয়ে গমগমে স্বরে বলে উঠল,
এ বাড়িতেও থাকবনা,এ বাড়ির গাড়িও নেবনা। হেটে হেটেই যাতায়াত করব আজ থেকে।যতসব!”
কথাটা বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।

সে বেড়িয়ে যেতেই ঐশী বিরবির করে বলে উঠল,
“হুহহ্,নবাব পুত্র, সে নাকি আবার গাড়ি ছাড়া হেটে হেটে যাতায়াত করবে।হোয়াট এ জোক!”

রায়া,মিস্টার আর মিসেস রহমান কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে সশব্দে হেসে উঠল।তাদের হাসি দেখে হাসলো ঐশীও। তবে মনে মনে সে ঠিক করলো এই ঘাড়তেড়া লোককে সে সোজা করে তবেই ছাড়বে।না পারলে তার নামও ঐশী নয়!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here