মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ০৮ | ভালোবাসার কষ্টের গল্প

0
3398

মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ০৮
লেখকঃ আবির খান

১৩.
সময়টা এখন গোধূলি বিকেল। তাহসান দুপুরে বেশী খেয়ে ফেলায় রেস্ট নিতে গিয়ে একসময় ঘুমিয়েই পড়ে। সত্যি বলতে ও অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। এই ফাঁকে মাইরা ওর পরিবারের সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে। কিন্তু এখন ও তাহসানের কাছে এসেছে। চুপিচুপি রুমে ঢুকে উঁকি মেরে দেখে তাহসান ঘুমিয়ে আছে। মাইরা আস্তে আস্তে করে তাহসানের পায়ের কাছ থেকে বেডে উঠে উপরে ওর কাছে এসে বসে৷ গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ হয়ে ও তাহসানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে বলছে,

~ ইসস! কি স্বাদের ঘুমটাই না দিছে আমার দেবদাস বরটা। কিইই কিউটটাই না লাগছে। উফফ! মন চায়…(লজ্জা পায়) নাহ থাক। জেগে গেলে শেষ আমি। তবে ওনাকে তো এখন উঠতেই হবে৷ ডাক দি।

মাইরা আস্তে করে তাহসানকে ডাক দিচ্ছে,

~ এই যে..এইই উঠেন। শ্বশুর বাড়ি এসে কেউ এভাবে ঘুমায়? উঠেন…

মাইরার ডাকাডাকিতেও কাজ হয় না। তাহসান গভীর ঘুমে নিমগ্ন। ও একটা বুদ্ধি করে। মাইরা তাহসানের কানের কাছে গিয়ে বলে,

~ তমা আসছে তমা উঠেন উঠেন।
– কই কই? (লাফিয়ে উঠে বলে)

তাহসান ঘুম থেকে উঠে তমাকে খুঁজতে গিয়ে দেখে মাইরা ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসানের বুঝতে বাকি নেই আসলে কি হয়েছে। তাহসান মাথা নিচু করে বলে,

– সরি।
~ রাখেন সরি। আমি কতক্ষণ যাবত ডাকলাম উঠলেন না। কিন্তু যেই ওর নাম নিলাম ওমনি…(মাইরা মন খারাপ করে অন্যদিকে ফিরে বসে থাকে)

তাহসান বুঝতে পারে মাইরা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু ও কি করবে? তমার স্মৃতি যে এত সহজে যাবে না ওর বুক থেকে। ভালবেসেছিলো সত্যিকারের। কিন্তু মানুষটাই মিথ্যে ছিলো। ভালবাসার মিথ্যে অভিনয় করেছে ওর সাথে প্রতিনিয়ত। তাহসান মাইরার পিছনে এসে ওর বাম কানের উপর যে দুষ্টু চুলগুলো পড়ে ছিলো সেগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে আস্তে করে বলে,

– সরিইই। প্লিজ মন খারাপ করো না। তুমি মন খারাপ করলে আমার ভালো লাগে না৷ তোমাকে হাসিখুশী, দুষ্টামি করলে অনেক ভালো লাগে।
~ যান আপনার সাথে আর কথাই নাই। আপনার কাছে তো ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমি তো কিছুই না৷ এখনো ওর নাম শুনে ওকে খুঁজেন আপনি।
– আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে যদি তুমি পাশে থাকো। ওর বিষাক্ত স্মৃতিগুলো হয়তো তোমার নতুন স্মৃতিতে হারিয়ে যাবে। তখন হয়তো তোমার নাম শুনে আমিও ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠবো।
~ সত্যি?
– তিন সত্যি।
~ আমাকে ভাল….না কিছু না।
– তোমাকে কি?
~ না মানে আমার সাথে ছাদে যাবেন প্লিজ? আমার একটা ছোট বাগান আছে। খুব ভালো লাগবে চলেন।

