তুমি যদি চাও,পর্ব -১

0
7052

তুমি যদি চাও,পর্ব -১
রাজেশ্বরী দাস ( রাজী )

কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছি এমনিতেই প্রচণ্ড ক্লান্ত আর ওপরথেকে কিছুক্ষন পূর্বের রাস্তায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জন্য রাগে একপ্রকার মাথা যেন ফেটে যাচ্ছে আমার । কিন্তু তাও এই মুহূর্তে কোনমতে নিজের রাগকে সংবরণ করে রেখেছি ।

বাড়িতে প্রবেশ করে ড্রয়িং রুমের কাছাকাছি আসতেই সামনে তাকাতে দেখলাম সোফায় কিছুজন বসে আছেন । তাদের পাশেই সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে আমার বাবা এবং তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আমার মা , যারা বসে আছেন তাদের সাথে বাবা মা কিছু কথা বলছেন । তাদের মধ্যে একজন হলো পাশের বাড়ির একজন আন্টি , সাথে এক ভদ্রলোক এবং এক ভদ্রমহিলা । তবে তাদের মাঝে বসে থাকা এই ছেলেটিকে দেখতেই এবার আমার মেজাজটা গেলো আরো বিগড়ে । এই ছেলে এখানে কী করছে…??

আমি তাদের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি চুপ করে ঠিক সেই মুহূর্তে আমার বেস্টু সুরভি দ্রুত পায়ে বাড়িতে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো ।

সুরভি : আরে সঙ্গীতা শোন না ।

বাকিটা বলার আগেই আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে বাকিদের দেখতেই সুরভি থেমে গেলো । ও একবার বাকিদের দিকে তাকিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো । আর অন্যদিকে আমার মা-বাবা আর বাকিরাও সুরভির কণ্ঠস্বর শুনে এদিকে তাকালো এতক্ষণ ওরা আমাকে খেয়াল করেনি । মা বাবা আমাকে দেখে কিছুটা ভরকে গেলো । বাবা বসা থেমে উঠে দাঁড়ালো । বাবা আমাকে কিছু বলতে যাবে , তার আগেই পাশের বাড়ির সেই আন্টি বলে উঠলেন…. ” এইতো ভালোই হয়েছে মেয়ে চলে এসেছে । সঙ্গীতা এরা তোমাকে দেখতে এসেছেন , তাদের ছেলে রোহানের বউ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য । এনারা হচ্ছেন রোহানের বাবা মা আর তুমি তো নাকি রোহানকে আগে থেকেই চিনো…!! ”

বাবা : মা রে শোন….

আমি কিছু না বলে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই চুপচাপ সোজা সিড়ির দিকে পা বাড়ালাম আর দোতলায় নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম ।
.
.
এদিকে , সঙ্গীতার এমন কাজে সেখানে উপস্থিত সবাই কিছুটা অবাক হলো । সঙ্গীতার মা-বাবা ওর যাওয়ার পথের দিক থেকে চোখ সরিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে একবার চোখাচোখি করল তারপর আবার সামনে সবার দিকে তাকালো , সুরভি এসে তাদের পাশে দাঁড়ালো ।
.
.
আমি রুমে এসে আমার ব্যাগ আর বইপত্রগুলোকে ঠিকভাবে রাখলাম তারপর দাভাই এর রুমে গিয়ে একটা হকিস্টিক নিয়ে খুবই স্বাভাবিক এবং শান্ত ভঙ্গিতে আবার নীচে বাকিদের কাছে হেঁটে গেলাম আর নীচে ড্রয়িংরুমে এসে আমি চুপচাপ গিয়ে রোহান আর বাকিদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । সবাই আমার দিকেই তাকিয়ে আছে , হইতো বোঝার চেষ্টা করছে আমি করতে ঠিক চাইছিটা কী…!! আমি রোহানের দিকে তাকিয়ে দেখি এই ছেলে তো পুরো মেয়েদের মতো লজ্জলজ্জা ভাব নিয়ে বসে আছে চুপচাপ । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম….

আমি : কী করবেন আপনি যেনো ?? কীসের জন্য এসেছেন এখানে যেনো বেশ ??

