তুমি যদি চাও,পর্ব – ১০,১১

0
2684

তুমি যদি চাও,পর্ব – ১০,১১
রাজেশ্বরী দাস ( রাজী )
পর্ব – ১০

সুরভি আমার পাশে এসে দাঁড়াল , ও আমাকে জিজ্ঞাসা করলো…” কী হয়েছে বল তো ?? ”

” বুঝতে পারছি না তো কী হয়েছে , চেঁচামেচি আর হালকা কান্নাকাটির আওয়াজ কেন আসছে ?? চল তো নীচে যায় । ”

আমি আর সুরভি সিড়ি বেয়ে নীচে গেলাম , বাড়ির উঠোনে মা মামনি বাবাই বাবা উপস্থিত আছেন পাশের বাড়ির সেই হালকা হইহুল্লোড় আর কান্নাকাটির আওয়াজটা হইতো তাদের কানেও গেছে । আমি আর সুরভি আর না এগিয়ে গিয়ে উঠোনের সামনেই বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম , বাবা বাবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন…” অংশু আর অর্ঘ্য , ওরা কোথায় ?? ”

বাবাই উত্তর দিলেন…” অংশু আর অর্ঘ্য তো একটু বাইরে গেছে , কী একটা দরকার ছিল বলল কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে । ”

রূপসা কাকিমা সদর দরজা দিয়ে বাইরে থেকে বাড়ির ভেতরে উঠোনের দিকে এলেন , তিনি আসতেই আমার মা তাকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা চিন্তিত কণ্ঠে বললেন…..” রূপসা বাইরে পাশের বাড়ি থেকে এত হইহুল্লোড় আর কান্নাকাটির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে যে , কিছু কি হয়েছে ?? ”

রূপসা কাকিমা কিছুটা উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলেন….” আর বইলেন না দিদি , ওদের বাড়ির বড় মাইয়াডা পাশের গ্রামের কোন এক ছোকরার লগে ভেগে গেছে । সেই নিয়েই তো এত হইহুল্লোড় এত কান্নাকাটি , ওর তো সামনে বিয়া ছিল গা , আশীর্বাদ টাশির্বাদ সব তো হইয়া যায়সিল । কত এক প্রেম ভালোবাসা এল রে সেই সবকিছু রাইখা চলি গেল ওই পোলাডার লগে । ছা ছা ছা ছা ছা… , মা বাপটার কথা পরিবারের সবার সম্মানের কথা কিছুই ভাবলো না গো মাইয়াডা । আজকালকার ছেলে মেয়েদেরও বলি হারি , কী যে পেয়েছে সবাই এই প্রেম ভালোবাসায় ভগবান জানে , আরে অমন প্রেম – পিরিতির মুখে ঝাঁটার বারি । ”

কথাটা শুনে মামনি তাকে আটকে দিয়ে বিরক্তিমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন…” আহা রূপসা..!! কী বলছো এইসব তুমি..!! ”

রূপসা কাকিমা মুখ কিছুটা কাচুমাচু করে বললেন….” ভুল কিছু কইলাম কিনা জানি না , তবে আশেপাশে আজকাল যা দেখতাছি তাতে তো এমনডাই মনে আসতাছে । আমি তো বলবো , সব বাবা মায়েদের সাবধান থাকা উচিত , আজকালকার মাইয়া আর পোলাদের এইসব বিষয়ে ভরসা করতে নেই হক্কলে সমান । ”

মা কথাটা শুনে বললেন…” সব ছেলে মেয়েরা সমান হয় না রূপসা । এই যেমন আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়েদেরই দেখো না তুমি । আমাদের পুরো ভরসা আছে তাদের ওপর । ওরা এমন কাজ কখনও করবে না । ”

বাবাই সকলকে থামিয়ে দিয়ে , সকলের উদেশ্যেই বললেন….” আচ্ছা এইসব নিয়ে আলোচনা না হয় এখন থাক , সঙ্গীতা মা… সুরভি মা… তোমরা যাও ওপরে নিজেদের ঘরে যাও । আর এইসব নিয়ে তোমরা কিছু ভেবো না কেমন ?? যাও…। ”

আমি মুখে জোরপূর্বক হালকা হাঁসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে মাথা নাড়িয়ে…” ঠিক আছে ” বলে তাড়াতাড়ি ওপরে চলে এলাম , সুরভিও এলো আমার পিছু পিছু ।
.
.

