হতে পারি বৃষ্টি ❤️,পর্ব-৪

0
2790

হতে পারি বৃষ্টি ❤️,পর্ব-৪
লেখনীতে-মৌশ্রী রায়

বাথরুমের ভেতর কমোডে বসে আছে সায়াহ্ন। প্রায় আধঘন্টা পরে তার পেট ব্যাথার অবসান ঘটেছে। অতিরিক্ত আরামে চোখ বুজে একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে যেই না সে ট্যাপ অন করেছে অমনি তার মুখমন্ডল পাংশুটে বর্ণ ধারণ করলো।
বাথরুমে জল নেই।ডানে,বাঁয়ে সবদিক দিয়ে ঘুড়িয়েও যখন ট্যাপ থেকে এক ফোঁটা জল গড়ালো না,তখন সে নিরুপায় হয়ে অত্যন্ত ধীর কন্ঠে ডেকে উঠলো,
“ঐশী, ঐশী!ঐশী? ”

ঐশী বাথরুমের দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল।তাই সায়াহ্নর ডাক তার কানে গিয়েও পৌঁছালো প্রথমবারেই।তবুও সে সাড়া দিল না।সায়াহ্নকে আরো খানিকটা জ্বালানোর উদ্দেশ্যে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো।
গুণে গুণে ঠিক পাঁচবার ডাকার পর ঐশী সাড়া দিল।গা জ্বালানো স্বরে বললো,
“কি হলো সায়াহ্ন? বাথরুমে বসেও আমাকে ডাকছেন কেন?বাথরুম তো প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত কাজের জায়গা।সেখানে আপনি কি জন্য ডাকছেন আমাকে?ও মাই গড সায়াহ্ন! আপনি কি আমাকে নিজের ব্যক্তিগত মানুষ ভাবছেন নাকি?কি সাংঘাতিক!!”

সায়াহ্নর মাথা ধরে গেল।কি করে এত বেশি বাজে বকতে পারে একটা মানুষ সে চিন্তাই মাথার মাঝে চক্কর দিতে লাগলো ক্রমাগত!সে চিন্তাতেই মনের মধ্যে উদ্রেক হল বিরক্তি আর রাগ!
তবুও সে নিজেকে সামলালো।এখন তাকে শান্ত ভাবে কথা বলতে হবে।নইলে তার মান-সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।বিনা জলে এভাবে কমোডে কতক্ষণ বসে থাকা যায়!!
তাই ধীর কন্ঠে বলে উঠল সে ঐশী কে উদ্দেশ্য করে,
“ঐশী, বাথরুমে জল নেই।তুমি একটু জলের লাইনটা চেক করবে প্লিজ!”
ঐশী অতিরিক্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠল,
“ওমা!এতে চেক করার কি আছে?জলের লাইন তো আমিই বন্ধ করে রেখেছি। ”

সায়াহ্ন যেন আকাশ থেকে পড়লো।ইচ্ছে করে জলের লাইন অফ করে রেখেছে মানে কি?কি আশ্চর্য। রাত বেরাতে কি তার সাথে ফাজলামো করছে নাকি ঐশী। সায়াহ্ন এবার কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললো,
“এসব কেমন ফাজলামি ঐশী? বাঁদরামোর একটা সীমা আছে। রাত বেরাতে এসব মজা ভালো লাগছেনা আমার।সো প্লিজ!”

ঐশী নিদারুণ ইনোসেন্ট ভয়েসে বললো,
“ওমা!আমি কেন মজা করব?আপনার সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক?আমি তো কল এজন্যই বন্ধ করেছি কারণ এই জলের লাইনটাও তো বাবার টাকার।তারমানে এতেও আমাদের মানে রায়া আর আমার অধিকার আছে।তা,আমাদের অধিকারস্থ জলের লাইনের জল আপনি ব্যবহার করবেন এতে যদি আবার আপনার এলার্জি হয়?তখন।দেখলেন না,খাবার খেয়েই পেট মোচড় দিল আপনার।এখন এই জল ব্যবহার করে যদি আপনার পশ্চাৎদেশেও এলার্জির উপদ্রব দেখা দেয় তখন কি হবে??আমি তো আপনার কথা ভেবেই করলাম যা করার।অযথাই আমার সাথে রাগারাগি করছেন!”

