একটাই তুমি ??,একাদশ_পর্ব

0
3612

একটাই তুমি ??,একাদশ_পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)

মিনিট পাঁচেক পর স্পন্দন ইনায়াতের ওষ্ঠদ্বয় ছেড়ে দেয়। এতক্ষণে ইনায়াত শান্ত হয়ে গিয়েছে।

এদিকে ইনায়াত চুপ হয়ে গেলেও চোখ দিয়ে অনবরত টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।
স্পন্দন আলতো করে তার হাতটা ইনায়াতের গালে রেখে বলে উঠে,

স্পন্দন: ‘ ইনায়াত!’

ইনায়াত কিছু না বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় আর কিছু না বলেই বাইরের দিকে হাঁটা শুরু করে। স্পন্দন শুধু ইনায়াতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কেননা সে খুব ভালো করেই জানে তার প্রেয়সীর মনে পাহাড় সমান অভিমান জমা হয়েছে আর সেই অভিমান ভাঙতেও প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। বাইরের শো শো ঠান্ডা হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে বারবার ইনায়াতকে। কিন্তু তার মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মুখটা গম্ভীর করে বসে আছে আনমনে। এদিকে স্পন্দন আড়চোখে কিছুক্ষণ পর পর ইনায়াতের দিকে তাকাচ্ছে। তাকাতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো স্পন্দনের। কেননা তার প্রেয়সীর চেহারায় এক আকাশ কালো মেঘেরা জমা হয়েছে যে!

বাড়িতে ফিরতে প্রায় রাত তিনটে বেজে যায়। বাড়ির সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছে। মেইন দরজাটা আস্তে আস্তে করে খোলে স্পন্দন।

মিসেস সাবিনা এবং মিস্টার সাদাত অর্থাৎ স্পন্দনের বাবা সকলেই ঘরে চিন্তিত হয়ে বসে আছেন। অপেক্ষা করছেন স্পন্দন আর ইনায়াতের জন্য।
মিসেস সাবিনা ওরনা দিয়ে চোখের জল গুলো আড়াল করে বলে উঠে,

মিসেস সাবিনা: ‘ ছেলেটা সে কখন বেরিয়েছে, এখনো বাড়িতে ফেরার নাম গন্ধ নেই। না জানি ইনায়াতকে আদৌ পেয়েছে কি না! কি যে হচ্ছে?’

মিস্টার সাদাত ও তার স্ত্রীকে স্বান্তনা দিচ্ছেন। এর ই মাঝে পেছন থেকে স্পন্দন বলে উঠে,
স্পন্দন: ‘ মা!’

স্পন্দনের গলা শুনতেই পেছনে তাকান মিসেস সাবিনা। ক্লান্ত দেহে বিধ্বস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্পন্দন। আর তার পেছনেই গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে ইনায়াত। দুজনকে সাবধানে বাড়ি ফিরতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মিসেস সাবিনা আর মিস্টার সাদাত।

মিসেস সাবিনা গিয়ে ইনায়াতকে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

মিসেস সাবিনা: ‘ তুমি ঠিক আছো, ইনায়াত! কিছু হয়নি তো তোমার?’

ইনায়াত ভাঙ্গা কন্ঠে বলে উঠে,

ইনায়াত: ‘ কিছু হয়নি মা আমার।’
মুখে বললেও চোখে ভেসে উঠছে বারংবার সেই ঘটনা, রক্তের দাগ। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,
ইনায়াত: ‘ মা, আপনাকে কিছু বলার ছিলো!’

ইনায়াতের কথা শুনে স্পন্দন কিছুটা ভড়কে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে যদি ইনায়াত সবটা বলে দেয় মাকে তাহলে!

ইনায়াত: ‘মা, আমি কিছুদিন আমার বাসায় যেতে চাই!’

মিসেস সাবিনা: ‘ কেন? কিছু কি হয়েছে তোমার আর স্পন্দনের মাঝে!’

ইনায়াত একপলক স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

ইনায়াত: ‘ না, না মা! তেমন কিছু নয়। আসলে কিছুদিন আমি একটু একা থাকতে চাই।’

স্পন্দন মনে মনে রাগ পুষলেও মুখে কিছু প্রকাশ করলো না। হ্যাঁ, সে অনেক বড় একটা সত্যি লুকিয়েছে। তাই বলে কি তাকে ছেড়ে চলে যাওয়াটা কি খুব জরুরি! তাকে কিছু বলার সুযোগ টা তো দিবে!

সদ্য ভোরের আলো ফোটার পর পরই ইনায়াতের চোখের ঘুম ছুটে যায়। পাখিরাও কিচিরমিচির করা শুরু করে দিয়েছে। পাশে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন ঘুমিয়ে রয়েছে। কি নিষ্পাপ লাগছে তাকে! ঘুমন্ত চেহারাটা বড্ড বেশি মায়াবী লাগছে। অথচ কে বলবে এই মানুষটার ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছে হাজারো রহস্য!

