রহস্যেঘেরা বাংলো,(পর্ব-০৪)

0
1233

রহস্যেঘেরা বাংলো,(পর্ব-০৪)
লাবিবা ওয়াহিদ

হুজুর বসে আছে আর তার সামনের দুই চেয়ারে বসে আছে আলভি আর মিশু। কিছুক্ষলণ চুপ থেকে হুজুর বলা শুরু করে,

হুজুর- প্রায় ৭৫০বছর আগের কথা। এখানে ৭জন ভাই থাকতো। তারা বেশ সুখি পরিবার ছিলো তাদের ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো না। তারা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী গ্রামের মানুষদের খুব সেবাযত্ন করতো। তাই এলাকার মানুষ খুশি হয়ে তাদের জমিদার করে দেয়। তাতে তারা অনেক টাই লোভী হয়ে যায়। আস্তে আস্তে মানুষের প্রতি সেবাটা কমে যেতে লাগে। এভাবেই দিন যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ আসলো এক বুড়ো লোক। তাদের কাছে অনেক সাহায্য চাইলো কিন্তু উল্টো ভাইরা মিলে তার উপর অনেক অত্যাচার করে। পরে তারা জানতে পারে ওই বুড়ো লোকটি কোনো মানুষ ছিলো না ছিলো আগের জমিদারের আত্না। সেই জমিদার ওদের অভিশাপ দেয় তারা মরার পর কখনোই সুখ অর্জন করবে না। তারপর থেকে তারা ৭ভাই সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতো। এক রাতে ঘুমোচ্ছিলো হঠাৎই তাদের বাড়িতে ডাকাতের হামলা হয়। ৭ভাই তাদের আটকাতে চাইলে তাদের মেরে বিভস্ব অবস্থা করে সেই রাজকীয় রুমে ফেলে রেখে আসে। তারপর তাদের মৃত্যুর খবর পেতেই তাদের আত্নীয়স্বজনরা সেখানে আসে এবং তাদের দাফনের ব্যবস্থা করতে চায় এলাকার কবরস্থানে। কিন্তু এলাকার মানুষ তাদের উপর এতোটাই ক্ষেপা ছিলো যার কারণে তারা ডাইরেক্ট বলে দেয় যে তারা তাদের এলাকায় দাফন করতে দিবে না। আর তখন তো এখন কার যুগের মতো এতো গাড়ি ভেন কিছুই ছিলো না। পায়ে হেটেই তারা এখান থেকে সেখানে যায়। আস্তে আস্তে সময় যত যেতে থাকে তত তাদের লাশে পচন ধরতে শুরু করে তাই আর উপায় না পেয়ে বাংলোর পশ্চিম দিকে কবর দেয় তাদের। তারপর সেটা বড় বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে দেয় যাতে করে সেখানে কেউ না যেতে পারে।

বলেই হুজুর থামলেন।

মিশু- তারপর… তারপর কি হয় হুজুর?

হুজুর- তারপর প্রায় ১০০ বছর পর তারা যেগে উঠে শয়তান অতৃপ্ত আত্না হিসেবে। আর ওই বাড়িতে যেই যায় তাকেই তিলে তিলে ক্ষতম করে দেয়। এভাবেই ২০০শ বছর তারা এমন শোধ ধারী চালায়। তারপর এক হুজুর এসে এই বাড়িতে কিছু পবিত্রতা রেখে যায় তাদের উতপাত কমানোর জন্য কারণ তাদের ক্ষতম করার মতো এতোটা সাহস কারো ছিলো না। তারপর তাদের জোরজবরদস্তি কমে এবং রাত ছাড়া দিনে তারা কারো ক্ষতি করতে পারেনা। তারপর এক লোক এসে বাড়ি টাকে নতুন ঝকঝকে করে যাতে করে সে এই বাংলো টাকে বিক্রয় করতে পারে। এভাবেই একে একে কিনেছে আর মরেছে। এবার হয়তো তোমাদের পালা।

মিশু- ওরা আমার বাবাকেও মেরেছে হুজুর কি করে এদের ধ্বংস করবো হুজুর? আমাদের উপায় বলে দিন।

হুজুর- কি বলছো তুমি এসব মা? এটা জানো কতোটা ভয়ংকর হতে পারে?

মিশু- আমি সব ভয়কেই জয় করতে পারবো ইন শা আল্লাহ। আপনি শুধু উপায় বলে দিন।

হুজুর কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে গেলো পাশে থাকা সেল্ফ টার দিকে। সেখান থেকে একটা পুরাতন বই বের করলো। তারপর সেটা নিয়ে আবার মিশুদের সামলে বসলো। কিছু দোয়াদরুদ পড়ে বই টা খুলে। পাতা গুলো কেমন পোড়া পোড়া আর লেখা গুলাও তেমন স্পষ্ট না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক পুরাতন।

হুজুর- এটা অনেক বছর আগের কিতাব। আমার বাপ দাদা পূর্বপুরুষ রা এটা সংরক্ষণ করে রেখেছিলো। এটা সেই আত্না গুলো পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলো কিন্তু আমার পূর্বপুরুষ এটা তাদের থেকে উদ্ধার করেছিলো। আর তার পরেরদিনই তার কঠিন তম মৃত্যু দেয় সেই ৭ভাই। তারপর তারা খুঁজতে চায় কিন্তু পারেনি কারণ তারা কখনোই বাংলোর বাইরে যায়নি।

মিশু- এটাতে কি আছে হুজুর?

