একটাই তুমি ??,সপ্তম পর্ব

0
2898

একটাই তুমি ??,সপ্তম পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)

ইনায়াত চোখ দিয়ে ইশারা করছে তার মুখ থেকে হাত সরাতে। স্পন্দন ও তা বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ পর হাত সরিয়ে নেয়। মুখ ছাড়তেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে ইনায়াত। বুক তার এখনো ক্রমশ ঢিপঢিপ করছে।
স্পন্দন কিছুটা ধমকের সুরে বলে,
স্পন্দন: ‘ এভাবে ষাঁড়ের মত চিৎকার করতে গিয়েছিলি কেন! আমি ভুত না দানব?’

স্পন্দনের এমন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় ইনায়াত।
চাপা স্বরে বলে উঠে,
ইনায়াত: ‘ কি! আমি ষাঁড়ের মত চিৎকার করি? আর আপনি যে আমার ঘরে চুপি চুপি চোরের মত প্রবেশ করলেন তা কি!
আর আপনি তো শুধু দানব না তার থেকেও বেশি।’
লাস্টের কথাগুলো বিড়বিড় করে বলে ইনায়াত।
স্পন্দন এবার কিছুটা ঝুঁকে পড়ে ইনায়াতের উপর। তারপর ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে,

স্পন্দন:’ কি আছে তোর মধ্যে ইনায়াত! কি এমন মাদকতা যে আমায় বারবার তোর কাছে টেনে আনে?’

স্পন্দনের এমন কথায় গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকে ইনায়াত। কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। কি বলছে এসব সে। নাকি আবারো ওসব ছাইপাশ গিলেছে!

হঠাৎ স্পন্দনের হুঁশ ফিরতেই সে থমকে দাঁড়ায়। কি করতে যাচ্ছিল সে। না না ইনায়াতকে এখনি সবটা জানতে দেয়া যাবেনা।
গলা খাঁকারি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় স্পন্দন।
ইনায়াত এবার স্পন্দনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,

ইনায়াত: ‘ এখন বলুন, এত রাতে আমার ঘরে আসার কারণ কি?

ইনায়াতের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্পন্দন বারান্দায় চলে যায়। মিনিট দুয়েক পর আবারো আসে । হাত দুটো তার পেছনের দিকে। তা দেখে ইনায়াত তার ভ্রু দুটি কুঁচকে ফেলে। কি আছে পেছনে?
স্পন্দন এবার ইনায়াতের সামনে এসে দাড়িয়ে পেছন থেকে দুটো প্যাকেট দেয়। সাথে সাথে ইনায়াতের মন খুশিতে ভরে উঠল। কেননা তার সামনে টেডিবিয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্পন্দন। আর এক হাতে ডার্ক চকলেট এর বক্স। আর এগুলোই সবথেকে পছন্দের তালিকায় ইনায়াতের। স্পন্দন
ইনায়াতের দিকে সেগুলো বাড়িয়ে দিতেই তা নিয়ে নেয় ইনায়াত। মুখের কোণে ফুটে উঠেছে স্নিগ্ধ এক প্রাণবন্ত হাসি।

আর স্পন্দন ও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর হাসির দিকে।

‘আই লাভ ইউ, ইনায়াত!’
এটা বলেই ভরা কফিশপে জড়িয়ে ধরলো আদ্র ইনায়াতকে। ইনায়াত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কি হচ্ছে এসব তার সাথে।
আজ সকালে ভার্সিটি শেষে একপ্রকার জোর করেই নিয়ে আসে আদ্র ইনায়াতকে। কয়েকদিনে তাদের মধ্যকার বন্ডিং টাও ভালো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আদ্র সরাসরি এভাবে ইনায়াতকে এসব বলে দিবে তা কখনো কল্পনাও করে নি সে।
নিজেকে ছাড়িয়ে রুক্ষ বলে উঠে ইনায়াত,

ইনায়াত: ‘ এসব কোন ধরনের কথা, আদ্র স্যার!’
আদ্র: ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি ইনায়াত। আর এতে দোষের কি আছে! প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!’

ইনায়াত: ‘ এ হতে পারে না, স্যার!’
এটুকু বলেই কফিশপ থেকে বেরিয়ে পড়ে ইনায়াত।

এদিকে স্পন্দনের ফোনে টুং করে মেসেজ আসে। এতক্ষণ সে আয়ানের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। মেসেজ দেখে মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে স্পন্দনের। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় রাগে। চোখ যেন লাল বর্ণ ধারণ করেছে।

আদ্র পকেট থেকে ফোনটা বের করে তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠে,
আদ্র: ‘ বেচারা স্পন্দন! তোমার আর ইনায়াতের মাঝে যে প্রাচীর গড়ে উঠেছে তাকে আমি দেয়াল বানিয়ে দেব। ঠিক এতোটাই গভীর যে তা বিচ্ছেদের রূপ নিবে।
আর ইনায়াত! তুমি তো শুধু আমারি হবে, শুধুই আমার!’

