নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০২

0
4054

নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০২
অধির রায়

শুভ্র লুচি মুখে দিতেই ঝালের চোটে খেতে পারে না৷ লুচিতে প্রচুর পরিমাণ ঝাল দিয়েছে। আর আলুর দমে প্রচুর পরিমাণ লবণ৷ শুভ্র কিছু বলতে নিলেই রাত বলে উঠে, ” বাবা লুচি আর আলুর দম ঠিক আছে তো?

— শুভ্রর বাবা বলে উঠেন, ” হ্যাঁ মা৷ সবকিছু পারফেক্ট আছে৷ আমি ভাবতেই পারিনি তুমি এত সুন্দর আলুর দম আর লুচি করবে।

— শুভ্রর মাও বলে উঠে, ” রাত তুমি আমাকে হার মানিয়ে দিয়েছো? আমিও এত ভালো রান্না করতে পারব না৷

— কি হলো শুভ্র খাচ্ছো না কোন? তোমার রিয়েক্ট দেখে মনে হচ্ছে লুচিগুলো খাবারের অযোগ্য। (শুভ্রর বাবা)

— এইতো বাবা খাচ্ছি৷
খাবার গুলো সত্যিই অযোগ্য। কি করে খাবো? আমার খাবার বানিয়ে দিয়েছে যত অখাদ্য কুখাদ্য। যা মুখেও দেওয়া যায় না৷ রাত তুই এখনো এই শুভ্র চৌধুরীকে চিনতে পারিস নি৷ তোর অবস্থা যদি আমি খারাপ করতে না পারি তাহলে আমিও শুভ্র নয়।

— রাত শুভ্রর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠে, “মাই ডিয়ার হাসব্যান্ড এটা টেইলার ছিল। আমার সাথে লাগলে আসলে তোর অবস্থা আমি কি করব, তুই ভেবেই পাবি না? আমি এই বাড়ির বউ হিসেবে এসেছি৷ আর বউ হিসেবে এই বাড়িতেই সারাজীবন থাকবো।

রাতের কথা শুনে শুভ্র উঠে পড়ে। রাগে শুভ্রর শরীর কাঁপতে থাকে। এমনি খাবারে প্রচুর পরিমাণ লঙ্কার গুড়ো তার উপর লবণ৷

— কি হলো শুভ্র উঠে পড়লে কেন? তোমার খাওয়া শেষ কর৷ এভাবে খাবার ছেড়ে উঠতে নেই। (শুভ্রর বাবা)

— বাবা আমার খাওয়া শেষ। আমি আর কিছু খেতে পারব না৷ যথেষ্ট পরিমাণে খেয়েছি৷

শুভ্র আর কথা না বাড়িয়ে হন হন করে রুমে চলে যায়৷ রুমে এসে রুমের অবস্থা বারোটা বানিয়ে ছাড়ে। শুভ্রর পিছন পিছন রাতও রুমে আসে। রুমে এসে রাতের চোখ আকাশ প্রাণে। রুমের ভিতরে ছোটখাটো ঝড় বয়ে গেছে। কোন জিনিস জায়গা মতো নেই।

— রাত মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” মি.স্বামী অল্পতেই হেরে গেলে চলবে। আমার সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। অল্প হারে এই অবস্থা! ”

— রাতের কাছে তেড়ে এসে, ” রাত তুই খাবারে এসব কি মিশিয়ে দিয়েছিলি?”

— কই কিছু মেশাইনি৷ শুধু অল্প পরিমাণ লবণ আর লঙ্কার গুড়ো মিশিয়েছি৷ সত্যি বলছি এর বেশি কিছু মেশানো হয়নি৷

— রাতকে দেয়ালে চেপে ধরে বলে উঠে, ” রাত তুই ভালো করেই জানিস আমি ঝাল সহ্য করতে পারি না৷ তাহলে কেন তুই ঝাল দিলি?”

