হৃদয় সমর্পণ,পর্ব: ২

0
3801

হৃদয় সমর্পণ,পর্ব: ২
Writer: Mou Ahmed

ফুলসজ্জা মানে প্রতিটা মেয়ের কাছে বিশেষ আর স্পেশাল রাত কিন্তু অনুর কাছে ছিলো কালরাত্রী।উদয় ফুল দিয়ে সাজানো বিছানা টা তছনছ করে ফেলে।সমস্ত ফুল গুলো ছিড়ে একাকার করে পুরা রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।রুমের জিনিস পত্র ভাঙা চোরা করে।অনুকে প্রচন্ড মার ধোর করে। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে ফ্লোরে পড়ে রইলো অনু।

উদয় চোখ রাঙানি দিয়ে বললো,

”ওষুধ লাগিয়ে নে।ওষুধ না লাগিয়ে কি প্রুভ করতে চাস বাসর ঘরে তোর স্বামি তোকে টার্চার করেছে।আমি নারী নির্যাতনকারী।কি এসব প্রুভ করতে চাস তো।দুনিয়ার সবার কাছে আমাকে খারাপ প্রমানিত করতে চাস এটাই তোর উদ্দেশ্য।আমার নামে মামলা করে কি কাবিনের টাকা উদ্ধার করবি।এই টাকার জন্য ই তো তুই বিয়ে টা করেছিস।তিহানের বাচ্চা আমার বাচ্চা বলে দাবি করে আমার সাদাসিধা বাবার মাথাটা খেয়েছিস।মেয়ে মানুষের গায়ে হাত তোলা পুরুষ দের আমি ঘেন্না করি।কিন্তু আজ আমাকে তুই বাধ্য করলি এমন জঘন্য কাজ করতে।আমি কি কারনে এমন করছি সেটা তো কেউ জানতেও পারবে না।”

অনুর উদয় কে এই মুহুর্তে কিছুই বলার সাহস নেই।পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরে কাঁদছে শুধু।

উদয় বলে,,,,,,,,,,,,

” এভাবে কেঁদে আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করা যাবে না অনু।ভাবিস না এভাবে কাঁদলে আমি নিজেই ওষুধ টা লাগিয়ে দিবো।তোর এই কষ্ট পেতে দেখে আমার অনেক আনন্দ লাগছে।মনে করে দেখ এভাবে আমি কত কেঁদেছি তুই আমার ইমোশন এর কোনো গুরুত্ব ই দিস নি।সেদিন আমার ও এমন ই কষ্ট হতো।”

রাগ করতে করতে নেশাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়লে উদয়।বেডের এক সাইডে হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে সুয়ে আছে উদয়।কোনো হুঁশ নেই। অনু ব্যাথায় কোকাতে কোকাতে অনেক কষ্টে উদয় কে ঠিক করে সুইয়ে দিলো মাথার নিচে বালিস দিয়ে দিলো।উদয় এর গায়ে একটা চাদর দিয়ে দিলো।উদয় সুয়ে আছে একটা বাচ্চার মতো।মুখ টা দেখতে অনেক ইনোসেন্ট লাগছে।অনুর চোখের পানি উদয়ের মুখে টপ টপ করে পড়লো।রুমের সমস্ত ফুল গুলো ঝাড়ু দিয়ে একজায়গা করে অনু একটা অড্রপের ড্রয়ারে রেখে দিলো।কেনো যেনো বাসরের ফুল গুলো ফেলতে ইচ্ছা হলো না।রুমের ভাঙা চোরা জিনিস গোছাতে গিয়ে অনু একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলো।অনুর মাথার একটা কাটা ও পড়ে আছে।আজ থেকে ২ বছর আগে অনু চুল খোপা করে চুলের কাটা দিয়ে বেঁধেছিলো। উদয় সেই কাটা টা খুলে অনুর চুল গুলো খুলে দিয়েছিলো।খোলা চুলে অনুকে প্রাণ ভরে দেখেছিলো উদয়।সেদিন উদয়ের পরনে ছিলো ব্লু জিন্স আর সাদা টি-শার্ট আর অনুর পরনে ছিলো সাদা গাউন।এই চুলের কাটা টা নেওয়ার জন্য অনু অনেক চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু উদয় কিছুতেই দিয়েছিলো না।এই দু’বছর উদয় নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছে।সেদিনের উদয় আর আজকের উদয় অনেক বেশী চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।

