হৃদয় সমর্পন,পর্ব-১৩
Writer: Mou Ahmed
হসপিটালে উদয়ের হাত ধরে বসে আছে অনু।উদয়ের এক্সিডেন্ট এর কারণ জানতে চাইলে উদয় বলে সে অনুকে অনেক অত্যাচার করেছে অনুকে আঘাত করেছে ব্যাথা দিয়েছে যেটা উদয় কে মানসিক শান্তি দিচ্ছিলো না।অনুকে দেওয়া আঘাত নিজে নিতেই উদয় এক্সিডেন্ট করেছে।উদয়ের মুখ থেকে এ কথা শুনে অনু আরো ভেঙে পড়েছে।অনুর চোখের পানিতে উদয়ের হাত ভিজে যাচ্ছে।দুজনের কারো মুখে কোনো কথা নেই।উদয় অনুকে বলে আমার বেবি কেমন আছে।আমার বেবি কথাটা শুনেই অনুর মনে প্রলয় শুরু হয়।এই কথা টা শুনবে বলে অনু এত কষ্ট সহ্য করেছে।
কাল রাতে একটা প্রেসেন্ট তার বডির একটা সমস্যা দেখাতে ভিডিও পাঠিয়েছিলো।আমি গ্যালারিতে ভিডিও দেখতে গিয়ে হঠাত একটা ভিডিও চোখে পড়লো।আমার অজান্তে কখন এই ভিডিও হয়েছে আমি নিজেও জানিনা।ভিডিও টা দেখে আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো।অনু আমি কখনো এই কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না।সে রাতে তোমার আমার মাঝের ঘটে যাওয়া ঘটনা আমি জানিনা কিভাবে আমার ফোনে ভিডিও হয়ে গেছিলো।অনু আমি তখন ই নিশ্চিত হয়েছি সব অপরাধ আমার।তোমার গর্ভে আমার ই সন্তান বড় হচ্ছে।অনু আমি খুব খারাপ এই খারাপ আমিটার তোমার উপর কোনো অধিকার নেই।আমার সন্তান তো পেটে থেকেই জেনে গিয়েছে ওর বাবা কত টা খারাপ বাবা।ওর জন্মের আগেই আমি মরে যেতে চাই,, সারাটা জীবন তুমি আর আমার সন্তান আমাকে অপরাধীর চোখে দেখবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।অনুকে কথা গুলো বলার সময় উদয় খুব কাঁদছিলো।উদয়ের কাঁন্না দেখে অনু নিজেকে সামলাতে না পেরে অনু ও কেঁদে ফেলে। অনু উদয় কে বলে আমি তো শারিরিক আঘাত পেয়েছি আর তুমি যে মানসিক আঘাত পেয়েছো।শরীরের আঘাত সহ্য করা যায় কিন্তু মনের আঘাত সহ্য করা যায় না।অনু কাঁদতে কাঁদতে উদয় কে বলে উদয় আই এম সরি উদয়।সব কিছুর জন্য আমি দায়ী।সম্পর্কে কখনো তৃতীয় পক্ষকে পারসোনাল কথা বলতে নেই।উদয় ওই তিহান আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে এত কিছু করেছে।তোমাকে কষ্ট দিয়েছে।আমি কখনো ভাবতে পারি নি যে তিহান এত টা শত্রুতা করবে আমাদের সাথে।আমি জানতাম না তিহান তোমাকে খারাপ ভিডিও এডিট করে দিতো উদয় আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে এতদিন তুমি মানসিক ভাবে কতটা যন্ত্রণা সহ্য করেছো।মনের যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না এটা খুব কষ্টের ব্যাপার।আমি আমার রাগ,অভিমান,কষ্ট সব ভুলে গিয়েছি।
বিচ্ছেদের পরেও যে ভালবাসা ফিরে আসে সেটা হলো শুদ্ধতম ভালবাসা।রাগ,অভিমান আছে বলেই হয়তো ভালবাসার গভীরতা বোঝা যায়।সত্যিকারের ভালবাসা একদিন না একদিন ঠিক ই সব ভুলবোঝাবুঝি মিটিয়ে পরস্পরের কাছে আসে।উদয় আর অনুর মাঝের সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলো অবশেষে।
অনু উদয়ের কাছে জানতে চাইলো সেদিন এমন কি হয়েছিলো যার জন্য উদয় এতটা ভুল বুঝেছিলো।উদয় তখন অনুকে সেই কালরাত্রীর বর্ণনা দিয়ে দিলো।
তিহান সেদিন আমাকে বলেছিলো তুমি তিহান কে ভালবাসো আর তিহানের সাথে দেখা করবা।তিহান আমাকে ফোন দিয়ে নিয়ে গেছিলো সেদিন আমি তোমার মুখে অনেক হাসি দেখেছিলাম।তোমাকে তিহানের সাথে দেখে মেনে নিতে পারিনি।তিহান সাথে সাথে আমাকে একটি ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছিলো।যেটা এডিট করা ছিলো আমি বুঝতে পারি নি।তাছাড়া তোমার লেখা স্পষ্ট হাতের লেখার চিঠি দেখে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্যহয়েছিলাম।
অনু কাঁদতে কাঁদতে উদয় কে বলে সেদিন সেই হাসিটা তোমার জন্যই ছিলো পাগল।আমি তিহান কে বলেছিলাম তিহান যেনো তোমাকে জানিয়ে দেই তোমার অনু তোমাকে ভালবাসে।