— রাত শুভ্রকে দূরে ঠেলে দিয়ে, “তুই ও ভালো করেই জানিস আমি কারো অপমান সহ্য করতে পারি না৷ তুই আমাকে কাল অপমান করলি কেন? তুই আমাকে মেনে নে তাহলে তোকে কোন অখাদ্য খেতে হবে না৷ ”

— তোর মতো থ্রাড ক্লাস মেয়েকে আমি কোনদিন মেনে নিব না৷ নিচু জাতের মেয়ে। তোদের সাথে ভালোবাসা যায় না৷ আই হেড ইউ।

শুভ্র বিছানায় লাথি দিয়ে ছাঁদে চলে যায়৷ রাত বিছানায় বসে পড়ে৷ আর ভাবতে থাকে, ” কেন শুভ্র তুই আমার সাথে এমন করিস? তুই তো আমাকে খুব ভালোবাসিস৷ তাহলে কেন আমাকে নিজের কাছে রেখে দিতে চাস না? শুভ্র আমি যেহেতু তোর বাড়িতে এসে পড়েছি৷ কিছুতেই আমি এই বাড়ি থেকে যাব না৷

শুভ্র ছাঁদে এসে রাতকে তাড়ানোর জন্য অনেক পরিকল্পনা করে। শুভ্র রাতকে তাড়িয়েই ছাড়বে। শুভ্র রাতকে নয় রাতই শুভ্রকে ছেড়ে দিতে বাদ্য হবে৷ নিজের পরিকল্পনার কথা ভেবে শুভ্র মনে মনে বলে উঠে, ” রাত তুই এভার কোথায় লেজ গুটিয়ে পালাবি৷ ”

_______________

অন্ধকার রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে নিলয়৷ নিলয় হাতে পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছে না৷ এমনভাবে বেঁধে রেখেছে একটু নড়তেও পারছে না৷ রাত রুমে এসে ঝাপসা আলোতে নিলয়কে লাথি মারে।

— রাত চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” মি. নিলয় চৌধুরী তোর সাথে আমার কোন শত্রু নেই। তোকে এখানে তুলে এনেছি তুই একটা মেয়েকে তুলে নিয়েছিস৷ বল মেয়েটা কোথায়? তার খরব দিয়ে দে তোকে ছেড়ে দিব৷ ”

— নিলয়ের মুখের বাঁধন খুলে দেয়। নিলয় অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠে, ” তোর এতই ক্ষমতা তাহলে খুঁজে বের করে মেয়েটাকে। আমাকে কাছে জানতে চাস কেন?”

— নিলয় তোকে আবারও বলছি মেয়েটা কোথায়? তোর জীবনের মায়া যদি থাকো তাহলে বল মেয়েটা কোথায়?

নিলয় রাতের দিকে থুথু নিক্ষেপ করে বলে উঠে, ” তোর মতো মেয়ে ছেলের কাছে কখনো মাথা নিচু করব না৷ তুই কোনদিন জানতে পারবি না মেয়েটা কোথায়? তুই তার নাগালেও পৌঁছাতে পারবি না৷ তুই কালো জগতের কিং এর কাছে তুচ্ছ। এমন না হয় তোর জীবন দিতে হয়৷

রাত নিলয়কে খুব জোরে একটা লাথি মারে। রাতের কথামতো নিলয়কে চেয়ারে বেঁধে ফেলা হয়।

— তোদের মুখ থেকে কিভাবে কথা বের করতে হয়, এই রাত ভালো করেই জানে?

