আমার তুমি❤️,পর্বঃ০২

0
11744

আমার তুমি❤️,পর্বঃ০২
লেখিকা:ফারজানা তাবাসসুম

এই মেয়ে তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। পায়ের এমন অবস্থা আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো??

আমার সামনে এসে কথাগুলো বললো আয়াশ।আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাদের কথাগুলোই এতোক্ষন যাবৎ ভাবছিলাম।পায়ে যে ব্যাথা পেয়েছি তার দিকে আমার কোনো হেলদোল নেই। চোখের পানি গালেই শুকিয়ে গেছে।আয়াশের দিকে করুন চাহুনি দিলাম।

″আমাকে দয়া আর সম্মান রক্ষায় বিয়ে করেছেন?মি:আয়াশ আরহাম? অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম…″

আদ্রিতার এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো আয়াশ। নিজেকে ঠিক করে কঠোর গলায় বললোঃ কি বলতে চাইছো তুমি?

″আমি আপনার আর বাবার সব কথা শুনেছি।আমার কাছ থেকে আর কিছু লুকাবেন না। আমার অন্তত এই সত্যটুকু জানার অধিকার আছে!!! কেনো বিয়ে করলেন আমাকে?? ″ অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালাম আয়াশের দিকে।

………(আয়াশ চুপ করে আছে। হাতের মুঠো শক্ত
করে নিয়েছে)

কি হলো বলুন!!! দয়া করেছেন আমাকে?দায়িত্ববোধ এর কারনে বিয়ে করেছেন আমায়?? এক আঙুল নিজের দিকে তাক করে বললাম।চোখের পানি ছল ছল করছে। খুব করে চাইছে মন,,আয়াশ বলুক″না, আদ্রি না। আমি তোমাকে কোনো দয়া বা দায়িত্ব রক্ষায় বিয়ে করেনি। আমার মনে তোমার জন্য কিছু আছে″

হ্যাঁ!!!!!!আমি তোমায় দয়া করেই বিয়ে করেছি। আমার বাবার কথা আর সম্মান রক্ষার্থে তোমায় বিয়ে করেছি। তোমার জন্য আমার মনে না কিছু ছিলো আর নাই বা কিছু আছে। তুমি এখন আমার কাছে শুধুমাত্র একটা দায়িত্ব!!!!শুধুই এক দায়িত্ব !!! এর চেয়ে বেশি কিছুই না। বুঝলে তুমি???

চলে গেলো আয়াশ। ধপ করে বসে পড়লাম মাটিতে।বাধ ভেঙে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে শত শত অশ্রুকণা। দুহাতে মুখ চেপে কান্না আটকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি।কেন করলে তুমি আমার সাথে এমন আল্লাহ্। আমিতো শুধু একটুখানি ঠাই চেয়েছিলাম ঐ মানুষটার মনে কিন্তু সেটাও তুমি দায়িত্ব, সম্মান রক্ষা এইসব নাম দিয়ে দিলে। আমি কি দোষ করেছি আয়াশ???চিৎকার করে ডুকরে কেদে উঠলো আদ্রিতা।

………

ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে আয়াশ। তার রাগ লাগলে বা কোনোকিছু নিয়ে ডিপ্রেসড থাকলে এমনটা করে সে। এতে বিপদ আছে জেনেও সে এইটা করে। ″মরলে মরবো তার আগে মনের শান্তি দরকার ″ এই কথাই ভাবে আয়াশ।

হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে আয়াশের গাড়ির সামনে চলে আসলো। তা দেখে আয়াশ জোরে ব্রেক কষলো।সামনের দিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আয়াশ।আরেকটু হলেই এক্সিডেন্টটা হয়ে যাচ্ছিলো। তরিঘরি গাড়ি থেকে নেমে ছেলেটার কাছে গেলো আয়াশ। বাচ্চাটার বয়স কমজোর ৫ বছর হবে। আয়াশ গিয়ে দেখলো বাচ্চাটা কান্না শুরু করে দিয়েছে।কোলে তুলে নিলো তাকে।এটাওটা বলে বাচ্চার কান্না থামানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে সে।