রোহান বত্রিশপাটি দাত বের করে হেসে বলল…” তোমাকে বিয়ে । ”

আমি : হুমম বিয়ে…!! উঠ….,

রোহান : এ্যা…!!

আমি : কী এ্যা…!! কানে সমস্যা আছে শুনতে পাস না ?? উঠতে বলছি তো..!! উঠ

রোহান বেশ অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো ও আমার দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে উঠে দাঁড়ালো । সাথে পাশের বাড়ির আন্টি আর রোহানের মা-বাবাও উঠে দাঁড়ালো । আমি এক হাতে হকিস্টিক ধরে আরেকহাতে রোহানের কলার চেপে ধরলাম । বাকি সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে , আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম….

আমি : আমি তোকে বলেছিলাম না আমাকে বিরক্ত করবি না..!! তোর সাহস কত বড় যে তুই সোজা আমার বাড়ি চলে এসেছিস তাও আবার আমার সাথে বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করতে..!!

রোহান : না মানে আমি ভাবলাম তোমার বাবা মা রাজী থাকলে তুমিও রাজী হয়ে যাবে বিয়ে করতে । মানে ওই…

আমি : বিয়ে করবি তুই তাই না…?? থাম তোর বিয়ে করার সখ আমি মিটাচ্ছি তোকে তো আমি…

বলে হকিস্টিক দিয়ে মারতে যাবো তার আগেই রোহান ছুটে গিয়ে সোজা ওর মায়ের পেছনে লুকাল । রোহানের মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন…” এই মেয়ে এটা কী করছো তুমি…!! ”

আমি : যদি আপনারা এখনই এখান থেকে না যান তবে আরো কী কী যে করবো আমি তার নেই ঠিক । আপনারা এখনই এখান থেকে যাবেন নাকি…

রোহান : এই এই না না , আর জীবনেও তোমার পিছু ঘুরবো না । তোমাকে তো আমি বোনের চোখে দেখবো , আমি তোমাকে তো কি আর কাউকেই আর বিয়েই করবো না । ও মা বাড়ি চলো ।

আমি : মনে থাকে যেন যদি আর দেখেছি তোকে আমার আশেপাশে তবে তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে বলে দিলাম । যতসব ছেছরা বাঁদর ছেলে , এই যান তো আপনারা এখান থেকে ।

রোহান আর রোহানের বাবা মা আর দেরি না করে সেখান থেকে চলে গেলো , আর পাশের বাড়ির আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে একটা বেয়াক্কেলের ন্যায় হাসি দিয়ে মানেমানে করে সেখান থেকে কেটে পরলেন । ঠিক সেই সময় আমার দাভাই বাড়ি ফিরলো , আসার সময় ওদের ওভাবে যেতে দেখে বেশ অবাক হয়ে ভেতরে এলো ও আর আমাকে ওভাবে হকিস্টিক হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল…

দাভাই : কীরে বুচি এভাবে দাড়িয়ে আছিস যে.., আর ওরা…

সুরভি : ওকে দেখতে এসেছিল বিয়ের জন্য আর ও মেরে না মানে ভয় দেখিয়ে ওদের ভাগিয়ে দিয়েছে ।

দাভাই : বাহ…!! এই নাহলে আমার বোন ।

আমি : ওই ছেলের সাহস কীকরে হলো বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসার..!! আর মা বাবা…তোমরা…,

বাবা : ( আমতা আমতা করে ) আরে.. আমরা কী করবো বলতো রে মা…??

মা : হ্যাঁ ঐ মিসেস রায়ই তো ওদের নিয়ে বাড়িতে এলেন , আমরা ভাবলাম হইতো এমনিই ঘুরতে এসেছে কিন্তু পরে তখন বলে কিনা ওদের ছেলের তোকে নাকি পছন্দ হয়েছে খুব তাই ওরা বিয়ে দিতে চাই । আমরা তো বারণ করলাম কিন্তু ওরা শুনলে তো…!!

বাবা : কিন্তু কী ব্যাপার বল তো রে মা…!! তুই তো এতো সহজে এভাবে রেগে যাসনা , তাহলে আজকে এতো রেগে আছিস , কী হয়েছে তোর…!!