— তুই রাত হলে আমি দিন৷ দিনের আলোতে রাতের কোন অস্তিত্ব থাকে না৷ আঁধার কেটে আসে দিনের আলো। চেষ্টা করলে রাতকে হার মানানো যায়৷ কিন্তু তুই দিনকে হার মানাতে পারবি না৷ তুই কিছুতেই কোন কিছু জানতে পারবি না৷

— রাত বিলয়ের মুখ চেপে ধরে বলে উঠে, ” তোর মুখ থেকেই আমি সব কথা বের করবো। তুই কিভাবে না বলে থাকিস আমিও দেখবো?”
রাত তার লোকদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, “প্লাসটা আমাকে দে। নিলয়কে একটু জামাই আদর করি৷

— তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস। তুই কি একবারও ভেবে দেখেছিলি৷ আমি যদি এখান থেকে বের হতে পারি তাহলে তোর জীবন শেষ। তুই আর পৃথিবীর আলো দেখতে পাবি না৷

— নিলয়ের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ তুই বন্ধি খাঁচার পাখির মতো ছটফট করছিস। তোকে কেউ খুঁজে পাবে না৷ যদি আমি না চায়৷ আমার অনুমতি ছাড়া এখানে একটা পাখিও আসতে পারে না৷

— নিলয় অট্টহাসি দিয়ে, ” একটা পাখি নয় আমাকে বাঁচাতে এখানে দুইটা দানব এসে হাজির হয়েছে অলরেডি।”

রাত কিছুটা ভয় পেয়ে যায় নিলয়ের কথা শুনে। নিজের ভয়টা লুকিয়ে রাত নিলয়ের পায়ে জোরে আরও একটা লাথি মারে। প্লাস দিয়ে নিলয়ের হাতের নখ তুলতে থাকে।

নিলয়ের চিৎকার সারা রুম কেঁপে উঠে। নিলয় সহ্য করতে পারছে না৷ নখ থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে। ভীষণ ব্যথা করছে। রাত নিমিষেই একটা নখ তুলে ফেলে৷

— “নিলয় এভার বল না হলে তোর প্রতিটি আঙ্গুলের নখ তুলে ফেলবো।” প্লাসের দিকে নজর দিয়ে৷

— তুই কিছুতেই জানতে পারবি না৷ তুই ভেবেছিস আমাকে টর্চার করলে তুই জিতে যাবি৷ ভুল! তুই সব সময় অন্ধকারেই থাকবি৷ তুই কোনদিন জিততে পারবি না৷

— আমিও দেখি তুই মুখ না খুলে কিভাবে থাকিস? আমি তোর মুখ থেকেই কথা বের করেই ছাড়বো ৷ কার হুকুমে তুই এমন কাজ করেছিস, তার হিসাব আজ আমি তোর মুখ থেকেই বের করব?

রাত আবার একটা নখ তুলতে নেয়৷ নিলয় আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নিলয় তার কথার অন্যথা করেনি। নিলয় কিছুতেই রাতের সামনে মুখ খুলেনি।

— রাত লাথি দিয়ে নিলয়কে মাটিতে ফেলে দেয়৷ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” কেউ যেন নিলয়ের মুখে এক ফোঁটা জলও না দেয়৷ যতক্ষণ পর্যন্ত মুখ না খুলবে এভাবেই সে পড়ে থাকবে। তার আঙ্গুল ব্যান্ডেজ করে দিস কেউ৷

রাতের বাড়ি ফিরতে লেট না হয় সেজন্য রাত তারাতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। রাত রুমে এসে দেখে শুভ্র বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে বললে ভুল হবে রাত শুভ্রকে ঘুম পাড়িয়ে গেছে। শুভ্রকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে। যেন শুভ্র কিছু জানতে না পারে।

বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুম ঠিক করে রান্না করতে যায়। রান্না শেষ করে শুভ্রর জন্য খাবার রুমে নিয়ে আসে৷ শুভ্রর ঘুম ভাঙায় জল ছিঁটিয়ে।

— এই যে মি. হাসব্যান্ড। এখন রাত কয়টা বাজে? সেই বিকাল থেকে ঘুমিয়ে আছিস কেন?

