রহস্যেঘেরা বাংলো,(৫ শেষ পর্ব)

0
2106

রহস্যেঘেরা বাংলো,(৫ শেষ পর্ব)
লাবিবা ওয়াহিদ

মিশু- এরা আমার পথ আটকাতে অবশ্যই তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাই তুই প্লিজ বাইরে যাস না মসজিদেই থাক।

হুজুর- হ্যাঁ মিশু একদম ঠিক বলেছে। তারা ছলনা করবে তোমার সাথে মিশু সেজে তাই ভালো হবে মসজিদে থাকো। কারণ এই কাজে দুজন মানেই মহাবিপদ। আর মিশুকেও তুমি বলে ধোকা দিতে পারে।

মিশু- হুম তাই আমার কন্ঠ পেলেও তুই মসজিদ থেকে বের হবি না কারণ আমি কাজ না করে ফিরবো না। আমার মন বলছে তারা নানান ছল করে তোকে মসজিদ থেকে বের করবে। যদি একবারের জন্যেও তাদের পাতা ফাদে পা দিস তাহলে তোরও বিরাট বড় ক্ষতি করবে সাথে আমাদেরও। তাই ভুলেও এই কাজ করিস না।

আলভি- কিন্তু তুই যে একা। যদি তোর কোনো ক্ষতি করে বসে?

হুজুর- ওর কিছুই হবে না কারণ ও পুরোপুরি পাক পবিত্র অবস্থায় যাবে আর ভয় পেলেই ক্ষতি করবে।

আলভি- যদি…..

মিশু- আর কোনো কথা না আলভি। শুন আরেক টা কথা যদি আমি তোকে ডাকও দেই তাহলে অবশ্যই মসজিদের ভেতরে এসে তোর সাথে কথা বলবো। আর ওরা শয়তান অপবিত্র ওরা কখনোই মসজিদের ভেতর পা রাখতে পারবে না তাই তুই এইদিক দিয়ে সাবধানে থাকিস।

আলভি- আচ্ছা তুই যা বলবি তাই হবে।

মিশুর তবুও কেমন জানি লাগছে। তাই হুজুর কে নিয়ে আলভির থেকে একটু দূরে গেলো। কিছু শলাপরামর্শ সেরে আবার আসলো।

হুজুর- ঠিক আছে অনেক করেছো এখন গিয়ে বিশ্রাম করো। এখন ওই বাড়িতে যেও না একেবারে রাতে যাবা। জরুরি জিনিসপত্রের ব্যবস্থা আমি করে দিবো তাই নিশ্চিন্ত থাকো।

মিশু- ঠিক আছে হুজুর।

মিশু বিছানায় গা এলাতেই ঘুমিয়ে পড়ে। আর আলভি অন্য রুমে ঘুমিয়ে যায়।
,
,
,
শেষ পর্যন্ত রাত ১২টা বাজলো। মিশু চোখ বন্ধ করে একটা গভীর নিশ্বাস ফেলে। তারপর ওযু করে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষে হুজুরের দেওয়া কালো বরকা সাথে পুরো পুরি শরীর মুখ চুল হাত পা ঢেকে রুম থেকে বের হয়। রুম থেকে বের হতেই দেখে হুজুর দাঁড়িয়ে আছে হাতে মোম নিয়ে। মিশু তার কাছে যেতেই হুজুর দোয়াদরুদ পড়ে মিশুর মাথায় ফু দেয়। মিশু হুজুরকে সালাম করে বলে, “দোয়া করবেন আমার জন্য হুজুর।”

হুজুর- ইন শা আল্লাহ মা তোমার সাথে আমার দোয়া সবসময় আছে। এখন তাড়াতাড়ি করো ১টা বাজলো বলে।

মিশু- হুম হুজুর। আচ্ছা আলভি…

মিশুকে আর বলতে না দিয়ে হুজুর বলে,”চিন্তা করো না তোমার কথা মতো নেশা ধরানো ঘুমের ওষুধই দিয়েছি। কাল সকাল ১০টার আগে ঘুম থেকে উঠবে না।

মিশু- আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন হুজুর আপনার উপর সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ থাকবো।

হুজুর- এগুলা কি বলো মা তুমি তো আমার মেয়েরই মতো তুমিই তো উলটো আমাদের উপকার করছো। আমাদের পূর্ব পুরুষ যা করে উঠতে পারেনি তা আজ তুমি নির্মম সাহস নিয়ে করতে যাচ্ছো।

মিশু- তাহলে এখন আমি আসি।

হুজুর- হুম যাও সাবধানে যেও আল্লাহ হাফেজ। আর হ্যা পিছে ফিরে তাকাবা না আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখবে।