আমি : এই বাঁদর ছেলে বারণ করা সত্বেও আমার আগেপিছে ঘুরে বেড়াতো , আমাকে প্রোপোজও করেছিল আমি না বলেছিলাম আর বলেছিলাম যেন আমাকে বিরক্ত না করে । কিন্তু এর সাহস দেখো , উফ…!!! একে তো কলেজের অ্যাসাইনমেন্টের , পড়ার চাপ উপর থেকে এই ছেলে আর তারওপর আবার রাস্তার ওই অসভ্য বাঁদর ছেলেটা……।

দাভাই : কী…?? রাস্তায় ওই অসভ্য বাঁদর ছেলে মানে…!! কোন ছেলে ?? কার কথা বলছিস তুই ?? কী হয়েছে বল তো ??

আমি : কিছু না , ধর তোর হকিস্টিক আর আমি নিজের রুমে গেলাম ।

আমি দাভাই এর হাতে হকিস্টিকটা দিয়ে কাউকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম ।
.
.

সুরভি বেশ বুঝতে পারছে সঙ্গীতার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে । আজকে বাড়ি ফেরার পথে একে তো রাস্তার ওই ঘটনা উপর থেকে এখন এই রোহান । ও একবার সঙ্গীতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার বাকিদের দিকে তাকালো আর মেকি হেসে বলল…

সুরভি : আব আমি দেখছি ওকে….।

সুরভি সঙ্গীতার রুমের দিকে পা বাড়ালো , আর বাকিরা বিস্মিত হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো ।
.
.

আমি নিজের রুমে আসতেই সুরভিও আমার পিছু পিছু রুমে এলো ।

সুরভি : আব..সঙ্গু বলছিলাম যে…

ও এসে আমার সামনে দাঁড়াতেই আমি ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালাম ।

সুরভি : আরে আমি কী করলাম ?? আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ??

আমি ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম । আমার মাথা গরম হয়ে আছে , বিশেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা ভেবে আমার মাথা আরো গরম হয়ে যাচ্ছে ।

আমি সঙ্গীতা দাস , বাবা মায়ের দুইমাত্র সন্তান আমি অর্থাৎ বাড়ির ছোটো মেয়ে আমার একটা দাভাই আছে । অনার্স ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট আমি । আজকের কিছু সময় আগের ঘটনা , আমি আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সুরভি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম । আমরা দুজন একসাথে কিছু কথা বলতে বলতে রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটছিলাম , তখনই হটাৎ কোথা থেকে একটা অচেনা ছেলে দৌড়ে এলো আর তার সাথে লাগলো আমার ধাক্কা । আমার হাতে থাকা দুটো বই আর আসাইনমেন্ট পেপারগুলো সব গেলো পরে , কিন্তু আমি পরে যাবো তার আগেই সেই ব্যাক্তিটি আমাকে ধরে সামলে নিলো , কিছুমুহূর্তের জন্য সে আমার দিকেই তাকিয়ে রইলো হা করে । কিন্তু তারপরই আবার আমাকে সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আর কিছু না বলেই সেখান থেকে একপ্রকার দৌড়েই চলে গেলো সে । আমি হাঁ করে চেয়ে রইলাম সেই দিকে , কি অসভ্য ছেলে রে বাবা…!! একে তো কোথা থেকে হুট করে এসে ধাক্কা দিল , আমার বই পেপার সব ফেলে দিল আবার হেল্প তো দূর একটা সরিও বলল না । আজব…!! আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিল তাই আমি তাড়াতাড়ি আমার বইপত্র সব তুলে নিয়ে কিছু না বলে সোজা নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম আর আমাকে এভাবে রেগে চলে আসতে দেখে সুরভিও আমার পিছু পিছু এলো আমার বাড়ির দিকে । তবে তারপর বাড়ি এসে ওই রোহান নামক ছেলেটাকে দেখে মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল এবং তারপরের কাহিনী আপনাদের সকলের জানা ।
.
.

সুরভি : কিন্তু যা বলবি বল রাস্তার ওই ছেলেটা দেখতে কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম ছিলো । ইশ…!! যেভাবে তোকে ধরলো আর যেভাবে তোর দিকে তাকিয়ে ছিল তখন । আয় হায়…!!

