ভালোবেসে তোমায়,পর্ব: ৭
Writer: Jannat
নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তিশা । বরাররই মিশুক টাইপের ছিল ,খুব সহজেই মানুষের মন জয় করে নেওয়ার এক অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মাইছে । অনেক ফ্রেন্ডদের সাথে ভাব জমাইয়া ফেলছে ।
সবাই তিশাপু ডাকে ।আর তিশান,তিশিনকেও ভালোবেসে ফেলেছে সবাই।
কলেজ ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে আয়নার সামনে ধারালো , ভিন্ন লুকে আবিষ্কার করল নিজেকে। বয়সের ছাপ নেই তবে কষ্টের ছাপ দেখতে পাচ্ছে । বাহির থেকে এই ছাপ হয়তো কারো চোখে পড়ার নেই ,তবে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারবে ।
আগের চেয়ে খানিকটা শুকিয়ে গেছে আর চোখের নিচে কালি জমে গেছে তবুও খারাপ লাগছে না তাকে ।
হাতে কাজলটা নিল ,চোখে একটু কাজল দিলে মন্দ হয় না ।
__এই তোমার কি আর দাড়ানোর জায়গা নেই ,আয়নার সামনে এসেই দাড়াতে হবে ?
__তুমি আয়নার সামনে কি করছ?
__আশ্চর্য ..! আয়নার সামনে মানুষ কি করে হ্যাঁ ?
__যে যাই করুক ,কিন্তু তুমি পারবে না
__মানে ? তোমার মাথা কি গেছে ?
__হু ,তুমি আজীবন আমাতে নিজেকে দেখবে ।
আয়নাতে নয় আমাতে মগ্ন হয়ে নিজেকে সজ্জিত করবে ।
কপালের বাঁকা টিপটা আমি সঠিক করে পড়িয়ে দিব । আমার চোখে তাকিয়ে কাজল পড়বে , আর লেপ্টে যাওয়া কাজল আমি মুছে দিব ।
আয়নাতে তুমি নয় , আমি তোমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখব । আয়না ছাড়া যখন বিফল হবে আর বারবার আয়নায় নিজেকে দেখতে চেয়েও পারবে না ।
তখন অভিমান করে কেঁদে দিবে ।
কাজল লেপ্টে লেপ্ট যখন জল গড়িয়ে পড়বে ,তখন ঠোঁটের ছোয়ায় চোখের জল মুছে দিব ।
__এভাবে বলনা গো আমি একদম পাগল হয়ে যাব । এত ভালোবাসা কি আমার কপালে সইবে ? (গলা জড়িয়ে ধরে)
__সইবে রে পাগলী ।
ভালোবাসাটা যখন আল্লাহ দান করেছেন তখন সহ্য করার ক্ষমতাও তিনি দিয়ে দিবেন (চুলে মুখ গুজে) ।
আর যদি তোমার সহ্য না হয় তাইলে….
(দুষ্টমি হাসি দিয়ে)
__তাইলে কি…?
__ভাবতেছি আর একটা বিয়ে করব ।
.
তিশা অভিমান করে শায়নের গলা ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাড়ালো । চোখে জল টলমল করতেছে আর রাগে নিজের হাতে নিজেই খামচে দিচ্ছে শায়ন গিয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরল
__একদম ছোবে না আমায় ,খারাপ লোক একটা ।
আরো শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরল,,,
__দুষ্টমি করেছি ,সরি বউ । এই বউ সরি তো
__থাক সরি বলতে হবেনা । আপনার জীবন ,আপনি যাকে খুশি তাকে নিয়েই কাটাতে পারেন ।
__জীবনটা আমার কিন্তু সম্পূর্ন অধিকারটা তোর রে পাগলী ।
তোর ইশারায় চলবে যেমনটা তুই চাস । বুঝিস না ক্যান তুই ছাড়া জীবনটা অসম্পূর্ন
__তাইলে বিয়ে করবে কেন বললে (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে)
__তোমার কান্না জড়িত মুখটা দেখার বড় লোভ জন্মালো । খুব ইচ্ছা করছিল কাজল কালো লেপ্ট যাওয়া চোখের জল দেখার তাই আর লোভ সামালাতে পারিনি ।
__কিহ..? (মুহুর্ত্বের মধ্যেই অগ্নিকুন্ডের রুপ ধারন করে ফেলল)
আমাকে কাঁদাতে ভালো লাগে তাই না ,ওকে দেখি কতক্ষন সহ্য করতে পার কান্না
__বললেই হল । আর এক সেকেন্ডও না ,বুকের বাম পাশটায় ব্যাথা পাই তো (এলোপাথারি আদর দিয়ে)
__একদম ফাজলামী না……..
আর কিছু বলার সুযোগ পেল না
__উফফ তুমি আসলেই একটা খারাপ লোক
__হুম তোমারই তো হাজবেন্ড ।
.
