পিছুটান,পর্বঃ ০৩(শেষ পর্ব)

2
4902

পিছুটান,পর্বঃ ০৩(শেষ পর্ব)
লেখকঃ আবির খান

এদিকে নায়লা পুরো স্তব্ধ হয়ে আছে। ও স্বপ্ন তো দূর কল্পনাও করতে পারে নি আরশি শেষমেশ ওর স্যারের প্রেমে পড়বে। ও রীতিমতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নায়লা একদম চুপ মেরে বসে আছে। ওর কোন সাড়া শব্দ না পাওয়ায় আরশি চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দেখে নায়লা পুরো হতবাক হয়ে আছে। আরশি দ্রুত নায়লার কাছে গিয়ে বলে,

~ এই আণ্টি তুমি এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কি হয়েছে?
~ আপুমনি আপনি এটা কি বললেন? একজন স্যারের সাথে ছাত্রীর প্রেম হয় নাকি? এটা কোন কথা? আপা জানলে অনেক রাগ করবেন।
~ আরে কি যে বলো না তুমি। হবে না কেন হয় তো। আর উনি কোন বুড়া স্যার না। আমাদের মতোই ইয়াং এবং অনেক হ্যান্ডসাম। উনি আমাদের ভার্সিটিতেই আগে পড়তেন। ভালো রেজাল্ট করায় তাকে আবার এই ভার্সিটিতেই চাকরি দিয়েছে৷ বয়স বেশি হলে, উমম, ২৮/২৯ হবে৷ তার বেশি না৷
~ ওওও। তাহলে ঠিক আছে। তা আপনার স্যারটা কেমন?
~ আণ্টি কি যে বলবো না মানে এরকম ছেলে আমি আগে কখনো দেখি নি। যেমন সুন্দর তেমন রাগী। ডেঞ্জারাস রাগী স্যার৷ আজকে অনেক গুলো ফালতু বজ্জায় ছেলেদের কাছ থেকে উনি আমাকে বাঁচিয়েছেন৷
~ কি বলেন সত্যি! তাহলে তো সে অনেক ভালো। আমিও তো অবাক৷ আপনি কখনো কোন ছেলের কথা এভাবে আমাকে বলেন নি। তার মানে স্যারটা আসলেই অনেক ভালো।
~ হুম। কি সুন্দর করে কথা বলে আমি ত পুরো ক্লাস শুধু ওনার কথাই শুনেছি। আহ! আমি পাগল হয়ে যাবো। (লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গিয়েছে)
~ ইসসস! কি লজ্জা। আচ্ছা বুঝেছি, আমার আপুমনিটা এবার সত্যিই সত্যিই প্রেমে পড়েছে।
~ হ্যাঁ আণ্টি হ্যাঁ।
~ আচ্ছা এগুলো নিয়ে পরে কথা হবে৷ এখন তাড়াতাড়ি সাওয়ার নিয়ে আসেন৷ নাহলে আপা রাগ করবে৷
~ আচ্ছা আচ্ছা।

আরশি নিয়নকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে সাওয়ার নিতে চলে যায়। আর নায়লা ওদের কথা ভেবে হাসতে থাকে।

অন্যদিকে,

~ এসেছিস বাবা। বস। পানি দিব?
— না মা আমি নিয়ে নিব নি। তুমি বসো। সকালে নাস্তা করে ঔষধ খেয়েছিলে তো? (সোফায় বসে সু খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করছে)
~ হ্যাঁ খেয়েছি।
— সত্যিই তো?
~ আরে হ্যাঁ বাবা।
— যাক ভালো। রুনা কাজে এসেছিল?
~ হ্যাঁ। রান্নাবান্না সব করে দিয়ে গিয়েছে।
— যাক ভালো।
~ নিয়ন আর কতকাল রুনার হাতের রান্না খাবো আমি? এবার তো বিয়েটা কর। আমার যে শরীর কখন তোর বাবার কাছে চলে যাই কে জানে? তখন তোকে বিয়ে কে করাবে বল?
— মা তোমাকে না এসব নিয়ে কথা বলতে না করেছি। তোমার কিচ্ছু হবে না৷ শোনো, আজ বিকেলে তোমাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে যাবো। অনেকদিন হলো চেক আপ করানো হয় না৷
~ কি বলিস, গত মাসেও তো করলাম।
— তাও আজ আবার নিয়ে যাবো।
~ শুধু শুধু ডাক্তারকে টাকা দেওয়া। আমি ভালো তো আছি এখন।
— হুম কি যে ভালো আছো তুমি আমি জানি। আচ্ছা তুমি বসো আমি সাওয়ার নিয়ে এসে খাবো।
~ আচ্ছা আয়। বিয়ের কথা বললেই খালি এটা ওটা বলে চলে যায়। তোকে বিয়ে না দিয়ে আমি মরবো না দেখিস।
— আচ্ছায়ায়ায়া।