তাহসান হাসি দিয়ে বলে,

– অবশ্যই যাবো। জাস্ট দুই মিনিট সময় দেও।
~ আচ্ছা দিলাম।
– থ্যাঙ্কিউ।

তাহসান লাফিয়ে বেড ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। মাইরা তাহসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,

~ ইসস! যদি আপনাকে বলতে পারতাম, আমাকে ভালবাসবেন? কিন্তু এই প্রশ্ন আমি আপনাকে করতে পারবো না। যদি উত্তরটা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় আমি মরে যাবো। আপনি আমার কল্পনার বাইরেই অনেক কিছু দিয়ে ফেলেছেন। আমি এতেই খুশী আমার দেবদাস বর। (মাইরা মুচকি হাসছে চোখটা মুছে)

তাহসান রেডি হয়ে বাইরে এসে বলে,

– চলো।
~ আচ্ছা।

মাইরা তাহসানকে নিয়ে ওদের বাসার ছাদে যায়। ওদের বাসাটা ৩ তলা। বাড়িটা বড়ো হওয়ায় ছাদটাও অনেক বড়ো। তাহসান ছাদে উঠে পুরো অবাক। এত সুন্দর একটা ছাদ সাথে গোধূলি বিকেল। মিষ্টি গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ ও পাচ্ছে। মাইরা পাশ থেকে বলে,

~ জানতাম আপনার অনেক ভালো লাগবে। আসুন বাগানের কাছে যাই।
– হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।

মাইরা আর তাহসান একসাথে বাগানের কাছে যায়। মাইরা ফুল গুলো দেখছে। তাহসান খেয়াল করে মাইরা ঘন কালো চুলগুলো দক্ষিণা হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। আর হ্যাঁ সব মেয়েদের মতো ওর চুল থেকেও মনকাড়া একটা ঘ্রাণ আসছে। তাহসানের মনটা হঠাৎই অনেক ভালো হয়ে যায়। ও মাইরার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

– তাহলে তোমার প্রিয় শখ বাগান গড়া?
~ উমম ঠিক তা না আবার তাও। আসলে প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে অনেক ভালো লাগে। জানেন এরা কখনো আপনাকে কষ্ট দেয় না, আপনাকে ধোকা দেয় না। এরা সবসময় আপনাকে খুশী ছাড়া আর কিছুই দেয় না।

মাইরার কথা শুনে তাহসান অবাক হয়ে যায়। সত্যিই মেয়েদের বুঝা খুব দায়৷ তারা হাজার রঙের অধিকারী। এইতো এখন মাইরাকে কতটা ম্যাচিউর লাগছে। তাহসানকে চুপ দেখে মাইরা ওর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

~ চুপ হয়ে গেলেন যে? কি হয়েছে?
– না মানে..আসলে ভাবছি। জানো জীবন বড়ো অদ্ভুত! আমরা যখন কাউকে ভালবাসি বা কারো মায়ায় পড়ে যাই তখন ভাবি ওই বুঝি সব৷ কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় সে আর সাথে থাকে না। আল্লাহ তোমার আমার জন্য যে পার্ফেক্ট তাকেই তোমার কাছে এনে দেয়৷ তোমার কাছে আমি কেমন জানি না। কিন্তু তুমি আমার কাছে তুমি একদম পার্ফেক্ট। সত্যিই আল্লাহ যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করে। শুধু শুধু এত দিন মন খারাপ করে ছিলাম। যেটা অনার্থক ছিলো। যে মেয়ে আমাকে কখনো ভালইবাসে নি তাকে হারিয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার সংস্পর্শে এসে বুঝতে পারছি আমি ভুল ছিলাম এত দিন।

মাইরার খুশী দেখে কে। ও মিটমিট করে হাসতে হাসতে তাহসানের একদম কাছে আসে। তাহসান ঘাবড়ে যায়। একটা ঢোক গিলে মাইরার মায়াবী মুখখানা দেখে। মাইরা তাহসানের বুকে দু’হাত রেখে মাথা নিচু করে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে আমতা আমতা করে বলে,

~ তাহলে আমাকে আপনার বউ হিসেবে মেনে নিবেন? আপনার প্রতি আমার যে অধিকার আছে তা দিবেন?