জানালার ধারে বসে তাকিয়ে আছি রাতের এই আকাশপানে , নীচে ওইসব শোনার পর থেকে কেন জানি একটা খারাপ লাগা কাজ করছে মনের মাঝে , হাজারো প্রশ্ন জেগে উঠছে হৃদয়ে । পরিবারের সবাই আমাদের এতটা ভরসা করে , আচ্ছা তবে আমার মনে শুভ্রাংশুদার প্রতি ধীরে ধীরে তৈরি হাওয়া অনুভূতিগুলো কি ঠিক ?? আমি ঠকাচ্ছি না তো নিজের পরিবারের সবাইকে ?? ঠিক – ভুলের মাঝে যেন চাপা পরে আছি আমি , কোনটা ঠিক কোনটা ভুল আমি বুঝতে পারছি না কিছুতেই ।

সুরভি আমাকে অনেকক্ষন ওভাবে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আমার পাশে এসে বসলো , ও আমার এক কাধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলো….” সঙ্গু তুই ঠিক আছিস । ”

আমি আকাশের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সুরভির দিকে তাকিয়ে ক্ষীণস্বরে বললাম…” হুম , আমি ঠিক আছি , আমার আবার কী হবে ?? ”

” কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছেনা… ”

সুরভি বাকি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো , ওর মা ফোন করছে তাই ও আমার দিকে একনজর তাকিয়ে…” আমি এখনই আসছি কথা বলে “… বলে ফোন কানে ধরে ঘর থেকে বাইরে চলে গেল । আমি ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নীচু করে বসে রইলাম চোখ বুজলাম , হটাৎ বুঝলাম কেও যেন আমার মাথায় এসে হাত রাখলো তাই আমি মুখ তুলে তাকালাম তার দিকে , আমার বাবা আমার মাথায় এক হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন । বাবাকে দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম , বাবা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন…” কী রে মা এভাবে বসে ছিলিস যে ?? ”

আমি মুখে মুচকি হাঁসি টানার চেষ্টা করে বললাম….” না এমনিই ”

” ওহ ”

বাবা কিছুক্ষন চুপ থাকলেন তারপর বললেন….” একটা কথা বলবো রে মা আজ তোকে ?? ”

” হ্যাঁ অবশ্যই বলো জিজ্ঞাসা করছো কেন ?? ”

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন…” আজ একটা কথা দিবি তুই আমাকে ?? তুই তাকেই বিয়ে করবি যাকে আমরা তোর জন্য পছন্দ করবো । ”

আমি শুনে আমি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম….” বাবা এইসব….. ”

বাবা আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই বলল…. ” বিশ্বাস আছে আমার তোর ওপর অনেক আমাদের তাও বলছি , এইটুকু তো চাইতেই পারি তোর থেকে বাবা হিসেবে আমি তাই না ?? কথা দে আমায় আজ । ”

বাবা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন , আমি ধীরে ধীরে কাঁপা কাঁপা ভাবে বাবার হাতে নিজের এক হাত রেখে মুখে হাঁসি টানার বৃথা চেষ্টা করে বললাম…. ” কথা দিলাম বাবা তুমি যাকে বলবে আমি তাকেই বিয়ে করবো । ”

বাবা কথাটা শুনে মৃদু হেঁসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন , দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো আমার চোখ বেয়ে , বাবার অজান্তেই আমি সেটাকে মুছে ফেললাম , কেন জানিনা কিন্তু ভেতর ভেতর আমার কষ্ট হচ্ছে খুব । বাবা আমার দুই গালে হাত রেখে বললেন…. ” আচ্ছা আর যেটা বলতে এখানে এসেছিলাম , আমরা সবাই কালকেই ফিরে যাচ্ছি এখান থেকে বাড়ি । আসলে অংশুর কিছু একটা জরুরি কাজ পরে গেছে তাই নাকি এখানে থাকাটা আর সম্ভব হবে না । তোমরা ঠিক সময়ে তৈরি থেকো তবে আগামীকাল । ”

আমি মাথা নাড়িয়ে হুমম বললাম । বাবা আমার দিকে একনজর তাকিয়ে ঘর থেকে চলে গেলেন ।
.
.

