এক মুঠো রঙ,চতুর্থ পর্ব,পঞ্চম পর্ব
ফারজানা আফরোজ
চতুর্থ পর্ব
আকাশটা আজ ভীষণ মেঘলা। একটু পরেই শুরু হবে তার ভয়ানক কান্না। আকাশ দেখে মনে হচ্ছে এই কান্না আজ সারা দিন চলবে সেই কান্নার সাথে তাল মিলিয়ে চলবে সিমরানের কান্না। অপমান বোধ তাকে ঘিরে ধরেছে। লজ্জা, অপমান বিনা কারণে কেউ পেয়ে থাকলে তার কষ্ট হয় ভীষণ। আজ সেদিনের দেখে যাওয়া পাত্রটির সাথে সিমরানের চাচাতো বোনের বিয়ে। সিমরানের চাচাতো বোন আইরিন মাত্র ক্লাস টেনে উঠেছে এই সময়েই বিয়ে ঠিক করা হয়েছে । আইরিনের বাবা মা এমন পাত্র কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাচ্ছেন না তাই মেয়ের শৈশব উপভোগ করার আগেই সংসারের ঝামেলায় ঠেলে দিলেন। উনাদের মতে, মেয়েদের এত পড়তে নেই, বেশি পড়ালেখা করলে মেয়ে খারাপ হয়ে যাবে তখন বড়দের সাথে মাথা উচু করে কথা বলবে।
সিমরানের বাবা মা খুবই বিরক্ত আইরিনের বাবা মায়ের উপর। বিয়ে ঠিক করেছে ভালো কথা কিন্তু এই ছেলে কেন? অন্য কোনো ছেলের সাথে বিয়ে দিতো তাদের আপত্তি ছিল না। যে ছেলের সাথে তাদের পরিবারের বড় মেয়ের সমন্ধ ঠিক হয়েছিল আবার ভেঙ্গেও গিয়েছে সেই ছেলের সাথে কেন বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে হবে? রাগে তারা দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছেন।
প্রায় এক ঘন্টা বৃষ্টি হবার পর সিমরান ছাতা হাতে নিয়ে বাহিরে বের হলো। এই মুহূর্তে বাসায় থাকা তার জন্য ভালো না। কষ্ট,লজ্জা অপমান বোধ তার সামনে থাকা সব অন্ধকার করে ফেলবে। সাদা লং জামার কালো কালো প্রিন্ট , কালো প্লাজো , মাথায় কালো ওরনা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। গেইটের কাছে যেতেই কারো দু-চোখের সাথে তার দু-চোখ মিলিত হলো। লোকটিকে দেখে সিমরান মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলো। লোকটি আর কেউ নয় সেই পাত্র নাম ফয়সাল। সিমরানকে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ফয়সাল ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে আছে। সে যে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছে তার চোখ গুলোই প্রধান সাক্ষী। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো ফয়সাল। আইরিনকে সে মন থেকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না কিন্তু পরিবারের বাধ্য ছেলে থাকায় তাকে যে করতেই হবে এই বিয়ে। নিষ্পাপ মেয়ের জীবন তাকে তো নষ্ট করতেই হবে। বার বার অনুতাপ করছে কেন সে এই পরিবারে জন্ম নিয়েছে। বার বার উপরের দিকে তাকিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালাকে ডাকছে।
সিমরান কিছু দূর যেতেই আবারো মুষল ধারা বৃষ্টি। দোকানের এক কোণে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে বৃষ্টি কমার জন্য। নাহ বৃষ্টি আজ কিছুতেই কমতে চাচ্ছে না কিন্তু তার মন বৃষ্টির ছোঁয়াতে বার বার নাচতে শুরু করছে। আশ পাশটা দেখে ছাতা নিয়েই নেমে পরলো বৃষ্টির ছোঁয়াতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে।
—” এই যে মিস , আপনার ছাতাটা দেওয়া যাবে?”
একজনের ডাকে হুস ফিরে আসলো সিমরানের। সামনে তাকিয়ে থেকে বড় বড় চোখে বলল…..
—” আপনি আবারও? এতদিন তো প্রথমবার আপনার পাকা ভাই এসে জ্বালিয়েছে এখন দেখছি আপনি আসছেন। ফলো কেন করছেন?”
