নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০৪

0
4406

নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০৪
অধির রায়

বাড়িতে ফিরে এসে শুভ্র নিজেকে দোষী ভাবছে। ছাঁদে বসে রাতের সাথে কাটানোর দিনগুলো মনে করছে। কতই না ভালো ছিল তাদের ভালোবাসার দিনগুলো৷ ভার্সিটিতে কতই না দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া করেছে৷ ভাবতেই চোখের কোণে জল এসে পড়ে। কেন রাতের সামনে গেল না শুভ্র। তাহলে আজ তাকে এই দিন দেখতে হতো না৷

শুভ্র আকাশের দিকে মুখ করে মনে মনে বলে উঠে, ” হ্যাঁ সৃষ্টিকর্তা। আমি রাতের সাথে অনেক অন্যায় করেছি৷ প্লিজ তুমি রাতের মন সদয় করে দাও৷ রাত যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়৷

রাত বারোটার দিকে শুভ্র বসে বসে ফোন গেম খেলছিল। এমন সময় রাত রুমে আসে। রাতকে দেখে শুভ্র ফোন রেখে রাতের সামনে দাঁড়ায়৷

— রাত শুভ্রর দিকে তাকিয়ে,” কিছু বলবি? আমার ঘুম পাচ্ছে। যা বলার কাল সকালে বলিস?”

— রাতের বাহু চেপে ধরে, ” তোকে কতবার রুমে আসার জন্য ডেকেছি৷ কানে যায়নি আমার কথা। ”

— দেখ শুভ্র আমার অনেক কাজ ছিল। আমি কেন আসিনি সে কৈফিয়ত তোকে দিব না?

— তুই আমাকে কৈফিয়ত দিতে বাদ্য৷ কারন আমি তোর….

— শুভ্রকে থামিয়ে রাত বলে উঠে, ” আমি কি তোর? আমি তোর সাথে ঝগড়া করতে চাই না৷ তুই কখন ঘুম আসবি?”

— আমি কখন ঘুম আসবো সেটা তোর না জানলেও চলবে,!

শুভ্র রাগ দেখিয়ে ফোন নিয়ে সোফায় বসে গেম খেলতে শুরু করে। রেগে শুভ্রর গা কাঁপছে। ভালো ভাবে কথা বললে আসলো রাগিয়ে দিল।

রাত মুচকি হেঁসে কাথা আর বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।

— শুভ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে, ” কিছু মানুষ আছে যারা ফ্লোরে ঘুমাতে পারে না তাও ফ্লোরে ঘুমাতে চাই৷ জানিস ফোন একজন মানুষ আমাকে রাতে চুপিচুপি জড়িয়ে ধরে ঘুম আসে৷”

— আমি কাউকে কিছু বলতে চাই না৷ ফ্লোরে ঘুম না আসলে বেলকনিতে বসে বসে গল্পের বই পড়ে যাব৷ তাও কারো বিছানায় ঘুমাতে যাব না৷

রাত কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। রাত আজ কিছুতেই বিছানায় যাবে না৷ রাত কাঁথা মুড়ি দেওয়ার সাথে সাথে শুভ্র ফোন রেখে রাতকে কোলে তুলে নেয়।

— এই তুই আমাকে নিচে নামা। ভালো হবে না কিন্তু শুভ্র।

— তুই যদি আর একটা কথা বলিস তোকে ফ্লোরে ফেলে দিব৷

— তাতে আমারই ভালো হবে। মারা যাব৷ আর কাউকে জ্বালাতে আসবো না৷

মারা যাওয়ার কথাটা শুভ্রর বুকে তীরের মতো লাগে। শুভ্র ভাবতে পারেনি রাত এমন কথা বলবে। রাতের কথা শুনে শুভ্রর চোখে জল এসে পড়ে। নিজের চোখের জলকে বাঁধ মানিয়ে রাতকে বিছানা জড়িয়ে ধরে।

— শুভ্র আমি তোর সাথে কিছুতেই ঘুম আসবো না৷ তুই আমাকে ছেড়ে দে। ফ্লোরে ঘুমাতে না পারলে সোফায় ঘুম আসবো।

— এত বড় বিছানায় তোর মতো একটা ছোট বাচ্চা থাকলে আমার কোন সমস্যা হবে না৷

— শুভ্র আমি বাচ্চা নয়৷ তাছাড়া আমি যথেষ্ট লম্বা মেয়ে। আমাকে দেখে বাচ্চা মনে হয় না৷ শুধু আমি একটু চিকন৷ তবে কি জানিস, চিকন মেয়েরা হলো হিন্দি সিরিজের নায়কা?