মিশু- জি।

তারপর মিশু হুজুরকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো কঠিন পরিক্ষার উদ্দেশ্যে। আয়াতুল কুরসি পড়েই বেরিয়েছে। এক গ্লাস জুসে নেশা ধরানো ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে হুজুরকে দিয়ে আলভি কে খাওয়ায়। কারণ মিশু আলভি কে কোনো রকম বিপদে ফেলতে চায়না। আলভি ওসব গুলোর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এমন ভয়ানক ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। এতে করে ঘুমের মধ্যে আলভি কিছুই শুনতে পারবে না। শেষে বাংলোর সামনে এসে পৌঁছালো। আজ কোনো রকম বাতিই জ্বালানো হয়নি তাই অনেক টাই ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে বাংলো টা বাইরে থেকে। হঠাৎ বাংলো ভেতরে থাকা বড় দেয়াল ঘড়িটার ডিং ডিং আওয়াজ শুনতে পেলো মিশু। এর মানে ১টা বেজে গেছে। কারণ ১টা বাজলেই সেই ঘড়িটা এভাবে বেজে উঠে। আশেপাশের পরিবেশ হঠাৎ পালটে যায়। কেমন বাতাস বইছে। প্রকৃতি যেনো মিশুকে সাহস দিচ্ছে “তুমি পারবে তুমি পারবেই ইন শা আল্লাহ” এমন করে। মিশুও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একটা মেচে কাঠি নিয়ে আগুন জ্বালায় এবং মোমবাতিতে সেটা ধরিয়ে দেয়। তারপর মিশু একটা দোয়া পড়ে মোমবাতি তে ফু দেয়। ব্যস শেষ বাংলোর বাইরের কাজ।

তারপর আস্তে আস্তে বাংলোর ভেতরে পা দিলো। দরজা খোলাই ছিলো। বাংলো তে পা রাখতেই ঝড়ের মতো বাতাস আসতে থাকে মিশুর মোমবাতি টাকে নেভানোর জন্য। কিন্তু একবারের জন্যেও সেই মোমবাতি নিভেনি আর মিশুও ভয় পায়নি। মিশু খুব আরামসে এগোতে লাগলো। তার মধ্যে ভয়ের ছিটে ফোটাও নেই। মিশুর রিয়েকশনে এমন মনে হচ্ছে সে প্রতি টা পদক্ষেপ জানে কিভাবে কি বিপদ ঘটতে পারে।
মিশু শিড়িতে এক পা রাখতেই আলভির কন্ঠ শুনতে পেলো মিশু,”মিশু দাড়াও কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

মিশু মুচকি হাসে। কারণ আলভি কখনোই মিশুকে তুমি করে বলেনি এতে বোঝাই যায় এটা একটা ফাদ। তাই কোনো কিছু না ভেবে সামনের দিকে যেতে লাগে। আবার আলভির কন্ঠে কেউ বললো,”আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া মিশু আমায় বাচাও আমায় এই ভূত গুলা মেরে ফেলবে।” মিশু এবারও কোনো কথা কানে নেয়নি। চুপচাপ আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকে। আয়াতুল কুরসি পড়তেই সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো। হঠাৎ সামনের শিড়ি গুলো ভেঙ্গে পড়ে। মিশু মন দিয়ে শিড়িগুলোর দিকে তাকালো। হ্যাঁ শিড়ি আছে। তাই মিশু আবার সামনে এগোতে লাগে। মিশু আয়াতুল কুরসি এবং অন্যান্য সূরা পড়তে পড়তে সেই কারুকাজ করা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অটোমেটিক দরজা খুলে যায়। তারপর সেখানে ঢুকতেই দরজা টা আবার নিজে নিজে বন্ধ হয়ে গেলো ঠাসসস করে। মোমের আলো তে মিশু বেশ দেখতে পারছে সামনে ৬-৭ জনের মতো অবয়ক দাঁড়িয়ে আছে কেমন অদ্ভুত ভাবে। তারা শুধু অপেক্ষায় আছে কখন মিশু ভয় পাবে তাহলে সাথে সাথে মিশুকে শেষ করে দিতে পারবে। কিন্তু মিশু নিজেকে ঠিক রেখে চোখ বন্ধ করে কিছু দোয়া পড়ে এবং মোমে ফু দেয়। সাথে সাথে মোমের আলোকরশ্মি অতিরিক্ত বেড়ে যায়। যার কারণে অবয়ক গুলা চিৎকার দিয়ে উধাও হয়ে যায়। মিশু সেগুলা ছেড়ে আলমারির দিকে যায় কারণ সময় বেশি নেই। তাড়াতাড়ি করে আলমারি খুলতেই দেখে সেটাতে এক বড় রাক্ষস ঘুমিয়ে আছে। মিশু চিন্তায় পড়ে যায় কিভাবে একে টক্কর দিয়ে সেখানে পৌঁছাবে? রাক্ষোস টা হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে মিশুকে দেখতে পায়।মিশু নিজেকে বারবার এটা বলে স্বান্তনা দিচ্ছে ভয় পেলে চলবে না বুদ্ধি খাটাতে হবে। ভেবেই আশেপাশে তাকায় দেখে কিছু হাড্ডি জমে আছে। সেখান থেকে একটা ধারালো হাড্ডি নেয়। যেই রাক্ষস টা মিশুর উপর হামলা করতে নিবে তখনই সেই ধারালো হাড় টা রাক্ষস টার পেটে ঢুকিয়ে দেয়। রাক্ষস টার চেহারা সাথে সাথেই অনেক বিভস্ব হয়ে গেলো।(ইমাজিন করতে গেলেও আমার হাত পা কাপঁছে)মিশু চোখ বন্ধ করে ফেলে যদি কোনোভাবে ভয় পায় তাই। তারপর কিছুক্ষণ পর নিজের গায়ে ঠান্ডা বাতাস আসলো। চোখ মেলে দেখে কবরস্থানের দরজা টা দিয়েই এই সুন্দর বাতাস টা আসছে। চাঁদের আলোয় পরিবেশ টা থম থম করছে। মিশু আর দেরি না করে সামনের দিকে এগোতে লাগে। প্রায় ২০ মিনিটের মতো সময় আছে এর মধ্যেই কাজ টা সারতে হবে। দূরে দেখে একটা অদ্ভুত ধরণের ফুলগাছ একটা কবরের উপর। সেটা দেখা মাত্রই মিশু সেদিকে এগোতে লাগলো। হঠাৎই পেছন থেকে হুজুরের কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসে কানে মধ্যে,”সেদিকে যাস না বিপদ আছে।”