—” পৃথিবীটা গোল আমি এখন খুব ভালোই টের পাচ্ছি। কেননা, দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব ছিল যার জন্য সব সময় আপনার সামনেই পড়তে হয়।”
সিমরান মুখ বাঁকিয়ে ছাতাটা মাথার উপরে রেখে বলল…..
—” সরি ছাতা দেওয়া যাবে না। কজ আমার একটাই ছাতা।”
—” আপনি তো ভিজে গিয়েছেন এখন তো আর ছাতার দরকার নেই। আমার সামনে একটু কাজ আছে আমি কাজ শেষ করে এসে দিয়ে যাচ্ছি ততক্ষন আপনি ভিজতে থাকুন।”
—” ছাতা দেই আর আপনি নিয়ে পালিয়ে যান তাই তো!”
—” আমাকে দেখে চোর মনে হচ্ছে আপনার? নীরকে বলছেন চোর? আপনার ছাতার দাম কত এক্ষুনি দিচ্ছি , বলুন।”
—” আমি আপনার নাম জানতে চেয়েছি? আহা কি ভালো পদ্ধতি নাম বলার। এখন থেকে আমিও বলব, জানেন এই সিমরান কি? সিমরানের সাথে লাগতে আসলে গুম করে ফেলব।”
—” আমিও তো আপনার নাম জানতে চাই নি তাহলে কেন বললেন আপনার নাম। হয় হয় এত সুন্দর ছেলে সামনে থাকলে নাম জানানোর ইচ্ছা তো হতেই হবে তাই না মিস সিমরান।”
সিমরান নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসে গিয়ে চলে যেতে নিলে গর্তে পড়ে যায়। বৃষ্টির পানিতে গর্ত ভরপুর। বেচারি পরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলল…..
—” আপনাদের দুই ভাইয়ের সাথে দেখা হলেই আমার দিনটা খারাপ হয়ে যায়। ধ্যাত।”
নীর মুচকি হেসে এক হাত বারিয়ে দিল সিমরান হাত ধরে উঠে মুখ ফসকে বলে ফেলল…..
—” ধন্যবাদ।”
নীর অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল…..
—” আমাকে আপনি ধন্যবাদ দিচ্ছেন? আমার এই জীবন স্বার্থক হল আজ।”
কথা ঘুরানোর জন্য সিমরান বলল…..
—” লাগবে ছাতা?”
—” এখন তো ভিজেই গিয়েছি আর ছাতার দরকার নেই। বাই দা ওয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”
—” মন ভালো ছিল না সেই জন্য ঘুরতে আসছিলাম।”
—” কিন্তু এখন বোয়াল মাছ ধরে ফেলেছেন হাহাহা।”
—” অসভ্য ছেলে। এখন আপনি কোথায় যাবেন?”
—” এইতো সামনেই। আসুন আমরা কথা বলতে বলতে যেতে থাকি মন ভালো হয়ে যাবে আপনার।”
সিমরান সায় দিল। দুইজন একসাথে হেঁটে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। নীর তখন মনে মনে বলল…….
—” ইয়াহুউউউ প্ল্যান সাকসেসফুল। নিবিড়ের বুদ্ধিটা কাজে লেগে গেছে। ভাগ্যিস পা দিয়ে ইটটা পিছনে রেখেছিলাম সেই জন্যই তো পরে গেলো আর আমার লাইন ক্লিয়ার হলো। নিবিড় বস ইউ আর জিনিয়াস ব্রো। ”
গাড়ি থেকে নিবিড় শিখিয়ে দিয়েছিল ছাতা নেওয়ার উদ্দেশে গিয়ে কথা বলতে। যদি পারে কোনো না কোনো হেল্প করার জন্য। মেয়েদের হেল্প করলে নাকি তারা ভীষণ খুশি হয় আর ফ্রেন্ডলী ব্যাবহার করে।
গাড়ির হর্নের শব্দে পাশ ফিরলো নীর। জানালা দিয়ে বুড়ো আঙুল বের করে বেস্ট অফ লাক জানালো নিবিড়। নীর ফ্লাই কিস দিয়ে ইশারা করল…..