আমি কথাটা শুনে চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম….” চুপ থাক তুই । ফালতু কথা বলার আর জায়গা পাস না তাই না ?? হ্যান্ডসাম না আরো কিছু..!! অসভ্য , বাঁদর ছেলে একটা আর ওই ছেলে নিশ্চয় কোন চোর টোর কিছু ছিল , দেখলি না কীভাবে দৌড়ে পালাল..!! ”

সুরভি : এই ড্রেসআপ দেখে তো মনে হচ্ছিল না তেমন কিছু । দেখে তো মনে হচ্ছিল বেশ ভদ্র সাথে স্মার্ট , হ্যান্ডসাম…।

আমি ভ্রু-কুচকে সরু চোখে সুরভির দিকে তাকালাম ।

আমি : ওই সুরসুরির বাচ্চা , সুভু পেত্নী কোথাকার…তুই দেখছি খুব প্রশংসা করছিস ওই অচেনা অসভ্য ছেলেটার…!!!

সুরভি : আরে আমি তো এমনিই বলছিলাম । তুই আবার আমাকে ওইসব নামে ডাকছিস..!! আচ্ছা সে যায় হোক , কিন্তু হ্যাঁ একটা কথা ওই ছেলেটাকে দেখে মনে হলো আগেও কোথাও দেখেছি হইতো কিন্তু মনে পড়ছে না ।

আমি : দেখেছিস হইতো দেখ , কখনও চুরি করে ধরা পড়েছিল হইতো তাই টিভিতে দেখিয়েছিল ।

সুরভি : আরে না …, আচ্ছা ছার বাদ দে সেসব কথা তুই মাথা ঠান্ডা কর । তবে হ্যাঁ সঙ্গু একটা কথা কিন্তু মানতেই হবে তখন ঐ রোহানকে যেভাবে ভয় দেখালি না তুই..!! ওই ছেলে তোকে তো দূর অন্য কোনো মেয়েকেও আর স্বপ্নেও বিয়ে করার কথা ভাববে না ।

ও কথাটা বলে হেসে ফেলল আর এবার আমিও ফিক করে হেসে ফেললাম ।

সুরভি : আচ্ছা , আমি এখন তবে বাড়ি যায় দেরি হয়ে যাবে তখন । আসছি তবে ।

আমি : আচ্ছা ঠিক আছে যা আর হ্যাঁ কালকে সকালে আমরা মন্দিরে যাব মনে আছে তো..!! ঠিক সময়ে চলে আসিস ।

সুরভি : হ্যাঁ , চিন্তা করিস না একদম ঠিক সময়ে চলে আসবো ।

আমি : টাটা..।

সুরভি : হুমম , টাটা…।

বলে সুরভি চলে গেল রুম থেকে । আর আমি আমার জামাকাপড় , টাওয়েল আর বাকি জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে ।
.
.

পরের দিন :-
……………..

সকালে মন্দির যাওয়ার জন্য আমি রেডি হয়ে নিলাম আর একটা ঝুড়িতে ফুল ফল ইত্যাদি এইসব সাজিয়ে নিলাম মন্দিরে পূজো দেবো বলে । কিছুসময় পরে সুরভি ডাকতে এলে আমি বাইরে ওর কাছে গেলাম ।

আমি : চল আমরা যায় তবে ।

সুরভি : আরে শোন না একটা কথা…

আমি : উফ…!! সব কথা পরে বলবি এখন আগে চল তো দেরি হয়ে যাচ্ছে.., আরে…চল ।

আমি ওর এক হাত ধরে টেনে ওকে মন্দিরের দিকে নিয়ে চলে গেলাম ।

আমরা মন্দিরে গিয়ে পূজো শেষে প্রণাম করে মন্দির থেকে বাইরে বেরোলাম । মন্দিরের সামনেই বাগান আছে , আমরা দুজন বাগান দিয়ে সদরদরজার দিকে আসছিলাম তখন আমার কিছু একটা হটাৎ মনে পড়াই সুরভির দিকে তাকিয়ে বললাম….

আমি : কী যেন বলছিলি তখন আমাকে..!!