— ওলে আমার নায়কা রে। কথা না বলে ঘুমাতে দে। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।

— তোকে ঘুমাতে না করছে কে? তুই ঘুম আসবি ভালো কথা৷ তুই আমাকে ছেড়ে দে। আমি তোর সাথে ঘুম আসবো না৷

— আমি তোকে ছেড়ে দিব না৷ তুই আজ থেকে আমার বুকের মাঝে ঘুম আসবি৷ এটাই আমার শেষ কথা৷

— আমি তোর বুকের মাঝে কিছুতেই ঘুমাতে যাব না৷ আর হ্যাঁ কাউকে তো বিশ্বাস করা যায় না৷ কখন বাহু দ্বারা চাপ দিয়ে মেরে ফেলে৷

— তুই এই কথা বলতে পারলি। আমি তোকে মেরে ফেলবো। আমি তোকে মেরে ফেলার কথা জীবনেও ভাবতে পারি না৷

— আমি কিছু বলি নি। আমার হাতের খাবারে বিষ থাকলে তাহলে আমাকে শত্রু ভেবে কেউ মেরে ফেলতে পারে।

শুভ্রর রাতের কথা ঠিক ভাবে মেনে নিতে পারল না৷ শুভ্র রাতের ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল। রাত ভাবতেও পারেনি শুভ্র এমন কাজ করবে। শুভ্র কোনদিন রাতকে লিপ কিস করেনি৷ আজ প্রথম শুভ্র রাতকে লিপ কিস করে।

রাতের ভালো লাগাকে বিসর্জন দিয়ে শুভ্রকে সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ শুভ্রর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে বলে উঠে, ” কারো অনুমতি ছাড়া কাউকে কিস করা ধর্ষণের সমান অপরাধ। আমার মতো থ্রার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে তোর এসব কাজ করা ঠিক না৷ তোর জন্য আমার থেকে ভালো কেউ অপেক্ষা করছে।

রাত শুভ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়৷ বেলকনিতে এসে কান্না করতে থাকে। শুভ্র একই ভাবে শুয়ে আছে। শুভ্র কানে শুধু বাজছে ধর্ষণের কথা৷ কারো বিরুদ্ধে তাকে কাছে পাওয়া ধর্ষণ। কিস করাও ধর্ষণ।

রাত বেলকনির গ্রিল ধরে কান্না করতে থাকে। আজ নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। শুভ্র বিছানা থেকে উঠে বসে। শুভ্র নিজেকে খুব অপরাধ ভাবছে। শুভ্রর নিজের দোষ এখন বুঝতে পারছে। ভালোবাসার মানুষ যখন কষ্ট দেয় তখন পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট বাসা বাঁধে বুকের ভেতর৷ শুভ্র বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে আসে৷ বেলকনিতে এসে দেখে রাত গ্রিল ধরে কান্না করে যাচ্ছে।

রাত নিজের কাঁধে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখের জল মুছে পিছন দিকে ঘুরে তাকায়।

— তুই এখানে কেন? তোর বলে ঘুম আসছে। তাহলে তুই এখানে কি করছিস?

— রাত তুই কেন আমার সাথে এমন করছিস৷ তুই আমাকে ধর্ষণ বানিয়ে দিলি৷ আমি কি দোষ করেছি। তুই কেন আমাকে উপেক্ষা করছিস?

— ওকে নো সমস্যা আপনি যদি ডিভোর্স চান তাহলে কাল দিয়ে দিব৷ আপনাকে আর বিরক্ত করব না৷ আমিও চাইনা জোর করে কোন সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে।

— স্টপ রাত৷ এখানে ডিভোর্সের কথা কোথা থেকে আসছে। তুই এক লাইন সব সময় বেশি বুঝিস কেন?