এখন প্রায় মাঝরাত চারিদিক নিঃস্তব্ধ , সবাই হইতো ঘুমোচ্ছে এখন কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই । শেষে আমি শুয়া থেকে উঠে বসলাম , বেশি না ভেবে বিছানা থেমে নেমে সোজা ছাদের দিয়ে হেঁটে গেলাম । কেমন যেন দমবন্ধ অনুভূতি হচ্ছে আমার , আমি ছাদে গিয়ে রেলিঙের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলাম চোখ বন্ধ করে । সেই মুহূর্তে হটাৎ কেও আমার হাত ধরে টেনে আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এলো , আমি চোখ মেলে তাকালাম তার দিকে । শুভ্রাংশুদার কিছুটা রেগে আমার দুই বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন….” তুমি এত রাতে একা ছাদে কী করছিলে হ্যাঁ ?? তুমি….”

আমি তার কথার মাঝেই বলে উঠলাম….” তাতে আপনার কী ?? আমি যা খুশি তাই করবো তাকে আপনার কী ?? ”

উনি বেশ অবাক নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন….” মানে..!! কী বলছো তুমি এইসব ?? ”

আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে একটু দূরে সরে এসে অন্যদিকে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললাম….” ঠিকই তো বলছি আমি , আপনার কোন অধিকার নেই আমাকে কিছু বলার । ”

উনি আমার কাছে এসে দুই গালে হাত রেখে বললেন….” এইসব কেন বলছো তুমি ?? সঙ্গীপাখি তুমি কি বোঝ না ভালোবাসি আমি তোমায়..!! ”

আমি কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠেই তাকে বললাম…” চায়না বুঝতে কিছু আমি , চায়না আমি আপনার ভালোবাসা । দূরে থাকুন আপনি আমার থেকে , আমাকে নিজের মত থাকতে দিন । কেন বিরক্ত করছেন আপনি আমাকে ?? আর কথায় কথায় এভাবে কাছে কেন আসছেন আপনি আমার ?? ”

উনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কপাকাপা কণ্ঠে বললেন….” আমি তোমায় বিরক্ত করছি ?? তারমানে কি তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনা ?? ”

আমি কথাটা শুনে চোখ তুলে তার দিকে তাকালাম , তার চোখ মুখ কেমন যেন লালচে বর্ন ধারণ করেছে , চোখ ছলছল করছে । উনি আমার দুই গাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আমার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বললেন….” সরি , ”

উনি একটু চুপ থেকে আবারও বললেন….” বিশ্বাস করো তোমাকে ভালোবাসি আমি , নিজের থেকেও হইতো বেশি ভালোবাসি তোমায় , নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সবটুকু দিয়ে ভালোবেসে যাবো তোমাকে , আগলে রাখবো নিজের কাছে , সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো তোমার সাথে থাকবো কিন্তু #তুমি যদি চাও তবেই , জোড় করে তোমাকে বিরক্ত করে নয় । আর যায় হোক এটা আমি খুব ভালোভাবেই জানি যে ভালোবাসাটা অন্তত কখনও জোড় করে হয়না । আমি তোমাকে আর বিরক্ত করবো না । সরি । ”

উনি আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলেন , আর আমি সেখানেই দুই হাঁটু ভাঁজ করে বসে পরলাম , আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে কষ্ট হচ্ছে আমার খুব । আমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জলবিন্দু । কিন্তু এমন কেন হচ্ছে আমার ?? আমি তো চেয়েছিলাম যে সে দূরে থাকুক আমার থেকে , তবে ??

.
.
.

পরেরদিন সকলে বাড়ি ফিরে এলো গ্রাম থেকে , ধীরে ধীরে কেটে গেল প্রায় সাতটা দিন । সেই রাতের পর থেকে শুভ্রাংশুদার সাথে আর আমার সাক্ষাৎ হয়নি , গ্রাম থেকে ফিরে আসার সময়ও উনি আর অর্ঘ্যদা সবার আগেই ভোরের দিকে বেরিয়ে গেছিলেন ।

.
.

