নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০১

0
6461

নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০১
অধির রায়

“থ্রার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে এক ঘরে রাত কাটানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ তুই রুম থেকে এখনই বেরিয়ে যাবি৷ যদি বেরিয়ে না যাস, আমি তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বাধ্য হবো।” শুভ্র রুমে প্রবেশ করেই বলে উঠে।

রাত অধীর আগ্রহে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করছিল৷ শুভ্র রাতের অনেক ভালো সম্পর্ক দেখে দুই পরিবারের লোক তাদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ রাত আর শুভ্রর বিয়ে হয় প্রায় দুই বছর আগে। শুভ্র এতদিন নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেনি বলে তাদের বিয়ের পূর্ণতা পায় নি৷ আজ শুভ্র এন্ড রাতের ফুলসজ্জা।

রাত শুভ্রর কথা শুনে দেহ থেকে সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে। রাতের চোখ থেকে একের পর এক অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। শুভ্র এই দুই বছর একটি বারও নিজের ইচ্ছাতে রাতকে ফোন করেনি৷ রাত নিজে থেকে শুভ্রকে ফোন করে শুভ্রর খবর নিত৷

–রাত কান্না জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” তুই কেন কেমন করছিস? আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি৷”

— শুভ্র মুচকি হেঁসে, ” তোর মতো মেয়েকে এই শুভ্র চৌধুরী ভালোবাসবে। শুভ্র চৌধুরীকে এই দিনও দেখতে হবে, যে আমি তোদের মতো থ্রার্ট ক্লাস মেয়েকে ভালোবাসো।”

— শুভ্র তুই এমন করছিস কেন? তাহলে তুই আমাকে বিয়ে করেছিস কেন?

— কে তোকে বিয়ে করেছে? আমি তোকে বিয়ে করিনি৷ তোকে আমার কাঁধে জোর করে তুলে দিয়েছে এই পরিবার। পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে না পাচ্ছি তোকে লাথি দিয়ে বের করে দিতে৷

— তুই আমাদের বিয়ে অস্বীকার করতে পারিস না৷ আমি তোকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা তুই কখনও অস্বীকার করতে পারবি না৷

— আর ইউ মেড৷ আমি তোকে ভালোবাসবো। তোদের মতো মেয়েদের সাথে ভালোবাসার খেলা, খেলা যায়৷ ভালোবাসা যায় না৷

— “এতদিন কেন আমাকে মিথ্যা ভালোবাসা দেখিয়েছিস?” শুভ্রর কলার ধরে।

— “আমি তোকে ভালোবাসা দেখাতে যাব৷ আমায় রুচি এখনও এতটা নিচে নামেনি৷ তোকে ভালোভাবে বলছি তুই আমার রুম থেকে চলে যা৷ “এক ঝাটকা দিয়ে শুভ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠে।

— করুন স্বরে রাত বলে উঠে, ” প্লিজ শুভ্র তুই এমন করতে পারিস না৷ তুই আমাকে এভাবে পায়ে ঠেলে দিতে পারিস না৷ আমি তোকে ভালোবাসি। তুই যদি আমায় ভালো না বাসিস, বিয়ে কেন করলি? কেন আমার জীবন নষ্ট করলি?

— আমার কোন কাজ নেই৷ তোকে আমি পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি৷ কোনদিন শুনেছিস বিয়ে করে বউকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে দেয় তাও আবার দুই বছর৷ তুই এখনো তাহলে বুঝতে পারলি না৷

— হ্যাঁ আমি কিছু বুঝিনি৷ আর বুঝতেও চাইনা৷ আমি তোকে ভালোবেসে এসেছি এতদিন। আর ভালোবেসে যাব৷ কেউ আমাকে এই বাড়ি থেকে বের করতে পারবে না৷

রাতের গালে কষিয়ে বসিয়ে দেয় একটা থাপ্পড়। রাত থাপ্পড়ের আঘাত সহ্য করতে না পেরে কাভাড়ের সাথে ধাক্কা খায়৷ সাথে সাথে রাতের ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরতে থাকে৷

— শুভ্র রাতের গাল চেপে ধরে বলে উঠে, ” তোর মতো থ্রার্ট ক্লাস মেয়ের সাথে এক রাতের জন্য বিছানা শেয়ার করা যায়৷ কিন্তু লাইফ পার্টনার হিসেবে তোকে রাখা যায় না৷”

গাল এতটাই জোরে চেপে ধরে রাতের চোখে অশ্রু এসে পড়ে৷ টপ করে রাতের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে৷ শুভ্র রাতের চোখের অশ্রু দেখে রাতকে ছেড়ে দেয়৷

— শুভ্র তুই আজ আমাকে আঘাত দিচ্ছিস! এক সময় তুই আমার আঘাতে নিজে কষ্ট পেতিস৷ আর আমার মতো মেয়ের সাথে বিছানা শেয়ার করা যায়৷ কিন্তু সারা জীবন আমার সাথে থাকা যায় না৷ হ্যাঁ আমিও একটাই বলি। এভার তুই দেখ আমি কি করি?

— তুই কি করবি?

