আমার তুমি❤️,পর্বঃ০৪

0
5699

আমার তুমি❤️,পর্বঃ০৪
লেখিকাঃ ফারজানা তাবাসসুম

আয়াশ আদ্রিকে কোলে নিয়ে রুমে আসলো। সাবধানে বেডে শুইয়ে দিলো।আয়াশ আদ্রির মুখপানে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। এ যেনো এক ঘোর লাগানো দৃষ্টি। শুকনো ঢোক গিললো আয়াশ।

কি হচ্ছে কি আমার? আমি এই মেয়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি নাতো?? আদ্রির পাশে মেঝেতে বসে পড়লো আয়াশ। আদ্রি এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কি মায়াবীনি লাগছে এই মেয়েটাকে।আদ্রির কপালে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে কানে গুজে দিলো আয়াশ। তখনি তার নজর পড়লো আদ্রির গলার পাশে কানের ঠিক নিচের অংশটুকুতে কামড় এর দাগ।আয়াশ ভালোভাবে পরখ করে দেখলো চারটে দাতের দাগ। রক্ত লেগে আছে সেই অংশটুকুতে।এইটা কিসের কামড় এর দাগ তা বুঝতে পারছে না আয়াশ। পকেট থেকে ফোন বের করে পর পর ৩টা ছবি তুলে নিলো আদ্রির ক্ষত স্থানটুকুর। আয়াশের এক বন্ধু আছে নিভান ওর এইসব ব্যাপারে খুব ভালো অভিজ্ঞতা আছে। ওকে দেখালেই বলতে পারবে কিসে কেটেছে আদ্রিকে। আয়াশ নিজেও একজন ডক্টর তবে এই কাটার দাগ কিসের হতে পারে তা সে বুঝতে পারছে না।

আদ্রিকে একটু চেকআপ করে নিয়েছে আয়াশ। আদ্রির শরীর দুর্বল। কিন্তু এই কামড়ানোর ফলে আদ্রির শরীরে কোনো বিষক্রিয়া বা সাইড ইফেক্ট কিছুই লক্ষ করছে না আয়াশ। ১ ঘন্টা হয়ে গেছে আদ্রির শরীর স্বাভাবিক দেখে শস্তি পেলো আয়াশ।

″আদ্রির প্রতি এ কেমন অনুভুতি জাগছে আমার মনে?আমি দুর্বল কেন হয়ে পড়ছি ওর প্রতি!! ওর কষ্টে আমার কেনো কষ্ট হচ্ছে?? নাহ্ এইসব কিছু আর বাড়তে দেওয়া যাবে না।আদ্রি একটু সুস্থ হলে ওকে কিছুদিনের জন্য আমার থেকে দূরে সড়িয়ে রাখবো। হুম!! এইটাই সঠিক হবে।″

.……

রাত ৩টা ছুই ছুই আয়াশের চোখ ঘুমে ভেঙে পড়ছে।আয়াশ আদ্রির পাশেই কাচুমাচু হয়ে শুয়ে পড়লো যতোটা সম্ভব দুরত্ব বজায় রেখে।

!!
!!
!!

সকালে আয়াশের আগে আমার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম থেকে উঠেই ঘারে অসম্ভ ব্যাথা অনুভব করি।গলার পাশে হাত দিলে তরল কিছু আমার হাতে লাগে। হাত সামনে এনেই চোখ আমার বড় বড় হয়ে যায়। ঘর কাপানো চিৎকার দিয়ে বসি।

″আয়ায়ায়া!!!!!!!!!!!!!!″

আয়াশ আদ্রির পাশেই বেঘোরে ঘুমচ্ছিলো। আদ্রির এমন চিৎকারে ধরফরিয়ে উঠে বসলো আয়াশ।

ক্,,কী,, কী!!! কী হয়েছে??? আয়াশের চোখ লাল টক টকে হয়ে আছে। ঘুম হয়নি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

″র,,রক্ত″ কাপা কাপা গলায় বললাম। আয়াশের দিকে আমার হাত বাড়িয়ে দেখালাম হাতের রক্ত।আয়াশ প্রথম বুঝতে পারলো না, আদ্রি কি বলছে।হাত দিয়ে চোখ কচলালো তারপর আদ্রির হাতে রক্ত দেখে তার মনে পড়লো কালকের রাতের কথা।আয়াশ আদ্রিকে কাল রাতের সব ঘটনা বললো।

–আদ্রি তুমি কাল অজ্ঞান হয়ে গেছিলে কি করে? আর তোমার গলায় এইটা কিসে কামড়ালো? তোমার কি কিছু মনে আছে?