আজ কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতেই মা আমার হাতে একটা অচেনা ছেলের ফটো দিয়ে বললেন…” কেমন রে ছেলেটা ?? ”

আমি ফটোর দিকে একবার তাকিয়ে ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম….” এটা আবার কে ?? আর আমাকেই বা দেখাচ্ছো কেন বলো তো ?? ”

” আরে ছেলেটা ভালো , বয়সও অল্প কেবল কলেজের প্রফেসার হিসেবে চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছে । ভাবছিলাম তোর পছন্দ হলে তোর সাথে বিয়ের জন্য দেখবো আরকি । দেখ রাগ করিস না , বিয়ে তো এক দিন না এক দিন করতেই হবে.. তাই…”

আমি ফটোটা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম…” মা প্লীজ , আমি এখন এইসব নিয়ে কোন কথা বলতে চায়না । আমার ক্লান্ত লাগছে খুব , আমি আমার ঘরে যাচ্ছি । ”

আমি মাকে আর কিছু না বলতে দিয়ে তাড়াতাড়ি একপ্রকার দৌঁড়ে নিজের ঘরে চলে এলাম , দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার কাছে এসে ধপ করে বসে পড়লাম আমি । চোখ আর বাঁধ মানলো না আমার , আমার দুই চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পরলো অশ্রুবিন্দুরা । তার কারণ কি আদৌ আমার অজানা , উহু.. হইতো না ।

চলবে,……

তুমি যদি চাও
রাজেশ্বরী দাস ( রাজী )
পর্ব – ১১

সোফায় চুপচাপ সকলের মাঝে বসে আছি আমি মাথা নীচু করে , ভাবতেও অবাক লাগছে এখন আমি নাকি একজনের স্ত্রী । আমি আড় চোখে একবার আমার পাশে বসে থাকা মানুষটার দিকে তাকালাম , শুভ্রাংশুদা কেমন যেন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছেন । আমি কিছুমুহূর্ত আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাবতে লাগলাম ।

আজ সকালে মায়ের হালকা ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গে আমার , আমি উঠে গিয়ে ঘরের দরজা খুলতেই মা ঘরে আসে আর সাথে সুরভিও । এত সকালে সুরভিকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম আমি , কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করবো তার আগেই মা আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল….” এর মধ্যে একটা শাড়ি , বাকি দরকারী কিছু জিনিসপত্র আর হালকা কিছু গহনা আছে তাড়াতাড়ি সেগুলো পরে সুন্দরভাবে সেজে তৈরি হয়ে নে , সুরভি আছে ও তোকে সাহায্য করবে না হয় । ”

আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম….” কিন্তু কেন ?? ”

” আজ পাত্রপক্ষ আসবে , তোকে যদিও ওদের পছন্দই । তবে আজ কিছু জরুরি কাজ আছে , যদি সব ঠিক থাকে তবে….”

মা বাকিটা বলার আগেই আমি বলে উঠলাম….” কী ?? এইসবের মানেটা কী ?? ”

বাবা আর দাভাই আমার ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন , বাবা এদিকে এগিয়ে এসে বললেন….” দেখ রে মা আজ হোক বা কাল বিয়ে তো তোকে একদিন না একদিন করতেই হবে তাই না ?? আর আমাদেরও তো বয়স হচ্ছে নাকি ?? আর তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলি , আমি যাকে বলবো তুই তাকেই বিয়ে করবি । ”

” হ্যাঁ আমি কথা দিয়েছিলাম কিন্তু…”

বাবা আমাকে বাকিটা বলতে না দিয়ে বললেন….” ব্যাস আর কোন কিন্তু না বেশি কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরে তৈরি হয়ে নাও , ওদের আসার সময় হয়ে আসছে । ”

বলে বাবা ঘর থেকে চলে গেলেন , দাভাইও একবার আমার মাথায় হাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘর থেকে চলে গেল । আর মা আমাকে জোর করে চেঞ্জ করে আসতে বলল , শেষে মায়ের জোরাজুরিতে ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়িটা পরে আসলাম । প্যাকেটে লাল রঙের একটা জামদানি শাড়ি ছিল । আমি ঘরে আসতেই সুরভি মাকে উদ্দেশ্য করে বলল…” আন্টি তুমি যাও বাকি আমি ওকে তৈরি হতে সাহায্য করছি । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি কর । ”

মা ঘর থেকে চলে গেলে আমি ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম , প্রচণ্ডরকমের কান্না পাচ্ছে আমার , প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে । সুরভি কাছে এসে ধীরে ধীরে হালকা কিছু গহনা আমাকে পরিয়ে দিল , তারপর চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা একটু লাল লিপস্টিক পরিয়ে দিল সাথে কপালে ছোট্ট একটা লাল টিপ । আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল , ও সেটা দেখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল…. ” এই এভাবে কাঁদছিস কেন তুই ?? এমনিতেই তো তুই আমাকে ঠিকভাবে সাজাতে দিলি না , অনেক কষ্টে কাজল আর লিপস্টিকটা পরালাম , এখন এভাবে কান্নাকাটি করে সেটাও খারাপ করে দিচ্ছিস তুই । ”