এদিকে রাস্তায় হাঁটছে আর আদ্রের বলা কথা গুলো বারবার চিন্তা করছে ইনায়াত। চোখ বন্ধ করে ভালোবাসি কথাটা কল্পনা করা মাত্রই স্পন্দনের চেহারাটা ভেসে উঠে। তৎক্ষণাৎ চোখ খুলে ফেলল ইনায়াত। এ কি দেখলো সে!
বাসায় আসতেই কিছুটা চমকে উঠে! কেননা তার বাসায় সবাই গম্ভীর মুখে বসে আছেন। ক্লান্ত শরীরে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় সে। রুমের সামনে যেতেই কেউ হ্যাঁচকা টান মেরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তাকে। আকস্মিক ঘটনায় যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ইনায়াত। চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে স্পন্দন।
স্পন্দকে দেখা মাত্র বুকটা ধক করে উঠে। কেননা স্পন্দনের চেহারাটা বিধ্বস্ত, চুলগুলো এলোমেলো, শার্টটাও একি অবস্থা, চেহারায় স্পষ্ট রাগের আভাস।
কি হয়েছে তার!
স্পন্দনের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে ইনায়াতের মুখ বরাবর।

স্পন্দন রাগী গলায় বলে উঠে,
স্পন্দন: ‘ অনেক বাড় বেড়েছিস তাই না! চেনা নেই জানা নেই যার তার সাথে হ্যান্ডশেক করিস, গাড়িতে করে বাসায় আসিস, এমনকি তার সাথে কফিশপে ও গিয়েছিস!
ঐ আদ্র তোকে জড়িয়ে ধরেছিল তাই না! আর কি যেন বলেছিল,
হ্যাঁ! ও তোকে ভালোবাসে তাই না!’

জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
স্পন্দনের বলা কথাগুলো শুনে ভয়ে রুহ কেঁপে উঠলো ইনায়াতের। সে কি করে জানলো এসব! আর স্পন্দন ইনায়াতকে ভুল বোঝে নি তো!

আমি ইনায়াতকে বিয়ে করতে চাই, আর সেটা এক্ষুনি। উপস্থিত সকলের সামনে নির্বিকার ভাবে কথাটা বললো স্পন্দন। স্পন্দনের কথায় সবচেয়ে বেশি যে অবাক হয় সে হলো ইনায়াত!
বিয়ে! স্পন্দনের সঙ্গে তার বিয়ে! ভাবতেই কেমন যেন অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার শরীর বেয়ে।
স্পন্দনের কথায় হুঁশ ফিরে তার।
স্পন্দন: ‘ তোমাদের কি কোনো রকম আপত্তি রয়েছে এ বিয়েতে!’
ইনায়াতের বাবা: ‘ আরে না, না। আমরা তো ভীষণ খুশি! তবে স্পন্দন, এভাবে হুট করে বিয়ের ব্যাপারটা কেমন যেন হবে না?’

স্পন্দন: ‘ সমস্যা নেই, আমি তা ম্যানেজ করে নেব।’
এর মাঝে ইনায়াত বলে উঠে,
ইনায়াত: ‘ কিন্তু আমি,,,’
তার আগেই চোখ গরম করে তাকালো স্পন্দন।
সাথে সাথে চুপসে যায় ইনায়াত। স্পন্দন আসছি বলে ইনায়াতের হাত ধরে টেনে ছাদের দিকে নিয়ে যায়। এদিকে বড়রা কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

ছাদের ভেতর প্রবেশ করতেই দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয় স্পন্দন। আর ইনায়াত ভয়ে ভয়ে পেছনের দিকে যাচ্ছে।
স্পন্দন: ‘ হুম, এখন বল। কি যেন বলছিলি তুই? কিন্তু আমি,, । বল।’
ইনায়াত হালকা গলা ভিজিয়ে বলে,
ইনায়াত: ‘ আসলে বলছিলাম কি, স্পন্দন ভাই! আপনি আমায় হঠাৎ বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেন! আর আপনি তো আমায় ভালোবাসে,,’
পুরো কথা শেষ করার আগেই স্পন্দন ইনায়াতের বাহুজোড়া ধরে বলে,
স্পন্দন: ‘ কি বললি আবার বল।
আমি তোকে কেন বিয়ে করছি !

বিকজ আই লাভ ইউ ড্যাম ইট!’

স্পন্দনের বলা বাক্য বারংবার কানে বাজছে ইনায়াতের। এখনো থম মেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। কি বললো তাকে স্পন্দন!

চলবে ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here