ঐশীর কথা শুনে সায়াহ্নর রিয়্যাক্ট বাটনই কাজ করা বন্ধ করে দিল যেন।এমনও কেউ ভাবতে পারে।জলে এলার্জি!তাও আবার পশ্চাৎদেশে!হায় আল্লাহ্!

সায়াহ্ন এবার গলার স্বর নরম করলো।সে জানে এই মেয়ে উন্নতমানের ঘাড়তেড়া।একে রাগালেই বিপদ।তাছাড়াও গোটা রাত কমোডে বসে বসে তো আর কাটানো যাবে না।তাই সে মিহি স্বরে বলে উঠল,
“ঐশী, দেখ,তুমি জলের লাইনটা দয়া করে খুলে দাও।কোন এলার্জি টেলার্জি হবেনা।আর হলেও এলার্জির তো ওষুধ আছেই।আমি আমার পশ্চাৎদেশে লাগিয়ে নিতে পারব।আর যেহেতু পশ্চাৎদেশটা আমার তাই তার ভালো মন্দ তো তোমার চেয়ে ভালো আমি বুঝব তাই না?তাই জলের লাইনটা খুলে দাও।”

ঐশী পুর্ববৎ নিষ্পাপ কন্ঠে বলে উঠল,
“ঠিক তো?আপনার কিছু হলে পরে তার জন্য আমাদের দোষ দেবেন না তো?”
সায়াহ্নর নিস্পৃহ উত্তর,
“নাহ।একেবারেই না!”

এবারে ঐশী বাঁকা হাসলো।ইয়ার টু ইয়ার হেসে জলের লাইনটা খুলে দিল।মিনিট পাঁচেকের মাঝে বাথরুমের কল দিয়ে পড়তে লাগলো জল।সায়াহ্ন বাঁ হাতের কাজটা সেড়ে নিয়ে যেই কমোড থেকে উঠে দাঁড়াবে অমনি তার পেটের ভেতর আবার মোচর দিল।দুহাতে পেট চেপে সে আবার বসে পড়লো কমোডে।
এভাবে প্রায় সাতবার ওঠা-বসার পর অবশেষে দুর্বল শরীর নিয়ে বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সে।

দুর্বল পায়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে ঢুকতেই ঘটলো আরেক বিপত্তি। গোটা ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে।একের পর এক সুইচ চেপেও কোন আলোক উৎস কে জাগানো যাচ্ছে না।
সায়াহ্নর বুঝতে বাকি রইল না এটা কার কাজ!সে আবার নেভা কন্ঠে ঐশী কে ডালো।এবারে প্রথম ডাকেই সাড়া পাওয়া গেল তার।দরজার বাইরের আবছা আলোতে ঐশীর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সায়াহ্ন জিজ্ঞেস করে উঠলো,
“আমার রুমের লাইটের কি করেছ?”

ঐশী আবার আগের মতো স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিল,
“কেন?এ বাড়ির বিদ্যুত বিল তো বাবাই দেয় শুনেছি।তার মানে লাইটগুলো বাবার টাকাতে জ্বলে।তারমানে সে লাইটে আমার আর রায়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।এখন আমাদের অধিকার ভুক্ত লাইটের আলো আপনার গায়ে পড়বে,সেই আলোতে আপনি চোখে দেখবেন!এতে যদি আপনার গা,চোখ এসবে এলার্জি হয়!তখন!তাই আমি আপনার রুমের বিদ্যুত সংযোগ টা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।ভালো করেছি না বলুন! ”

কথা টুকু বলেই বিস্তর হাসলো ঐশী। তাও যে সে হাসি নয়,দুই পাটির আঠাশটা দাঁত বের করা কেলানো হাসি!