নিয়ন সাওয়ার নিতে ওর রুমে চলে যায়। ওর মা কয়েক মাস আগে একদিন রাতে স্ট্রোক করেছিল। খুব খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল তার। নিয়ন তো ভয়ে শেষ। ওর কাছের বন্ধুরা সেদিন তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স নিয়ে না আসলে হয়তো আর ওর মাকে বাঁচানো যেত না৷ অনেকদিন পর তিনি সুস্থ হলে ডাক্তার বলে দিয়েছেন উনি যেন আর কোন কাজ না করেন। সারাদিন যেন রেস্টে থাকেন। সেই থেকেই নিয়নের মা একদম বেড রেস্টে আছেন৷ নিয়ন বাসার কাজ আর রান্নাবান্নার জন্য একজন কাজের মেয়ে ঠিক করেছে। সে এসে সব করে দিয়ে যায়। ও আসার আগে আগেই আবার মেয়েটা চলে যায়। নিয়ন ওর ফ্ল্যাটে অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ায়। এই ফ্ল্যাটটা ও নিজেই কিনে নিয়েছে। বেশ বড়ো না হলেও মাঝারি আকারের দুটো বেড রুম আছে। আর এক ডাইনিং রুম সাথে বড়ো একটা ড্রইংরুম। যেখানে ও সবাইকে পড়ায়৷ ওরা নিচতলায় দোতলায় থাকে। তাই তেমন একটা সমস্যা হয়নি৷ অনেক বড়ো নামী ভার্সিটির শিক্ষক হিসেবে বেশ ভালো বেতনেই নিয়ন ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ায়। এবং যাদেরকে ও পড়ায় তারা সবাই অনেক ভালো রেজাল্ট করে। ফলে ছাত্র ছাত্রী সহজে ওর কাছ থেকে যায় না৷ বরং অনেক নতুনদেরই ও সময় দিতে পারে না৷ তাই বলা যায় টাকা পয়সার কোন অভাব ওর নেই। অভাব শুধু একজন মনের মানুষের।

নিয়ন সাওয়ার নিয়ে এসে খাবার টেবিলে চলে আসে। মাকে সুন্দর করে বসিয়ে দিয়ে আগে মায়ের জন্য খাবার বেরে তাকে দিয়ে তারপর নিজের জন্য খাবার বেরে খেতে বসে। নিয়নের মা ওকে নিয়ে খুব গর্ব করে। সত্যিই এরকম ছেলে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যে যুগ এখন, ছেলে মেয়ে বড়ো হলে বাবা-মাকে চিনে না, ভুলে যায়, তাদের রাস্তায় ফেলে আসে, তাদের করা সবকিছু লুটে তাদের ঘার ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। সেই যুগে নিয়ন সবার আগে ওর মাকে প্রাধান্য দেয়৷ মায়ের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে। যাতে মায়ের বিন্দুমাত্র কষ্ট না হয়৷ নিয়নের বাবা মারা যায় ও যখন সবেমাত্র ভার্সিটিতে উঠে তখন। বিশাল বড়ো একটা ধাক্কা খেয়েছিল ওরা। আপনজনরা আসলে কেমন বিপদে পড়লেই বুঝা যায়৷ নিয়নেরও বুঝতে বাকি রয় নি৷ ছেলেটা অল্প বয়সেই নিজের কাঁধটাকে ভারী করে নেয়৷ নেমে যায় জীবন যুদ্ধে। যতবারই ও হার মানতে নিয়েছিল ওর বন্ধুরা ওকে আবার জাগিয়ে দিয়েছে। তাই মানুষ বলে, মাঝে মাঝে আপনের চেয়ে পরই ভালো। বন্ধুরা পর হয়েও আপনের চেয়ে বেশি ওকে সাপোর্ট করেছে। যার জন্য আজ ও এতদূর এসেছে। বাস্তবতাকে খুব কাছ থেকে দেখায় নিয়ন খুব ভালো করে এখন বাস্তবতাকে বুঝে৷ একটা ছেলের কাছে টাকা আর যোগ্যতা না থাকলে সে সমাজে মূল্যহীন। একটা ছেলেকে কখনো কেউ ভালবাসে নি, ভালবেসেছে তার টাকা আর যোগ্যতাকে। নিয়ন সেটা হারে হারে বুঝেছে। তাই জীবনে টাকা আয় করার জন্য ও নিজেকে যোগ্য বানিয়েছে। অনেক পড়াশোনা করেছে। কোন মেয়ে, ফালতু আড্ডাবাজি কিংবা কোন খারাপ পথে ও যায় নি। জীবনে বড়ো হতে সমাজে মাথা তুলে সবার মাঝে দাঁড়াতে যা যা করা উচিৎ ও তাই তাই করেছে। সেদিন যেসব আত্নীয় স্বজনরা ওদের একা করে দূরে সরে গিয়েছিল, আজ তারা ওর জন্য পাগল। কিন্তু নিয়ন এখন আর তাদের পাত্তা দেয় না৷ ওর ভুবন জুড়ে শুধু ওর মা আর ওর সেই বন্ধুগুলো আছে। এরাই ওর আপন পরিবার৷ নিয়নের মা খেতে খেতে খেয়াল করেন নিয়নের ঠোঁটের কোণায় অন্যরকম একটা হাসি। এই হাসি তিনি আগে কখনো দেখেন নি। তাই ছেলেকে জিজ্ঞেস না করে আর পারলেন না।

