হৃদয় সমর্পন,পর্ব-১
Writer: Mou Ahmed(ছদ্মনাম)
দু’মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বসে আছে বাসর ঘরে অনু।উদয় এর সাথে আজই বিয়ে হয়েছে অনুর।উদয়ের অমতেই বিয়েটা হয়েছে।তিব্র ঘৃণা নিয়ে উদয় বিয়ে করেছে অনুকে।উদয় জানেও না যে ওর যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে প্রেগন্যান্ট। ঘটনাটা জানলে কি রিয়্যাক্ট করবে সেটাও জানেনা অনু।ভয়ে থর থর করে কাঁপছে অনু।উদয় এ বিয়েতে কোনো ভাবেই রাজি ছিলো না।উদয়ের বাবা জোর জবরদস্হি করে বিয়ে দিয়েছেন অনুর সাথে।উদয় বিয়ের আগে অনুকে বলেই দিয়েছে সে বিয়ে করতে চাই না।আর বিয়ে করলেও অনু কখনো সুখি হবে না।সে অনুকে স্ত্রীর মর্জাদা দিতে পারবে না।তাই অনু যেনো উদয় কে বিয়ে না করে।উদয় এর সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া নিয়ে উদয় অনেক বাজে ব্যবহার ও করেছে।কিন্তু অনু নিরুপায় তাই উদয় কে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও বিয়ে করতে হলো।
এমনি তে উদয় কে অনুর কোনদিন পছন্দ ছিলো না।এর আগে অততীতে ঘটে গিয়েছে অনেক ঘটনা যার রেশ ধরেই উদয় অনুকে একবিন্দু পছন্দ করে না।কিন্তু ওর অপছন্দের সেই কারন টা খুজে পেলাম না।
সিগারেট টানতে টানতে রুমে প্রবেশ করলো উদয়।উদয়ের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের বলি রেখা ফুটে উঠেছে।উদয় রুমে এসে সোফায় বসে একটার পর একটা সিগারেট টেনেই যাচ্ছে।গায়ের সেরওয়ানি খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলো।রাগে ফুঁসছে আর ওয়ালে নিজের হাত দিয়ে নিজেই ঘুষি দিচ্ছে।অনু উদয় কে দেখে খাট থেকে নিচে নেমে সালাম করতে গেলাম।উদয় সাথে সাথেই অনুকে লাথি মেরে ফেলে দিলো।আর চুলের মুঠি ধরে তুলে বলে আমি তোকে কোনদিন নিজের বলে মেনে নিবো না।ঘেন্না করি তোকে আমি।এই বিয়ে আমি মানি না।আমার জীবন থেকে দূর হয়ে যা তুই।তোর মতো মেয়েরা সব ই পারে।ছলনাময়ী নারী।তোর মতো অপবিত্র কে নারী কে স্পর্শ করাটাও পাপের।চোখ দিয়ে আমার টপ টপ করে পানি পড়ছে অনুর।যে উদয় অনু বলতে পাগল ছিলো সে আজ অনুকে ঘেন্না করে।
উদয়ের গাল দিয়ে আজ ও সেই বিশ্রি গন্ধটা পাচ্ছে।উদয় আজ ও আবার মদ খেয়েছে।উদয়ের এই নেশাটা যে অনু বড্ড ভয় পাই।এই নেশার জন্য অনুর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।অনুর জীবন টা অভিশপ্ত হয়ে গিয়েছে এই নেশার জন্য।এই নিয়ে দু’বার নেশা করতে দেখলো উদয় কে।
উদয়ের রিয়্যাক্ট দেখেও অনু ঠিক করলো সে উদয় কে বলবো তার প্রেগ্ন্যাসির কথা।কারণ এটা উদয়ের জানা উচিত।আজ না হয় কাল ঠিক ই জানবে তখন আরো বেশী ভুল বুঝবে অনুকে।বিগত দু’মাসে হাজার বার চেষ্টা করেও অনু উদয়ের সাথে কথা বলতে পারেনি।অনুরর নাম্বার ব্লক করা। অনুকে দেখলেই উদয় সেখান থেকে চলে যায়।অনু নিজেও জানেনা সে কি করেছে।
“অনু ভয় ভয় মন নিয়ে বললাম উদয় আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।”
“কি বলবি তুই।তোর কোনো কথা শুনতে রাজি নই আমি।”
“এ কথাটা যে শুনতেই হবে উদয়।এটা না বললে ভীষণ অন্যায় হবে।”