আমি কিছু বললাম না নিজের চোখের জল মুছে ফেললাম , আমার মা আবারও ঘরে এলেন…” এইযে হয়েছে তোদের ?? ”

সুরভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল…” হুম কিন্তু বেশি সাজাতে দিল না তো ও । ”

মা বললেন…” আচ্ছা থাক না হয় যেটুকু হয়েছে তাতেই হবে । ”

মা আমার মাথায় শাড়ির আঁচলটা হালকা টেনে দিয়ে আমার হাত ধরে নীচে ড্রয়িং রুমের দিকে নিয়ে গেলেন , সুরভিও এল আমাদের সাথেই ।
.
.

আমি ড্রয়িং রুমের সামনে এসে মুখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখলাম সেখানে দাভাই , বাবা , মামনি , বাবাই , শুভ্রাংশুদা , অর্ঘ্যদা এবং একজন উকিল আঙ্কেল বসে আছেন । শুভ্রাংশুদা চোখ তুলে কিছুটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলেন , আমি ওদের দেখে অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম , মামনি আমার কাছে এসে আমাকে মুচকি হেসে বললেন….” এইতো সঙ্গীতা মা , আয় আমার সাথে এদিকে আয় ”

মামনি আমাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালেন , শুভ্রাংশুদা বলে উঠলেন…..” মাম্মা পাপা তোমরা কি এবার অন্তত আমাকে বলবে ঠিক কী দরকারী কাজ আছে তোমাদের ?? ”

বাবাই উত্তর দিলেন…” আচ্ছা এবার না হয় বলি , দেখ তোর মামনি বাবাই আমি আর তোর মা , আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তো ছিলই , আমরা চায় সেই সম্পর্কটাকে আত্মীয়তায় পরিণত করতে । তোর আর সঙ্গীতার বিয়ে দিতে চায় আমরা । ”

আমি কথাটা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম তাদের দিকে ।

মামনি বললেন….” অর্ঘ্যই যদিও আমাদের কথাটা বলল এবং বুঝালো , তখন আমরা ভাবলাম কথাটা মন্দ না ও ঠিকই বলেছে । ”

বাবা মৃদু হেসে বললেন….” হুমম , আর তাই আমরা ঠিক করেছি আজকে তোরা রাজি থাকলে ঘরোয়াভাবেই তোদের দুজনের রেজিস্ট্রি ম্যারেজটা হবে । আশা করছি তোদের এতে কোন সমস্যা নেই আর চাইলে তার আগে তোদের একে-অপরের সঙ্গে কিছু কথা বলার থাকলে বলতেই পারিস । ”

আমি কিছু না বলে মাথা নীচু করে বসে থাকলাম কিন্তু তখনই শুভ্রাংশুদা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন….” আমি এই বিয়ে করতে পারবো না । ”

আমি কথাটা শুনে তার দিকে তাকালাম , বাবাই অবাক হয়ে বললেন….”কেন ?? ”

” জানি না কিন্তু আমি পারবো না বিয়েটা করতে । ”

অর্ঘ্যদা একবার বাকি সকলের দিকে তাকিয়ে তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন….” অংশু এটা কী বলছিস তুই ?? ”

বাবাই ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন….” অংশু তোমার সমস্যাটা কোথায় বলবে তো..!! ”

উনি কারোর কথার কোন উত্তর না দিয়ে ড্রয়িং রুম থেকে বাড়ির ছাদের দিকে চলে গেলেন । সবাই অবাক নয়নে চেয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে , আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম….” আমার কিছু কথা আছে ওনার সাথে । ”

বাবাই একবার মামনির দিকে তাকিয়ে আমাকে বললেন….” ঠিক আছে যা ”

আমি মুখ তুলে একবার বাবার দিকে তাকালাম , বাবা ইশারায় সম্মতি দিলে আমি ছাদের দিকে হেঁটে গেলাম । বাকিরা সবাই একবার একে অপরের দিকে তাকালো , মামনি চিন্তিত কণ্ঠে বললেন…..” কী যে হল ছেলেটার বুঝতে পারছি না , ও আদৌ রাজি হবে তো ?? ”

অর্ঘ্যদা হালকা হেঁসে বললেন….” ও ঠিক রাজি হবে দেখো তোমরা । ”

.
.

