নিয়তির সংসার,পর্ব_০১

0
4318

নিয়তির সংসার,পর্ব_০১
Mst Liza

এই নিয়ে সপ্তম বারের মতো পাত্র পক্ষের সামনে এসে বসলাম আমি।মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন সকলে আমায়।ইচ্ছা করছে এক্ষুণী না বলে দিয়।কিন্তু মাথাটা ঘুরিয়ে পাশে বাবার অসহায়রত মুখটা দেখে পারলাম না কিছু বলতে।আমি অনেক চেস্টা করলাম বাবাকে বোঝাতে বাবা বুঝলেন না।এক প্রকার জোড় করে নিজের মাথার দিব্যি দিয়ে এবার আনলেন আমায়।আরও বেশি ধাক্কা খেলাম তখন যখন জানতে পারলাম পাত্রের পূর্বে এক স্ত্রী ও সন্তান আছে।

আমি আদিবা। বয়স ৪৫। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আমি।যখন যা চেয়েছি তখন তাই পেয়েছি।স্কুল কলেজে সুন্দরী মেয়েদের লিস্টে ছিলো আমার নাম।সৌন্দর্যের পাশাপাশি অত্যন্ত স্মার্টও ছিলাম আমি।এমনকি এখনো সবকিছু সাজানো গোছানো এবং পরিপাটি পেতে পছন্দ করি।কোনো কিছু নিজের মনের মতোন না পেলে সব কিছু এলোমেলো করো ফেলি।সেই আমার জন্য বাবা এমন পাত্র এনেছে শুনে কস্টে আর রাগে মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।

পাত্র পক্ষ চলে যাবার পর সবকিছু ভাঙচুর করতে লাগলাম আমি।বাবা আমার রুমের দরজার কাছে এসে দাড়ালে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে জানতে চাইলাম আমি কেন এমন পাত্র আসলো আমাকে দেখতে। বাবা নিরবে মাথাটা নিচু করে জবাব দিলেন আমায়,

-তুমি যখন স্কুল শেষে কলেজে পা রেখেছো তোমার জন্য একটার পর একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো তুমি বিয়ে করতে চাও নি।বলেছো তুমি সুন্দরী।হাজার হাজার ছেলে পাগল তোমার জন্য।লেখাপড়া শেষে নিজের পায়ে দাড়ালে আরও ভালো প্রস্তাব আসবে তোমার জন্য। কিন্তু আমরা জানতাম আজকের এই দিনটা আসবে।তোমার মা বলতো এমন একটা দিন আসবে যেদিন কোনো প্রস্তাবই আসবে না।আজ দেখও সেই দিনটা এসেছে।তোমার মাথার চুলও পাকতে শুরু করেছে।গত এক বছরে যতোগুলো প্রস্তাব এসেছে তোমার জন্য প্রত্যেকেই ডিভোর্সি।এই ছেলেটার স্ত্রী মারা গিয়েছে।একটা ছোট মেয়ে আছে।তাই একে তোমার উপযুক্ত মনে হয়েছে আমার কাছে।বাবা হিসেবে চাইবো তুমি এই ছেলেটাকে বিয়ে করে নেও।

বাবার কথা শুনে আমি পাগল হবার উপক্রম।বাবার হাত টেনে নিজের গলাটা চেপে ধরে বললাম আমি,

-আমাকে মেরে ফেলো তুমি।আমাকে তুমি কখনো ভালোই বাসো নি বাবা।আজ মা বেঁচে থাকলে আমাকে ঠিক বুঝতো। আমি কি কখনো তোমায় বলেছি আমার বিয়ে দাও? আমি সারাজীবন কুমারী থাকবো তবুও এমন ছেলে বিয়ে করবো না।

কথাটা চিৎকার করে বলে রেগে বাবাকে এক ধাক্কায় কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলাম।বাবা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি বাবার মুখের সামনে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।

সারাদিন রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছি।ঘড়ির কাটায় রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। ডিনার এনে বাবা আমার রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে ডাকছেন আমায়।আমি উঁচু গলায় বললাম,

-দরজা খুলবো না।চলে যাও এখান থেকে।

কথাটা বলার পর বাবার কান্নার শব্দ এলো আমার কানে।কান্নামাখা গলার কন্ঠস্বরে বলল বাবা,

-আমার বয়স হয়েছে।বেশীদিন বাঁচব না আদিবা।মৃত্যুর আগে তোমাকে একটু স্বামী সংসার নিয়ে সুখী দেখে যেতে চাই।শুনেছি তোমার বন্ধু বান্ধবদের ছেলে মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে।আমার চিন্তা হয় তোমার জন্য।তাই তোমাকে নিয়ে ভাবি।আমাকে আর কস্ট দিও না আদিবা।দয়া করে দরজাটা খোলো। খাবারটা খেয়ে নাও।একদিন দেখবে তোমার মায়ের মতোন আমিও মরে গিয়েছি।সেদিন বুঝবে বাবা কেন এমন করছে।

বাবার মুখে মারা যাবার কথাটা শুনে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। মুহূর্তে নিজেকে নিঃস্ব অনুভব করতে লাগলাম। যেন সব রাগ চলে গেলো আমার।ভাবতে লাগলাম সত্যিই তো বাবা আমার একমাত্র ছায়া।সে না থাকলে তখন কি হবে আমার?

কিছুক্ষণ ভাবার পর ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।দেখলাম বাবা নেই।খুঁজতে খুঁজতে বাবার রুমে গিয়ে দেখতে পেলাম বাবা উল্টো দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে। মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করলো আমার।বাবাকে টেনে ঘুরিয়ে নিয়ে দেখতে পেলাম বাবার চোখে পানি।

হাত উঁচু করে পাঞ্জাবির হাতায় চোখের পানি মুছে উঠে বসলো বাবা।আমি বাবার পা ধরে ক্ষমা চাইলাম আমার ব্যবহারের জন্য। বললাম আর কস্ট দেবো না তোমাকে।বাবা আমায় অনুরোধ সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

-এই বিয়েটা করে নাও আদিবা।

আমি এই মুহূর্তে বাবাকে না বলতে পারলাম না।শুধুমাত্র বাবার খুশির কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।কিছুদিনের মধ্যে বিয়েটা হলো।খুব ধুমধাম ভাবেই হলো।

এখন আমি বসে আছি বাসর ঘরে। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি এমন একটা মানুষকে কিছুতেই নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া চলবে না।দরজা খোলার শব্দে উঠে দাড়ালাম আমি।উনি সামনে এসে দাড়ালেই বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে ছুড়ে মরলাম উনার মুখের উপরে।উনি হতভম্ব হয়ে তাকালে ক্ষিপ্ত মেজাজে বললাম আমি,

-আপনি জানেন ঠিক সময়ে বিয়ে করলে আজ আপনার থেকে হাজার গুণ স্মার্ট ছেলে আমার স্বামী হতো? কি যোগ্যতা আছে আপনার আমার মতো সুন্দরী এবং কুমারী মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পাবার? যান বালিশ দিয়েছি মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ুন গিয়ে। আমি খাটে ঘুমাচ্ছি।

নিজের কথাটা শেষ করে মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় আসলাম। গহনাগুলো খুলে খাটের এক সাইটে লাইন দিয়ে সাজিয়ে রেখে অন্য সাইটটাতে শুয়ে পরলাম আমি।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here