মিথ্যে_অভিনয় পর্বঃ ০৯
লেখকঃ আবির খান
তাহসান ওর কাছে এসে ওর দু’গালে হাত রাখে। মাইরা কেঁপে উঠে অজানা অনুভূতিতে৷ ওরা এত কাছাকাছি যে তাহসানের আর ওর নিঃশ্বাস এক হয়ে যাচ্ছে। মাইরা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। তাহসান মুচকি হাসি দিয়ে মাইরাকে এবার আর নিরাশ না করে ও ওর পরম স্পর্শ মাইরাকে বুলিয়ে দেয়। মাইরা যেন এই পরম স্পর্শেরই অপেক্ষায় ছিল। স্বামী তার স্ত্রীকে শেষমেশ মেনে নিল। এটাই বুঝি তার প্রমাণ। দুজন হারিয়ে গিয়েছে দুজনের মাঝে। কেউ কাউকে ছাড়ছে না৷ হঠাৎই তাহসান অনুভব করে মাইরার চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে। ও মুহূর্তেই চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে, হ্যাঁ মাইরা কাঁদছে। কিন্তু কেন! তাহসান আস্তে আস্তে ওকে ছাড়ে। মাইরা মাথা নিচু করে কাঁদছে আর হাপাচ্ছে। তাহসান বুঝতে পারলো না হঠাৎ কি হলো। ও মনে মনে ভাবছে, ও কি ভুল করলো? মাইরা কি এটা চায় নি? তাহলে তো ও অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছে। তাহসান কিছুটা অস্থির হয়ে বলে,
– সরি সরি সরি…প্লিজ ক্ষমা করে দেও। নিজের উপর কন্ট্রোল ছিলো না। আর আমি ভেবেছি তুমিও চাচ্ছো তাই…প্লিজ কেঁদো না। প্লিজ মাইরা।
~ অারে আমি এর জন্য কাঁদছি নায়ায়ায়া…
– তাহলে!
~ বোকারাম এটা খুশীর কান্না। আমি ভেবেছি আপনি ওই ডাইনীটার জন্য আমাকে কখনোই কাছে টেনে নিবেন না আমাকে আদর করবেন না। কিন্তু তা হয় নি। তাই খুশীতে কাঁদছি। (বাচ্চাদের মতো করে বললো)
তাহসান আর না হেসে পারে না। ও মাইরার চোখ মুছে দিয়ে ওকে টান মেরে বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তোমার মতো আর কেউ হয় না। মানুষ খুশী হলে হাসে আর তুমি কান্না করো। পাগলি একটা।
~ হুহ। আপনি অনেক পঁচা। সুযোগ পেয়ে আমাকে…
– এইই একদম মজা করবা না। তাহলে এবার আমি তোমার নাকে কামড় দিব।
মাইরা একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে মাথা তুলে তাহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ নেন কামড় দেন।
তাহসান পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। ও ভাবে নি মাইরা সিরিয়াস হয়ে যাবে৷ এদিকে মাইরা তাহসানকে ভীতু অবস্থায় দেখে খিলখিল করে হেসে দেয়। তাহসান লজ্জা পায়। মাইরা হাসতে হাসতে বলে,
~ আপনার জায়গায় আমি হলে, সত্যি সত্যিই কামড় দিয়ে দিতাম। হিহি
– ধুর তুমিও না।
~ হিহি।
মাইরা হাসতে হাসতে আবার তাহসানের বুকের সাথে মিশে যায়। তাহসান মুচকি হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে,
– জানো তুমি আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছো। তমাকে হারিয়ে ভেবেছিলাম জীবন থেকে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। পুরো শূন্য একটা জীবন ছিলো। কিন্তু তুমি এসে আমার শূন্য জীবনকে আবার পূর্ণ করে দিলে। আমাকে আবার হাসতে শিখালে।
মাইরা কিছু বলে না। ও তাহসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। তাহসান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– কি হলো?
~ আমাকে ছেড়ে কখনো যাবেন না তো?
– আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে আছি। তুমি থাকবে তো?
~ আল্লাহ চাইলে অবশ্যই থাকবো।
– কালকে বাসায় যাবে নাকি আরো থাকবে?
~ নাহ, কালকে চলে যাই। বিয়ের পর মেয়েদের বেশী বাপের বাড়ি থাকতে নেই। মানুষ কি না কি আবার বলে।
– ধুর মানুষের কথায় কান দিলে হবে৷ পাছে লোকে তো কত কিছুই বলবে। তাদের জন্য আমরা কষ্ট পাবো কেন! তোমার যখন ইচ্ছা হবে আব্বু আম্মুর সাথে এসে দেখা করবা কোন সমস্যা নেই।
মাইরা মাথা তুলে খুব খুশী হয়ে তাহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ সত্যিই?
– তিন সত্যিই।
~ ইয়েএএএ।
বলেই তাহসানের দু’গালে চুমুতে ভরিয়ে দেয় মাইরা। তাহসান পুরো বোকা হয়ে যায়। আর মাইরা লজ্জায় আবার বুকে মাথা লুকায়৷ এভাবে সারারাত গল্প আর দুষ্টামি করতে করতে কেটে যায়।
১৫.