—” তোর গিফট পেয়ে যাবি আজ।”
দুই ভাইয়ের এইসব কারসাজি বেচারি সিমরান কিছুই জানলো না। সে মনে মনে নিজেকে বকতে লাগলো। এত ভালো ছেলের সাথে কত খারাপ ব্যাবহারেই না সে করেছে কিন্তু আজ ছেলেটা তাকে সাহায্য করেছে। মনে মনে লজ্জা ও খুব খুশি হলো।
_______________________
সিমরান বাসায় বসে আছে তার সামনে বসে আছে ফয়সাল ও আইরিন। আইরিনের দু-চোখ ফোলে কলা গাছ হয়ে আছে। প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে সে সিমরানের কাছে বসে আছে আর কান্না করছে। তার এক কথা, বিয়েতে সিমরানকে থাকতে হবে, থাকতে হবে মানে থাকতে হবে। সিমরান রাজি না থাকায় ফোন করে ফয়সালকে ডেকে এনেছে। আইরিনের কান্না দেখে মনে হচ্ছে সে কারো মৃত্যু দুঃখে কান্না করছে। ফয়সাল তখন সিমরানের দিকে তাকালো অদ্ভুদ মিষ্টি ও অনুরোধের সুরে বলল…..
—” জানি দোষটা আমাদের তবুও বলছি প্লিজ আসুন বিয়েতে। তাছাড়া প্রথম দেখায় তো অনেকের বিয়ে হয় না সেই জন্য কি কেউ কষ্ট পায়। বুঝেছি সমস্যাটা পরিবারের তবুও ছোট বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে তো একটু নরম হতেই পারেন। প্লিজ বিয়েতে থাকবেন।”
—” আপু ছোট বেলায় যত খেলা খেলেছি শুধু মাত্র তোর সাথে তাহলে কেন আজ আমার বিয়েতে থাকবি না? তুই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
অবশেষে রাজি হলো সিমরান। ছোট বোনের আবদার সে কিছুতেই বারণ করতে পারেনি। তার উপর ফয়সালের অনুরোধ।
___________
গায়ে হলুদের শাড়ি পরে হাতে হলুদের ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিমরান। ফয়সালের বাড়ির গেইটের কাছে যেতেই লজ্জার বাতাস তার পুরো শরীরটা ছুঁয়ে দিলো। সে প্রথম আসতে চাইছিল না কিন্তু মায়ের কথা শোনে এসেছে। তার মা তাকে বলেছে…..
—” লজ্জা থাকা উচিৎ ওই বাড়ির লোকদের তোর কেন থাকবে? বিয়েটা আমরা ভেঙেছি ওরা নয়। আর তুই যে ভেঙ্গে পড়িস নি এইটা তো দেখাতে হবে ওই লোকদের। আমরা মেয়ে বলে কোনো সম্মান নেই আমাদের? লজ্জা কি শুধু আমাদের? আমরা কেন লজ্জা পাবো। লজ্জা তো পাওয়া উচিৎ ওই বাজে লোকদের যারা মেয়েদের সম্মান করতে পারে না। আর তোর চাচা চাচী তো ছেলের বাড়ি ঘর, চাকরি, মোটা অংকের টাকা দেখে এত ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এখন ওর খেলার বয়স কিন্তু ওকে এখন সামলাতে হবে সংসার। ওরা তো আর পড়াবে না আইরিনকে। বেচারি মেয়েটা পড়তে খুব ভালোবাসে কিন্তু আমাদের কথা তো শুনবে না ওরা। এখন তুই ভালো মেয়ের মত যা আর ওদের সামনে হেসে হেসে ঘুরাঘুরি করবি। মেয়েদের মাথা নিচু করা ঠিক নয় কজ মেয়েরা মা জাতি।”
মায়ের কথাগুলো বার বার রিপিট করছে সিমরানের কানে। পা চালিয়ে চলে গেলো ভিতরে। ট্রে, টেবিলের উপরে রেখে শাড়ি ঠিক করতে করতে অনেক গুলো রুমের পাশ দিয়ে সে যাচ্ছে হটাৎ এক জোড়া হাত তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলো। সামনে থাকা লোকটিকে দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে সে। তার হাত ধরবে এই লোক সে ভাবতেও পারেনি।
চলবে…..