ছাদে গিয়ে দেখলাম উনি আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন , আমি ওনার কাছে গিয়ে রাগীকণ্ঠে বললাম….” কী প্রবলেম কী আপনার হ্যাঁ ?? ”

উনি আমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলেন…” ওহ তোমাকে হইতো আবার বিরক্ত হতে হল সরি , আমি জানতাম না যে মাম্মা পাপা আর বাবাই মামনি এমন কিছু ডিসিশন নেবে , আগে জানলে অবশ্যই বারণ করতাম । ”

” আমি সেটার কথা বলছি না , আপনি আমার দিকে তাকান । ”

আমি তার একটু কাছে এগিয়ে গেলে উনি সরে গিয়ে বললেন…” উহু , কাছে এসো না তোমার তো সমস্যা হবে । ”

” অভিমান করেছেন আমার ওপর খুব তাই না ?? ”

উনি তাচ্ছিল্যের হাঁসি হেঁসে বললেন…” অভিমান..!! না সেই অধিকার তো নেই আমার । আর তুমি আমার কাছে এসেছো কেন ? দূরে থাকো আমার মত একটা ছেলের কাছাকাছি থাকলে তো তোমার সমস্যা হবে তাই না ??

আমার এবার এই মুহূর্তে রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে খুব , তাও কান্না আটকে নিজেকে সামলে বললাম….” আপনি এভাবে কেন বলছেন ?? আর বিয়েতে রাজি হলেন না কেন আপনি ?? খুব তো বলছিলেন আমাকে যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে এখন বিয়ের জন্য না কেন বললেন আপনি ?? ”

” তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না , তুমি তো চাও আমি যেন তোমার থেকে দূরে থাকি আর আমি চায়না তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হোক তাই বিয়েতে আমি না বলেছি । তোমার তো খুশি হওয়ার কথা তাই না ?? ”

” আমি বলেছি আপনাকে যে আমি আপনাকে ভালোবাসি না ?? হ্যাঁ আমি দূরে থাকতে বলেছিলাম কারণ আমি চায়নি আপনাকে বা পরিবারের কাউকে কখনও ঠকাতে । বাবাকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে বাবা যাকে বলবেন তাকেই আমি বিয়ে করবো তাই আপনাকে ওইসব বলেছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম আমার সাথে জড়িয়ে পড়লে আপনি হইতো শুধু কষ্টই পাবেন , তাই আমি সেগুলো বলেছিলাম যাতে করে সেগুলো শুনে আপনি দূরে সরে যান আমার থেকে , সেই জন্যই সেদিন আপনাকে অতটা কষ্ট দিয়েছিলাম আমি । বিশ্বাস করুন আমার নিজেরও খুব কষ্ট হচ্ছিল ওইসমস্ত কিছু বলতে , কিন্তু আমি কী করতাম আমার মাথা কাজ করছিল না , কোনটা ঠিক কোনটা ভুল কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমি । ”

আমার চোখের জল যেন আর বাঁধ মানছে না ।

এদিকে , শুভ্রাংশু চুপ করে তাকিয়ে আছে সঙ্গীতার দিকে ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে সঙ্গীতাকে বলল….” তারমানে তুমি আমাকে….”

” ভালোবাসি , ভালোবাসি আমি আপনাকে । ”

আমি হাতের তালুর উল্টোপিঠ দিয়ে নিজের চোখ মুছে বললাম….” কিন্তু আপনার তাতে কী ?? আপনার তো আর তাতে যায় আসেনা , বুঝে গেছি আমি আসলে আপনি আমাকে ভালোইবাসেন না , বাসতে হবেনা আপনাকে ভালো , করতে হবেনা আপনাকে বিয়ে , যান আপনি । ”

শুভ্রাংশুদা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন তারপর কিছু না বলেই আমার এক হাত ধরে সেখান থেকে নীচে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলেন । কেও কিছু বলবে তার আগেই উনি বললেন….” আমরা রাজি বিয়েতে , তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করো । ”

তার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালো । উনি আবারও বলে উঠলেন….” কী হল ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা ? আমি বললাম তাড়াতাড়ি করতে যা করার । ”