সুরভি : হ্যাঁ ঐ…

সুরভি বাকি আর কিছু বলবে তার আগেই দুর্ভাগ্যবসত হটাৎ আমি হোচট খেলাম । আর পরলাম তো পরলাম এক ব্যক্তির ওপর , আর হটাৎ আমি পরাই আমাকে ধরতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে সে পরে আমার ওপর । আমি সেই ব্যক্তির দিকে ভালোভাবে তাকাতেই বুঝলাম এই ব্যক্তি আর কেও না কালকের সেই ব্যক্তিটিই যে রাস্তায় আমাকে ধাক্কা দিয়েছিল । সেই ব্যক্তির মুখের দিকে তাকাতেই আমি থমকে গেলাম , কিছুসময় হা করে সেই ব্যক্তির দিকেই তাকিয়ে রইলাম । কালকে আমি ছেলেটার মুখের দিকে তেমন খেয়াল করিনি , সত্যিই ছেলেটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর । আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি আমার আর বুঝতে বাকি নেই যে এই আঠেরো বছরের জীবনে প্রথমবারের মতো আমি আজ ক্রাস খেয়েছি তাও আবার শেষে এই ছেলেরটার ওপরেই , ভাবা যায়..!! সেও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । তবে পরমুহুর্তেই আমার মাথায় এলো আমরা ঠিক কী অবস্থায় আছি , এখানে উপস্থিত সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে যেন বিনা টিকিটে বাংলা সিনেমার কোন রোমান্টিক সিন দেখছে তারা । আমার মেজাজ গেলো আবার বিগড়ে আমি সাথে সাথে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম । সেও উঠে দাঁড়ালো , সুরভি এসে আমার পাশে দাঁড়ালো আর দুইজন ছেলে এসে তার পাশে দাঁড়ালো । আমি তার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠেই বললাম….

আমি : আপনি…!! আপনি এখানেও….?? আপনি কি আমার পিছু নিয়েছেন নাকি হ্যাঁ..??

ছেলেটা অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…” কী ?? ”

সুরভি আমার এক হাত ধরে বলল..” এই বইন এই শুন না…। ”

আমি : চুপ কর তুই । এই চোর-ছ্যাচর ছেলেটা সেই কালকে থেকে আমার লাইফকে হেল করে রেখে দিয়েছে । যতসব অসভ্য বাঁদর ছেলে একটা…!!! আপনি…

ছেলেটি এবার রেগে জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠলো…”জাস্ট শার্ট আপ…!! ” তার এমন ধমক শুনে আমি চুপে গেলাম আর তার দিকে তাকালাম , সে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আবার তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবো তার আগেই সুরভি আমার এক হাত চেপে ধরে কানের কাছে এসে বলল….” এই বইন চুপ , আর কিছু বলিস না এমনিতেই অনেক কিছু বলে ফেলেছিস তুই । কী বলছিস তুই এইসব…!! আর কাকে বলছিস…!! তুই জানিস ইনি কে ?? ”

আমি ভ্রু কুচকে সুরভির দিকে তাকিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বললাম…” কে ?? ”

সুরভি : আরে ভুল লোককে এইসব বলে ফেলেছিস তুই । এবার যে কী হবে সেটা ভেবেই আমার ভয় করছে । ইনি হচ্ছেন অফিসার শুভ্রাংশু চ্যাটার্জী…..

আমি : অফিসার..!!

সুরভি : হ্যাঁ , ইনি….

সুরভি আর কিছু বলবে তার আগেই উনি ধমক দিয়ে উঠলেন…” তুমি…!! ”

উনি আমাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে চারপাশে বাকিদের দিকে তাকালেন তারপর সবার উদ্দেশ্যে ধমকের সুরেই বললেন…. ” এখানে কি কোনো তামাশা চলছে নাকি কোনো সিনেমা চলছে যে আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এভাবে দেখছেন । এদিকে না তাকিয়ে সবাই নিজেদের কাজে মন দিন যান । ” তার ধমক শুনে সবাই একে একে সেখান থেকে চলে গেলো , আর যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ল । উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন…..” অ্যান্ড ইউ…!! কী কী যেন বলছিলে আমাকে তুমি………..

চলবে ,….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here