এক মুঠো রঙ
ফারজানা আফরোজ
পঞ্চম পর্ব
আচমকা কেউ হাত ধরে টান দিয়ে রুমের ভিতরে নিয়ে যাওয়াতে ভীষণ রকম ভয় পেয়ে গেলো সিমরান। বন্ধ চোখ গুলো ভয়ে ভয়ে মেলিয়ে সামনে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল…..
—” আপনি?”
লোকটি সিমরানকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। দেওয়ালে এক হাত দিয়ে বলল….
—” বাহ এত সহজে তুমি থেকে আপনি হয়ে গেলাম। তোমাকে তো স্যালুট করা দরকার সিমরান জান।”
—” সাদাত তুমি এইখানে কেন এসেছ বা কি সম্পর্ক এইসব জানার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। কিন্তু তুমি আমাকে টাচ্ কেন করেছো?”
রাগী কণ্ঠে বলল সিমরান। বরের বাড়িতে সাদাতকে দেখে সে অবাক হয় তবে ভীষণ অবাক নয় কজ বিয়ে বাড়ীতে আত্মীয় স্বজন অনেক জনেই আসতে পারে। হতে পারে সাদাত এই আত্মীয়র মধ্য কেউ একজন সেই জন্য বিচলিত না হয়ে রাগ দেখালো তাকে স্পর্শ করার জন্য । সিমরানের কথা শোনে সাদাত সিমরানের শাড়ির আঁচলটা ধরে বলল…..
—” তোমাকে শাড়িতে খুব সুন্দর লাগে জান। আজ যদি তৃণা না থাকতো তোমায় বিয়ে করে নিয়ে যেতাম।”
—” ছিঃ কতটা বাজে লোক হলে এমন কথা বলতে পারে। এখন তো মনে হচ্ছে তুমি তৃণাকে আদৌ ভালোবাসো কিনা।”
খারাপ ভঙ্গিমায় ইশারা করে বলল সাদাত……
—” আমি তো সবাইকেই ভালোবাসি। যাকে আমার চোখে সুন্দর দেখা যায় আমি তাকেই ভালোবাসি।”
—” তুমি যদি এখন আমাকে যেতে না দাও আমি চিৎকার করব বলে দিলাম।”
সাদাত তার দুই হাত সিমরানের দু পাশের দেওয়ালে রেখে বলল…..
—” যাও তোমাকে কি আমি ধরে রেখেছি?”
—” বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে সাদাত। এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে যাবো কিভাবে? ”
—” হুম তাইতো?”
সাদাত পথ ছেড়ে দিল। সিমরান এক দৌড়ে সেই জায়গা পরিত্যাগ করলো।
_________________
মানুষের জীবন বড় অদ্ভুদ। যার সাথে দেখা করতে একদম ইচ্ছা করে না কিন্তু দেখা যায় বেলাশেষে তার সাথেই দেখা হয়ে যায়। মনে প্রাণে যাকে মন থেকে ঘৃনা করা যায় পরে দেখা যায় ঐ মানুষটার প্রেমেই হাবুডুবু খেতে হয়। মন মানসিকতা পরিবর্তন কখন কিভাবে হয় বুঝা মুশকিল। ঠিক এমনি ভাবে নীর কিভাবে সিমরানকে পছন্দ করতে শুরু করেছে সে ভেবে পায় না। তবে তার এই দুই একদিনের পরিচয়ে পছন্দ কিংবা ভালোবাসা তৈরি হয় নি। আজ তার ভালোবাসার তিনটি বছর হতে চলেছে। সিমরান তার কিছুই জানে না। তিন বছর আগে নিবিড় সিমরানের ছবি দেখে সে প্রথম পুতুল ভেবে নীরকে জানিয়েছিল……
—” ভাইয়া আমাকে এই পুতুলটা কিনে দিবে। দেখো কি সুন্দর পুতুল। আমার বউ পুতুল।”
নিবিড়ের হাত থেকে ছবিটা নিয়ে নীর প্রথম সিমরানকে দেখেছিল। ঠোঁটে হাসি, নাকের ডগায় ছোট্ট তিল, চোখ নীল কালো যেন একটা জল জ্যান্ত পুতুল। সেদিনের কথা মনে পড়াতে হেসে দিল নীর। ছোট্ট নিবিড় ছোট থেকেই বিয়ে পাগল ছিল। কোথাও কোনো মেয়ে দেখলেই বলতো……
—” ভাইয়া দেখো আমার বউ যাচ্ছে।”
বউ যাচ্ছে, বউ যাচ্ছে বলতে বলতে সিমরানকে রাস্তা দিয়ে পার হতে দেখেছিল সামনে থেকে। সিমরানের পিছু নিলো সেদিন থেকেই নীর।
—” এহেম, এহেম, বউয়ের কথা ভাবছো ভাইয়া?”
