ভালোবেসে তোমায়,পর্ব:৯

0
3533

ভালোবেসে তোমায়,পর্ব:৯
Writer: Jannat
.
হেনা শক্ত করে শায়নের হাত চেপে ধরায় ,চোখের পলক ফেলল শায়ন । সামনে তাকিয়ে দেখে পরীটা নেই ।এদিক_সেদিক খুঁজতেছে ,
হেনা বুঝতে পারল শায়ন বাচ্চাটাকে খুঁজতেছে ।
__বাচ্চাটাকে খুঁজতেছ । এক মুরুব্বী এসে সরি বলে বাচ্চাটাকে নিয়ে গেল , তোমার তো কোনো খেয়ালই ছিল না ।
হেনার কথায় ডানে-বামে ,সামনে-পিছে খুঁজে দেখতেছে । অনেক দূরে, ভিড়ের মাঝে মিলিয়ে গেছে …….
__বাচ্চাটার সাথে কে ছিল ?
__উম… একটা মুরুব্বি টাইপের লোক । হয়ত দাদু বা নানা হবে
__ওহ…
__কেন ,কোনো প্রবলেম ?
__নাহ..বাচ্চাটা খুব কিউট তাইনা ।
আচ্ছা চল সামনে যাই ।
হেনা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে শায়নে বাহু ধরে হাটতে লাগল ।
হোটেলে ফিরেও শান্তি পাচ্ছে না শায়ন শুধু বাচ্চাটার চোখ বন্ধ করে সরি বলাটা বারবার তিশাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে । অস্থিরতা কাটানোর জন্য হেনাকে আষ্টপিষ্ঠে জড়িয়ে আদর করতে লাগল কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না ।
বুকের ভিতরটা আরও অস্থির হয়ে উঠতেছে তাই হেনাকে ঘুমাতে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।
শায়নের এমন আচারনে হেনা কেঁদেই দিল কতদিন পর ভালোবেসে কাছে আসল আবার দূরে ঠেলে দিল কেন ।
শায়ন হোটেল থেকে বের হয়ে সোজা বিচে চলে গেল একটা স্তুপের উপর বসে একের পর এক সিগারেট শেষ করতেছে ।
.
তিশা বাচ্চাদের পড়া শেষ করে , খাইয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করতে গিয়ে বারবার তিশিনের ড্রেসটার ঘ্রান নিচ্ছে ।
কেন জানি পরিচিত ঘ্রানটা নাকে লাগতেছে । মেয়েটার শরীর থেকে ওর বাবার স্মেলটা আসছে কেন ?
আজ এত বছরে কখনো তো এমনটা হয়নি ।
কেন ভোতা হয়ে যাওয়া অনুভূতিগুলো বারবার নাড়া দিচ্ছে । ওদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেল ।
__মামুনি ,কি আছে এই ড্রেসে..?
__ক কই কিছুনা মামুনি ।
সুয়ে পড় ।
বাচ্চাদেরকে সুয়ে দিয়ে ,নিজেও এপাশ-ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে ।
রাত ২টা বাজে শায়ন হোটেলে ফিরল । হেনা ঘুমিয়ে আছে তাই আর নিজেও টাইম নষ্ট না করে ঘুমিয়ে পড়ল ।
তিশা সকালে সব কিছু গোজগাজ করে রেখে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ল ।
সকাল থেকে হেনার বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে,ব্যাথায় পাগলের মত করতেছে ।
শায়ন নাস্তা নিয়ে এসে দেখে এপাশ-ওপাশ করতেছে আর ব্যাথায় আতকে আতকে উঠতেছে তাই আর দেরি না করে কোলে তুলে নিল ।
হোটেল থেকে বের হয়ে গাড়ি ডেকে নিল । ব্যাথায় সেন্সলেস হয়ে গেছে হেনা ।
শায়নের খুব কষ্ট হচ্ছে হেনাকে এই অবস্থায় দেখে । কালকে রাতে হয়ত অতিরিক্ত হয়ে গেছে । আমার পাপের শাস্তি এই মেয়েটা কেন পাবে ।
সদর হাসপাতেলের সামনে এসে গাড়ি থামল । ডাক্তার বলেছে ,অতিরিক্ত মানুষিক চাপের কারনে ব্যাথার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে । ২-৩ ঘন্টা রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে ।
ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে তাই হাসপাতালের করিডোরে বসে শায়ন ওয়েট করতেছে শায়ন ।
.