বিপদের কথা শুনতেই মিশু পিছনে ফিরতে নিতেও পারলো না। মনে হলো কেউ তাকে সামনের দিকে টেনে ধরেছে। মিশুর এবার ধ্যান ভাঙ্গে। মিশুর মনে পড়ে যায় যে হুজুর তার সাথে এভাবে কথা বলেনা তাহলে এটাও ফাঁদ ছিলো। কিন্তু আমার সামনের দিকে কে টেনে নিলো? মিশু আর এতো কিছু না ভেবে চলে গেলো গাছের কাছে এবং গাছে মোমবাতি টা জ্বালিয়ে দেয়। এতে করে গাছটা পুরে যেতে লাগে। চারদিকে কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো আর অদ্ভুত অদ্ভুত চিল্লাচিল্লি শোনা যেতে লাগে। অনেক কালো ধোয়া কেমন আকাশের দিকে উঠে যেতে লাগে। মিশু তৎক্ষণাৎ সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখে সে বিছানায় পাশে আলভি মিশুর হাত ধরে বসে আছে। হুজুর কিছুটা দূরে। আমার চোখ খোলা দেখতেই আলভি বলে,”হুজুর মিশুর জ্ঞান ফিরেছে।”

মিশু উঠে বসে হুজুরও আসে। হুজুর জিজ্ঞেস করে এখন কেমন আছে? মিশু বলে হুম আমি ভালো কিন্তু কি হয়েছিলো?

হুজুর মুচকি হেসে বলে,”তুমি পেরেছো মা সব অশুভ শক্তি দূর হয়েছে।”

মিশু- কিন্তু হুজুর কাল আমায় একজন সাহায্য করেছিলো কিন্তু কে হতে পারে সে?

হুজুর- সাহায্য কিভাবে করবে?

মিশু বলতে যেতেই সামনের দিকে নজর গেলো। দেখলো মিশুর বাবা দাঁড়িয়ে মিশুর দিকে তাকিয়ে হাসছে। মিশু ইশারায় বলে,”তাহলে তুমিই আমায় কাল বাঁচিয়েছিলে বাবা?” মিশুর বাবা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। মিশুর অজান্তেই চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।

আলভি- কি হলো কাঁদছিস কেন তুই?

মিশু- এটা আনন্দের জল বুদ্ধু।

বলেই বাইরে তাকালো। কি সুন্দর সকাল।

মিশু- (আজ সব আছে শুধু বাবাই…. যাইহোক বাবা তুমি যেখানেই থাকো না কেন তোমার মেয়ে তোমার আর্দশ মেনে চলবে দেখিও। আল্লাহ আমার বাবা কে ভালো রেখো।)

সমাপ্ত❤️

(গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এই ভূত প্রেত আত্না বলে কিছু নেই। তাই কেউ দয়া করে অযথা ভয় পাবেন না। গল্প টাকে গল্পের মতোই দেখুন। চাইলে আরও ভয়ানক করতাম কিন্তু অনেকেই ভয়ে হার্ট এ্যাটেক করে ফেলে এমন অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে কিছুটা ভয়ংকর দিয়েছি। আর অন্যের কথা কি বলবো আমি নিজেই এটাকে ভয় নিয়ে লিখসি। নিজে লিখে নিজেই ভয় পাওয়া আসলেই হাস্যকর কিন্তু এটাই সত্যি। যাইহোক পুরো গল্প টা কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here