অর্ঘ্যদা একটু হেঁসে বললেন….” আরে সব তো তৈরিই আছে । ”

দাভাই…..” হ্যাঁ , এক মিনিট….” বলে দুটো কাঁচা ফুলের মালা আনলেন , সেই মালা দিয়ে মালাবদল হল , মামনি একটা সিঁদুরের কৌটো এগিয়ে দিয়ে ওনাকে বললেন আমার সিঁথিতে পরিয়ে দিতে উনি এক চুটকি সিঁদুর তুলে নিয়ে আমার সিঁথিতে পরিয়ে দিলেন , উকিল আঙ্কেল রেজিস্ট্রির সব কাগজ পত্র তৈরি করেই রেখেছিলেন উনি সেটাই সই করে দিলেন , আমি শেষে একনজর ওনার দিকে তাকিয়ে রেজিস্ট্রি পেপারে সই করে দিলাম । ব্যাস হয়ে গেল আমাদের কাগজে কলমে বিয়ে , কাগজে কলমে আমি এখন ওনার স্ত্রী ।
.
.

শুভ্রাংশুদার কথায় আমি বাস্তবে ফিরে এলাম , উনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন….” আমার সঙ্গীতার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে , তো আমরা কি…. ”

বাবা হেসে বললেন….” হ্যাঁ অবশ্যই বলতে পারো , যাও । ”

উনি আমার হাত ধরে সেখান থেকে আমাকে আমার ঘরের দিকে নিয়ে এলেন । উনি ঘরে এসে আমাকে দাঁড করিয়ে দরজাটা লাগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন , আমি একনজর ওনার দিকে তাকিয়ে সরে যেতে নিলে উনি আমার কোমর ধরে নিজের আমাকে কাছে টেনে নিলেন । আমি নিজেকে ওনার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম….” ছাড়ুন আমাকে , সরুন…দূরে যান আপনি । ”

উনি আমাকে আরো শক্ত করে ধরে বললেন….” উহু তোমাকে আগেই বলেছিলাম তুমি যা চাও তাই হবে । ”

” হ্যাঁ তো আমি বলছি তো দূরে যেতে আপনাকে তার মানে আমি এটাই চায় দূরে যান । ”

” মোটেও না , আমি তোমার নকল চাওয়ার কথা বলিনি আমি তোমার আসল চাওয়ার কথা বলেছি । তোমার মুখের চাওয়া তো আসল চাওয়া নয় সঙ্গীপাখি তোমার মনের চাওয়ার কথা বলেছি আমি , প্রকৃত পক্ষে #তুমি যদি চাও তবে সারাজীবন তোমার পাশে থেকে তোমাকে ভালোবেসে যাবো বলেছি আমি । আর তুমিও তো সেটাই চাও । ”

আমি অবাক নয়নে কিছুক্ষন তার দিকে চেয়ে রইলাম , উনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে আবারও বললেন….

” আর এখন তো তুমি আমার স্ত্রী , এখন তো আর তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না সঙ্গীপাখি , আগেই বলেছিলাম #তুমি যদি চাও তবে তোমাকে সারাজীবন নিজের কাছে অবদ্ধ করবো আমি , সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো , নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমায় নিজের কাছে আগলে রাখবো , এখন তো তোমায় আর ছাড়ছিনা তবে হ্যাঁ এখন তো শুধু একটা জিনিসই তোমার থেকে আমাকে দূরে সরাতে পারবে আর সেটা হচ্ছে আমার মৃত্যু । ”

ওনার মুখে মৃত্যুর কথা আমার বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো , আমার চোখ থেকে আবারও জল গড়িয়ে পরলো আমি নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে বললাম…” আপনি খুব খারাপ শুধু এইসব আলতু ফালতু কথা বলছেন । ছাড়ুন আমাকে আপনি , থাকবো না আমি আপনার কাছে । ”

