এক মুঠো রঙ,পর্ব_১০ শেষ

7
8260

এক মুঠো রঙ,পর্ব_১০ শেষ
ফারজানা আফরোজ

নীর বাসায় এসে টাওয়াল নিয়ে উরাধুরা নাচতে লাগলো। বেবি কাম কাম গানের মিউজিকে নাচছে সে। নিবিড় তার টলোমলো মায়াবী চোখ দিয়ে বড়ো ভাইয়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিছানার উপর পা তুলে গাল ফুলিয়ে বলল নিবিড়….

—” এইভাবে পাগলের মত নাচছো কেন?”

—” আজ তোর ভাবীকে এমন ভাবে বলে আসছি যার ফলে এখন তোর ভাবীই আমার পিছনে ঘুরবে।”

—” এই বিয়ে মানি না আমি।”

নিবিড়ের কথা শোনে নীরের মিউজিক অফ হয়ে গেল। শুরু হলো বিরহের গান। বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া হাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।

—” হঠাৎ কি হলো তোর?”

—” ভাবির কোনো ছোট বোন নাই সেই জন্য মানি না এই বিয়ে।”

নীর এসে নিবিড়ের কাছে বসলো। গালে হাত দিয়ে আদুরী কণ্ঠে বলল…..

—” চিন্তা করিস না। বিয়ের পর বউয়ের একটা উকিল মা বাবা হয়। ভাবতেছি উকিল বাবা মা এমন একজনকেই বানাবো যার পাঁচটা সুন্দরী মেয়ে থাকবে। এখন বল রাজি তুই?”

নিবিড় ভাবলো কিছুক্ষণ। ভেবে চিন্তে মিউজিক বাজিয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল…..

—” ওওওও ফাইভ বেবি কাম কাম। ও ভাবী কাম কাম।”

শার্ট খুলে কোমড়ে বেঁধে নাচছে নিবিড়। নীর চোখ কপালে তুলে বলল…..

—” জীবনেও ভালো হবি না তুই।”

__________

নীল আকাশের সাদা সাদা মেঘের ভেলা উড়ে বেড়াচ্ছে। সেই আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে সিমরান। আজ তিনটা দিন ধরে সে নীর ও নিবিড়কে বড্ড মিস করছে। সিমরানের কালো মুখ দেখে নওশীন সন্দিহান নজরে বার বার দেখছে। প্রিয় বান্ধবীর হঠাৎ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে। সিমরানের চোখ অনুযায়ী সেও তাকালো আকাশের দিকে, না কোনো কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সে তাহলে সিমরান কি দেখছে? জ্বীন নয়তো? মনে মনে বুকে ফুঁ দিয়ে আয়াতুল কুরসী পড়ে নিলো। সাহস করে সিমরানকে ধাক্কা দিয়ে বলল…..

—” কোন জগতে চলে গিয়েছিলি তুই?”

—” ভুতের জগতে যাবি নাকি?”

—” জ্বীন হলে যেতাম ভুত বলে যাবো না।”

নওশীনের কথা শোনে হেসে দিল সিমরান। নওশীন যেন এতক্ষন ধরে এই হাসিটাই মিস করছিল। ফুচকা মামা দুই প্লেট ফুচকা টেবিলের উপরে রাখলো। ফুচকা দেখেই নওশীন তাড়াতাড়ি টক মিশিয়ে খেতে লাগল। সিমরান চুপচাপ খাচ্ছে তখনি একজন ছেলে এসে বসলো তাদের পাশে। সিমরানের কাছে বেশ চিনা চিনা লাগছে ছেলেটিকে অনেক তাকিয়ে থেকে যখন চিনতে পারলো তখন ছেলেটির পিঠ আর সিমরানের হাত। মার খেয়ে হাসতে লাগলো ছেলেটি। সিমরান কাঁদতে লাগলো আর অভিমানী সুরে বলল…..

—” এই তোর আসার সময় হলো? কি বলেছিলি যাবার আগে?”

—” সরি । খুবই চাপে ছিলাম সেই জন্যই তো পাঁচটি বছর আসার কোনো সুযোগ পাই নি।”

—” এখন কে আসতে বলেছে?”