“উদয় রাগান্বিত চোখ নিয়ে তাকালো।”
“আমি মা হতে চলেছি উদয়।”
কি বললি তুই মা হতে চলেছিস।পুরা কথাটা না শুনেই উদয় আমাকে প্রচন্ড মাইর শুরু করে।পুরা শরীর রক্তাক্ত করে ফেলে।নেশা অবস্থায় উদয়ের হয়তো খেয়াল ই নেই ও একটা মানুষ কে মারছে।উদয় মারতে মারতে নিজের সমস্ত রাগ ঝাড়তে লাগলো।যে উদয় আমার জন্য মানুষ কে মারতো সে আজ আমাকেই মারছে।
“প্লিজ উদয় আমাকে এভাবে মেরো না।তাহলে বাচ্চাটার ক্ষতি হবে।আমি ওকে পৃথিবীতে আনতে চাই।”
“কিসের বাচ্চা কার বাচ্চা।কার পাপ পেটে নিয়ে আমার ঘাড়ে উঠেছিস।চরিত্রহীনা নারী লজ্জা করে না জারস সন্তান পেটে নিয়ে বাসর ঘরে নিজের স্বামিকে বলছিস তুই প্রেগন্যান্ট। পৃথিবীতে তুই কি একমাত্র মেয়ে যে বাসর ঘরে অন্যর পাপের চিহ্ন নিয়ে নিজের স্বামিকে বলে সে প্রেগন্যান্ট। যার বাচ্চা সে কি এই বাচ্চাটা পেটে দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।সেই পাপ তুই আমার ঘাড়ে চাপাতে চাস”
“উদয় আমার কথা শোনো।”
“চুপ!একদম চুপ।তোর কি লজ্জা বলে কিছুই নেই।আমার জীবন টা এভাবে নষ্ট করে কি শান্তি পেলি বল।আমি কাল ই সবাই কে ডেকে বলবো তোর এই চরিত্রহীনার আসর রূপ।তোর বাবার নাম্বার দে তাকেই আগে বলি।”
“উদয় অনেক বলেছো আর না।এই বাচ্চা আর কারো না তোমারি।”
“আমারি!সিরিয়াসলি।বিয়ে হলো আজ আমাদের আমি তোকে স্পর্শ করার আগেই তুই মা হয়ে গেলি।অভিনয় টা ভালো ছিলো কিন্তু গল্পের থিম টা ভালো মেলে নি প্রেয়সী।এই বাচ্চা যে তিহান এর আমি কি জানিনা ভেবেছিস।আমি সব কিছু নিজ চোখে দেখেছি।”
“উদয় মনে করে দেখো ভাল ভাবে।এ বাচ্চা তোমার ই উদয়।ছিঃতিহান ভাইয়ার কেনো হবে এ বাচ্চা।আমাকে এত বড় অপবাদ দিও না।”
“একটা মিথ্যা বলবি না আর তুই।তুই এক্ষুণি বেরো এ বাড়ি থেকে।”
“উদয় এ নেশাক্ত অবস্থায় তোমার কিছুই মনে নেই।নেশা কাটুক মনে পড়বে।”
“আমি সামান্য একটু ড্রিংক্স করেছি তার মানে এটা নয় আমার কিছুই মনে পড়বে।”
“উদয় আজ ও তুমি নেশাক্ত সেদিন ও নেশাক্ত ছিলে তার ই ফল এটা।”
ফ্লাশ ব্যাকঃ
“ছোট বেলা থেকেই উদয় অনুকে পছন্দ করে।অসংখ্য বার প্রপোজ ও করেছে কিন্তু অনু কোনদিন উদয় কে পছন্দ করতো না।উদয় কে কেনো অনু পছন্দ করতো না সেটা উদয় নিজেও জানে না।অনু ও নিজেই বুঝতো না কেনো তার উদয় কে পছন্দ নয়।ছোট বেলা থেকে ডিস্টার্ব করতো বলে অনুর একটা বিরক্তি ছিলো উদয়ের প্রতি।উদয় আর অনু এক পাড়াতেই মানুষ হয়েছে।পাশাপাশি তাদের বাসা।উদয়ের মা বাবার ও অনুকে পছন্দ ছিলো অনেক।উদয় আর অনুর বিয়েতে সবাই রাজি থাকলেও শুধু অনু রাজি ছিলো না।অনুর মা বাবা হাজার বার বুঝালেও অনু কখনো রাজি হয় নি বিয়েতে।দুই পরিবারে অত্যান্ত ভালো রিলেশন। এই বিয়েটা নিয়ে ছোট বেলা থেকেই কথা হচ্ছে।কিন্তু অনুর জন্য কিছুই হয় নি।সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো।বাইরে প্রচুর বজ্রপাত হচ্ছিলো।কাল বৈশাখী ঝড়ের দিন ছিলো সেদিন।অনু ভিজতে ভিজতে উদয়ের বাড়িতে গেছিলো।অনু উদয়ের বাড়ির সামনে আসতেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়।সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলো না।অনু ভিজে খুব কাঁপছিলো এইদিকে কারেন্ট ও ছিলো না।অনু উদয় দের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।এমন সময় উদয় এসে অনুর পাশে দাড়ায়।উদয় বলে একি অনু তুমি এখানে।উদয়ের কথা গুলো কেমন জানি লাগছিলো।অনু বুঝতে পেরেছিলো উদয় নেশা করেছে।এমন সময় বাইরে প্রচন্ড জোরে বজ্রপাত হয়।অনু ভয়ে উদয় কে জড়িয়ে ধরে।অনুর ভেজা শরীর দেখে নেশাক্ত উদয় মাদকতায় হারিয়ে যায়।অনুকে নিজের সাথে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে।অনু জোর করেও নিজেও সরাতে পারে নি।উদয় সেদিন হারিয়ে গেছিলো অন্য জগতে।অনুর উদয়ের সেদিন শারিরীক সম্পর্ক হয়ে যায়।অনু উদয়ের হাত পা ধরে অনুরোধ করেছিলো কিন্তু উদয় কোনো কথায় সেদিন শোনেনি।সেদিন ঝড় বৃষ্টি শেষ অনু কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে।কিন্তু কাউকে বলতে পারে নি সে রাতের কথা।
এর পর অনুর প্রেগ্ন্যাসি ধরা পড়ে।অনু রিপোর্ট টা পাওয়ার পরে উদয়ের বাবা কে বলে কাকু আমি উদয় কে বিয়ে করতে রাজি আছি।আপনি আজ ই বিয়ের ব্যবস্হা করূন।উদয়ের বাবা সেদিন অবাক হয়ে যান সত্যি কি অনু বিয়েতে রাজি।এত দিন অনুরোধ করার পর ও তো অনু রাজি ছিলো না।উদয়ের বাবা অবাক হয়ে বলে মা অনু তুমি আজ হটাত রাজি আমি কিছুই বুঝতে পারলাম।অনু প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট টা উদয়ের বাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে কাকু আমি মা হতে চলেছি উদয়ের সন্তান এর।পৃথিবীতে যে কোনো মেয়ে হলে হয়তো এ বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতো।কিন্তু আমি পারবো না।আমার পেট থেকে উদয়ের চিহ্ন আমি মুছে ফেলতো পারবো না।আমি আমার বেবির উপস্হিতি অনুভব করতে পারি।আমি উদয়ের পরিচয়ে আমি ওর জন্ম দিতে চাই।অনু যে মিথ্যা বলার মেয়ে নয় সেটা উদয়ের বাবা জানে।অনু সেদিন রাতের ঘটনা খুলে বলে উদয়ের বাবা কে।উদয় সেদিন বিয়েতে রাজি ছিলো না।অনুর প্রতি এত টা পাগল থাকার পরেও হঠাত উদয়ের কি হয়েছিলো।অনুর প্রতি তীব্র ঘৃণা।এই ঘৃণার কারণ কারো জানা নেই।
উদয়ের বাবা বিয়ের প্রস্তাব দিলে উদয় এক বাক্য না করে দেই।কিন্তু উদয়ের বাবার জোরাজুরিতে সেদিন উদয় বিয়ে করতে বাধ্য হয়।কারোর কাছে বিষয় টা ক্লিয়ার না উদয় কেনো বিয়ে করবে না।অবশেষে বিয়েটা হলেও উদয় অনুকে সহ্য করতে পারছে না।এমন কি বাচ্চাটাও সে নিজের বলে স্বীকার করতে চাইছে না।”
ফ্লোরে পড়ে গোঙড়াচ্ছে অনু।পুরা শরীর কেটে গিয়েছে।ছট ফট করছে ব্যাথায়।উদয় একের পর এক সিগারেট টেনেই যাচ্ছে।
হঠাত উদয়ের খেয়াল হলো অনু সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।উদয় অন্য দিকে ঘুরে অনুর হাতে একটা মলম দিয়ে বলে এটা সিনেমা পাও নি যে মেরে আবার আদর করে মলম ওষুধ লাগিয়ে দিবে।মনে চাইলে এটা লাগিয়ে নিও।আর যারা তোমাকে এ বাড়িতে এনেছে তাদের বলো তোমার দায়িত্ব নিতে।উদয় চৌধুরি তোমার দায়িত্ব কখনোই নিবে না।গুড নাইট।
চলবে,,