দরজায় টোকা দিয়ে এক পা বাহিরে অন্য পা ভিতরে রেখে বলল নিবিড়। অতীত থেকে ফিরলো নীর, নিবিড়কে দেখে হেসে বলল….
—” তোর মত বিয়ে পাগল আমি না যে সব সময় মেয়েদের কথা ভাববো।”
—” ছোট ছেলেরা বিয়ের কথা ভাববে না এইটাই তো স্বাভাবিক তাই না?”
নিবিড়ের কথা শোনে ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকালো নীর। এত বড় ইনসাল্ট এইটুকু ছেলের কাছে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। তবুও পরবর্তী প্ল্যানের জন্য হজম করে নিল। নিবিড় তখন মাথায় হাত দিয়ে তার ছোট ছোট চুল গুলো টেনে বলল….
—” ভাইয়া মাথায় কিছু সমস্যা হচ্ছে!”
—” মানে?”
—” দেখো না একটা বুদ্ধি আসছে আবার চলে যাচ্ছে।”
—” যখন আসছে তখন গেঁথে রাখ তাহলেই তো হয়।”
—” চুল গুলো কেমন যেনো উসকো হয়ে যাচ্ছে। ভাইয়া তোমার চুলে কি জেল ইউজ কর? মানে আমিও ইউজ করতে চাচ্ছি। এখন তো বাংলাদেশের মেয়েরা পিছনে ঘুরে তখন পৃথিবীর মেয়েরা আমার পিছনে ঘুরবে। বলো না কি হেয়ার জেল?”
নীর এখন নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে। ছোট ভাইয়ের পাকনামো এখন তাকে খুব জ্বালাচ্ছে। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপে সাহায্য করার এক মাত্র উপায় ছোট ভাই তাই চুপ থেকে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলল…..
—” চল তোকে আজ সুন্দর একটা ছড়া শিখাই। এই ছড়া শিখলে তোর অনেক খেলার সাথী হবে।”
—” সত্যি?”
—” হুম।”
—” তাহলে বলো?”
—” বল,
আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মৌ,
এতো ডাকি তবু কথা
কও না কেন বউ।
বল চুপ করে আছিস কেন?”
নিবিড় কিছুক্ষণ নিজেই নিজের মাথার চুল গুলো ধীরে ধীরে টান দিয়ে বলল…..
—” তোমার ছড়া তো হয় নাই। এই ছড়া বললে তো কোনো মেয়েই আসবে না আমার পাশে। তখন তো সবাই রাগ দেখাবে।”
নিবিড়ের কথা শোনে আড় চোখে তাকিয়ে বলল নীর…..
—” তাহলে কোন ছড়াতে সবাই তোর কাছে দৌঁড়ে আসবে, শুনি?”
