ভালোবেসে তোমায়,পর্ব: ১০ (শেষ পর্ব)

1
4546

ভালোবেসে তোমায়,পর্ব: ১০ (শেষ পর্ব)
Writer: Jannat

চোখ ২টো ভিজে উঠল শায়নের । তিশা এখনো ঠোঁটে হাসি টেনে দাড়িয়ে আছে । তিশিন আর তিশান দৌড়ে মামুনিকে জড়িয়ে ধরল ।
শায়নের মুখ থেকে অস্পষ্ঠ শব্দে বের হয়ে আসল “তিশা”
__হ্যাঁ তিশা ।
দূর আকাশের তারা হিসেবেই ওর বাবা ওদের কাছে পরিচিত.. ।
__মা মা নে…
__বুঝলেন না … যারা খুব ভালো লোক ওনারা আকাশের তারা হয়ে যায়
(রহস্যময় হাসি দিয়ে)
ওদের বেড়ে উঠার জন্য ওর মামুনিই যথেষ্ঠ ।
__তিশু…..
__কত বছর পর তিশু ডাকটা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায় তিশা । তবুও নিজেকে সামলে নেয় ।
__তাহলে চিনতে পেরেছেন । যাক,ধন্য হলাম।
তা বউ,বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে আসছেন নাকি ?
.
এরপর শায়ন তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বলল । তিশা একবুক করুনা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । এত্তকিছু ঘটে গেল অথচ কিছুই জানলো না । শায়নের চোখে মুখে অনুশোচনার আগুন দেখতে পাচ্ছে ।
__অনেক খুঁজেছি অনেক তোমায় পাগলের মত ।
কিন্তু কোথায়ও একটু খোঁজ মিলল না । আমার আমিটা পুঁড়ে গেছি অপরাধ বোধের আগুনে । তোমার ক্ষমাটা খুব বেশি প্রয়োজন আমার
__আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই । নেই কোনো রাগ বা অভিমান । তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন নেই ।
__সবটুকু জুড়েই কি ঘৃনার বসবাস ?
__মিথ্যা বলব না । হ্যাঁ প্রচন্ড ঘৃনা
__কোথায়ও যদি এক ফোঁটা ভালোবাসা জমে থাকে ,তার বিনিময়ে ক্ষমা করে দেও
__আপনার জন্য যে অনুভূতিগুলো ছিল সব ভোতা হয়ে গেছে আর অনুভবে শেওলা পড়ে গেছে ।
আর ভালোবাসা …!
সেটা কালো মেঘ হয়ে বাসা বেঁধে গেছে । যদি খুব বেশি নাড়া পড়ে সেখানে, কিছুক্ষন বৃষ্টি ঝড়ে বুক চিড়ে এইটুকুই ।
অপরাধ থাকলে না হয় ক্ষমা করব । অপরাধ আপনার ছিল না ,অপরাধ ছিল আমার ।
আপনাকে বিশ্বাস করা ছিল আমার অপরাধ ,আপনাকে ভালোবাসা ছিল আমার অপরাধ ,রাতে অন্ধকারে ১৯ বছরের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে আপনার ঠুকনো ভালোবাসাকে ভরসা করে ওই ২দুটো হাতকে আকরে ধরে বের হয়ে আসা ছিল আমার অপরাধ ।
আর তার যথেষ্ঠ শাস্তি আমি পেয়েছি তাই ক্ষমা চাইব না ।
__যেদিন হেনাকে বিয়ে করেছিলাম সেদিনও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছিলে । ফিরে যেতে বলার অধিকার আমার নেই ,তবে এইটুকু বলব । বাকিটা জীবন তোমাদেরকে চোখের সামনে দেখে কাটাতে চাই । আমি প্রতিটা মুহুত্ব দগ্ধ হচ্ছি অনুশোচনার আগুনে প্রতিনিয়ত পুঁড়ে যাচ্ছি ।
আগুনের তাপ এতই বেশি যে আমার ভিতরটা কয়লা হয়ে যাচ্ছে । আমি আর পারছি না ,আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দাও
__আগুন তো আপনি নিজের হাতে জ্বালিয়েছেন । আপনার সৃষ্টি আগুনে আপনি পুড়ছেন সেখানে আমার কিছু করার নেই । আর সেদিন আমি নিরুপায় ছিলাম ,চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিনয় করতে হয়েছিল । কারন আমার যে পা রাখার জায়গাটুকুও ছিল না ।
__আর কত দগ্ধ হব আমি ?
পুঁড়তে পুঁড়তে আমি যে আঙ্গার হয়ে গেছি । আমি আর সহ্য করতে পারতেছিনা
__পোঁড়তেই যখন পারবেন না ,তো পুঁড়িয়েছেন ক্যান ? আগুন জ্বালিয়েছেন ক্যান ? ঠিক ততটাই পোঁড়বেন যতটা বিনা দোষে আমাকে পুঁড়িয়েছেন ।
__আমি তো স্বীকার করছি আমি ভুল করছি । আমাকে তোমার ক্ষমা করতে হবে না । সারাটা জীবন অভিশাপ দিও তবুও আমার চোখের সামনে থেক ।
আমার দগ্ধ হয়ে যাওয়া দৃশ্যটা নিজে সামনে থেকে উপভোগ কর । ফিরে চল..