হুজুর- এক আলেম তাদের ধ্বংসের উপায় এটায় লিখে রেখেছিলো। সেটাই এটা।

মিশু- ওহ।

হুজুর- এখানে লেখা আছে তাদের মেয়েদের প্রতি লালসা বেশি। তাই একমাত্র একজন কুমারি মেয়েই পারবে তাদের ধ্বংস করতে। তবে মেয়েটাকে অবশ্যই কুমারি হতে হবে।

আলভি ভয় পেয়ে মিশুর দিকে তাকালো।

আলভি- মানে কি হুজুর মিশুর একা এই লড়াই?

মিশু- আলভি একটু চুপ কর প্লিজ লড়াই টা যদি আমার একারই হয় তাহলে আমি একাই করতে পারবো ইন শা আল্লাহ। হুজুর আপনি ওর কথা শুনবেন না আপনি বলুন।

হুজুর- মেয়েটিকে একটা কালো কাপড় পড়তে হবে। তবে বরকা পড়াই শ্রেয়। পুরো পর্দা করে তাকে রাত ১টায় সেই বাংলোতে একলা এক মোমবাতি নিয়ে ঢুকতে হবে। তারপর সেখান থেকে সোজা সেই রাজকীয় ঘরটায় যেতে হবে। তারপর তবে সেখান পর্যন্ত যেতে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হবে সেগুলা থেকে বাচঁতে হলে তাকে অনেক বুদ্ধি খাটাতে হবে। কারণ তখন একমাত্র সঙ্গীই হবে তোমার মস্তিষ্ক তোমার বিবেক। নইলে একটা ভুল সারাজীবন পস্তানোর মতো অবস্থা। আরেকটা বড় কথা কোনো রকম ভয় পেলে চলবে না ভয় পেলেই তারা তোমায় ভোগ করার মতো স্পর্ধা রাখবে তাই সাবধান! সেখানে গিয়ে আলমারি খুলবে ওই আলমারি দিয়েই সেই কবরস্থানে যাওয়ার পথ। সেই কবরস্থানে গিয়ে দেখবে একটা অদ্ভুত ধরণের ফুলগাছ। সেই ফুলগাছে গিয়ে মোমবাতির আগুন সেই গাছে লাগিয়ে দিবে। তারপর সব শেষ! কিন্তু হ্যাঁ এই কাজ এতোটাও সহজ নয় মা অনেক ভয়ংকর ভয়ংকর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।

মিশু- আল্লাহ ভরসা হুজুর ইন শা আল্লাহ আমি পারবো আমাকে যে পারতেই হবে নাহলে এই বাড়িটাকে পবিত্র করবো কি করে?

হুজুর এক দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর আবার বলা শুরু করে,” হুম তবে আরেক টা কথা। সময় ৩টা পর্যন্ত। এই দুই ঘন্টায় যেভাবেই হোক তোমায় সব টা করতে হবে। আর হ্যা আগে ওযু করে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়ে নিবে। তারপর সেখানে যাবে। আর এখানে কিছু দোয়া আছে সেগুলা ভালো করে পড়ো এগুলাও তোমায় অনেক সাহায্য করবে।(একটা পাতা দেখিয়ে)

মিশু সেগুলা মমনোযোগ দিয়ে পড়লো এবং মুখস্থ করে নিলো। মিশু আবার বলে,

মিশু- হুজুর এই কাজ টা কবে করবো?

হুজুর- আজই। কারণ এই কাজ টা পূর্ণিমা থাকতে থাকতে করতে হবে কাল থেকে আ আর অমাবস্যা শুরু।

আলভি- অন্যান্য গল্পে শুনতাম অমাবস্যায় এইসব কাজ করে এখন শুনছি পূর্ণিমা।

মিশু- এটা গল্প নয় আলভি এটা বাস্তব। বাস্তবে এমন অনেক ঘটনা আছে যেগুলা আশ্চর্যের।

আলভি- সে যাই হোক আমি তোকে একা ছাড়তে পারবো না কেন বুঝতে চাইছিস না?

মিশু- আলভি তুই ভালো করে জানিস আমি যেটা বলি সেটা করেই ছাড়ি প্রথম থেকে ভেবে নিয়েছি এই বাড়ির রহস্য ভেদ করবো সেটাও করেছি এখন এদে ধ্বংস করবো মানে করেই ছাড়বো।

আলভি- কিন্তু এটা ছেলে খেলা নয় মিশু এখানে প্রাণও যেতে পারে আর আমি তোকে হারাতে পারবো না।

মিশু- তুই নেগেটিভে কেন যাচ্ছিস অলয়েজ পজিটিভে থাক আর আল্লাহর উপর ভরসা কর।

আলভি আর কোনো কথা না বলে রেগে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। মিশু আটকালো না কারণ এই লড়াই তার একার। কেন আলভিকে শুধু শুধু ওর মধ্যে জড়িয়ে তার বিপদ ডেকে আনবে।

হুজুর মিশুর মাথায় হাত রাখলো আর বললো,”আমার তোমার উপর ভরসা আছে মা আমি জানি তুমি পারবে।”

মিশু হাসলো তারপর আবার কি মনে করে যেনো আলভি কে গিয়ে আটকালো।

আলভি- কি আমার পথ আটকালি কেন যেতে দে আমায়।

মিশু- না আলভি প্লিজ তুই কোথাও যাস না।

বলেই মিশু আলভি কে টেনে হুজুরের কাছে নিয়ে আসে।

আলভি- আরে কি এখানে আনলি কেন?
,
,
,
,
,
,
চলবে!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here