সায়াহ্ন এবার আর কিছু বললো না।সে এখন নিশ্চিত এই মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে।মারাত্মক সমস্যা। তাই চুপচাপ নিজের ফোনের ফ্লাশটা অন করে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল সে।
রুমের ভেতর ঢুকেই সর্বপ্রথম আলমারির দিকে পা বাড়ালো।সারাদিন এক ড্রেসে থাকায় শরীরটা কেমন যেন ম্যাজ ম্যাজ করছে তার।তাই একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।সে উদ্দেশ্যেই পোশাক বের করতে আলমারি খুলতেই চোখ দুটো চড়ক গাছ হয়ে গেল তার।
তার আলমারি পুরো ফাঁকা।একটা জামাকাপড়ও নেই।তার পোশাক কোথায় গেল?
হঠাৎ করেই তার মনে পড়লো তাদের বাড়িতে বর্তমানে এক অতীব খচ্চর রমণীর বাস।এটা তার কাজ ছাড়া আর কারোই হতে পারেনা।
সায়াহ্ন আবার আলমারি ছেড়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
দরজা খুলতেই চোখের সামনে ঐশীকে সহাস্য চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিকটা চমকে গেল।তবে ঐশী স্বাভাবিক। যেন সে জানতো যে সায়াহ্ন এখন তার খোঁজই করবে।
সায়াহ্ন এবার কোন রকম ভনিতা না করে বলে উঠল,
“আমার জামা কাপড় কই রেখেছ তুমি?পুরো আলমারি ফাঁকা কেন?”

ঐশী পুনরায় বিশাল লম্বা চওড়া একটা দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বললো,
“ওহ্!আপনার জামাকাপড়! ওগুলো তো বাগানে!”

সায়াহ্ন ভ্রু কুচকে তাকালো।সে নিজের রুমে।তবে তার জামা কাপড়ের বাগানে কি কাজ? বুঝতে না পেরে সে ঐশীকে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন?বাগানে কেন?”

ঐশী আগের মতোই হেসে বললো,
“ওগুলোকে তো আমি কাঁদায় মাখিয়ে রেখে এসেছি। আসলে কি বলুনতো?আমি আলমারি খুলে দেখলাম আপনার সব পোশাকই ধোঁয়া,তা দিয়ে ব্র্যান্ডেড ডিটারজেন্টের স্মেল পাওয়া যাচ্ছে। তো আমি ভাবলাম যে এই দামী ডিটারজেন্টটা তো বাবার টাকাতে কেনা।তার ওপর জামা কাপড় গুলো ধোঁয়াও হয়েছে বাবার টাকায় কেনা ওয়াশিং মেশিনে।এখন সেই ডিটারজেন্ট আর সেই ওয়াসিং মেশিনেও তো তার মানে আমার আর রায়ার অধিকার আছে তাইনা বলুন!!তাই ভাবলাম যে আমাদের অধিকারভুক্ত ডিটারজেন্ট আর ওয়াশিং মেশিনে ধোঁয়া জামা কাপড় পড়ে যদি আবার আপনার গোটা শরীরে এলার্জি হয়,তখন?সারা শরীর এলার্জিতে চুলকালে যদি আপনার অফিসের বস আপনাকে চুলকানি রোগী ভেবে জব থেকে বের করে দেয় তখন?তাই ওগুলোকে বাগানের কাদায় মাখিয়ে রেখে এসেছি!কত ইন্টেলিজেন্ট আমি তাইনা বলুন!সবদিক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিই!”

সায়াহ্ন উত্তর দিলনা।ঐশীর কথা শুনে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে এক দৌড়ে ছুটে গেল বাগানে।
সেখানে গিয়ে তার অতি সাধের জামাকাপড় গুলো কাঁদায় লুটোপুটি খেতে দেখে নিজেও কাঁদায় হাটুমুড়ে বসে পড়লো। কাঁদা লেপ্টানো পোশাকগুলো দুহাতে আকড়ে ধরে কেঁদেই ফেলল সে।
ঐশী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেবল সবটা দেখল আর মুচকি মুচকি হাসলো।মনে মনে আওড়ালো,
“আহা!ঢং দেখলে আর বাঁচিনা!জামাকাপড়ের শোকে এমন করে কাঁদছে যেন সদ্য বিয়ে করা বউ মরে গেছে।যতসব!”
তবে হাসিটাকে চেপে নিয়ে অত্যন্ত সরল কন্ঠে সায়াহ্নর কাছে গিয়ে সে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
“এ বাবা!আপনি এমন কাঁদছেন কেন?কি হয়েছে? ”

