বিনিময়ে তোমায় চাই?,পার্ট_০২
লাবিবা ওয়াহিদ
আম্মু-কি বলিস এতো বড় কোম্পানির পিএ?(অবাক হয়ে)
রিফা-হ্যা আম্মু সত্যিই বলছি।
আম্মু-ইমনের কাছে গিয়েছিস?
রিফা-হুম আম্মু সেখান থেকেই আসলাম।
আম্মু-এখন কেমন আছে?
রিফা-আগের মতোই মা।কবে যে কোমা থেকে ফিরবে।(আনমনে)
আম্মু-চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় তোর বাবা এখনি চলে আসবে।
রিফা-আচ্ছা মা।
বলেই রিফা নিজের রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বাবার রুমের দিকে চলে গেলো একটা প্যাকেট নিয়ে।
রিফা-বাবা আসবো?
বাবা-হ্যা আয় শুনলাম ওয়াহিদ কোম্পানিতে পিএ তে জব পেয়েছিস?
রিফা -হ্যা বাবা।
বাবা-ভাবতে পারছি না তুই এতো কম রেজাল্ট নিয়ে এতো বড় ভালো একটা কোম্পানি তে চাকরি পেয়েছিস।
রিফা-হুম।
বাবা-পড়াশোনা তো ভালো করে করতেই পারিস নি ইমনের………
পুরোটা না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।রিফা কিছু বলছে না চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
বাবা-আচ্ছা বাদ দে এখন বল কি বলতে এসেছিস?
রিফা-আসলে বাবা…….
বলেই রিফা তার প্যাকেট টা তার বাবার হাতে দিলো
বাবা-কি আছে এতে?
বলেই প্যাকেট টা খুলে দেখলো অনেক টাকা।এতো টাকা দেখে রিফার বাবা অবাক হয়ে যায় এবং বলে,
বাবা-এতো টাকা কোথায় পেলি আর আমাকেই বা এতো টাকা দিলি কেন?
রিফা-টাকা টা চাকরিতে এডভান্স।
বাবা-ওও তা আমায় কেন দিচ্ছিস?
রিফা-তুমি ইমনের চিকিৎসার জন্য অনেকের কাছেই ধার করেছো তাদের ধার এটা দিয়ে মিটিয়ে দিবে।
বাবা-আরে তোর টাকা তোর কাছেই রাখ আমি ঠিক মিটিয়ে দিবো।
রিফা-না বাবা আমি চাইনা তুমি আমার জন্য কারো কাছে অপমানিত হও।অনেক তো করেছো তুমি আর কতো করবে?
বাবা-যতদিন বেচে আছি।
রিফা-ওওহ বাবা অনেক করেছো এবার তো আমায় করতে দাও?
রিফার বাবা হেসে বললো,
বাবা-আচ্ছা আচ্ছা তুই করিস।
রিফাও মুচকি হাসলো।
এইদিনে,
রানিয়া ওয়াহিদ টিভি দেখছে এমন সময়ই আনিফা বাড়ি ঢুকে।আনিফাকে দেখে রানিয়া বেগম জিজ্ঞেস করলো,
রানিয়া-কি পিএ হলো?
আনিফা-হ্যা মাম্মা।
রানিয়া-ওহ তা তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?
আনিফা-আসলেএ পিয়ানু……..
রানিয়া-এখনো তোর পিয়ানুর অভ্যাস টা গেলো না?
আনিফা-ট্রাই করেছি ভুলার কিন্তু তবুও ভুলতে পারিনা।
রানিয়া-ওওওহ এই মেয়েকে নিয়ে পারিনা,আচ্ছা যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
আনিফা-আচ্চা মাম্মা।
বলেই আনিফা রুমে চলে গেলো।এইদিকে রানিয়া বেগম খাবার বাড়তে লাগলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই আনিফা চলে আসলো।আনিফা নিচে নেমে খাবার টা সেরে টিভি দেখতে থাকলো।সন্ধ্যা ৭ টায় আনাফ অফিস থেকে আসলো।বাসায় এসে দেখে আনিফা সিরিয়াল দেখছে।
আনাফ-কিরে সিরিয়াল দেখে শশুর বাড়িতে আগুন লাগাবি নাকি?
আনিফা-ওই বজ্জাত তোর কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই সবসময় আমার পেছনে লাগিস?
আনাফ-তোরেই যদি না জালাতে পারি তাহলে এতো বড় কোম্পানির এমডি হলার কোন দুঃখে?
আনিফা-তোর লন্ডনে থাকাই উচিত ছিলো কেন যে মরতে এখানে এলি ধুরররররর।
আনাফ-কেন আমজ আমার বাড়িতে আসন না তো তোর শশুরবাড়িতে যাবো নাকি?
আনিফা-এই তুই সমসময় এতো শশুরবাড়ি শশুরবাড়ি করিস কেন?
আনাফ-আমার টা নাই তাই তোর টা বলি।
আনিফা-আমারও শশুরবাড়ি নেই।
আনাফ-তাহলে রায়হান(আনিফার উডবি হাসবেন্ড) মেয়বি জংগল থেকে উঠে আসছে।
রানিয়া-আহ তোরা কি শুরু করলি বলতো?