তিশিন,তিশানের স্কুল ছুটি আজকে তাই নানা ভাইয়ের কাছে বায়না ধরল হাসপাতালে মামুনির কাছে আসবে ।
হাসপাতালে আসলেই সকলকে মাতিয়ে রাখে ওদের তোতাপাখির মত অনাবরত কথা দিয়ে । ওদের চিল্লাপাল্লার শব্দে পেশেন্টদের প্রবলেম হতে পারে তাই তিশা হাসপাতালে আসতে দেয় না ।
আর সকলে খুব আদরও করে ।এমন কিউট বাচ্চাদের কেউ আদর না করে থাকতে পারে নাকি ।
__আরে আমাদের তোতাপাখিরা যে ।
কেমন আছ সোনারা ?
__খুব ভালো আংকেল ।
__আমাদের কথা মন আছে তাইলে
__ খুব মিস করি আন্টি তোমাদের , তাইতো চলে আসছি দেখতে
__ওরে তোতাপাখিরা ।
.
ওদের তোতাপাখির মত কন্ঠটা শায়নের কানে গিয়ে বিধলো ,সামনে তাকিয়ে দেখে ২টা রাজকন্যা আর রাজকুমারী দাড়িয়ে আছে ।
তিশিন শায়নকে দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল । বাচ্চাটার এভাবে ভয় পাওয়া দেখে আনমনে হেসে উঠে ,ওদের দিকে এগিয়ে গেল ।
তিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে তিশিনকে কোলে তুলে নিল
__কি নাম তোমার ,আম্মু? (কপালে চুমো দিয়ে)
তিশিন পিটপিট করে তাকালো । শায়ন মেয়েটার ২চোখে চুমো দিল , ইশ কতটা মায়া দিয়ে তৈরি বাচ্চাগুলো ।
চেয়ারে বসে ২বাচ্চাকেই কোলে বসিয়ে কথা বলতেছে । ২জনেই শায়নের দিকে তাকিয়ে আছে ।
হয়ত অন্তরের সুতোয় টান লাগতেছে ,তারা যে একই সুতোয় বাঁধা ।
__কি হল মামুনি কথা বল না..
__আমার নাম তিশিন মাহবুবা স্বর্গ ।
নামটা শুনে বুকের ভিতরে মোচর দিয়ে উঠল ।
__আর তোমার নাম কি বাবাই (কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
__তিশান মাহবুব শব্দ ।
শায়ন বাচ্চাদের বুকের সাথে চেপে ধরল । কেন জানি বুকে অনাবিল শান্তি পাচ্ছে ।বারবার আদর করতেছে ।
.
অফিস কক্ষে বসে বাচ্চাদের চিল্লানির শব্দ শুনতে পেল তিশা । উফফ ,সুযোগ পেলেই হাসপাতালে চলে আসে । ওদের চিল্লানির শব্দে পেশেন্টের প্রবলেম হয় তবুও বাবা ওদেরকে কেন যে নিয়ে আসে ।
একা একা বিরবির করতে করতে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে আসল । যত সামনে এগুচ্ছে সেই পাগল করা স্মেলটা নাকে লাগতেছে । আজ এতবছর পরও এই স্মেলটা ভুলে নাই ।নিশ্চই শায়ন আশে-পাশে কোথায়ও আছে ।
__তোমার আম্মু,আব্বুর নাম কি ?
কি করে,কই থাকে ?
আম্মু-আব্বু শব্দটা ওদের কাছে অপরিচিত তাই শায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেছে ।
তখনই কেউ একজন বলে উঠল
__তিশা মাহবুব ওর মামুনি ।
এই হাসপাতালে B.S.C নার্স হিসেবে কর্মরত আছে ।
শায়ন পিছু দিকে ফিরে দেখে ,ক্রীম কালারের শাড়ির সাথে সাদা এপ্রোন ,চোখে চশমা পড়া এক নারী দাড়িয়ে আছে । এটা আর কেউ না তারই তিশা । একদম হাসিময় মুখ ,আগের চেয়ে অনেকটা মুটিয়ে গেছে । দেখতে রসগোল্লা রসগোল্লা লাগে ।
অনেকটা সুন্দরী হয়ে গেছে ,যার ভিতরে নেই কোনো না পাওয়ার বেদনা । নাই কষ্টের ছাপ । ২চোখ ভর্তি কাজল ।
যখন সংসার ছেড়ে এসেছিল ,তখন চোখ ২টো শুষ্ক ছিল । যেখানে ছিল একরাশ হাহাকার । তবে কি এই চোখের কাজল পড়ানোর দায়িত্বটা অন্য কেউ
নিয়েছে ।
সেটাই কি স্বাভাবিক না । চোখ ২টো ভিজে উঠল শায়নের ।
তিশা এখনো ঠোঁটে হাসি টেনে দাড়িয়ে আছে । তিশিন আর তিশান দৌড়ে মামুনিকে জড়িয়ে ধরল ।
শায়নের মুখ থেকে অস্পষ্ঠ শব্দে বের হয়ে আসল “তিশা”…..
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here