উদয় এর এমন কাজ দেখে উদয় কে এখন গুন্ডা বদমায়েশ মনে হলেও উদয় আসলে এমন ছিলো না।বিগত দু’মাসে কি এমন ঘটে গিয়েছে যার জন্য উদয় নেশা শুরু করেছে।অনুকে চোখের বিষ মনে করে।

অনু নিজে নিজে ওষুধ টা লাগিয়ে বালিশ ছাড়া ফ্লোরে সুয়ে রইলো।কখন ভোর হয়েছে অনু জানেনা।উদয়ের অভ্যাস রোজ সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে এক্সসারসাইজ করা।বাবা মায়ের একটাই ছেলে উদয়।লেখাপড়াতে অনেক ভালো। ডাক্তারি পাশ করেছে এবার।মিডিয়াম গড়ন শরিলের, গায়ের রং ফর্সা,স্কুল লাইফ থেকেই চুল একটু বড় রাখতে ভালবাসে উদয়।সিল্কি চুল গুলো কপালে এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকে।রোজ দিনের মতো উদয় আজ ও ভোর ছয় টায় ঘুম থেকে উঠেছে।ঘুম থেকে উঠেই চশমা টা পরে নিচে তাকিয়ে দেখে গুটি সুটি মেরে সুয়ে আছে লাল বেনারসি পরে অনু।মাথার নিচে বালিশ ও নেই।উদয় খেয়াল করে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তের দাগ।উদয় অবাক হয়ে যায় দেখে।এ দাগ গুলা কিভাবে এসছে।উদয় খেয়াল করে বিছানায় অনুর এক কানের দুল পড়ে আছে।উদয় বুঝতে পারে অনু এসছিলো তার কাছে।রাগে অনুকে ডাকতে যাবে ঠিক তখন ই অনুর শরীরে শুকানো রক্ত গুলো দেখতে পাই।উদয় কিছু একটা ভেবে অনুকে আর ডাকে না।

উদয় বুঝতে পারে কাল রাতে অনু তাকে ঠিক করে সুইয়ে দিয়েছে। উদয় ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে জগিং এর জন্য বের হয়।উদয় দেখে দেখে খুব ভোরে কাজের বুয়া বাগান ঝাড়ু দিতে এসছে।উদয় বুয়া কে ডেকে বলে সালেহা খালা শুনো তো।সালেহা খালা বলে উদয় বাবা বলো।খালা অনুর ফ্লোরে সুয়ে আছে ওর গায়ে একটা চাদর দিয়ে দাও আর মাথার নিচে বালিশ টা দিয়ে দাও।সালেহা খালা একটা চাদর আর আর বালিশ দিয়ে অনুর শরীর ঢেকে দেই।

সালেহা খালা ও জানে উদয় অনুকে সহ্য করতে পারছে না।সালেহা খালা অনুর গায়ে কাটা দাগ দেখতে পাই।উদয় এর মুড খারাপ দেখে উদয় কে কিছুই বলে না।অনু আর উদয়ের অনেক ভাল ভাল মুহুর্তের সাক্ষি ছিলো সালেহা খালা।সালেহা খালা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে এত সুন্দর সম্পর্ক টা এভাবে নষ্ট হলো কেনো।বিধাতার কি ইচ্ছা।উদয় বাবা নিশ্চয়ই অনু মায়ের গায়ে হাত দিয়েছে।উদয় বাবা আমাকে দিয়েই কত শত বার অনু মায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিভিন্ন জিনিস পাঠিয়েছে।আমার কাছেও কত কেঁদেছে আর বলেছে খালা আমার অনুকে চাই।অনুকে বোঝাও না প্লিজ।আনুকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।আর আজ সেই উদয় অনু মায়ের গায়ে ও হাত তুলছে।

মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল এটার জ্বলন্ত উদাহরণ বুঝি উদয়।

সকালে গোসল উদয় বাগানে জগিং করছে।জগিং করে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। উদয় টাওয়াল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে দেখে অনু এখনো সুয়ে আছে।উদয় ওয়াশ রুমে প্রবেশ করে আলমারি থেকে একটা ট্রাউজার আর গেঞ্জি নিয়ে।সাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে উদয়।কাল রাতে নেশাক্ত অবস্থায় অনুকে প্রচন্ড মাইর ধোর করার জন্য নিজের কাছেই নিজের খারাপ লাগছে উদয়ের।সাওয়ার ছেড়ে আধা ঘন্টা দাঁড়ানোর পর ওয়াশ রুম থেকে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বেরোলো উদয়।উদয়ের চুলের পানি অনুর চোখে মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো অনুর।অনুকে সজাগ হতে দেখে থমকে যায় অনু।