তাহসান মাইরার মুক্তার মতো চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। ও জানে, ও যদি না করে তাহলে মাইরার এই মুক্তার মতো নয়নগুলো নোনা জলে ভিজে যাবে৷ কিন্তু ও আর সেটা চায় না। যে মাইরা ওর অশ্রু মুছে দিয়েছে তার চোখে ওর জন্য অশ্রু আসবে এটা অসম্ভব! তাহসান আস্তে আস্তে মাইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে। মাইরা কেঁপে উঠে। লজ্জায় মেয়েটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। তাহসান এবার বলে,

– যেদিন আমাদের বিয়ে হয়েছে সেদিনই তোমাকে মেনে নিয়েছি। নাহলে কি বিয়ে করতাম। আর রইলো অধিকার, সেটা তো তুমি আদায় করেই নিচ্ছো। হাহা।

মাইরা লজ্জায় তাহসানের বুকে মাথা লুকায়। ওর মন চাচ্ছে ও চিৎকার করে বলুক,

~ আমি আপনাকে অনেক অনেক বেশী ভালবাসি।

কিন্তু মাইরা বলতে পারে না৷ ও চায় তাহসান ওকে আগে বলুক। কারণ তাহসান যদি ওকে ভালোই না বাসে তাহলে ওর ভালবাসা মূল্যহীন। মাইরা সেদিনেরই অপেক্ষায় আছে যেদিন তাহসান নিজ থেকে ওকে বলবে,

– মাইরা আমি তোমাকে ভালবাসি।

মাইরা এসব ভেবে মুচকি হাসছে। আর তাহসান চোখ বন্ধ করে মাইরাকে অনুভব করছে আর মনে মনে ভাবছে, আজ রাতে যে কি হবে কে জানে। হাহা।

১৪.
রাতের খাওয়া দাওয়া করে তাহসান মাইরার রুমে বসে আছে। ও ফোনে অফিসের কিছু ডকুমেন্টস দেখছিলো। আর মাইরা ওর মা আর মামির সাথে গল্প করছিলো। ঘড়িতে এখন প্রায় ১১ টার মতো বাজে। তাহসান কম হলেও দশবার দরজার দিকে তাকিয়েছে। অধীর হয়ে আছে মাইরাকে দেখার জন্য। একটু পরই মাইরার হাসির শব্দ শুনতে পায় তাহসান। ফোনটা অফ করে পাশে রেখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে ও। মাইরা রুমের মধ্যে আসলেও সাথে আসে মামিও। তাহসান ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। মামি ভিতরে না ঢুকে তাহসানের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে মাইরার কানে কানে কি যেন বললো। তাহসান দেখলো মাইরা মুখখানা হঠাৎ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ও মিটমিট করে হাসছে। এরপর মামি তাহসানকে বললো,

