বেয়াইনসাব?,পর্বঃ০৫এবং শেষ

0
4439

বেয়াইনসাব?,পর্বঃ০৫এবং শেষ
Arshi Ayat

আজ বড়ই নিঃসঙ্গ লাগছে মাইশার।শেষ পর্যন্ত আহানের পাগলামি গুলো ভালোবাসতে বাধ্য করলো ওকে।কই ইভানের সাথে তো আরো আগে থেকেই পরিচয় ছিলো তবে কেনো ইভানকে ভালোবাসতে পারলো না!কেনো আহানকে ভালোবাসতে হলো।কথায় আছে নিষিদ্ধ জিনিসের ওপর মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে তেমনই মাইশার বেলায়ও হয়েছে।অন্তর্দহনে পুড়ছে প্রতিনিয়ত কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না।
‘কষ্টের কথা কাউকে বলতে না পারাটা আরো বেশি কষ্টের।’

কিন্তু আহান এতো সহজে বিয়েটা হতে দিচ্ছে কেনো?কেনো ভেঙে দিচ্ছে না বিয়েটা?আমি যে চলে এলাম একবারও কেনো খবর নিলো না?নাকি ভূলে গেলো আমাকে!এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার?মাইশা খাটে বসে চোখের পানি আটকানোর প্রাণপণে চেষ্টা করছে কিন্তু বারবার চোখের পানি টলমল করে উঠছে।সবাই তাকে খাটে বসিয়ে রেখেছে।বরযাত্রী এসেছে তাই সবাই তাদের কাছে গেছে।

চারদিন হলো মাইশা গাইবান্ধা এসেছে।এই চারদিনে একবারে আহান খোঁজ নেয় নি।এই চারদিনের বিরহে মাইশা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে আহানকে সে কতোটা ভালোবাসে কিন্তু এখন নিরুপায় সে।ইভানকেই বিয়ে করতে হবে তাকে।

বিয়েটা হয়ে গেলো।মাইশা কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলল।এখন বিদায়ের পালা।কিন্তু বিয়ে হতে এখন পর্যন্ত মাইশা ইভানের দেখা পায় নি।ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগছে।
বিদায়ের সময় মাইশা কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছে বলে আর কিছু মনে নেই।

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে একটা রুমে পেলো।বাসর ঘর যাকে বলে।মাইশা মাথাটা ধরে উঠে বসলো।ঘরে কেউ নেই।দেয়াল ঘড়িতে ১২ টা বাজে।

হঠাৎ দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো ইভান আসছে।মাইশা উঠে দাড়ালো তারপর ইভানের সামনে গিয়ে ওকে সালাম করতে গেলেই ইভান বাধা দেয়।তারপর বলে”যাক বিয়েটা হয়ে গেলো।”

মাইশা কিছু বলল না।চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।ইভান খাটে বসতে বসতে বলল”জানো এতো দেরি হতো না।কিন্তু আহানের জন্য হলো।”

আহানের কথা শুনে মাইশা চকিতে ইভানের দিকে তাকালো।ইভান আবার বলল”বেচারা এক্সিডেন্ট করেছে।এখন আইসিইউ তে আছে।এতক্ষণ ওখানেই ছিলাম।তারপর বন্ধুরা আর থাকতে দিলো না।”

মাইশা ধপ করে বসে পড়লো।মাইশাকে এভাবে বসে পড়তে দেখে ইভান দৌড়ে আসলো ওর কাছে।তারপর কপালে হাত দিয়ে বলল”কি হয়েছে তোমার?ঠিকাছো?”

মাইশা কোনো কথা বলছে না।মুর্তির মতো বসে রইলো।ইভানকে ওকে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল”মাইশা শুনছো?”

মাইশা কিছু বলল না।সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো।
.
.
অনেক্ক্ষণ পর জ্ঞান ফিরতেই দেখলো আহান হাসিহাসি মুখ করে মাইশার মাথার কাছে বসে আছে।মাইশা আহানকে দেখে এক ঝটকায় উঠে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল”তোমার কি হয়েছে?”

আহান খুব কষ্টে ওকে শান্ত করে বলল”আমি ঠিকাছে মাইশা।দেখো আমি ফিট।”

মাইশা চোখ মুছতে মুছতে বলল”তাহলে ইভান যে বলল…”

“ইভান মজা করেছে।” আহান হেসে বলল।

এবার মাইশা ইভানের দিকে তাকিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।ইভান মেকি হেসে বলল”সরি।একটু পরীক্ষা করছিলাম তুমি আহানকে ভালোবাসো কি না?”

“প্রমাণ হলো?”

“হয়েও আর কি লাভ তোমার সাথে তো ইভানের বিয়ে হয়ে গেছে।”আহান মাইশার কথায় বলল।

মাইশা ছলছল চোখে বলল”তুমি বিয়ের আগে আসো নি কেনো?আমাকে নিয়ে পালিয়ে গেলে না কেনো?বিয়েটা ভেঙে দিলে না কেনো?”