ঐশীর কথা শুনে এবার গা জ্বলে গেল সায়াহ্নর।সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এই বাগানটাও তো আমারই বাপের কেনা জায়গার ওপর।তারমানে এ বাগানের কাঁদাও আমার বাপের টাকার।তারমানে তো এই বাগানের কাঁদাতেও তোমার আর তোমার মেয়ে রায়ার অধিকার আছে! তাইনা?তাহলে তোমাদের অধিকারভুক্ত কাঁদায় যে আমার জামাকাপড় মাখালে এতে আমার এলার্জি হবে না?”

ঐশী তার কথা শুনে চেহারায় অত্যন্ত ভাবুক ভাব এনে বললো,
“আরেহ্!তাই তো!আমি তো এটা ভেবেই দেখিনি।তাহলে কি আমার আপনার জামা কাপড়গুলো বাড়ির পাশের ড্রেনটাতে ফেলে রেখে আসা উচিত ছিল?”

সায়াহ্ন ঐশীর কথা শুনে তাকে সজোড়ে একটা ধমক দিয়ে বললো,
“জাস্ট শাট আপ।ইউ স্টুপিড গার্ল!ইরিটেটিং!”

ধমক খেয়ে ঐশী ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করে গেল।সেদিকে একবার বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সব জামাকাপড় গুলোকে কোনমতে হাতে ধরে সেগুলো নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল সায়াহ্ন।

সে বাড়ির ভেতর ঢুকে যেতেই পেটে হাত চেপে হু হা করে হেসে উঠলো ঐশী।কিছুক্ষণ প্রাণভরে হেসে নিয়ে সেও বাড়ির ভেতরে পা বাড়ালো।

রুমে ঢুকে কাঁদা মাখা জামা কাপড় গুলোকে লন্ড্রি বিনে রেখে শাওয়ারে ঢুকে গেল সায়াহ্ন। তার হাতে পায়ে কাঁদা লেগে গেছে।এখন শাওয়ার না নিলেই নয়।

প্রায় মিনিট কুড়ির মতো শাওয়ার নেয়ার পর বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সে। তার পরণে আপাতত একটা তোয়ালে। এটাই আপাতত তার একমাত্র সম্বল।ভেজা জামা কাপড়গুলোর জল নিংড়ে সেগুলো ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে যেই বিছানায় গিয়ে সারাদিনের ক্লান্ত শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে অমনি তার গোটা গা ব্যাথায় মটমট করে উঠলো।এক লাফে বিছানা থেকে উঠে ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে বিছানা হাতড়ে প্রায় চেচিয়ে বলে উঠল ,
“একি!আমার বিছানায় তোষক কই!ইয়া মা’বুদ!রক্ষা কর!”
সায়াহ্ন মেঝেতে ধুপ করে বসে পড়ে।একটা মেয়ে ঠিক কি পরিমাণ ফাজিল হলে তার মতো মানুষকে এভাবে নাকানি চুবানি খাওয়াতে পারে তা সে বুঝতে পারছেনা।ঐশীর ফাজলামির লিমিটটা ঠিক আর কতদুর অবধি গড়াতে পারে তা সে সত্যিই বুঝতে পারছেনা।
ইতিমধ্যে যা যা করেছে এই মেয়ে তাতেই তার অবস্থা খারাপ।এরপরেও কি আরো কিছু করার বাকি আছে?থাকতে পারে?
সায়াহ্নর হঠাৎই মনে হল ঐশী এখন হুট করে এসে এটাও বলে দিতে পারে,
“সায়াহ্ন, আপনাকে ছোট থেকে বড় তো বাবা-মাই করেছে।তাও সম্পূর্ণ ওনাদের খরচায়!তারমানে ওনাদের টাকায় বড় হওয়া আপনার ওপরেও তো আমার আর রায়ার অধিকার। তাই আমাদের অধিকারভূক্ত এই আপনিটাকে দ্বি-অরীয় প্রতিসাম্যতা অনুযায়ী দু খন্ড করে আমাদের দিয়ে দিন!!”