— তোরা ছেলেরা কি মেয়েদের ভোগের বস্তু মনে করিস? মেয়েদের কোন সম্মান নেই৷ আমি এই বাড়িতেই থাকবো৷ আর তোর বউ হিসেবে থাকবো।

— কর্কট কন্ঠে আক্ষেপ নিয়ে বলে উঠে, “তোকে আমি কোনদিন স্ত্রী হিসেবে মানি না৷ ”

— রাখ তোর পুরাতন ডায়লগ। আমাকে কি হিন্দি সিরিয়ালের অভিনেত্রী মনে হয়? তুই আমাকে বলবি আর আমি মেনে নিব৷ তোকে যদি আমি নাকে দড়ি দিয়ে না ঘুরাতে পারি তাহলে আমার নাম রাত নয়।

রাত আর কিছু না বলে ফুলসজ্জার সমস্ত ফুল টেনে ছিঁড়ে ফেলে৷ ফুলগুলো সাইট করে নিজে বিছানা করে শুয়ে পড়ে। শুভ্র কি করবে, সেদিকে রাতের কোন খেয়াল নেই?

শুভ্র রাতের কর্মকাণ্ড দেখে আরও ক্ষেপে যায়৷ শুভ্র রাতকে বিছানা থেকে টেনে নামায়৷ রাতের গায়ে এভার হাত তুলতে নিলেই রাত শুভ্রর হাত ধরে ফেলে।

— তুই কি আমাকে অবুঝ শিশু ভাবিস? যখন খুশি হাত তুলবি৷ এর পর তুই আমার গায়ে একটা আঘাত করলে আমিও তোর গায়ে পুরো আঘাত ফিরিয়ে দিব৷

শুভ্র আরও ক্ষেপে যায়৷ রাতের হাত চেপে ধরে পিছন দিক থেকে৷ হাত পিছনে চেপে ধরাতে রাত তেমন কিছু করতে পারছে না৷ হাতটা অনেক জোরে চেপে ধরেছে যার ফলে হাতে অনেক ব্যথা লাগছে৷ কিন্তু রাত শুভ্রর সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চাইছে না৷

— রাত চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” শুভ্র হাত ছেড়ে দে৷ ভালো হবে না বলছি৷

— ভালো কিসে হয়? সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে৷ আমি যেহেতু বলেছি তোকে রুমে থাকতে দিব না মানে থাকতে দিব না৷ তোকে রুম থেকে বের করেই ছাড়বো।

— আমি এই রুম থেকে কোথাও যাব না৷ আমি এউ রুমেই থাকবো। প্লিজ শুভ্র আমাকে বের করে দিস না৷ বাড়ির কথা একবার ভেবে দেখ।

— বাড়ির কথা ভেবে আমি আমার জীবন নষ্ট করতে পারি না৷ সামনে আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাকেই ভাবতে হবে।

রাত কিছুতেই শুভ্রর সাথে পেরে উঠতে পারছে না। কোন উপায় না পেয়ে রাত শুভ্রর পায়ে জোরে লাথি দেয়৷ যার ফলে শুভ্র রাতের হাত ছেড়ে দেয়। কিন্তু সাময়িক সময়ের জন্য৷ পরক্ষণেই রাতের মুখ চেপে রাতকে বেলকুনিতে নিয়ে আসে৷

রাত খুব ভয় পেয়ে যায়। রাতকে বেলকনিতে থেকে ফেলে দিবে না৷ কিন্তু রাতকে বেলকনি থেকে ফেলে দিতে পারবে না৷ কারণ বেলকনিতে গ্রিল জুড়ে দেওয়া৷

— রাতকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে, ” তুই এতই বাড়ির জন্য ভাবিস আমার জানা ছিল না৷ তোকে আমি আমার রুমে রাখবো না৷ তুই এই বেলকনিতেই থাকবি৷

রাত দেহে কোন শক্তি পাচ্ছে না৷ আর কত লড়াই করবে। রাত ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। চোখ থেকে অনবরত অশ্রুর ধারা ঝড়ে যাচ্ছে। আজ রাতের চোখের অশ্রু মুছে দেওয়ার মতো কেউ নেই৷

— রাত কষ্ট করে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, “শুভ্র তুই কিন্তু আমার সাথে অন্যায় করছিস৷ আমি যদি নারী সমিতির কাছে যায়৷ তাহলে তোর কি অবস্থা হবে জানিস?”

— “আমি শুভ্র চৌধুরী। আমি কাউকে পরোয়া করি না৷ তোর নারী সমিতি আমার কিছু করতে পারবে না৷ নারী সমিতির প্রধানকে ডেকে আন৷ আমিও দেখি সে কি করে? পরিত্যক্ত স্ত্রী কিনা আজ নারী সমিতির সভাপতি।” ঘৃণার সাথে বলে চলে যায় শুভ্র।

রাত দৌড়ে দরজা আটকানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়৷ রাত আসার আগেই শুভ্র বেলকনির দরজা বন্ধ করে দেয়৷ রাত দরজায় বসে চোখে জল ফেলে যাচ্ছে৷

–রাত কান্না করতে করতে বলে উঠে, ” কেন শুভ্র তুই আমার সাথে এমন করছিস? কি দোষ করেছি আমি? তোর কথাতেই তো আমাদের বিয়ে হয়েছিল।আমাকে বলা হয়েছে তুই নিজে থেকে আমাকে বিয়ে করতে চাস৷ আজ কেন তুই আমাকে অস্বীকার করছিস?