— শুভ্র ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠে, ” বিরক্ত করবি না৷ আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।”

শুভ্র পুনরায় আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে। রাত লেবু গোলা জল নিয়ে এসে শুভ্রকে খাইয়ে দেয়৷ যার ফলে শুভ্রর ঘুর কেটে যায়৷

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” তুই আগে রাতের খাবার খাবি তার পর ঘুম আসবি৷”

— শুভ্র মাথায় হাত দিয়ে ” আমার মাথা ভীষণ ভারি ভারি লাগছে কেন? আমার কি হয়েছিল? আমি কিছু মনে করতে পারছি না কেন?

— তোর কিছু হয়নি৷ মেবি তুই অনেক ক্লান্ত ছিলি তাই তুই ঘুমিয়ে পড়েছিলি অসময়ে। এখন খাবার খেয়ে নে।

— তোর হাতের খাবার আমি খাব। তুই ভাবলি কি করে?

— তোকে এই খাবার খেতে হবে। আমি নিজ হাতে তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।

— তোর বানানো খাবার এই শুভ্র চৌধুরী খাবে। তুই ভাবলি কি করে? তোর মতো নিচু স্বভাবের মেয়ের হাতের খাবার খেলে আমার ধম বন্ধ হয়ে আসে।

— এখন থেকে তোকে আমার হাতের খাবার খেতেই হবে৷ আর আমি কি নিচু কাজ করেছি৷ বার বার আমি আমার অপমান সহ্য করবো না৷

— না খাবো না৷ তোর হাতের খাবার আমি কিছুতেই খাব না। তোদের মতো মেয়েদের বিশ.. শুভ্র থেমে মনে মনে বলে উঠে, ” শুভ্র শান্ত হ।এটাই সুযোগ তুই তোর প্রতিশোধ নিতে পারবি৷ তুই খাবার খেয়ে নে।”

— থেমে গেলি কেন? তুই খাবার তাহলে খাবি না৷ ওকে আমি খাবার রেখে আসছি৷

— না থাক। রেখে আসতে হবে না৷ আমি খেয়ে নিচ্ছি৷

রাত খুশি মনে শুভ্রকে খাবার সার্ভ করে দেয়৷ শুভ্র এক লোকমা খাবার মুখে নিয়েই ফেলে দেয়৷ খাবার গুলো ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে।

— তোর মতো থ্রার্ড ক্লাস মেয়েকে আমার বিশ্বাস হয় না৷ কে বলতে পারে? তুই খাবারে বিষ মেশাসনি। তুই খাবারে বিষ মিশিয়ে আমাদেরও মেরে ফেলতেও পারিস। লোভী মেয়ে একটা৷

— ওই তুই আমাকে যা খুশি তাই বল। আমি কিছু মনে করবো না৷ তোর কি মনে হয়? আমি টাকার লোভে এই বাড়িতে এসেছি৷ আমি এই বাড়ির বউ৷ সব টাকা আমার৷

— স্টপ। এইগুলো পরিষ্কার করে ফেল। এইতো বউ হওয়ার শখ। বউয়ের মতো কাজ কর। এসব পরিষ্কার করে ফ্লোরে শুয়ে পড়বি৷ আমাকে একদম বিরক্ত করবি না৷ তুই কোনদিন আমার মনের কাছে আসতেও পারবি না৷

শুভ্র কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। রাত চোখের জল মুছে সবকিছু পরিষ্কার করে। রাত শুভ্রর কথামতো ফ্লোরে শুয়ে পড়ে। শুভ্র উঁকি দিয়ে দেখে রাত কি করছে?

শুভ্র উঁকি দিয়ে দেখতে পায় রাত ফ্লোরে শুয়ে কান্না করছে। রাত একেবারে ভেঙে পড়েছে। যা দেখে শুভ্র অনেকটা খুশি হয়৷ শুভ্র নিজেই নিজেকে উৎসাহ দেয়৷ শুভ্র তুই ঠিক ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিস৷ এভাবে চালিয়ে যা৷ এভাবে কাজ করলে রাত তোকে ছেড়ে দিতে বাদ্য হবে।

সকাল বেলা এমন একটা কান্ড ঘরতে পারে শুভ্র কল্পনাও করেনি।

চলবে….

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here