আহান কিছু বলার আগেই ইভান বলল”ওরে আমি বিয়ে ভাঙতে দিলে তো।বিয়ে তো আমি করেই ছাড়তাম।”

আহান উঠে গিয়ে ইভানের পিঠে ধাম করে একটা ঘুষি দিলো।ইভান পিঠ ডলতে ডলতে বলল”মারলেও লাভ নাই এখন বাইরে যা। আই ডু বাসর?”

মাইশার সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।আসলে এরা দুইজন এতো চিল মুডে কেনো?মাইশা এবার উঠে গিয়ে দুজনের মাঝে গিয়ে দাড়িয়ে বলল”আচ্ছা সত্যি করে বলো তো আমার বিয়েটা কার সাথে হয়েছে?”

আহান বলল”আমার সাথে জানু।”

ইভান আহানের পেটে ঘুষি দিয়ে বলল”না বেব তোমার বিয়ে আমার সাথে হয়েছে।”

“তোর ভাবি হয় শালা।ভাবি বল।”

“তুই ভাবি বল।শালা।”

লেগে গেলো দুজনে।মাইশার মনে হচ্ছে সে ফ্রিতে কাবাডি দেখছে।হঠাৎ দরজায় কে যেনো ধাক্কালো।তিনজনের চোখই ওইদিকে চলে গেলো।একটা শ্যামলা বর্ণের,ছিপছিপে ধরনের লেহেঙ্গা পড়া মেয়ে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটা রুমে ঢুকেই ইভানের পান্জাবির কলার ধরে বলল”তোমার জীবনেও ফাইজলামি যাবে না তাই না?আজ ওদের বাসর রাত।দুজনকে সময় দেওয়া উচিত আর তুমি এখানে কাবাডি খেলছো।চলো এক্ষুনি।”

মেয়েটার কথায় ইভান ভেজা বেড়াল হয়ে গেলো।মাইশা ভ্রু কুচকে বলল”আপু উনি কি হয় তোমার?”

“BBB”মেয়েটা হেসে বলল।

” মানে?”

“বেশরম, বডিগার্ড,বর।” বলেই মেয়েটা হেসে দিলো।তারপর ইভানের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলো।
মাইশা ভাবুক কন্ঠে বলল”আচ্ছা কাহিনিটা কি?”

“আচ্ছা চলো তোমাকে ফ্ল্যাশব্যাক দেখাই।তাহলে তুমি বুঝবে।”

ফ্ল্যাশব্যাক…

ইভান ফোন বের করে একটা ছবি আহানের সামনে দিলো।

আহানের সামনে একটা মেয়ের ছবি।শ্যামলে বর্ণের,ছিপছিপে গড়নের একটা মেয়ে।আহান ছবিটা দেখে মলিন গলায় বলল”হ্যাঁ ভাবি অনেক সুন্দর।”

ইভান বন্ধুর মন খারাপ বুঝতে পেরে বলল”কি রে তোর মন খারাপ কেনো?”

আহান সব বলল।তারপর মাইশার ছবিও দেখালো।ইভান ছবি দেখে বলল”দোস্ত অনেক বড়ো একটা উপকার করলি।জানিস মাইশাকে আমি ভালোবাসি না।আমি ইরিনা কে ভালোবাসি।আমেরিকা যাওয়ার পর ওর সাথে আমার পরিচয় হয়।তখন আমরা সেখানেই বিয়ে করে ফেলি।ইদানীং ইরিনা প্রেশার দিচ্ছিলো বাড়িতে জানানোর জন্য।আর আমারও মনে হচ্ছিলো বাড়িতে জানানোই ভালো হবে।তারপর বাড়ি এসে সবাইকে জানানোর পর সবাই প্রথম দিন রাগলেও পরে আর রাগে নি কিন্তু মাইশাদের পরিবারে কি বলবো সেটা বুঝতে পারছিলাম না।আব্বু ভাবছিলো মাইশার বাবাকে ডেকে বলবে।”

ইভানের কথা শোনার পর আহান অনেক খুশী হয়।তারপর ইভান,আহান মিলে তাদের পরিবার আর মাইশার পরিবারে সব জানায়।আহানের পরিবারে সবাই মেনে নিলেও ভয়ে ছিলো মাইশাদের পরিবার নিয়ে কিন্তু মাইশাদের পরিবারও মানে।তারপর সব প্ল্যান মতো হলো।মাইশাকে জানানো হয় নি।মাইশা জানতো ইভানের সাথে হবে বিয়ে।

আর একটু আগে মাইশাকে ভয় দেখানোর চক্রান্তটা ইভানের ছিলো।

বর্তমান…
সব শুনে মাইশা আহানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।আহান ঢোক গিলে বলল”এভাবে তাকাইয়ো না প্লিজ।”

মাইশা কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে বসলো।আহানও গিয়ে ওর সাথে বসলো।মাইশার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওপরে মাড়ির দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো।মাইশা সব বুঝতে পেরে বলল”তোমার ওই কালো ঠোঁট আমি জীবনেও চুমু খাবো না।”

“আরে তোমার গোলাপি ঠোঁট দিয়ে প্রতিদিন হাজারবার চুমু দিলেই আমার ঠোঁট গোলাপি হয়ে যাবে।”

মাইশা লজ্জায় হেসে আহানকে জড়িয়ে ধরলো।আহান ঠোঁট টিপে হাসলো।

সমাপ্ত ♥️

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here