″বাবা আমাল কোলে আসো। এই যে বাবাই এসে পলেছি না,,,আসো,, আসো।″ একজন ৩২-৩৩ বছর বয়সি লোক ছেলেটাকে আয়াশের কোল থেকে নিয়ে নিলো।

আপনি কি এই বাচ্চার বাবা?? লোকটিকে বললো আয়াশ।

–জ্বী

কেমন বাবা আপনি। আপনার এতটুকু এক বাচ্চাকে এইরকম রাস্তায় ছেড়ে দিছেন। আরেকটু হলেই তো ছেলেটার কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। একটুও কমণসেন্স নেই??

লোকটি করুন কন্ঠে আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বললো:

সরি!! ভাই। আসলে ওকে আমি আটকে রাখতে পারি না। এই রাস্তার ওপর পাশেই আমাদের বাসা। এইটুকুনি বাচ্চা তার মাকে খোজার জন্য প্রতিদিনই আমার দৃষ্টির অগোচরে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। ও তো আর বোঝে না ওর মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। টাকার লোভ মানুষকে কতোটা নির্মম আর স্বার্থপর করে তোলে যে,এমন একটা ফুটফুটে বাচ্চাকে ছেড়ে চলে যায়। লোকটি কেদেই ফেললো। বাচ্চা ছেলেটি তার ছোট্টো ছোট্টো হাত দিয়ে বাবার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। আধো আধো স্বরে বলছেঃ ″বাবাই, বাবাই কা,,দো না,,তুমি।″

এই দৃশ্য দেখে আয়াশের চোখের কোণে পানি জমে গেছে। তাদের বিদায় জানিয়ে গাড়িতে এসে বসলো আয়াশ। মুখ উপর দিক করে ছিটে হেলান দিয়ে বসলো। চোখের কোণে জমে থাকা পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। আজকে আবারও শত পুড়নো স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠেছে মনে।

″ এইসব কারণে!!!! ঠিক এইসব কারণেই আমি কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারি না। অনুভুতিতো দুরস্থান। যেখানে নিজের মা টাকার কারনে তার সন্তানকে ছাড়তে পারে সেখানে অন্য এক মেয়েতো কিছুই না। যেই মেয়েকে আমি আমার মন প্রান দিয়ে ভালোবাসবো, যাকে আমার সবটুকু উজার করে দিবো, যার প্রতি আমার আসক্তি থাকবে, সেও যে দিন শেষে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে? আর কেই বা দিবে তার গ্যারান্টি। তাই আমার এই ″শুন্য জীবন ই শ্রেয়।″ এই আয়াশ আরহামের লাগবে না কাওকে। চোখ মেলে তাকালো আয়াশ।

………

মহিলাটি তার ছেলের ঘরের সামনে গেলো।ছেলেটি এখনো সেই বেলকনিতেই বসে আছে। ছেলেটার পেছনে গিয়ে দাড়ালো,,

″দিহান!!″

………

দিহান!
………

দিহান! কথা বলবি না তুই?? নিজের মা কেও পড় করে রাখবি? কষ্ট হয় খুব আমার বুঝিস না কেন তুই??

দিহান পেছনে না তাকিয়েই উত্তর দিলো:

কষ্ট??? কষ্টের কথা তুমি বলছো আমাকে??তোমার কিসের কষ্ট, আম্মু??কোনো কষ্ট নেই তোমার!! গলাটা নুইয়ে গেলো দিহানের। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রাতের আকাশে। চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গেছে। সুন্দর চুল গুলো উসকো খুসকো হয়ে গেছে।শুকিয়ে গেছে অনেকটা।

ছেলের এই ব্যাপক পরিবির্তন আর সহ্য করতে পারছে না মিসেস:রেহনুমা। আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না ভেজা কন্ঠে বললো:

বাবা তুই আমায় ক্ষমা করে দিসরে। তোর ভালোর জন্যই আদ্রিকে তোর জীবন থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছি আমি। ও চলে গেলে যে তোর এইরকম অবস্থা আমায় দেখতে হবে তা আগে জানলে কখনোই অমন করতাম না আমি। আঁচল দিয়ে নিজের চোখ মুছে বেরিয়ে আসলেন ঘর থেকে মিসেস:রেহনুমা।