—” শুনো তাহলে, আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মৌ,
রাস্তা ঘাটে যেদিকেই তাকাই
সব জায়গায় দেখি দাঁড়িয়ে আছে বউ।”
নীর এইবার রাগের ছুটে মারতে যায় নিবিড়কে। খিলখিল করে হেসে দৌঁড়াতে শুরু করে নিবিড়। দুই ভাইয়ের বয়সের এত তফাৎ তবুও তাদের দুষ্টুমি, ভালোবাসা, বন্ধন, ঝগড়া ফাইজলামি কোনো কিছুরই কমতি নেই। যেন তারা সমবয়সী। ভাই বোনের বা ভাই ভাইয়ের প্রতি অথবা বোন বোনের প্রতি ভালোবাসা হওয়া উচিত ঠিক এমন। যেখানে থাকবে দুষ্টমি, মাঝে মাঝে শাসন, ভয়ানক আনন্দময় আবদার, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। যাদের ছোঁয়াতে মেতে থাকবে বাড়ি। বাড়ির ভিতরের সব আসবাবপত্র গুলো হাসবে সারাক্ষণ তাদের এই খুনসুটি গুলো দেখে। যেদিন দেখবে ভাই বোনের মান অভিমান সেদিন যেন আসবাবপত্র, ঘর বাড়ি, সব কিছুর মাঝে কষ্টের বিরাজ প্রকাশ পাওয়া।
ভাই এবং বোন হলো আপনার হাত এবং পায়ের চেয়েও বেশি নিকটের সম্পর্ক।
— ভিয়েতনাম প্রবাদ******
________________________
বিয়েটা হয়ে গেলো আইরিনের। ভালো ভাবেই মিটেছে বিয়েটা। আইরিনের মা বাবা যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে এমন একটি ভাব নিচ্ছে।
সিমরান আজ অনেকদিন পর কলেজের উদ্দেশ্য হাঁটা দিল। মনটা আজ তার ভীষণ ভালো। আজ বসন্ত , চারদিকে অশান্ত বাতাস তার মনকে করছে প্রফুল্ল। কথায় আছে, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। কিন্তু বসন্ত যখন এসেছে ফুল তো অবশ্যই ফুটবে। চারদিকে ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে। আজ সিমরানের মন পাগলপারা। গাঁদা ফুলের ফুলে আজ সেজেছে সিমরান। গায়ে বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় গাজরা ফুল, মাথায় টায়রা আর হাতে পড়েছে কাঁচের চুড়ি। দূর থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীর। যেন আজ সে বসন্তের রাণীকে দেখছে। নাকের ডগায় ছোট্ট তিলটা খুব সহজেই ধরা পড়লো তার চোখে। কিন্তু বড় আফসোস আজ সে সাজেনি । তবে নিবিড় আজ বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি পরে নেমেছে রাস্তায়, তাকে দেখতে একদম পুতুল মনে হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে নেচে নেচে যাচ্ছে আর মেয়েরা তার সাথে পিক নিচ্ছে, গাল টেনে দিচ্ছে, অনেকে চুমুও খাচ্ছে। মেয়েদের কাছ থেকে সরে এসে নীরকে বলল…..
—” দেখো ভাইয়া, মেয়েগুলো কত অভদ্র , রাস্তাঘাট কিছু দেখে না নাকি হুম? আমার গালে পাপ্পি দিচ্ছে ছিঃ কি লজ্জা।”
—” তুমি এতটাই কিউট দেখতে আমারই তো পাপ্পি দিতে ইচ্ছা করছে । দিবো নাকি পাপ্পি?”
পিছন থেকে সিমরানের কণ্ঠ শোনে তাকালো দুই ভাই। নিবিড় দৌড়ে গিয়ে তার গাল পেতে বলল….
—” ভাবী, তোমার জন্য তো আমার গাল দুটো ফ্রী। নেও পাপ্পি দেও।”
সিমরান নিবিড়ের গালে পাপ্পি দিতেই নিবিড় চোখ টিপ দিলো নীরের দিকে তাকিয়ে। ইশারাতে বুঝালো এই পাপ্পি সে তার জন্য নিচ্ছে না নীরের জন্য নিয়েছে। পাপ্পি নিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে দাঁড়ালো নীরের সামনে আবারো চোখ টিপ দিয়ে বলল….
—” ভাইয়া তুমিও একটা পাপ্পি দেও এই গালে।”
নীর পাপ্পি দেওয়ার পর নিবিড় মুখ চেপে হাসতে লাগলো। নীর রাগী চোখে তাকাতেই বলল….
—” যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর, আব্বু বলেছে সকালে।”
সিমরান এদিক ওদিক তাকিয়ে নওশীনের জন্য অপেক্ষা করছে হটাৎ তার চোখ জোড়া সামনে একজনকে দেখে আটকে গেলো। মুখের হাসিটুকু নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। চোখের কোণে পানি এসে জমতে শুরু করলো। এ কাকে দেখছে সে? এতগুলো বছর ধরে যার জন্য সে অপেক্ষা করছে আস কিনা সে…….
চলবে……
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।