দুজনের চূড়ান্ত ভুল বোঝাবুঝি শেষে উদয় সুস্থ হলে বাড়িতে ফিরলো দুজন।পরিবারে অনেক দিন পর আনন্দের উল্লাস শুরু হলো।ফ্যামিলর সুখ শান্তি ফিরে আসাতে উদয়ের বাবা বাড়িতে একটা ছোট্ট দোয়া অনুষ্টানের আয়োজন করলো।উদয় অনুর জীবনের সুখ শান্তি কামনা করে দোয়া করলো সবাই।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অনু।উদয় অনুর হাত ধরে বলে অনু বেষ্ট বাবা আর বেষ্ট হাজবেন্ড হয়ে দেখাবো দেখে নিও।অনু হেসে দিয়ে বলেএ তুমি সব সময় ই বেষ্ট ফর কি।অনু নিজের পেটে হাত দিয়ে বলে এই পুচকু তোর বাবা তোকে খুব ভালবাসে তাইনা।উদয় অনুর পেটে কান পেতে বলে অনু পুচকু খুব হ্যাপি আজ জানো।পুচকু বুঝে গিয়েছে ওর বাবা ওকে খুব ভালবাসে।
সেদিন উদয় আর অনুর কথার মাঝে ইফা উপস্হিত হয়।বিষয় টাতে অনু খুব ই বিরক্ত।অনু কিছুই না বলে চুপ হয়ে মুখ অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।উদয় ইফা কে বলে কিছু বলবে।ইফা উদয় কে বলে আমার শরীর টা খুব খারাপ একটু দেখে দিবে।উদয় বলে কি সমস্যা জ্বর নাকি অন্য কিছু।ইফা বলে তুমি তো ডাক্তার একটু ভাল ভাবে চেক করে দেখো না কি হলো।উদয় বলে সিরিয়াস কিছু হলে ভাল ডাক্তারের কাছে যাও আমি তো আর সব কিছু বিশেষজ্ঞ না।ইফা বলে তুমি একটু যাবে প্লিজ।উদয় বলে কাল সকালে বাড়ি চলে যেও তারপর নিজের ফ্যামিলির সাথে ডাক্তারের কাছে যেও।কিছু মনে করো না অনু এখন অসুস্থ আমরা এখন বাড়তি মানুষ চাইছি না আমাদের ফ্যামিলিতে।তাছাড়া আত্মীয় বাড়ি বেশী দিন এসে থাকাটাও ঠিক নয়।আর হ্যাঁ ইফা তোমাকে পুলিসে দেওয়া হয় নি এটাই অনেক বড় ব্যাপার।সিঁড়িতে তেল ফেলে অনুর ক্ষতি করতে চেয়েছিলে তুমি।তুমি কি ভেবেছো আমি সব টা ভুলে গিয়েছি।আমি কিছুই ভুলি নি।কেনো করেছো এগুলা উত্তর দাও।
অনুকে কষ্ট দিতে করেছি।আর যা করেছি বেশ করেছি।অনুর জন্য আমি তোমার ভালবাসা পাই নি উদয়।আমি তোমাকে চাই উদয় ভীষণ ভাবে চাই।এই জীবনে আমার তোমাকে চাই।অনু ইফার গালে একটা থাপ্পড় মেরে বলে তুমি কি ভেবেছো আমি কিছুই জানিনা।তিহানের সাথে মিলে সব টা তুমি করেছো।আমার আর উদয়ের সব অশান্তির মূলে তুমি রয়েছো।দেখো ইফা আমি আর উদয় আজ এক হয়ে গিয়েছি।আর চাইলেও কেউ আমাদের জীবনে অশান্তি করতে পারবে না।
ইফা রাগে অপমানে ফুশতে ফুশতে উদয়দের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
এইদিকে অনু গাল ফুলিয়ে আছে।উদয় অনুকে কোলে নিয়ে রুমে নিয়ে যায়।অনুর একটা মাথা ধরেছে। উদয় অনুর মাথায় হালকা একটু নারকেল তেল দিয়ে মাথায় চিরুনি দিয়ে চুল বেনি করতে করতে বলে অনু আমার মন এর মাঝে খুব অশান্তি হয় সব সময়।
অনু বলে কেনো?
অতীত।সব সময় আমার অতীত মনে পড়ে।
অনু উদয়ের দিকে ঘুরে উদয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে উদয় এর বুকে মাথা দিয়ে বলে জানো আমার এখন সব সময় খুব ই শান্তি লাগে।কারণ এই বুকটায় মাথা রাখতে পারি।আগে কি হয়েছিলো সব ভুলে গিয়েছি।আমার এখন তুমি আছো এতেই আমি খুশি জানপাখি।উদয় অনুর মাথায় থুতনি ঠেকিয়ে বলে অনু তুমি আছো বলেই জীবন টা এত সুন্দর। এইজন্য ছোট বেলা থেকে আমি শুধুই তোমাকেই ফলো করতাম।
অনু বলে আমাকে ফলো করতে শুধু মাঝে মধ্য যে আমার ব্যাগ থেকে টাকা ও চুরি করতে সেগুলা ফেরত দাও।তুমি প্রায় আমার টাকা চুরি করতে। উদয় বলে ওয়েট টাকা দিচ্ছি।
উদয় আলমারি খুলে অনুর থেকে নেওয়া সব টাকা গুলো বের করে দেখালো।সব টাকার গায়ে লেখা আই লাভ ইউ অনু।অনু টাকা গুলো গুনে হিসাব করলো ২ টাকা থেকে শুরু এক হাজার টাকার নোট সব ই আছে।অনু গুনে দেখলো আঠারো হাজার দুইশত টাকা মোট হয়েছে।
অনু উদয় কে বলে এইভাবে টাকা গুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছো।উদয় অনুর গাল ধরে বলে তুমি নিজেই তো একটা যত্নের মানুষ আমার কাছে।
চলবে,,,,