রুম নাম্বার ২২২,প্রথম পর্ব

0
4333

রুম নাম্বার ২২২,প্রথম পর্ব
লেখা -হিমু জামান

মানুষ নামে জানোয়ারটা আজ তেইশ দিন যাবৎ আমার উপর শারিরীক মানসিক অত্যাচার করে যাচ্ছে একটা রুমে।রুমটায় কোনো জানালা ছিল না। আজ তেইশ দিন হলো সূর্যের আলো দেখতে পারি না।খুব ইচ্ছে করে সূর্যের আলো দেখতে। অনেক চিৎকার করি আমাকে এখান থেকে যেতে দাও।আমি বাসায় যাবো।কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায় না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আজ চারদিন হলো আমাকে কিছু খেতে দেয় না।এই জানোয়ার টা হয়তো শহর ছেড়ে অন্য কোথাও গেসে।এই রুমের চাবি ওর কাছেই থাকে।এই চারদিনে শরীর অনেকটা দূর্বল হয়ে গেসে।তবুও আমার উপর এই মানুষ নামে জানোয়ার টা সমস্ত পুরুষালী শক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। কেনো এইসব হলো আমার সাথে।আমার সাথে তো এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না….


আমার নাম অনু। আমি খুব হাসিখুশি চঞ্চল প্রকৃতির একটা মেয়ে ছিলাম।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি। সময়টা ২০১৯ সাল।আমার তখন এস,এস,সি পরীক্ষা চলছিলো। সবগুলো পরীক্ষা ভালো করেই দিচ্ছিলাম। সবগুলো পরীক্ষায় ন্যুনতম ৮০% নম্বর আসবে।একদিন পরীক্ষা ছিলো জীববিজ্ঞান। শুরু থেকেই সবগুলো উত্তর খুব ভালো করে লিখছিলাম।২০ নম্বর লেখার পর হঠাৎ হল পরিদর্শক এসে আমাকে দাঁড়াতে বলে।আমি যে বেঞ্চে বসেছিলাম সেটার নীচে একটা কাগজ দেখা যায়। হল পরিদর্শক বলে আমার নীচে কাগজটা তুলতে।আমি কাগজটা তুলার পর উনার হাতে দিলাম।উনি মিলিয়ে দেখলেন এখানে যেটা লেখা সেটার সাথে আমার উত্তর পত্রের নম্বর মিলে গেসে।আমাকে কোনো কথা না বলে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।আমি অনেক কান্নাকাটি করি।কিন্তু কোনো কাজ হয় নি।অবশেষে আমি হল থেকে বের হয়ে যাই।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার অনেক সময় বাকি।বাহিরে আম্মু আছে।এখন চলে গেলে নিশ্চয়ই আম্মু আমাকে মেরেই ফেলবে।তাই বাকিটা সময় আমি একটা বাথরুমে বসে কাটিয়ে দেই।আর কান্না করতে থাকি।পরীক্ষার সময় শেষ হলে বের হয়ে আসি।আম্মু যেনো কিছু না বুঝতে পারে তাই চোখের পানি মুছে ফেলি।বাহিরে আসার পর আম্মু জিজ্ঞেস করে কিরে মা পরীক্ষা কেমন দিয়েছিস?
-অনেক ভালো দিয়েছি আম্মু।চলো বাসায় যাই।
“আজ তিনদিন হয়ে গেলো বাসায় কিছু জানাই নি।আসলে ভয়ে জানাই নি।আমার আব্বু আম্মু খুব রাগী। যদি জানাই তাহলে আমাকে মেরেই ফেলবে।পরবর্তী পরীক্ষাগুলো ভালো করেই দিলাম।একে একে সব পরীক্ষা শেষ হলো।
বাবা মা আমাকে বললেন পরীক্ষা শেষ তাহলে চলো তোমার মামার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।মামার বাড়ি ছিলো নারায়ণগঞ্জ। আমি ভাবলাম ঘুরে আসি।যদি মন টা একটু ভালো হয়।তাই পরের দিন আব্বু আম্মু আমি চলে গেলাম মামার বাড়ি। মামার বাড়িতে যাওয়ার পর দেখলাম সবাই অনেক মিশুক। আমার মামাতো ভাই ছিলো আমার থেকে চার বছরের বড়।তবুও বন্ধুর মতো মিশে গেছে আমার সাথে। অনেক গল্প করতো।গ্রামেটা ঘুরেফিরে দেখলাম মামাতো ভাই আকাশের সাথে।আকাশ ভাই পড়াশোনায় এতোটা ভালো না হলেও সে নাকি দুষ্টুমিতে অনেক ভালো ।সারাদিন ঘুরে বেড়ায় এলাকার বড় ভাইদের সাথে।
সারাদিন ঘুরাঘুরি করে রাতে বাসায় এসে সবাই মিলে গল্প করতে বসলাম। আকাশ ভাই আমাকে ইশারা দিয়ে বললেন এইদিকে আয় তো বোন।এতো সুন্দর করে ডাক দিলো বোন বলে।আমি গেলাম।আকাশ ভাইয়া বললো-
অনু আগামীকাল আমরা একটা সুন্দর জায়গায় যাবো।আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।কতগুলো ছবি দেখিয়ে বললো দেখ এই সুন্দর জায়গাটায় যাবো।
আমি সম্মতি জানালাম।
পরেরদিন ভাইয়া আর আমি বের হয়ে গেলাম বিকেলে।যে জায়গাটায় নিয়ে গেলো বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয়।লোকজনের সমাগম ছিলো ভালোই।ভাইয়া আমাকে নিয়ে একটা জায়গায় বসলেন। আমরা গল্প করতে লাগলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে গল্প করতো আকাশ ভাইয়া।একটা সময় দেখলাম বিকেল ঘনিয়ে আসতে লাগলো।আমি ভাইয়াকে বললাম চলো ভাইয়া বাড়ি চলে যাই।অনেক্ষন তো থাকলাম। ভাইয়া বললো -আরে বোকা মেয়ে এটা গ্রাম কোনো ভয় নেই।আমি জোড়াজুড়ি করলাম। ভাইয়া বাবা মা আমাকে কখনো সন্ধ্যার পর বাহিরে থাকতে দেন নি।চলো চলে যাই।এই কথা বলার পর ভাইয়া আমার সাথে যে ব্যবহারটা করলো যেটা আমি কখনো কল্পনাও করি নি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here