দুদিন পার হয়ে গিয়েছে। ইনায়াত সবার সাথে কথা বললেও স্পন্দনকে কিছুটা এড়িয়ে চলে। সে কি করে পারলো এত বড় কথা তার থেকে লুকাতে।

কফিশপে বসে আছে ইনায়াত, নিধি আর আয়ান। ইনায়াত মুখটা গম্ভীর করে বসে রয়েছে আর টেবিলে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। নিধি নীরবতা ভেঙে বললো,

নিধি: ‘ দেখ ইনায়াত, যা হয়েছে , হয়েছে! সব ভুলে যা! স্পন্দন ভাইয়াকে তো তুই ভালো করেই চিনিস। জানিস যে সে কখনো কোনো ভুল কাজ করে না। আমি ও শুনে অবাক হয়েছি তবে আয়ান আমাকে সবটা বলেছে।
স্পন্দন ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। সে সত্যিই অনেক কষ্টে রয়েছে!’

ইনায়াত অবাক চোখে তাকালো আয়ানের দিকে। তারপর জিজ্ঞেস করল,

ইনায়াত: ‘ আয়ান ভাইয়া, আপনি সবটা জানতেন!
তারপরও আমায় কিছু বলেন নি, আপনি!’

আয়ান: ‘ আমায় মাফ কর বোন, স্পন্দনের কড়া আদেশ ছিল তোকে কিছু জানতে দেয়া যাবেনা এ ব্যাপারে! ওর তোকে নিয়ে অনেক ইনসিকিউরিটি ছিল আর এটা যদি তোর পড়াশোনায় এফেক্ট ফেলে ! তাই ও তোকে কিছু জানতে দেয় নি!

আর তুই রাগ করবি কি না জানিনা,‌ আমিও মাফিয়া গ্যাং এর ভেতর রয়েছি। এক কথায় বলতে পারিস স্পন্দনের ডান হাত।

আর মাফিয়া বলতেই যে শুধু খুনাখুনী করে এমনটা নয়, আর সে যে নিরীহ কোনো মানুষকে খুন করে এমনটাও নয়!
যারা এ সমাজের কীট , মনে করে দেশের কোনো ইম্পর্ট্যান্ট প্রজেক্টের সুরক্ষা ইত্যাদি কাজ করে স্পন্দন। যাকে এ কথায় বলে হিডেন মাফিয়া!’

ইনায়াতের মাথা যেন ঝিমঝিম করছে। একের পর এক রহস্য তার সামনে এসে জড়ো হচ্ছে। কি হচ্ছে এসব তার সাথে!

রাতের টিমটিমে আলোয় বেশ আলোকিত হয়ে রয়েছে চারিপাশ। চোখ যেন নির্ঘুম ইনায়াতের। রাত প্রায় বারোটা বেজে গিয়েছে।
একটু পর স্পন্দন ব্যালকনি দিয়ে নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে। রুমে এসে দেখে ইনায়াত চুপটি করে খাটের একপ্রান্তে গুটিসুটি মেরে বসে আছে!

কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে ইনায়াত। পেছনে ঘুরে দেখে স্পন্দন দাঁড়িয়ে রয়েছে। কয়েকদিনের তফাতে যেন স্পন্দন পুরোটাই বদলে গিয়েছে। চুলগুলো বড় বড় হয়ে গেছে।

ইনায়াতের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে স্পন্দন। তার কোলে মাথা রেখে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলে। এদিকে ইনায়াত হালকা শিউরে উঠে স্পন্দনের স্পর্শ পেয়ে।

ইনায়াতের কোলে মাথা রেখেই বিড়বিড় করে বলে উঠে,

স্পন্দন: ‘ প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিস না, আমাকে তোর থেকে দূরে সরিয়ে দিস না ইনায়াত! ভীষণ কষ্ট হয় তোকে ছাড়া থাকতে।’

স্পন্দনের মুখে এমন কথাবার্তা শুনে মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে ইনায়াতের। সে কি পারবে আবার স্পন্দনকে ফিরিয়ে নিতে!

রুমটা বিভিন্ন ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ক্যান্ডেলের চারপাশে গোলাপের পাপড়ি ছিটানো।
বাহিরে ওয়েদার টাও আজ দারুন। কালো রঙের একটা শাড়ি, কালো কাঁচের চুড়ি, কপালে ছোট্ট একটা টিপ। হালকা সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে ইনায়াত।

হ্যাঁ , সে ঠিক করেছে স্পন্দনকে আবারো মেনে নিবে। তার জন্য এ কয়েকদিনের জমিয়ে রাখা অনুভূতি প্রকাশ করবে। কারণ সে যে ভালোবেসে ফেলেছে স্পন্দনকে!……

চলবে ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here