দিহান তার ফোনটা অন করলো। এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে ফোনের মাঝে ভেসে উঠলো আদ্রির উজ্জ্বল মুখখানি।আলতোভাবে ছুইয়ে দিলো দিহানের হাত।

″ভালোবাসি তো এখনো″ দিহান বুকে জড়িয়ে নিলো ফোনের মাঝে থাকা আদ্রির ছবিটাকে।

………

ভালোবাসি আয়াশ। আমার ভালোবাসা কি গ্রহন করবেন না কখনো আপনি?আপনার দেওয়া শত কষ্টের মাঝেও আপনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আয়াশের একটা ঘুমন্ত ছবির দিকে তাকিয়ে বলছে আদ্রিতা(আদ্রি)। এই ছবিটা কিছুদিন আগেই তুলেছে সে। সেদিন আয়াশের জ্বর হয়েছিলো।ছবিতে একদম বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আয়াশ। কি নিষ্পাপ লাগছে,,কেউ বলতেই পারবে না এই ছেলে নাকি এতো ভয়ংকর ও হতে পারে। হাল্কা হাসলো আদ্রি।

আচমকা কারো দরজা ঠেলেতে দেখে তরিঘরি ছবিটা পাশের টেবিলে রাখা লেপটপের নিচে রেখে দিলো আদ্রি। শুকনো ঢোক গিললো। আয়াশ এসে পড়েছে। আয়াশের মুখের দিকে তাকাতেই আদ্রির চোখ মুখ ছোট হয়ে গেলো।কেমন অস্থিরভাব আয়াশের চোখে মুখে।

কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করছিলো আয়াশ।আদ্রিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে যায় আয়াশের। আদ্রির দিকে না তাকিয়েই বিরক্তিকর কন্ঠে বললো :

এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? ছেলে দেখনোনি কোনোদিন? এবার একটু ভাব নিয়ে আয়াশ বললোঃ ″নাকি আমার মতো এমন হ্যান্ডসাম আর কিউট ছেলে দেখোনি। এইবার আদ্রির দিকে ঘুরে বাকা হাসি দিলো আয়াশ।

আমিতো শুকনো ঢোক গিলছি একের পর এক।কি বলছে কি উনি এইসব। পাগল হয়ে গেছে নির্ঘাত। নাক মুখ কুচকে বিরক্তির আভা ফুটিয়ে তুললাম মুখে। আয়াশ চলে গেলো বাথরুমে।

………

আমি বসে বসে ফোন টিপছি। আজ আর আমার কোনো কাজ নেই। পায়ে ব্যাথার কারনে সারাদিন শুধু সুয়ে বসে কাটালাম।হঠাৎ আয়াশ আমার সামনে এসে দাড়ালেন।আমিতো পুরো ভুত দেখার মতো ছিটকে গেলাম। হাত থেকে ফোন বিছানায় পড়ে গেলো। বাথরুম থেকে কখন বের হলেন উনি?? উনার হাত আমার দিকে বাড়াতে লাগলেন। আমি ভয়ে শেষ। আমাকে কি চড়-টড় মারবেন নাকি?কিন্তু আমিতো কিছু করিনি। খেয়াল করলাম আয়াশ আমার পাশের টেবিল থেকে লেপটপটা নিতে যাচ্ছেন। হাফ ছাড়লাম পরোক্ষনেই মনে পড়লো এই রে,আমিতো সেখানে ছবিটা রেখেছিলাম। আয়াশ লেপটপটা উঠাতে নিবেন সেই মুহুর্তে আর কিছু না ভেবে আয়াশকে এক টান দিলাম আয়াশ এসে আমার উপর পড়লেন। ইশশ শুধু পড়লে এক কথা ছিলো। আমার ঠোঁটজোড়ার উপর তার ঠোঁট মিলিয়ে গেলো। সাথে সাথে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আমি। এর জন্য আবার আমায় কি শাস্তি পেতে হবে?????পরবর্তীতে জানিয়ে দিবো আপনাদের?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here