ইশ অতীতে ঘুরতে গিয়ে , কাজল লেপ্টে ফেলল তিশা ।
আমি কি সত্যিই তোমার ভালোবাসা সহ্য করা ক্ষমতা রাখিনি ,তাই বুঝি খুব সহজে সরিয়ে দিলে আমায় ।
এখন আর তোমার ইচ্ছা করে কাঁদাতে হয়না ।
তোমার সৃষ্টি কষ্টের মেঘ থেকে প্রতিনিয়ত অজরে বৃষ্টি ঝড়তেছে । এখন আর কেউ ঠোঁটের ছোঁয়ায় চোখের জল মুছে দেয়না ,নিজেই মুছতে শিখে গেছি ।
থেমে নেই আমি,থেমে নেই আমার প্রতিটা মুহুর্ত্ব ।
হয়তো তোমার দিনগুলো সুখে ভরপুর আর আমারটা না হয় কিছুটা কম । তবু যখন এই বাচ্চা ২টির মুখের পানে তাকাই তখন আরো হাজার বছর বেঁচে থাকার প্রেরনা জাগে ।
এদের তুলার ন্যায় নরম হাতগুলো যখন ছুঁয়ে দেয় ,তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে ,,
হ্যাঁ ভালো আছি , খুব ভালো আছি #ভালোবেসে_তোমায় ।
.
অতীতের সুখময় স্মৃতিগুলো লেপ্টে দিচ্ছে কাজল আর তা মুছার বৃথা চেষ্টা করতেছে ।
তোমার দেওয়া কষ্টের কথা মনে পড়েনা বাট মধুময় সময়গুলো স্থীর থাকতে দেয়না । কষ্টগুলো যখন মনে পড়ে তখন ভিতর থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসে ।
আর সুখময় স্মৃতিগুলো যখন মনে পড়ে তখন অস্পর্শ অবিনশ্বর যে রুহ আছে সেই রুহবিন্দু ক্ষতবিক্ষত করে জল গড়িয়ে পড়ে ।
একবার যদি বুঝতে বুক চিড়ে কান্না বের হয়ে আসার যন্ত্রনা তাইলে একে অপরকে কাঁদানো আগে বারবার আতকে উঠতে ।
ক্লাশ ,প্রাইভেট আর বাচ্চাগুলো নিয়ে দিব্যি ব্যাস্ত হয়ে গেছে তিশা । খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া পিছু ফিরে তাকায়না । তাকানোর সময় পেলে তো তাকাবে । ব্যাস্ততার মাঝে ডুবে আছে । তবুএ অচেতন ভাবে কিছু স্মৃতি এসে হানা দেয় ।
.
শায়নের দিনগুলো ডিপ্রেশনের মাঝে কাটতেছে । কোথাও একটু শান্তি পায় না ,অনুশোচনার আগুনে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ।
আল্লাহ আমাকে যথাযথ শাস্তি দিচ্ছে । একটা বাচ্চার কাছে আমাদের ভালোবাসাটা কেন ঠুকনো হয়ে গেল ?
তিশার প্রতি অনুভূতি,অনুভবগুলো কী ফিকে ছিল ?
কেন হেনা নামের মেয়েটা জীবনে আসল ?
আমি কখনো হেনাকে আদৌ তিশার জায়গায় বসাতে পেরেছি নাকি শুধু একটা বাচ্চার প্রয়োজনে..?
অনুতাপের আগুন জ্বলতেছে ,এই আগুন কি কখনো আর নিভে যাবে না ?