—উহু্!! কাল রাতের কথা আমার মনে নেই।আমি আমার পাশে কিছু একটার ছায়া দেখেছিলাম তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।

–অহ্!! আচ্ছা উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। পায়ের ব্যাথা আছে এখনো?

″আমি মাথা ডানে বামে নাড়ালাম,যার অর্থাৎ না।″

!!
!!

সময় স্রোতের মতো প্রবাহমান। দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো ১ মাস।আয়াশ এখন আমায় আর আগের মতো এতো শাস্তি দেন না। আমাকে যে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন সেটাও নয়। উনি ওনার মেডিকেল ডিউটি নিয়ে সারাদিন ব্যাস্ত থাকেন আর আমি বাসায় বাবার সাথে সারাদিন থাকি। বাবা ও কিছুদিন আগে চলে গেছেন সুইজারল্যান্ড ৬ মাসের জন্য। এখন আমাকে বাসায় একাই থাকতে হয়।

………

রাতে খাবার টেবিলে বসে আছি আয়াশের জন্য। একটু আগেই উনি এসেছেন। খাবারের মাছি তাড়াচ্ছি বসে বসে। আজকাল বড্ড বেশী ঘুম কাতুরে হয়ে গেছি। শুধু ঘুম পায়,এখনো ঝিমোচ্ছি।

আয়াশ নিচে এসে দেখতে পেলো আদ্রি ঝিমোচ্ছে। আদ্রি সোজা হয়ে বসছে ত আবার ঘুমের জন্য ঝুকে পড়ছে।আদ্রির এই অবস্থা দেখে মুচকি হাসলো আয়াশ। নিজেকে ঠিক করে আদ্রির সামনে গিয়ে দাড়ালো। আর জোরে এক কাশি দিলো। আয়াশের কাশির শব্দে আদ্রি ছিটলে গেলো।

ম,,মেরে ফে,,লার,, ধ,ধান্দা করছেন নাকি। বুকে থু থু দিয়ে আয়াশের দিকে বড় বড় চোখে তাকালাম আমি।

আদ্রির এই কাজটা আয়াশের মোটেও পছন্দ হলো না। নাক মুখ কুচকে নিলো সে।আজ পর্যন্ত সে এই ভয় পেলে থু থু দেওয়ার লজিকটা যে কি তা বের করতে পারলো না। নিজের এতো বড় ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়ে কি লাভ টা হলো আমার।

চেয়ার টেনে বসে পড়লো আয়াশ। আদ্রিকে উদ্দেশ্য করে বললো:

— আদ্রি তুমি তোমার নিজের বাড়ি থেকে ঘুরে আসো। তোমার যতোদিন ইচ্ছা থাকতে পারো সেখানে।

হঠাৎ আয়াশের এমন কথা শুনে কেমনই যেনো খারাপ লাগা কাজ করছে আমার মাঝে।বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।আমাকে ভালোবাসেন না মানলাম তার জন্য কি আমায় এখন দেখতেও পারেন না আপনি?? নিজের থেকে দূরে সড়িয়ে রাখতে চান? ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখের পানি আটকে রেখেছি।

আয়াশ মুখ তুলে আড়চোখে একবার আদ্রির দিকে তাকালো।

″আশ্চর্য ব্যাপার আদ্রির চোখের পানি দেখে,, আমার কেন এতো খারাপ লাগছে।আদ্রির চোখের চিক চিক করা পানি কণা গুলো দেখে আমার মনে সুচের মতো বিধছে কেনো!!! গলা দিয়ে খাবার নামতে চাইছে না।″ আয়াশ খাবার ছেড়ে উঠে গেলো। যেতে যেতেই বললো:

—কাল সকাল সকাল রেডি হয়ে থেকো। মেডিকেল যাওয়ার পথে তোমায় পৌঁছে দিয়ে আসবো। কথা চারটি বলে এলোমেলো পায়ে স্থান ত্যাগ করলো আয়াশ।এখন না গেলে যেনো নিজেকে আর সামলাতে পারবে না আয়াশ।

আদ্রি নিচ দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পানি ফেলতে ব্যাস্ত।

..