~ কিরে মিটমিট করে হাসছিস কেন? কি হয়েছে আজ?
— না তেমন কিছু না।
~ মা কিন্তু সন্তানের সব কিছু বুঝে৷ লুকিয়ে লাভ নেই। বলে ফেল।
— আরে বলো না৷ আজ নতুন একটা ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়েছে, তো সবাই নতুন৷ তার মধ্যে একটা মেয়েকে কিছু বখাটে ছেলে জ্বালাচ্ছিল। তো আমাকে দেখে ওরা পালায়৷ মেয়ে অনেক খুশি হয়। আমি তারপর ক্লাসে চলে আসি। এসে দেখি সেই মেয়ে আমার ক্লাসেরই। মেয়েটা পুরো ক্লাস আমার দিকে শুধু তাকিয়েই ছিল। কেমন লাগে বলো!
~ মেয়েটা কি অনেক সুন্দরী ছিল?
— হুম তা বলতে পারো।
~ তাহলে আমার সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে দেখে মনে হয় মেয়েটার পছন্দ হয়ে গিয়েছে। তাই তোকে মন ভরে দেখছিল।
— ধুর কি যে বলো না। তুমি বসো আমি ঔষধ নিয়ে আসি।
~ হাহা। আচ্ছা যা।

নিয়ন লজ্জা পেয়ে দ্রুত ঔষধ আনতে চলে যায়। তারপর মাকে ঔষধ খাইয়ে দেয়৷ নিয়নের মা হাত ধুয়ে তার রুমে চলে যান৷ নিয়ন তাকে ঘুমাতে বলে ডাইনিং রুমে এসে টেবিলটা পরিষ্কার করতে করতে আরশির কথা ভাবছে। যে মেয়েটা এভাবে কেন তাকিয়ে ছিল! যাই হোক এরপর ও কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়৷ কারণ ৫ টার পর ওর মাকে নিয়ে আবার বের হতে হবে৷ আজ বিকেলে কোন ব্যাচের পড়া নেই৷ তাই এই সুযোগে মাকে নিয়ে ও ডাক্তারের কাছে যাবে৷ সেই অপেক্ষায়ই আছে নিয়ন৷ সেদিনটা ওভাবেই শেষ হয়৷

পরদিন সকালে যথারীতি আরশি আবার ভার্সিটিতে যায়৷ অপেক্ষায় থাকে কখনো ওর নিয়ন স্যার আসবে। স্যার আসা মাত্রই সবার আগে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে। এরপর আর কি! গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চাতক পাখির মতো পুরো ক্লাস ফ্যালফ্যাল করে নিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে ও। এভাবে টানা এক সপ্তাহ চলে যায়। নিয়নের কাছে এবার ব্যাপার অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। ও চায় না কোন সমস্যা হোক এই মেয়ের জন্য। ও কিছুটা রাগই করে৷ তাই একদিন ক্লাস শেষ করে নিয়ন আরশির কাছে এসে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

— আপনি বাইরে আসুন। আপনার সাথে কথা আছে।

আরশি আর ওর বান্ধবী সহ ক্লাসে যারা ছিল সবাই অবাক হয়ে যায়। নিয়নের মতো স্যার আরশির সাথে পার্সোনালি কথা বলতে চায়! ওয়াও! আরশি ত খুশিতে আত্নহারা। ও যা চেয়েছে সেটাই হয়েছে। নিয়নের নজর কেড়েছে ও৷ কিন্তু নিয়ন ওকে কি বলতে ডাকে? আরশি খুব খুশি মনে নিয়নের সাথে বাইরে আসে৷ ও জানে না একটু পর ওর সাথে কি হতে যাচ্ছে। নিয়ন ওকে নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় যায়। আরশি খুব মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে নিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।

– সমাপ্ত।

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন।

2 COMMENTS

  1. এটা কোনো গল্প হলো,, এভাবে শেষ হয় নাকি,, ফালতু সময় নষ্ট করলাম,, ধুর,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here