রাতের চোখের জল আজ কোন বাঁধা মানছে না৷ চোখ থেকে অনবরত ঝড়েই যাচ্ছে। আজ বাহিরে কোন বৃষ্টি নেই৷ তবুও রাতের চোখে বৃষ্টি। হৃদয় ভালোবাসা ভাঙার ঝড়। রাত কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই।
___________

সকালে রাতের ঘুম ভাঙে গরম চায়ের ছ্যাঁকার মাধ্যমে। রাত ঘুম থেকে উঠে দেখে শুভ্র তার আঙ্গুল গরম চায়ের কাপে চেপে ধরে আছে৷ রাত চিৎকার করে জেগে উঠে।

— শুভ্র কেউ এভাবে কারো ঘুম ভাঙায়৷ তোর মাথা ঠিক আছে তো? ক্ষেপে বলে উঠে।

— আমার মাথা ঠিক আছে। আমি এভাবেই ঘুম ভাঙায়৷ তোর মতো থ্রার্ট ক্লাস মেয়েকে আমি আদর করে ঘুম ভাঙাবো৷ তুই কি করে ভাবতে পারলি?

রাত নিজের আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয়৷ গরম চায়ের কাপে হাত ধরে রাখার জন্য অনেকটা ঝলছে গেছে। আঙ্গুল থেকে চামড়া সরে গেছে। রাত কান্না জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” মানুষ এতটা নিষ্ঠুরতম হতে পারে আমার জানা ছিল না৷ সব থেকে অবাক হচ্ছি তোকে দেখে। তোর এই পরিবর্তন আমাকে আকাশ পাতাল ভাবিয়ে দিচ্ছে।

— তোর লেকচার বন্ধ হলে বাহিরে যা৷ মা এসে তোকে ডেকে গেছে। আমার কোন ইন্টারেস্ট ছিল তোকে জাগানো। কিন্তু তোকে আমি একদম সহ্য করতে পারছি না৷ তুই আমার কাছ থেকে চলে যায়৷ সেখানে খুশি সেখানে যা৷ টাকা লাগলে বল টাকা দিব৷

— আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাব না৷ আমিও দেখি তুই কিভাবে আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেস? তুই এই খেলা শুরু করেছিস৷ কিন্তু আমি এই খেলার ইতি টানবো।

রাত চোখের জল মুছে ফেলে। নিজেকে শক্ত করে নেয়৷ সে আর হার মানবে না কারো কাছে৷ রাত কাভাড় থেকে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ স্নান করে সুতি কাপড় পড়ে রান্না রুমে চলে আসে৷ রাত রান্না রুমে এসে নিজের পোড়া স্থানে হলুদ লাগিয়ে নেয়৷

— রাত নিজের শ্বাশুড়িকে সালাম করে বলে উঠে, ” মা আপনি যদি অনুমতি দেন, আমি সবার জন্য ব্রেক ফাস্ট বানাবো৷”

— রাতের শ্বাশুড়ি মুচকি হেঁসে ” রাত তুমি একা পারবে না৷ তুমি বরং আমাকে সাহায্য কর৷”

— না মা। আপনি রুমে যান৷ আমাকে একা কাজ করতে দেন৷ প্লিজ মা আমাকে একটা সুযোগ দেন!

— পাগলি মেয়ে একটা৷ তোমার যা খুশি তুমি আমাদের জন্য তাই বানাও। কোন সাহায্য লাগলে আমাকে ডাক দিবে।

— ওকে মা৷

রাতের শ্বাশুড়ি রুমে যেতেই রাত ফোন বের করে কাকে যেন ফোন দেয়? তার পর বাড়ির সবার জন্য লুচি আর আলুর দম বানায়৷ সাধারণ লুচি আর আলুর দম সবার প্রিয়।

খাবার বানানোর পর আবার রাতের ফোনে ফোন আসে৷ রাত ফোন রিসিভ করতেই তার শ্বাশুড়ি মা রান্না রুমে চলে আসে।

— আরে দোস্ত। এতদিন পর আমার কথা মনে পড়ল। তুই আমার বিয়েতে আসলি না কেন? দোস্ত তুই খুব খারাপ। তোর সাথে আমার কোন কথা নেই৷

ফোনের ওপর পাশ থেকে, ” ম্যাম আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন না? ম্যাম আপনি কি আবুল তাবুল বকছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে তো।

— হ্যাঁ আমার মাথা ঠিক আছে। তাকে গোডাউনে আটকিয়ে রাখ। তার ব্যবস্থা সন্ধ্যায় করব৷



শুভ্র লুচি মুখে দিতেই ঝালের চোটে খেতে পারে না৷ লুচিতে প্রচুর পরিমাণ ঝাল দিয়েছে। আর আলুর দমে প্রচুর পরিমাণ লবণ৷ কিছু বলতে নিলেই….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here