” এইমুহুর্তে আমার তোমাকে দুই গালে দুটো থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে । তাই তুমি যদি সেটা না চাও তো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো এখানে । কে বলেছিল তোমাকে ওইসব আলতু ফালতু কাজ করতে ?? তুমি কি আমাকে বলতে পারতে না বাবাই তোমাকে যা যা বলেছিলেন , তাহলেই তো আমি কিছু না কিছু ব্যবস্থা ঠিক করতাম । কিন্তু না , তুমি কী করলে ?? আর তুমি কী যেন বললে তুমি ভেবেছিলে তোমার সাথে জড়িয়ে পরলে আমি কষ্ট পেতাম , আরে জড়িয়ে তো আমি সেই কবেই পরেছি তোমার মায়াতে গভীরভাবে , সেই মায়া যে আর কাটানো সম্ভব না কোন মতে আমার দ্বারা । আর তুমি জানো আমার ঠিক কতটা কষ্ট হয়েছে এইকদিন ?এবার তার জন্য শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে জান । ”

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে বললাম…” শাস্তি , কী শাস্তি ?? ”

উনি কোন উত্তর না দিয়ে বাঁকা হেঁসে আমার দিকে দিকে এগিয়ে এলেন , উনি আগে আমার চোখের জল আর চোখের নীচে লেপ্টে থাকা কাজল নিজের এক হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলেন , তারপর আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন কেমন যেন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে ওনার নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে আমার মুখের ওপর আর আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে । ঠিক তখনই হটাৎ দরজাতে নক করার আওয়াজ হলো , উনি একটু বিরক্তি নিয়ে মুখ তুলে সেদিকে তাকালেন আর আমি মুখ টিপে হাঁসলাম , সেটা দেখে উনি সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন…” এত খুশি হওয়ার মত কিছু হয়নি , ভেবো না বেচেঁ গেলে শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবেই । ”

” হ্যাঁ হ্যাঁ দেখা যাবে , আপনি এখন যান গিয়ে দরজা খুলুন । ”

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন । উনি দরজা খুলতেই অর্ঘ্যদা ওনার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললেন….” আরে ভাই তোর তো দেখি তর সইছে না । বিয়ে হতে না হতেই বউকে নিয়ে ঘরে চলে এলে রোমান্স করতে । ”

” করতে আর দিলি কোই তুই । ”

ওদের এমন কথা শুনে লজ্জায় আমার ইচ্ছে করছে এই গরমের মাঝেও বিছানার ব্লঙ্কেটের তলে গিয়ে মুখ লুকিয়ে বসে থাকতে ।

” এই আমার কিন্তু কোন দোষ নেই , আঙ্কেল আন্টিরা ডাকছেন তোদের কিছু জরুরি কথা আছে । চল এখন রোমান্স করার সময় পরেও পাবি অনেক । ”

উনি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলেন…” কী কথা ?? ”

” তোরা দুজন গেলেই বুঝতে পারবি আয় তো । ”

বলে অর্ঘ্যদা চলে গেলেন , আমরা দুজনও গেলাম ড্রয়িংরুমে । আমরা গিয়ে বাকিদের সামনে দাঁড়ালাম , সকলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন । মামনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন….” আমরা জানি তোদের দুজনের মধ্যে কেউই এই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলিস না এইমুহুর্তে , হইতো মন থেকে বিয়েটা মেনে নিতেও পারিসনি । ”

মা মামনির সাথে তাল মিলিয়ে বললেন…” দেখ তোদের ওপর আমরা কোন সম্পর্ক চাপিয়ে দেবো না । জোড় করে মেনে নিতে হবেনা তোদের । ”

মামনি আবারও বললেন….” হ্যাঁ তোদের এই বিয়েটা আমরা দিলাম শুধু নিজেদের মনের প্রশান্তির জন্য । এখন তোরা আগে যেমন ছিলি তেমনই থাকবি নিজেদের মত আলাদা , পরে না হয় যখন তোরা রাজি থাকবি তখন ধুমধাম করে ধর্মীয় মতে তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে আবার । ”

কথাটা শুনে উনি অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন….” এ্যা…!! ”

অর্ঘ্যদা ওনার পিঠ চাপড়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বললেন….” হ্যাঁ , খুশি না তুই এবার ?? ”

উনি সকলের সামনে আর কিছু বললেন না ।
.
.
.

আমি , সুরভি , শুভ্রাংশুদা আর অর্ঘ্যদা ছাদে দাঁড়িয়ে আছি । শুভ্রাংশুদা এইমুহুর্তে নিজের দুঃখ প্রকাশ করে চলেছেন ।

” এটা কি মানা যায় ?? বিয়ে করা বউ থাকতেও নাকি ব্যাচেলরদের মত বউ ছাড়া একা থাকতে হবে…..

চলবে ,…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here