একবার শুধু একবার যদি তিশার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পেতাম তাইলে বুকের জ্বালাটা হালকা হত ।
ফর্সা ,চওড়া ,রোমশ বুকটা একদম কাঠ হয়ে গেছে ।
হাজারো চুমো দিত এই বুকটায় ,এখানে মাথা রাখতে না পাড়লে পাগলামী শুরু করে দিত ।
__তিশু পাখি ?
__হুস । ডিস্টার্ব করনা ,দেখনা তোমার স্মেল নিচ্ছি । জানো ,তোমার শরীরে স্মেলটা যখন নিঃশ্বাসের সাথে শিরা-উপশিরা মাধ্যেমে শরীরে প্রতিটা রক্তকনার সাথে মিশে যায় । তখন এক অনাবিল শান্তি চলে আসে । নিজেকে খুব ফুরফুরে লাগে ।
__আমার কোন জিনিসটা তোমাকে বেশি আকৃষ্ট করে । মানে ভালোলাগে ?
__তোমার রোমশ বুকটা আমাকে পাগল করে দেয় ,এখানে মাথা রাখলে নিজেকে ধনী মনে হয় ।
__পাগলী একটা । যদি কখনো এই বুকটা আকৃষ্ট না করে তাইলে ..?
__তাইলে তোমার ওই চোখ । যে চোখের দিকে তাকালে নিজেকে আর নিজের মাঝে খুঁজে পাই না ডুবে যাই ভালোবাসার অতলে
__যদি কখনো এই চোখের প্রতি ভালোলাগা না থাকে ?
__তোমার ঠোঁটগুলো । যখন তুমি ঠোঁটগুলো নাড়িয়ে কথা বল । মনে হয় যেন সকল সৌন্দর্যটা ওখানে এসে ভিড় করছে । ইচ্ছা হয় সেই ভিড়ের মাঝে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলি ।
__ঠোঁটগুলোর ভালোলাগা যখন হারিয়ে যাবে ?
__তোমার হাসি । আমি এক ধ্যানে কয়েক শত ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারি এই হাসির দিকে তাকিয়ে ।
__আর যদি ঠোঁটগুলোর ভালোলাগা হারিয়ে যায় ..
?
__তোমার মায়া মিশ্রিত কন্ঠ । ঘুম ঘুম কন্ঠে যখন
তিশুপাখি বলে ডাক দাও ।
তখন সেই ডাকের প্রতিধ্বনি হাজার বার এই হৃদয়ে বাজে । ইচ্ছা হয় খেয়ে ফেলি সেই ভালোবাসাময় পাগল করা কন্ঠটাকে ।
__উমম .. একসময় এই আমিটার প্রতি থেকেই যদি ভালোলাগা চলে যায় ?
কোনো ইন্টারেস্ট খুঁজে না পাও ,তখন কি ছেড়ে যাবে আমায়..?
__একদম খুন করে ফেলব । তারপর এই বুকের ঘরে তোকে সমাধি দিব ।
এই তুই কি আমার কোনো ভালোলাগার কোনো বস্তু হ্যাঁ ? এত ভালোলাগা খুঁজিস ক্যান ?
এই ছেলে শোন,তুই আমার ভালো লাগা না ,যে কিছুদিন পর পর হারিয়ে যাবে ।
ভালোবাসা ,ভালোবাসা বুঝিস ?
তুই আমার ভালোবাসা । শুধু এ যনমে না ইহকাল ,পরকালেও এই ভালোবাসা বিরাজমান থাকবে ।
যদি কখনো তোর প্রতি আমার ভালোবাসার কমতি পাস ,সেদিন বুঝবি এই দুনিয়াতে আমি নেই ।
তোকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ন । তুই আমার পরিপূর্নতা ।
.
চোখ ভিজে উঠল শায়নের ,বড্ড মিস করতেছে । পুরুষ মানুষদের কাঁদতে নেই । তাদের কান্না বুকের ভিতরেই ঝড়ে । তিশা আমি বলব না তুমি ফিরে আস । তবে একটু ক্ষমার চাওয়ার সুযোগটা দিও ।
হেনা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে শায়ন বারান্দায় চেয়ারে সাথে মাথা হেলিয়ে বসে আছে ।
কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল শায়ন ,পিছু ফিরে তাকালো
__ওহ,তুমি
__কখন আসলে অফিস থেকে?
__এই তো
__কোনো খোঁজ পেলে ..?
তিশার খোঁজের কথা জানতে চেয়ে বুকটা জ্বলে যাচ্ছে । কিন্তু নিরুপায় ,সে যে অক্ষম । তিশার অক্ষমতার কারনে তাকে এই ঘরে এনেছে । কিন্তু সেই পূর্নতা তিশার দ্বারাই হল । মাঝখানে অপূর্নতায় জড়িয়ে নিলে নিজেকে । হয়তো এক নারী হয়ে অন্য নারীর সংসার কেড়ে নেওয়ার শাস্তি ছিল এটা …..
.
চলবে