বেয়াইনসাব?,পর্বঃ০১

0
3971

বেয়াইনসাব?,পর্বঃ০১
Arshi Ayat

আহান সিগারেট টানতে টানতে আমার একদম কাছে এসে দাড়ালো।চোখজোড়া ভয়ঙ্কর লাল।আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল”সিগারেট খাবে?”
“না আ আমি সিগারেট খাই না।”
“তাই!তাহলে কি মদ খাও?”
“না না আমি ওসব ছাইপাঁশ খাই না।”
আমি এটা বলতেই আমার মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল”আমি দিলে ছাইপাঁশ আর আবিদ দিলে মধু তাই না?”

“একদম বাজে কথা বলবেন না।আবিদ আমার বন্ধু।আর আবিদ আমাকে পেপসি দিয়েছিলো।”

“আমি তোমার কি জানু।”
এটা বলেই আহান একটা বিদঘুটে হাসি দিলো।

মাইশা ঢোক গিলে বলল”আমাকে যেতে দিন।”
“চলে যাবে?” আহান আরেকবার সিগারেটে টান মেরে বলল।

এই সিগারেটের গন্ধটা একদম সহ্য হচ্ছে না মাইশার।কিন্তু কিছু করার নেই।এই সাইকো আহান যতক্ষণ না পর্যন্ত যেতে দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানেই দাড়িয়ে থাকতে হবে।শালা বেয়াদব!সেই ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে পেছনে পড়ে রয়েছে।ছাত্রলীগ করে বলে কিছু বলাও যায় না।কখন কি করে বসে আল্লাহ মালুম।মাইশা ঠিক করে নিয়েছে এবার থেকে এড়িয়ে চলবে কিন্তু তবুও সামনে এসে যায় কিভাবে মাইশা বুঝতে পারে না।যাইহোক বেয়াদবটা এখনো মাইশাকে যেতে দিচ্ছে না।

মাইশা এবার অনুনয় করে বলল”এখন প্লিজ যেতে দিন।দেরি হয়ে যাচ্ছে মা চিন্তা করবে।”

“ওহ!তাইতো।আচ্ছা যাও তবে আমি ফোন দিলে অবশ্যই ধরবে তা নাহলে…”

আহান কিছু বলার আগেই মাইশা বলল”জ্বি জ্বি ধরবো।অবশ্যই ধরবো।দরকার পড়লে আমার চৌদ্দ গোষ্ঠী ধরবে।”

আহান হেসে বলল”তুমি ধরলেই হবে চৌদ্দ গোষ্ঠী ধরা লাগবে না।”

“আমি এবার যাই।”

“যাও”

মাইশা ব্যাগটা নিয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়লো।আর আহান খাটের ওপর শুয়ে হাসতে লাগলো।এই বাড়িতে আহান আর ওর বাবা মা থাকে বড় ভাই দেশের বাইরে। বাবা মা চাকরি করে বলে সারাদিন সে একাই থাকে।পড়াশোনা বলতে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে আর ভার্সিটিতে পলিটিক্স করে।আর সময় পেলে মাইশার পেছনে লাগে।মদ না খেলেও সিগারেট খায় প্রচুর।সিগারেটের জন্য ঠোঁট পুড়ে কালো হয়ে গেছে।

মাইশা আহানের বাসা থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে রিকশায় উঠে বাসায় রওনা হলো।এখন বাসায় গেলে মা নিশ্চিত বকবে।প্রায় দেড়ঘন্টা লেট।আহানকে গুলি করে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে মাইশার।ওর জন্যই এতো লেট!
শালা তুই তো মেয়েদের সাথে রুমডেটও করিস আর আমি আমার বন্ধুদের সাথে একটু কথা বললেই দোষ।তোর জন্য মনে হয় আমার পড়াই ছেড়ে দিতে হবে।মাইশা বাসায় পৌঁছাতেই দেখলো মিহি সোফায় বসে ওর মায়ের সাথে গল্প করছে।

মাইশাকে আসতে দেখে বলল”মাইশু কেমন আছিস?”

“এইতো ভালো আপুই।তুমি?”

“এইতো আলহামদুলিল্লাহ।তোর জন্য গুড নিউজ আছে।”

“কি?”

“আমি,তুই,আইরিন,ইশিকা আমরা চার বোন বান্দরবান যাবো।”

“ওয়াও!কবে?”

“কালই রওনা হবো।একটু পরই ওরা চলে আসবে।”

“ইয়াহু!”