কথাটা ভাবতেই একপ্রকার আৎকে উঠলো সে।কি ভয়ঙ্কর মেয়েকে মা-বাবা তার গলাতে ঝুলিয়ে দিয়েছে তা ভেবেই তার গলা শুকিয়ে আসছে।
তার ভাবনার মাঝে হঠাৎই রুমে প্রবেশ করলো ঐশী। তার হাতেও নিজের ফোনের ফ্লাশ লাইট ধরে রাখা।সায়াহ্নকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ঐশী তাকে প্রশ্ন করলো,
“একি!আপনি এখানে এভাবে বসে আছেন কেন?তাও আবার টাওয়েল পেঁচিয়ে? ”
সায়াহ্ন হতাশ চোখে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
“কেন?বাবার টাকায় টাইলস করা মেঝেতে মানে তোমাদের অধিকারভূক্ত মেঝেতে বসলে কি পুনরায় আমার পশ্চাৎদেশে এলার্জি হতে পারে বলে তোমার ভয় হচ্ছে? ভয় নেই, এবারে আমার গায়ে নিজের টাকাতে কেনা টাওয়েল আছে।আর যেহেতু তোমাদের অধিকারভূক্ত মেঝের সাথে সরাসরি আমার পশ্চৎদেশের সংঘর্ষ হচ্ছে না,তাই এবার আর আমার এলার্জি হবার চান্স নেই।তুমি চিন্তা করো না।”

ঐশী তার লাগামছাড়া হাসিটাকে বহুকষ্টে চেপে রেখে বলে ওঠে,
“ওহ্ আচ্ছা! বুঝতে পেরেছি। তা এবারে আপনি জিজ্ঞেস করলেন না তো,বিছানার তোষক বালিশ কই গেল?”

সায়াহ্ন হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে,
“জিজ্ঞেস করার কিছু নেই।মানুষ যে প্রশ্নের উত্তর জানেনা,সেটাই অন্যকে জিজ্ঞেস করে।তবে যে প্রশ্নের উত্তর টা স্পষ্ট ভাবে জানা তা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই।”

ঐশী সায়াহ্নর আড়ালে ঠোঁট চেপে খানিকটা হেসে নিয়ে তাকে আবার বলে ওঠে,
“তার মানে আপনি জানেন এ প্রশ্নের উত্তর? ওয়াও!ইউ আর ট্রু ব্রিলিয়ান্ট সায়াহ্ন! তা বলুন না উত্তরটা কি?”
সায়াহ্ন নিভুনিভু কন্ঠে প্রত্তুত্তর করলো,
“আমার বাপের টাকায় কেনা তোষকে তোমার বাপের মেয়ে আর আমার বাপের নাতনীর অধিকার থাকায় তাদের অধিকারভূক্ত তোষক-বালিশে শুলে আমার গায়ে এলার্জি হবে।তুমি আবার এলার্জির ডক্টর কিনা।তাই সব রকমের এলার্জি গোড়া থেকে নির্মুলের উদ্দেশ্য এই পন্থা অবলম্বন করেছ। ”

ঐশী আর নিজের হাসিকে থামাতে পারলো না।ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো পুরো দমে।হাসির তোড়ে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো তার।
বহুকষ্টে হাসি থামিয়ে সে সায়াহ্নর দিকে তাকাতেই সায়াহ্ন তার দিকে ফিরে হাত জোড় করে বলে উঠলো,
“কি চাও তুমি বলতো?এভাবে জ্বালাচ্ছ কেন?কি করতে হবে বল।কি করলে তোমার এসব স্টুপিডিটি থেকে মুক্তি পাব আমি?”

উত্তরে ঐশী যা বললো তা শুনে সায়াহ্ন আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।ধুপ করে মেঝেতে কাঁত হয়ে পড়ে গেল।ফোনে জ্বলতে থাকা টর্চের আলোয় ঐশী যা বুঝলো,তা হল, সায়াহ্ন মাত্রাতিরিক্ত মেনটাল প্রেশারে জ্ঞান হারিয়েছে!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here