~ তাহসান মাইরার খেয়াল রেখো আসি।

বলেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে তিনি চলে যান। তাহসান বোকার মতো তাকিয়ে আছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না৷ মাইরা দরজার খিল লাগিয়ে দিয়ে কেমন লজ্জামাখা মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে আয়নার সামনে গিয়ে বসে। তারপর ওর লম্বা ঘন কালো কেশগুলো খোপা থেকে ছেড়ে দেয়। ঝর্ণার মতো একদম কোমড় পাড় করে ফেলে। এরপর চুলগুলো সামনে এনে আঁচড়াতে থাকে। ফলে পিছন থেকে ওর মসৃণ খালি পিঠটা দেখা যাচ্ছে। তাহসান হা করে তাকিয়ে আছে মাইরার দিকে। ওর মনে হচ্ছে আকাশের সুন্দর চাঁদটা আজ ওর সামনে বসে আছে আর তার সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে৷ মাইরা আয়নায় যে তাহসানের দিকে তাকিয়ে আছে তা ও খেয়ালই করেনি। মাইরার চুল আঁচড়ানো হলে যেই উঠে দাঁড়ায় ওমনি তাহসানের ঘোর ভাঙে৷ ও অন্যদিকে ফিরে তাকায়। মাইয়া আজ চুল না বেঁধেই তাহসানের কাছে এসে বেডে উঠে ওর পাশে এসে বসে। তাহসানের কেমন জানি অন্যরকম একটা অনুভুতি হচ্ছে। মাইরার কাছ থেকে অসম্ভব সুন্দর মনমাতানো একটা সুবাস আসছে। এই সুবাস পৃথিবীর সব পারফিউমকে হার মানাতে পারে। অজান্তেই ওর মাথায় এখন উলটা পালটা অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহসান নিজেকে ঠিক রাখার অনেক চেষ্টা করছে। এত সহজে হার মানলে চলবে না৷ ওর গলাটা শুকিয়ে আসছে। হঠাৎই পাশ থেকে মাইরা বলে উঠে,

~ আপনি ঠিক আছেন? এমন অস্থির হয়ে আছেন কেন? আর ঘামছেন কেন?

তাহসান থতমত খেয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে কপাল মুছে দেখে আসলেই ও ঘেমে গিয়েছে। তাই দ্রুত কপাল মুছতে মুছতে বলে,

– না না কিছু না ঠিক আছি। আসলে তোমাকে চাঁদের মতো সুন্দর লাগছে তো। তোমাকে দেখে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নিজেকে কন্ট্রোলই করতে পারছি না। তাই আর ক…

তাহসান চোখগুলো বড়ো বড়ো করে সামনে তাকিয়ে জিহবায় কামড় দিয়ে বসে থাকে৷ ও মনে মনে বলে,

– হায়! হায়! মনের কথা সব বলে দিলাম! ছিঃ ছিঃ মাইরা এখন কি ভাববে আমাকে। আমি কত খারাপ।

অন্যদিকে মাইরা যেমন অবাক হয়েছে তেমনি খুশীও। ওর প্ল্যান কাজ করেছে। ব্যাটা তাহসানকে ওর রূপের জালে আটকিয়েছে। এখন মাছের মতো ছটফট করছে তাহসান। মাইরা মিটমিট করে হাসছে। ও আর দেরী না করে আস্তে আস্তে তাহসানের একদম কাছে এসে ওর সাথে গা লাগিয়ে বসে বলে,

~ আমাকে দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে আপনার? আসেন মাথাটা স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে ঠিক করে দি।

তাহসান অবাক হয়ে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা হাসছে। ওর হাসি দেখে তাহসানও হেসে দেয়। মাইরা ডান হাত দিয়ে তাহসানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তাহসান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মাইরার দিকে। মাইরা আবার বলে উঠে,

~ এক কাজ করেন আপনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দি।

তাহসান অবাক হয়ে বলে,

– তুমি কিভাবে বুঝলে আমি এটাই চাচ্ছিলাম।
~ আপনার স্ত্রী আমি। এটুকু না বুঝলে আর কে বুঝবে বলেন তো।

তাহসান আর দেরি না করে মাইরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। ওর একটু লজ্জা আর অস্বস্তি লাগছে, আবার অনেক ভালোও লাগছে৷ এটা এক অন্যরকম প্রশান্তি। মাইরা আস্তে আস্তে তাহসানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ওর সিল্কি চুলগুলো টেনেও দিচ্ছে। তাহসান চোখ বন্ধ করে মাইরার সুবাস আর আদর অনুভব করছে। মাইরা আস্তে করে বলে উঠে,

~ আচ্ছা আপনার কাছে ভালবাসা মানে কি?
– ভালবাসা! ভালবাসা একটা অদ্ভুত জিনিস। যার স্পর্শে আসলেও কষ্ট, যার স্পর্শে না আসলেও কষ্ট। ভালবাসা মানেই একরাশ কষ্ট আর বিষাক্ত ব্যথা।
~ ওহ! তাহলে একটা প্রশ্ন করি?
– হুম।
~ ধরুন, আপনার কাছে একটা গোলাপ গাছ আছে৷ গাছটায় সবসময় অনেক সুন্দর সুন্দর সুবাসিত গোলাপ ফোঁটে। কিন্তু একদিন একটা গোলাপ ফোঁটার আগেই নষ্ট হয়ে গেল। আপনি কি পুরো গাছটা ফেলে দিবেন নাকি শুধু সেই গোলাপটাকে?