— প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন না মি. শুভ্র চৌধুরী। আমাকে একা ছেড়ে দেন৷ আমার ভালো লাগছে না৷ আমি আর কোন চাপ নিতে পারছি না৷ এখান থেকে চলে গেলে আমি খুশি হবো।

— শুভ্র মনে মনে বলে উঠে, ” রাত আমি তোর রাগ আজ রাতেই মাঝে ভেঙে ফেলবো। তুই যদি নিজেকে পাকা তেতুল মনে করিস তাহলে আমি বোনু ওল। তুই আজ আমার সাথে এক বিছানা ঘুমাতে বাদ্য হবি৷

— রাত রেটিং অ্যাবিউজের দিকে তাকিয়ে, ” আপনি এখানে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন কেন? অনেক রাত হয়েছে৷ প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দেন৷ আমার ভালো লাগছে না৷ আর আপনিও শুয়ে পড়েন। ”

শুভ্র রাতের হাবভাব কিছুই বুঝতে পারছে না৷ যে মেয়ে সারা জীবন তুই করে বলে এসেছে সে আজ আপনি করে বলছে। শুভ্রকে অপরিচিত মানুষ মনে করছে৷

শুভ্র রাতকে কোলে তুলে নেয়। রাতের দিকে চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” তোর অনেক নাটক হয়েছে। আমি আর কোন নাটক দেখতে চাই না৷ তুই এখন একটিও কথা বলবি না৷ ”

— চোখ বন্ধ করে, “মায়ায় জাড়াবেন না আমায়? প্লিজ আমাকে নিচে নামিয়ে দেন৷ ”

শুভ্র রাতকে একটু ঝাঁকুনি দিতেই রাত শুভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে৷ শুভ্র মুচকি হেঁসে রাতকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ রাত বিছানা থেকে চলে যেতে নিলেই শুভ্র রাতকে এক টানে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসে। এতে রাতের খোলা কেশগুলো থেকে শুভ্রর মুখের উপর পড়ে যায়৷

রাত নিজের চুল ঠিক করতে নিলেই শুভ্র রাতকে বিছানায় চেপে ধরে রাতের চুলগুলো কানের কাছে গুজে দিতে থাকে। রাত শুভ্রর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে৷ শুভ্র কোনদিন রাতের এত কাছে আসেনি৷

রাত নিজেকে সংযত করে বলে উঠে, ” দেখেন আমার এত কাছে আসবেন না৷ আমার কেমন জানি লাগে। প্লিজ দূরে সরে যান৷”

— তাহলে তুই বল তুই আমার সাথে থাকবি।

রাত কি বলবে? রাতেরও তো মন চাই শুভ্রর সাথে থাকতে। রাত কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না৷

— ওকে আমি বিছানায় থাকবো। তবে একটা শর্তে?

— কি শর্তে তুই থাকতে চাস?

— আমাদের মাঝখানে ইন্ডিয়ান পাকিস্তান বর্ডার থাকবে। মানে তোর ওই কোলবালিশটা৷

— শুভ্র মুচকি হেঁসে ” ওকে তুই যেমননটা চাস৷” মনে মনে বলে উঠে, ” আমি তোকে তো বুকের মাঝে নিয়েই ঘুম আসবো। আর তুই আমাকে এখন তুই করে সম্মোধন করেছিস৷ ইয়া হু।”

রাত শুভ্রর বিপরীত মুখী হয়ে শুয়ে পড়ে। শুভ্র ফোনে গেমস খেলতে বিজি হয়ে যায়। মাঝে মাঝে রাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা৷ রাতও মাঝে মাঝে দেখে শুভ্র ঘুমিয়েছে কিনা৷

রাতের চোখ লেগে আসতেই শুভ্র রাতকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসে৷ রাত একটু নড়তে নিলেই শুভ্র রাতকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। রাত জেগে থেকেও না জাগার ভান করে শুভ্রর বুকে ছোট বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন সকাল বেলা রাত এমন একটা ডিসিশন নিবে শুভ্র ভাবতেও পারিনি৷

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here