অনু ফ্লোর থেকে উঠতে পারছে না। পুরা শরীর ব্যাথা।উদয়ের হেল্প করতে ইচ্ছা করলেও অনুর প্রতি ঘৃনা উদয় কে এগোতে দিচ্ছে না।অনু সোফা ধরে কষ্ট করে উঠলো।অনু উদয় এর দিকে ক্লান্তি মাখা মুখ নিয়ে তাকালো।উদয় বুঝতে পারছে অনু তার দিকে তাকিয়ে আছে বুঝেও উদয়ের চোখ অন্যদিকে।টাওয়াল টা বেডে ফেলে দিয়ে ট্রাউজারের দুই পকেটে হাত গুজে স্ট্রং দাঁড়ালো।

এভাবে ভারী কাপড় আর গহনা পরে কেনো ঘুমোনো হয়েছিলো শুনি।এগুলা পরে ঘুমোনো যায় আদেও।এগুলা চেঞ্জ করে নাও দাঁতে দাঁত চেপে রাগি রাগি কন্ঠে বললো উদয়।

আমি কোনো ড্রেস আনিনি বাসা থেকে।

বিয়েতে তো প্রচুর শাড়ি উঠেছে।সেগুলা আম্মু সব তোমার জন্যই রেখে দিয়েছে।সেখান থেকে নিয়ে নিতে।আম্মু তো বলেই দিয়েছে ওগুলো সব তোমার।

হুম চেয়ে নিবো।

কাল রাতে আমার মাথার নিচে বালিশ গেলো কিভাবে।

আমি দিয়েছিলাম।

হাউ ডেয়ার ইউ।হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মি।বলেই উদয় দাঁতে দাঁত চেপে অনুর দিকে তেড়ে এলো।তুমি কোন সাহসে আমাকে স্পর্শ করেছো।আমার গা ঘিন ঘিন করছে এটা ভাবতে যে তুমি আমাকে স্পর্শ করেছো।পরিণতি অনেক ভয়াবহ খারাপ হবে ভবিষ্যতে আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে।স্পর্শ করতে হলে তোমার পেটের এই পাপের ফসল যার তার কাছে যেও।ছিঃআমি ভাবতেও পারছি না অন্যর অপবিত্র ফসল নিয়ে আমার ঘরে তুমি।বাবা আমার কথা বিশ্বাস করবে না জানি। কিন্তু যেদিন সত্যি টা জানবে সেদিন বুঝবে।

কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলতে তুলতে অনু বলে প্লিজ উদয় নিজের অনাগত সন্তান কে এভাবে অপমান করো না।

সিরিয়াসলি! বাচ্চা কিভাবে হয় আমি কি সেটা জানিনা।নাকি আমি অবুঝ। আমার কিছুই বোঝার ক্ষমতা নেই।অনু আমি নিজ চোখে দেখেছি তোমাকে আর তিহান কে।

কি বার বার তিহান তিহান করছো।কে তিহান কিসের তিহান।তিহান এর সাথে বার বার আমার নাম টা কেনো জুড়ে দিচ্ছো।সে আমার বড় ভাই এর মতো।

স্টপ ইট অনু।আর নেওয়া যাচ্ছে না।

এমন সময় সালেহা খালা নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাকতে এলো অনু আর উদয় কে।অনু খালাকে বলে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।খালাকে একটা সুতি শাড়ি দিয়ে যেতে বলে।সালেহা খালা একটা লাল হলুদ প্রিন্টের শাড়ি এনে দিলো।অনু শাড়ি টা পরে নিচে গিয়ে উদয়ের মা বাবাকে সালাম করলো।উদয়ের মা বলে অনু এভাবে ঝুঁকে সালাম করো না। তুমি অসুস্থ এভাবে ঝুঁকো না।নাস্তার টেবিলে অনু, উদয়ের মা, বাবা বসে আছেন উদয়ের জন্য।

এমন সময় উদয় রেডি হয়ে ফোন চাপতে চাপতে বেরিয়ে গেলো।উদয়ের বাবা বলে কোথায় যাচ্ছো নাস্তা না খেয়ে উদয়।

উদয় বলে ওই মেয়েটার সাথে নাস্তা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

উদয় বাড়াবাড়ি টা একটু বেশী করছো তুমি।তুমি অনুর সাথেই নাস্তা খাবে।

উদয় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here