—” তুই বলেছিস। প্রতিদিনই তো ঘুমের মাঝে এসে বলিস, মৃন্ময় তাড়াতাড়ি চলে আয়, তোর কথা আমার ভীষন মনে পড়ছে যদি না আসিস তাহলে তোর সাথে কোনো কথাই নেই আমার।
তাইতো চলে আসছি পাখি।”

—” ভাগ এইখান থেকে শালা। পাঁচ বছরে তো দশ দিন কথা বলছিস তাও আবার দুই মিনিট, বিশ সেকেন্ড করে।”

—” বাহ হিসাব করে রেখেছিস দেখছি। বাই দা ওয়ে এই রাক্ষসী কে রে? কখন থেকে দেখছি খেয়েই যাচ্ছে খেয়েই যাচ্ছে।”

নওশীন এতক্ষণ ধরে সিমরান ও মৃন্ময়ের কথায় কান দেয় নি কিন্তু যখনি তাকে রাক্ষসী বলা হয়েছে সে ফুচকা প্লেটে রেখে রেগে আগুন হয়ে তাকিয়ে বলল…..

—” এই লোকটা কেন আবার এসেছে? পাঁচ বছর ধরে তো শান্তিতে ছিলাম তাহলে কেন আবার অশান্তিতে রাখার জন্য এসেছে। ইচ্ছা করতেছে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কেটে লবণ ছাড়া রৌদ্রে শুকিয়ে চায়নাতে গিয়ে বিক্রি করি। চায়নার মানুষরা এই অখাদ্যকে ঠিকই খাদ্য বলে পেটে হজম করে ফেলতে পারবে। উগান্ডা দেশের নির্লজ্জ প্রাণী একটা, দেখছে তাকে আমি ইগনোর করছি কিন্তু সে তো নির্লজ্জ এইটা তো তাকে প্রমাণ করতে হবে তাই না।”

—” আমি মাত্র কয়েকটি বাক্য বলেছিলাম কিন্তু এই মেয়ে রচনা বলতে শুরু করে দিয়েছে। সুমু তুই কিভাবে এই মেয়ের সাথে থাকিস , হাউ?”

শুরু হয়ে গেলো বাংলাদেশ পাকিস্তানের সেই যুদ্ধ। বহু কষ্টে তাদের ঝগড়া থামিয়ে দুজনকে নিয়ে হাঁটা দিল সিমরান। মৃন্ময় হলো সিমরানের বড়ো চাচার একটা মাত্র ছেলে। মৃন্ময়রা সবাই পাঁচ বছর আগে আমেরিকায় চলে গিয়েছিল আপাতত সেখানেই তারা থাকে। সিমরানের বাবারা তিন ভাই এক বোন। বড়ো চাচার ছেলে মৃন্ময়, পরে সিমরানের বাবা আর ছোট হলেন আইরিনের বাবা। ফুফু ছিলেন সবার ছোট ও আদরের বোন কিন্তু সেই সম্পর্ক আজ ভাইদের কাছে মৃত। সিমরানের মাধ্যমেই নওশীন ও মৃন্ময় একে অন্যকে চিনে জানে, তাদের সম্পর্ক হলো সাপ বেজি টাইপের। কেউ কারো ছায়া পর্যন্ত দেখতে পারে না।

মৃন্ময় সিমরানের হাত ধরে হাঁটছে, দুইজন হাসছে কথা বলছে দেখে মনে হচ্ছে আজ তারা ভীষণ খুশি। মুক্ত ঝড়ছে সিমরানের মুখ থেকে। মৃন্ময়কে পেয়ে সে নীরের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছে কিন্তু আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কিছুই দেখছিল নীর। সিমরানের হাত সে ছাড়া অন্য কোনো ছেলে ধরবে সে মেনে নিতে পারছে না নিজের হাত মুষ্টি বড্ড করে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে রাগী গলায় বলল…..

—” ব্রেকআপ হতে না হতেই নিউ বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে শুরু করেছো। তোমাকে তো আমি একজন ভালো মেয়ে হিসেবেই জানতাম কিন্তু তুমি তো দেখছি…..ছিঃ ভাবতেও লজ্জা করছে তোমার জন্য কিনা আমি আর আমার ছোট্ট ভাইটা পাগল। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতই না নাটক করলাম। সাদাত ঠিকই বলেছিল…….!”