তাহসান মাইরার দিকে ঘুরে শুয়ে বলে,

– শুধু গোলাপটাকে।
~ কেন?
– কারণ গাছের তো কোন দোষ নেই। এত গুলো গোলাপের মাঝে একটা গোলাপ নষ্ট হতেই পারে তাই।
~ তাহলে পৃথিবীর সব ভালবাসায় যে শুধু কষ্ট আর বিষাক্ত ব্যথা আছে তা কিভাবে? ভালবাসাটা মানুষের উপর নির্ভর করে। কেউ সঠিক মানুষকে ভালবেসে সুখী হয়, আর কেউ ভুল মানুষকে ভালবেসে আপনার মতো কষ্ট আর বিষাক্ত ব্যথা নিয়ে বেঁচে থাকে। এই যে গোলাপ গাছটার কথাই ধরুন, একটা গোলাপ নষ্ট হয়েছে বলে পুরো গাছটা কিন্তু নষ্ট হয় নি। ঠিক তেমনি একজন আপনাকে কষ্ট দিয়েছে বলে অন্যকেউ যে দিবে সেটা কিন্তু না। সে হয়তো আপনাকে অনেক ভালবাসবে, আপনাকে খুশী করার জন্য সব করবে যেমনটা আপনি করেন। শুধু নতুন করে ভালবাসতে হবে। ভালবাসাকে ঘৃণা করলে চলবে না। কাউকে একবার সুযোগ দিতে হবে যে আপনাকে সত্যিই ভালবাসে। অনেক অনেক বেশী ভালবাসে।

তাহসান মাইরার দিকে অবাক পানে তাকিয়ে আছে। ওর চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে সাথে মাইরারও। তাহসান আস্তে আস্তে উঠে মাইরার সামনে বসে। ওর চোখগুলো মুছে দিতে দিতে বলে,

– আমার পিচ্চি বউটা যে এত বুদ্ধিমতী আমি জানতামই না। আমি বুঝতে পেরেছি সবটা। হ্যাঁ আমি ভুল বলেছি। ভালবাসা মানে শুধু কষ্ট আর বিষাক্ত ব্যথা না। ভালবাসা মানে একমুঠ সুখ, যেটা শুধু সত্যিকারের ভালবাসার মানুষটাই দিতে পারে। যেমন…
~ যেমন কি…বলেন?
– বলবো না। হাহা।
~ ধুর! আপনিও না।

মাইরা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে আর তাহসান ওর দিকে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ হয়ে। তাহসান মাইরার গোলাপি মিষ্টি ঠোঁটটার দিকে এখন তাকিয়ে আছে। ওকে খুব টানছে। তাহসান অজানা একটা ভালো লাগা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। মাইরা সেটা বুঝতে পারছে। হঠাৎই মাইরাকে অবাক করে দিয়ে তাহসান আস্তে আস্তে ওর কাছে আসছে। মাইরার হৃদস্পন্দন মুহূর্তেই বেড়ে যায়। তাহলে কি মাইরা যেটা ভাবছে সেটাই হতে যাচ্ছে? তাহসান ওর কাছে এসে ওর দু’গালে হাত রাখে। মাইরা কেঁপে উঠে অজানা উত্তেজনায়৷ ওরা এত কাছাকাছি যে তাহসানের আর ওর নিঃশ্বাস এক হয়ে যাচ্ছে। মাইরা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। তাহসান মুচকি হাসি দিয়ে মাইরার কাঁপা ঠোঁটগুলো….

চলবে..?

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here