মাইশা খুশীতে মিহিকে জাপটে ধরে ঘোরা শুরু করলো।তারপর আইরিন আর ইশিকা আসার পর চারবোন মিলে প্ল্যান করলো কিভাবে কি করবে।চারজন খালাতো বোন।এই চারজন একসাথে হলে আর কিছু লাগে না।যদিও মিহি আর আইরিন সমবয়সী।মাইশার থেকে একক্লাস জুনিয়র হলো ইশিকা।মাইশা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে আর ইশিকা ফার্স্ট ইয়ারে।মিহি আর আইরিনের পড়াশোনা শেষ।

খুশীর ঠ্যালায় মাইশার মনেই নেই আহানের কথা।এদিকে আহান বারবার কল করছে কিন্তু মাইশার ধরছে না।ধরবেই বা কিভাবে বোনদের সাথে মিটিংয়ে বসলে কি আর কিছু খেয়াল থাকে!

আহান মেজাজে সেই লেভেলের গরম।এতোবার কল করার পরও ফোন ধরছে না।ডোজ কি কম হয়ে গেলো?আহানকে এভোয়েড করছে!!শাস্তি পেতেই হবে।কিন্তু আরো একসপ্তাহ পর শাস্তি দেওয়া যাবে।কারণ এই একসপ্তাহ আহান বান্দরবান থাকবে দাদুর কাছে।বিয়ের ঝামেলা মিটলেই আবার চলে আসবে।

পরেরদিন সকাল।কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে চারবোন গিয়ে সিটে বসলো।সেই একই ট্রেনে আহানও যাচ্ছে।মাইশার দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি মাইশাও বান্দরবানই যাচ্ছে।কিন্তু কেউ কারো কথা জানে না।

ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।মাইশাদের বগি থেকে গুনেগুনে ছয়টা কেবিন পেছনে আহানের বগি।চারবোন কথা বলছিলো।এরই মধ্যে মাইশা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য ওয়াশরুমে সামনে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ!এ সামনে কাকে দেখছে মাইশা!স্বয়ং যমদূত আহান।আহানও মাইশাকে দেখে চমকে গিয়ে বলল”আরে মাইশা তুমি!”

মাইশা মনে মনে বলল’আর কই গেলে শান্তি পাবো আমি?’কিন্তু মনে মনে বলল”বেড়াতে যাচ্ছি।আপুদের সাথে।”

“তাই নাকি!তা বেড়াতে যাওয়ার খুশীতে আমার ফোন ধরতেই ভূলে গেলে।বাহ!”

আহানের কথা বলার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছে ওর জীবন কয়লা না করে হারামিটার শান্তি নেই।কথা হচ্ছে এখন ঢোক গেলা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই।আহান মাইশাকে চুপ থাকতে দেখে বলল”কি হলো কথা বলো।”

“কি বলবো?” মাইশা ভীত মুখে বলল।

এতক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও মাইশা না আসায় মিহি উঠে ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে দেখে মাইশা একটা ছেলের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে।মিহি আরেকটু এগিয়ে এসে আহানকে দেখে খুশী হয়ে বলল “আরে আহান তুমি!কোথায় যাচ্ছো?”

আহানও মিহিকে দেখে অবাক হয়ে বলল”এইতো ভাবি দাদুর কাছে।তুমি?”

“আমিও বান্দরবানই যাচ্ছি।বেড়াতে।”

“ওহ!আহাদ ভাইয়াও তো আসবে।”

“এইজন্যই তো যাচ্ছি।সাথে বোনেরাও যাবে।”

“হুম আহাদ ভাইয়া আসলেই তোমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে।”

ওদের কথা শুনে মাইশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।তার মানে মিহি আপুর বর এই হারামির ভাই।মাইশা মনে মনে চিৎকার দিয়ে বলল”নায়ায়য়ায়ায়!এ হতে পারে না।এ আমি বিশ্বাস করি না।”
কিন্তু বরাবরের মতোই চুপচাপ ওদের কথা শুনলো।ওদের কথায় যা বোঝা গেলো তাতে এটা স্পষ্ট আহাদ আর আহান দুইভাই। মিহি আপু আর আহাদ ভাইয়ার বিয়ের জন্যই মূলত বান্দরবান যাওয়া।

কথায় কথায় আহান আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বোঝালো’যতোই পালাও আমার হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই।’
মাইশা মনে মনে বলল’আমার কপালটাই খারাপ!বারবার এই বেয়াদবটা কেনো যে আমার সামনে পড়ে আল্লাহ মালুম।
মিহি আহানের সাথে কথা বলে সিটে চলে এলো সাথে মাইশাও।এখন আহান কিছু করতে না পারলেও মাইশার ফোনে টেক্সট করলো’কি বেয়াইন!বেয়াই রে মনে ধরছে নাকি?’
মাইশার মনে চাচ্ছে জুতা খুলে মারতে।রাগে কটমট করতে করতে ফোন সাইলেন্ট করে ব্যাগে ফেলে রাখলো।কিন্তু তবুও শান্তি নেই একটু পর আহান স্ব শরীরে উপস্থিত হলো।সবার সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু উদ্দেশ্য হলো মাইশাকে ইরিটেড ফিল করানো।মাইশা উঠে পেছনের দিকে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে আহান বলল”বেয়াইনসাব!”

চলবে….?

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হলো জানাবেন?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here