__যাস্ট সেটাপ… । আপনাকে যতটা ঘৃনা করি তার চেয়েও অধিক বেশি ভালোবাসতাম । আপনার মত সময়ের সাথে সাথে নিষ্ঠুর হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়নি ।
যে একটা মানুষ চোখের সামনে ছটপট করতে করতে দগ্ধ হয়ে যাবে আর সেটা খুব উপভোগ করব ।
কে বলছে আপনাকে দগ্ধ হতে । বিয়ে করে নিলেই তো পারেন । এটা তো আর আপনার কাছে কঠিন কিছু না
__তিশাআআ..
__চিল্লাবেন না । এটা আপনার বেড রুম না ,এটা হাসপাতাল
__একবার শুধু একবার ফিরে চল । তুমি তোমার মত থাকবে । বিশ্বাস কর ,কোনো ক্ষতি হতে দিব না
__ বিশ্বাস..! তাও আবার আপনাকে ,হাসালেন ।আপনার মত লোককে ঘৃনা করা যায় ,থু থু ফেলা যায় মিষ্টি মিষ্টি ভাষায় । বাট বিশ্বাস করা যায়না ।
আর ক্ষতি …! যেখানে আপনি নিজেই আমার আর আমার বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর প্রানী ,সেখানে অন্য ক্ষতির কথা না ভাবলেও চলবে ।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন,আপনি কেন ।
এই গোটা পৃথিবীর কেউ আমার সন্তানের ক্ষতি করা তো দূরে থাক ,ক্ষতির কথা চিন্তা করলেও আমি তার শেষ দেখে ছাড়ব ।আর আমি চাইনা ,আপনার অশুভ ছায়াটাও আমার বাচ্চাদের উপর পড়ুক । আপনার অশুভ থাবায় আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছেন বাট আমার সন্তানের দিকে চোখও দিবেন না ।
চোখ তুলে ফেলব । ওদের উপর শুধু আমার অধিকার ।
__বাব্বাহ এত্ত জোর কোথা থেকে আসল ?
আমার কোনো অধিকারই নেই?
নাকি অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছ সেই অধিকার ?
যাই করো, ভুলে যেওনা আমিই ওদের জন্মদাতা ।
__আমার সন্তানরাই আমার জোর । আর আপনিও ভুলে যাবেন না । যে তিশা নিরবে আপনার বাসা ছেড়ে এসেছিল ,সে সুধু এক অসহায় নারী ছিল । যার ছিলনা পা রাখার মত ঠিকানা ,তবুও অনিশ্চিত ঠিকানার পথে পা বাড়িয়েছিল । সেদিন তো একবারও বলেননি “থেকে যাও” । আপনি তো জানতেন এই মেয়েটার মাথা গোজার মতও জায়গা নেই ।
সেদিন কোথায় ছিল আপনার দরদ হ্যাঁ ?
আর আজকের তিশা একজন মা । যার অনেক দায়িত্ব ।
আমার সন্তানের বেড়ে উঠার জন্য তার মায়ের পরিচয়ই যথেষ্ঠ ।
ভুলেও অধিকার দেখাতে আসবেন না । আরে যার দায়িত্ব নেই তার আবার কিসের অধিকার । আমার বাচ্চাদের দিকে হাত বাড়াবেন না তাইলে সেই হাত উপড়ে ফেলব ।
আর যদি বাচ্চারা সম্পূর্ন এডাল্ট হয়ে মনে করে আপনাকে ভীষন প্রয়োজন ,সেদিন আর আমি আটকে রাখব না ।
সেই পর্যন্ত আমার ইচ্ছা,মতামতই প্রাধান্য পাবে ।
আর অন্য কাউকে অধিকার …
!!আপনার মত নিচু মেন্টালিটি আমার নেই । ইচ্ছা হলেই কাউকে ব্যাবহার করলাম আবার প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দিলাম । আমার একটাই মন আর একটাই হৃদয় । আর সেখানে একজনেরই বসবাস ছিল । তাছাড়া আপনার মত তত বেশি জায়গাও আমার মনে নেই ,যখন তখন কাউকে স্থান দিয়ে দিব ।
.