আদ্রি রুমে এসে দেখলো আয়াশ বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে। কোলে একটা বালিশ মাথা উপর দিকে,, হাত দিয়ে কপালে স্লাইড করছে।

আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ আয়াশের পাসে গিয়ে সুয়ে পড়লাম।

আয়াশ কপাল থেকে হাত সড়িয়ে দেখলো আদ্রি তাকে পেছন ফিরে শুয়ে আছে। আয়াশ কিছু না বলে লাইট অফ করে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।

…..

সকালে আদ্রি আয়াশের সাথে একটা টু শব্দ ও করেনি। আয়াশের যা যা দরকার সব হাতের কাছে নিয়ে রেখেছে। যেনো আদ্রির কথা না বলতে হয়। আয়াশের কাছে আদ্রির আচরণটা গ্রহনযোগ্য হচ্ছে না।

যে মেয়েকে এতো ধমকানোর পড় ও সারাক্ষন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকতো আজ সে কিনা একটা কথাও বলছে না। আয়াশ ভাবলো,,যাক আদ্রি হয়তো আমাকে ঘৃণা করা শুরু করেছে।

আয়াশের মন তাকে বললো: ″তাহলে তোর খারাপ কেনো লাগছে আয়াশ?তুই ত এইটাই চেয়েছিলি। আদ্রি তোকে ঘৃনা করুক, তোকে ছেড়ে দিক। তাহলে এখন এইসব মেনে নিতেই হবে তোকে″

আয়াশ এক দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ″হুম মেনে নিতেই হবে …!!!″

………

আয়াশ আদ্রিকে তার বাবার বাড়িতে নামিয়ে দিলো। আজ সে মেডিকেল যাওয়ার আগে তার বন্ধু নিভান এর সাথে দেখা করবে। সে কালকেই দেশে ফিরেছে।ফোন নিভানকে কিছু জানায়নি আয়াশ। শুধু বলেছে তাকে কিছু দেখানোর আছে। নিভানকে আদ্রির গলায় কামড়ের দাগটা দেখাবে আজ সে। আর জানবে এইটা কিসের দেওয়া কামড়।

নিভানের বাড়িতে এসে সোজা নিভানের ঘরে ঢুকে পড়লো আয়াশ। নিভান সেখানে নেই। আয়াশ জানে নিভান কোথায় থাকতে পারে । নিভান তার ঘরের দেয়ালের ভেতর বানানো এক সিক্রেট ল্যাবেই সারাক্ষন থাকে। আয়াশ নিভান বলে ডাক দিতেই বড়ো এক পেইন্টিং এর অপর পাশ থেকে আওয়াজ এলো। আয়াশ সেইদিকেই গেলো আর পেইন্টিং আপনা আপনি সড়ে এক দরজার সৃষ্টি করলো।আয়াশ দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো।

রুমের ভেতরে ঢুকেই আয়াশ অবাক। বিভিন্ন কাচের বোয়ামে বাদুরসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী যেগুলো প্রায় বাদুরের মতোই দেখতে।

কীরে আয়াশ ভয় পাচ্ছিস নাকি? চেনা কন্ঠ শুনেই আয়াশ বামে তাকায়। সে আরেক দফা শকড নিভানের এমন পরিবর্তন হয়েছে। চোখে গোল চশমা,,মাথার উসকো খুসকো চুল ঘার ছুইছুই। পড়নে ঢিলে শার্ট,, হাতে গ্লাভস।

আয়াশ নিভানের দিকে এগিয়ে গেলো:

—কীরে? নিভান!!তোর অবস্থাতো একদম সাইন্টিস্ট। হেসে দিলো নিভান আর আয়াশ।

″আচ্ছা কি যেনো দেখাবি তুই আয়াশ। দেখি!!″নিজের চশমাটা ঠিক করতে করতে বললো নিভান।

আয়াশ তার ফোনটা বের করে। গেলারি থেকে একটা ছবি বের করলো। আর বললো:

″ দেখতো নিভান আমার বউ এর গলায় এইটা কিসে কাটলো?? এই কামড় কিসের হতে পারে?? আমি তো এমন কোনো প্রানীই ভাবতে পারছি না। যারা কামড় দিলে এমন হয়ে যায়।″

নিভান আয়াশের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছবির দিকে তাকালো। নিভানের চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ স্পষ্ট। বাম হাত দিয়ে চশমাটা খুলে অস্ফুটস্বরে বললো,,,,

″ভ্যাম্পায়ার″

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here