আনিফা-দেখো না মাম্মা কি শুরু করেছে তখন থেকে
আনাফ-মাম্মা আমি কিছুই করি নি।
আনিফা-না মাম্মা ও মিথ্যা বলছে।
রানিফা-আহ হয়েছে অনেক বলছিস প্রতিদিন একই কাহিনী শুনতে।
আনাফ-কিন্তু মাম্মা………
রানিয়া-অনেক বলেছিস এখন এখান থেকে যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
আনাফ-ওকে।
বলেই আনাফ নিজের রুমে চলে গেলো।
রাতে,
রিফা ডিনার করে নিজের রুমে চলে আসলো।তারপর আলমারি থেকে একটা ছবি নিয়ে বিছানার দিকে গেলো।শুয়ে শুয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভাবছে পুরোনো স্মৃতি গুলো।হ্যা ইমনের ছবি সেটা।ইমন আর রিফা দুইজন এক সাথে।ছবিটা দেখতে দেখতেই রিফা ঘুমিয়ে পড়লো।
এইদিকে,
আনাফ বেলকনিতে বসে রাতের আমাশ দেখছে আর কফি খাচ্ছে।এটা আনাফের রেগুলার অভ্যাস।কিন্তু আজ কেন জানিনা আনাফের বারবার রিফার চেহারাটা ভেসে উঠছে।
আনাফ-(এই মেয়েটা কে নিয়ে আমি এতো ভাবছি কেন?ধুর কি যে হচ্ছে।)
আরও কিছুক্ষণ থেকে রুমে চলে আসলো।
পরেরদিন,
রিফা খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে এবং ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো।তারপর রেডি হয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেলো ইমনের সাথে দেখা করার জন্য।হসপিটালে গিয়ে দেখলো ইমন আগের মতোই আছে।রিফা গিয়ে ইমনের পাশে বসলো।রিফা জলজল চোখে বললো,
রিফা-আজ আমার অফিসের প্রথম দিন।আমি নিজের জান লাগিয়ে দিবো তোমায় ভালো চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করতে।তোমায় ছাড়া কতদিন কেটে যাচ্ছে।থাকতে পারছি না আর।প্লিজ তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরে এসো।তোমার কি আমার কথা একদমই মনে পড়ছে না?
বলেই কিচ্ছুক্ষণ কাদলো রিফা।তারপর চোখ মুছে বললো,
রিফা-আচ্ছা এখন আমি আসি কেমন?নইলে দেরি হয়ে যাবে।
বলেই ইমনের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে আসলো অফিসে।ম্যানেজার রিফাকে দেখে রিফার কাছে গিয়ে বললো,
ম্যানেজার -আসো তোমাকে তোমার কেবিন দেখিয়ে দেই।
রিফা-ওকে স্যার।
তারপর ম্যানেজার ওকে ৭ম তলায় নিয়ে গেলো। রিফা ৭ম তলা দেখে আরো অনেক অবাক।কারণ ফাস্ট ফ্লোর এর থেকে ৭ম ফ্লোর আরো অনেকটা বেশি সুন্দর।এখানে প্রায় অনেক স্টাফও আছে।সবাই যে যার মতো কাজ করছে।ম্যানেজার রিফাকে রিফার কেবিনে যেতে যেতে বললো,
ম্যানেজার -এটাই হলো স্যার এর কেবিন। যখন দরকার পড়বে স্যার এর কাছে আসবে।
রিফা-আচ্ছা স্যার।
তারপর ম্যানেজার রিফার কেবিন দেখিয়ে বললো,
ম্যানেজার – এখন থেকে এটা তোমার কেবিন।
রিফা কেবিন দেখে তো পুরো অবাক।কারণ ২ পাশের দেওয়াল পুরো কাচের।আর আরেক দেওয়ালে কয়েকটা ছোট বড় পেইন্টিং।রুমটা বেশি বড়ও না আবার বেশি ছোটও না।খুব ভালো লেগেছে রিফার রুমটা। পরিবেশটা খুবই মনোরম।ম্যানেজার রিফাকে রেখে নিজের কাজে চলে গেলো। রিফা চেয়ারে বসে পড়লো আর ভাবতে লাগলো এখন সে কি করবে।এমন সময়ই টেবিলে থাকা ল্যান্ডফোনে কল আসে।রিফা তাড়াহুড়ো করে কল্টা রিসিভ করলো,
রিফা-হ্যা……. হ্যালো?
আনাফ-আমার কেবিনে আসুন ফাস্ট।
রিফা -ও….ওকে স্যার।
বলেই রিফা দৌড়িয়ে আনাফের কেবিনে গিয়ে বললো,
রিফা-মে আই কাম ইন স্যার।
আনাফ-ইয়েস কাম।(বাহ ভদ্রতা আছে ভালো)
রিফা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।কারণ ভার্সিটিতে একবার এক টিচার রিফাকে তার কেবিনে ডেকেছিলো রিফাও গিয়েছিলো তবে পারমিশন আর দরজায় নক ছাড়া।এ নয়ে রিফাকে যে কতো অপমান করেছে যে দরজা দেখলেই তার ওইদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়।রিফা আস্তে আস্তে গিয়ে বললো,
রিফা-স্যার কিছু বলবেন?।
আনাফ-হুম তা তো অবশ্যই নইলে তোমার চেহারা দেখার জন্য দেখেছি নাকি?
রিফা-না আসলেএ……সরি স্যার।
আনাফ-ইটস ওকে।
তখনি আরেকজন নক করলো,
আনাফ- কাম ইন।
নিধি- স্যার আমায় ডেকেছেন?
আনাফ- হ্যা……
।
।
চলবে?