শায়ন বুঝতে পারল ,আর যাই হোক তিশা ফিরবে না । আর তিশার উপর জোর করার অধিকার অনেক আগেই হারিয়ে ফেলছে । তিশার চোখে মুখে পুরোটাই শায়নের প্রতি ঘৃনায় পরিপূর্ন যেখানে ভালোবাসা তো দূরে থাক সামান্য করুনার স্থানটুকুও নেই ।
চোখ তুলে ২য়বার ওর দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না । চোখ দিয়ে নিরবে জল ঝড়তেছে ।
__ফিরবে না আর…?
__যেখানে ঘৃনা করতেও ঘৃনা হয় আপনাকে সেখানে ফিরে যাব ভাবলেন কি করে ।
.
হেনা জ্ঞান ফেরার পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে বাহিরে এসে তিশাকে দেখে থমকে যায় । শায়ন আর তিশার কথা শুনে কিছুটা স্বস্তি পেল ,তিশা ফিরছে না এটাই বা কম কিসে ।
__মামুনি ,ও মামুনি তুমি জগড়া করতেছ ?
__ক ক ই নাতো ।
__জানো মামুনি, আংকেলটা খুব ভালো । আমাকে অনেকগুলো আদর দিছে । কিন্তু…
__কিন্তু কিরে সোনা…
__একটা আদরও ফিরিয়ে দেইনি । এখন দেই ?
__ভীষন অন্যায় করে ফেলেছ । যাও এক্ষুনি ফিরিয়ে দিয়ে এসো ।
.
সন্তানের মুখে আংকেল ডাক শুনে নিজের অপরাধবোধ হাজারো গুন বেড়ে গেছে । অসহায়ভাবে তিশার দিকে তাকালো ।
__শুধু একবার বাবা ডাকটা শুনার অধিকার দও ।
তিশা মুখ ফিরিয়ে নিল । যার মানে বাবা ডাক শোনার যোগ্যতা আপনার নেই । শায়ন বাচ্চাদের সামনে হাটু গেড়ে বসল । তিশিন আর তিশান অনেকগুলো আদর দিল । বাচ্চাদেরকে বারবার বুকে লুকিয়ে রাখতেছে শায়ন ,হাজারো চুমো দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে ।তিশা আর দাড়িয়ে এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারতেছে না ।
__বাবাই ,মামুনি আংকেলকে বাই বলে চলে এসো ।
মামুনি বাসায় চলে যাব ।
বাচ্চারা যখন শায়নের বুক থেকে নিজেদেরকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে । মনে হচ্ছে কলিজাটা ছিড়ে কেউ বের করে নিতেছে । আটকে ধরেও রাখতে পারতেছে না
__বাই আংকেল
__টাটা,আংকেল
শায়ন ওদের মুখের পানে চেয়ে আছে । না জানি এদের মুখে বাবা ডাকটা কতটা মধুর । তিশার ওদের হাত ধরে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করলো ।
একটু থেমে,,
আপনার মুখটা দর্শন করার ইচ্ছা আমার ছিল না । ভুলক্রমে নিয়তি দেখা করিয়ে ফেলল । তবে এই দেখাটা যেন শেষ দেখা হয় । আপনার অশুভ ছায়াটাও যেন আর না পড়ে আমাদের উপর । আমি না এদের মুখের দিকে তাকিয়ে হাজারো বছর পাড় করে দিতে পারব । ২য় কাউকে জীবনে জড়ানোর মত ফালতু মেন্টালিটি নেই ।
আর আপনার যদি খুব বেশিই বাচ্চার প্রয়োজন হয় ,আবার বিয়ে করে নিবেন ।
.
শায়ন ফ্যালফ্যাল হয়ে তাকিয়ে আছে । তিশা কিছুদূর গিয়ে পিছু ফিরে স্বস্তি ,সুখময় আর তৃপ্তির একটা হাসি দিল । যার মানে ভালো আছি #ভালোবেসে_তোমায় ।
তোমার দেওয়া শেষ্ঠ উপহার নিয়ে । ওর এই হাসিটা শায়নের বুকে আগুনের মাত্রাটা বাড়িয়ে দিয়েছে । যে আগুনে জ্বলবে সারা জীবন ।
.
.
ভালো থাকুক এরকম হাজারো তিশা । আর জ্বলুক শায়ন আর হেনা নামের কীটগুলো ,নিজেদের সৃষ্টি করা আগুনে ।

❤সমাপ্ত❤
.
.
সকলকে অনেক অনেক ভালোবাসা ।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here