কথাটা বলে থেমে গেলো নীর। সাদাত যে তার পূর্ব পরিচিত সে কথাটি গোপন রাখতে চায়। তিনটি বছর ধরে সে অনেক অনেক প্ল্যান করেছে, সামনে থেকে তাকে যতটা ভদ্র, শান্ত বুঝা যায় সে কিন্তু আসলে তা নয়। ভদ্র শান্ত থাকা নিকচ নাটক মাত্র। তাকে যেমন দেখা যায় সে তেমন নয় তার পিছনে রয়েছে অনেক অনেক কাহিনী। চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করলো হঠাৎ করেই, হঠাৎ করেই তার খুনের নেশার প্রভাবটা বেড়ে গেলো। তাড়াতাড়ি করে ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে বলল কেননা সে এখন অনেক কিছুই করে ফেলতে পারে। সে চায় না কেউ এখন তার আসল পরিচয় জেনে যাক বিশেষ করে সিমরান। সিমরানকে তো সে পেয়েই ছাড়বে যার ফলে যদি কাউকে মারতে হয় সে মারবে। যেমন করে সাদাত আর ও মিলে……..

____________________

মৃন্ময়ের কথা শোনে আইরিন ও তার স্বামী ফয়সাল এসেছে। আইরিনের মুখ আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে। আগের সেই চঞ্চল আইরিন আর চঞ্চল নেই। কথা বার্তা তার বড়ো মানুষের মতো। মৃন্ময় অবাক চোখে সেই পিচ্ছি বোনটাকে দেখছে। মৃন্ময়কে হেসে দূর থেকেই কথা বলল আইরিন যা ভীষণ অবাক করিয়েছে সবাইকে। এ তো সেই আইরিন নয় যে কিনা মৃন্ময়কে দেখে এসে জড়িয়ে ধরে বলতো, ভাইয়া আমার চকোলেট দে, আজ এইটা কিনে আনবি , আমার এই ড্রেস লাগবে।

ফয়সাল তাকিয়ে আছে সিমরানের দিকে। সিমরান আজ আকাশি রঙের জামা পরেছে, মাথায় সাদা ওড়না, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফয়সাল। চোখ যেন বলছে…..

—” তাকিয়ে থাক ফয়সাল। তোর সামনে একজন পরী দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ ইচ্ছা তাকিয়ে থাক।”

সিমরান বেশ কিছুক্ষণ ফয়সালের দিকে নজর রাখলো। ছোট বোনের হাজবেন্ডের তাকানো তার কাছে মোটেও ভালো লাগলো না। অস্বস্তি বোধ তাকে চারদিকে ঘিরে ধরলো তারাতারি করে সেখান থেকে চলে গেলো সে।

বেশ কিছুক্ষণ পর আইরিনের কান্নার শব্দ শোনে সবাই তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আইরিন তার দৃষ্টি সিমরানের দিকে তাকিয়ে এমন একটি কথা বলল যা শোনে বাড়ির সবাই চমকে গেলো।

সমাপ্ত…….

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প বড় করার ভীষণ ইচ্ছা আছে আমার তবে রোজার মাসে আমি গল্প রেগুলার দিতে পারবো না। এই গল্পের মাঝে অনেক অনেক রহস্য যা আমার ফ্রেশ মনে চিন্তা মুক্ত হয়ে লিখতে হবে। রোজার মাসে গল্পটি দিলে হয়তো আমি ভালোভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারবো না তাই ভাবছি সিজন টু বড় করে লিখবো। নীরের অজানা রহস্য, সাদাত আর তার সম্পর্ক, আইরিন কি বলল? ফয়সাল কি আইরিনকে মেনে নিবে নাকি সে ভিলেন হবে, নিবিড়ের মাঝেও রয়েছে রহস্য। সব রহস্য একদম ঈদের পর থেকে ধাপে ধাপে সমাধান করা হবে। ধন্যবাদ। আপনারাই বলেছিলেন গল্পটি বড় করার জন্য আর আমিও চাই গল্পটি বড় হোক ।

7 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here