পরদিন সকালে,
মাইরার বেডটা জানালার পাশে হওয়ায় স্নিগ্ধ সকালের আলো এসে ওদের মুখের উপর পড়ে। দুজনেরই একসাথে ঘুম ভাঙে। আজও দুজন একসাথে মিশে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তাহসান মাইরার সোনালী মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে অসম্ভব মায়াবী লাগছে। তাহসান চোখ জুড়িয়ে মাইরাকে দেখছে। মাইরাও প্রাণ ভরে তাহসানকে দেখছে। তাহসান দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম একটা ছেলে। ফরসা মুখ, মাঝামাঝি আকারের সিল্কি চুল, টানাটানা চোখ, গালে হালকা চাপ দাঁড়ি। একদম নায়ক নায়ক লাগে ওকে। তাহসান মাইরাকে আরো কাছে টেনে আস্তে করে বলে,
– রাতের মিষ্টিটা আবার পাওয়া যাবে? খুব মজা লেগেছে। কিন্তু মন ভরে নি।
মাইরা লজ্জায় এবার শেষ। ও কি বলবে নিজেও জানে না। তাহসান আবার বলে,
– কই বলো।
~ আপনিও না। লজ্জা দিয়েন না প্লিজ…
– এহহ! আসছে আমার লজ্জাবতী। বাসায় গেলে লজ্জা সব বের হবে নে। হাহা।
মাইরা লজ্জা পেয়ে হাসি দিয়ে তাহসানের বুকে মাথা লুকায়। তাহসান ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এই শান্তি আর কোথাও নেই। জানো খুব ভালো লাগে যখন তুমি আমার একদম কাছে থাকো। আমি সব কষ্ট ভুলে যাই।
~ আমারও অনেক ভালো লাগে। তবে এখন উঠতে হবে৷ নাহলে খারাপ ভাববে সবাই।
– আচ্ছা আচ্ছা। আমিও তাহলে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি। সকালে না হাঁটলে দিনটা ভালো যায় না আমার।
~ আচ্ছা যান।
– চলো একসাথে ফ্রেশ হই।
~ কিইইইই?
– আরে দাঁত ব্রাশ করবো সেটা বললাম। একসাথে করি আসো।
~ ওও তাই বলেন।
– হুম। আর রইলো ওই ফ্রেশ, সেটা বাসায় যেয়ে নি। হাহা।
বলেই তাহসান বেড ছেড়ে উঠে পড়ে। আর মাইরা লজ্জায় লাল হয়ে বসে থাকে। ওদের মাঝে গতরাতে মিষ্টি স্পর্শ আদান প্রদান ছাড়া আর তেমন কিছু হয় নি। তাহসান চায় মাইরাকে একেবারে আপন করে নিবে৷ কিন্তু তার আগে ওকে একটা কাজ করতে হবে৷ যাতে ওদের মাঝে আর কোন মনের দূরত্ব না থাকে। তাহসান সেটার জন্য মনে মনে একটা বড়ো প্ল্যান করছে। মাইরাকে অনেক বড়ো একটা সারপ্রাইজ দিবে ও। তাহসান এসব ভাবতে ভাবতে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। ও মাইরাদের বাসার পাশের গলিটা পার করতেই একটা ওর বয়সী ছেলে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। আর বলে,
– আপনি আমার মাইরার হাজবেন্ড তাই না?
– আমার মাইরা? মানে! মাইরা আপনার কিভাবে?
– হায়রে ভাই! আসেন এখানে বসে কথা বলি। তাহলে বুঝবেন।
– কোন বসাবসি নাই। যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন। মাইরা আপনার মানে?
– ওরা সাথে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক ছিল। খুব ভালবাসতাম ওকে। ও আমাকে ভালবাসতো। কিন্তু আপনি আইসা ওকে নিয়া গেলেন আমার কাছ থেকে। আমাদের আলাদা কইরা দিলেন। কেমনে পারলেন ভাই?
অপরিচিত ছেলেটার কথা শুনে মুহূর্তেই তাহসানের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। ও নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। তাহসান ছেলেটার কাছে গিয়ে বলল,
– ওর সাথে আপনার সম্পর্ক ছিল!
– জি ভাই। পুরো ২ বছরের। আমরা একসাথে ঘুরছি, খাইছি আরো কত মজা করেছি।
– অসম্ভব! আপনি মিথ্যা বলছেন। মাইরা এমন মেয়ে না। ও কখনো এমন করবে না। আমি এসব বিশ্বাস করি না।
– জানতাম আমি আপনি বিশ্বাস করবেন না। এই দেখেন আমাদের একসাথে ছবি। আরো কিছু পারসোনাল ছবি আছে আমি তা দেখাতে পারবো না।
তাসনার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সত্যি সত্যি মাইরার আর ছেলেটার একসাথে ছবি। ও যেন বিশাল বড়ো একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। নিজের চোখকে ও বিশ্বাস করতে পারছে না৷ মাইরা কেন ওর সাথে এমন করলো? কেন? তাহসান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– ছবি গুলো আমাকে দিন।
– নেন ভাই নেন। ওকে দেখাইয়েন। ও আমাকে শেষ করে দিয়েছে ভাই। আমাকে ভালবেসে আর বিয়ে করেছে আপনাকে।
– আপনার নাম কি?
– রাতুল। ভাই ও অনেক খারাপ। আপনি কেন ওরে বিয়া করলেন। ও আমার মতো আপনার জীবন শেষ করে দিবে৷ দেইখেন। ওরে ছাইড়া দেন।
বলেই ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। তাহসান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবিগুলো দেখছে। ওরা সত্যিই অনেক কাছাকাছি। তাহসান আবার ধোকা খেল। ওর পুরো মুখটা মলিন হয়ে গিয়েছে। তাহসান বাসায় চলে আসে। মাইরা দরজা খুলে। তাহসানকে দেখে বলে,
~ ওমা এত তাড়াতাড়ি চলে আসলেন যে?
তাহসান কোন কথা না বলে সোজা মাইরার রুমে চলে যায়। মাইরা কিছু বুঝতে পারে না। ও তাহসানের পিছু পিছু যায়। মাইরা রুমে ঢুকে দেখে…
চলবে..?
সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।
আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