বউ Part- 7

0
2263

বউ
Part- 7
writer: #Nur_Nafisa
.
.
৫ম দিন
(সকালে রেহানের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলেই নাফিসার চেহারাটা দেখলো, কারণ রেহান ও নাফিসা পাশ ফিরে মুখোমুখি শুয়ে আছে । নাফিসা ১ হাতে রেহানের গলা জড়িয়ে আছে। আর রিয়াদ পেছন থেকে হাত পা সব রেহানের উপর তুলে দিয়েছে। একটু নড়াচড়া করার সুযোগ নেই রেহানের। নাফিসার মুখটা রেহানের খুব কাছে। ঘুমন্ত মুখটা খুবই মায়াবী দেখাচ্ছে। ফর্সা মুখের ঠোঁট গোলাপি, চোখের পাপড়ি ও ব্রু ঘন কালো। রেহান মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাকে। আর মনে মনে ভাবছে, মেয়েটা সত্যি সত্যি তার #বউ হলে সমস্যা কি! না কোনো সমস্যা নেই! এখন তো আর নেহার সাথে বা অন্য কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নেই রেহানের ! আর মেয়েটা নিজেই তো রেহানের #বউ বলে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। নাফিসার দিকে তাকিয়ে ভাবনার মুহুর্তেই রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো আর মুখ ফসকে অস্ফুট স্বরে একটি শব্দ বেরিয়ে এলো “#বউ ” ?।
রেহান বেশ কিছুক্ষণ নাফিসার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর জানালার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখলো বাইরে আলো ফুটতে শুরু করেছে, নামাজের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। সে কোন মতো নিজের ১টা হাত মুক্ত করে নাফিসার হাতটা সরিয়ে রিয়াদের হাত পা ও সরালো। তারপর রিয়াদ ও নাফিসাকে ডাকতে শুরু করলো। নাফিসা ঘুমের মধ্যেই রেহানের গলা জড়িয়ে আরো কাছে টেনে বলতে লাগলো, “আম্মু ঘুমাতে দাও তো। এখন উঠবো না।” রেহান হাসলো তার কথা শুনে। আবার নাফিসার হাত সরিয়ে রিয়াদকে ঠেলে বিছানা থেকে নেমে জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলো দুজনকে। দুজনেই লাফিয়ে উঠে।)
.
রিয়াদ- ওফ! ভাইয়া সকাল সকাল কি শুরু করেছো!
.
রেহান- দ্রুত উঠে নামাজ পড়, না হলে আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসবো এখন।
.
(সবাই উঠে নামাজ পড়ে নিলো। রেহান ব্যায়ামাগার থেকে জানালা দিয়ে দেখতে পেল রায়হান চৌধুরী, রুবিনা চৌধুরী ও নাফিসা নিচে হাটাহাটি শুরু করেছে। রেহানও রিয়াদকে সাথে নিয়ে তাদের সাথে যোগ দিলো সাথে একটা ফুটবল নিয়ে গেলো।)
.
রায়হান- সকাল সকাল ফুটবল!
.
রেহান- ফুটবল খেলাটা ও অন্যরকম একটা ব্যায়াম ?
.
রুবিনা- ? তোদের ব্যায়ামের আর কতো কৌশল দেখবো!
.
নাফিসা- শাশুড়ী আম্মু, তুমি ব্যায়াম খুব কম করো কেন ! ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে।
.
রুবিনা- আল্লাহর রহমতে আমি এমনিতেই পারফেক্ট। আর তোমার শশুর আব্বুকে দেখো এতো ব্যায়ামের পরও মেদ বাড়িয়ে নিয়েছে! ? ?
.
রায়হান- ?(রুবিনাকে) সারাটাজীবন আমার সাথে এভাবে লেগে থাকো কেন বলতো!
.
নাফিসা- বেশি ভালোবাসে বলে ?
.
(রুবিনা কিছু বলার আগেই নাফিসা উত্তর দিয়ে পা দিয়ে বল ঠেলতে ঠেলতে তাদের থেকে সামনে এগিয়ে গেলো, পিছু পিছু রিয়াদ ও ছুটলো। আর বাকিরা সবাই ই মুচকি হাসলো। কারণ ভুল বলেনি তো নাফিসা। সত্যি কথাটাই বলে গেছে। বাবা মায়ের মুখে প্রশান্তির হাসি দেখে রেহানের ও খুব ভালো লাগলো তারপর রেহানও দৌড়ে নাফিসা ও রিয়াদের কাছে গিয়ে ৩জনে ফুটবল খেলতে লাগলো। মি. ও মিসেস চৌধুরী দোলনায় বসে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটা তাদের বাড়িতে এসে সবাইকে আনন্দিত করে রাখছে। রিয়াদ খেলার সাথি পেয়েছে, রেহান ছেলেটা নেহার সাথে ব্রেকাপের পর একদম বিষন্ন থাকতো এখন সে ও কতো আনন্দিত। দুজনেই সন্তানদের কথা ভেবে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এই পরিবারের সবাই সবার সাথে ফ্রী। রেহান নেহার কথাও বাবা মায়ের কাছে লুকায়নি। প্রত্যেকেই বন্ধুসুলভ আচরণ করে একে অপরের সাথে।)
.
(ব্রেকফাস্টের পর রিয়াদ স্কুলে চলে গেছে, রেহান ও রায়হান চৌধুরী অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। আর নাফিসা ও রুবিনা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল এমন সময় কলিং বেল বাজলে রুবিনা উঠে দরজা খুলে দেখলো নেহা এসেছে।)
নেহা- কেমন আছেন আন্টি? ?
.
রুবিনা- আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
.
নেহা- এইতো ভালো। রেহান বাসায় নেই?
.
রুবিনা- হ্যাঁ, আছে। অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। আসো ভেতরে এসে বসো।
.
(নেহা রুবিনার সাথে ড্রইং রুমে এসে বসলো। সোফায় বসতেই নাফিসার দিকে চোখ পড়লো। এর আগে ২বার এসেছে এ বাড়িতে, কখনো এই মেয়েকে দেখেনি। আর নেহার জানামতে রেহানের কোন বোন নেই। তাহলে ও কে! নাফিসা একবার নেহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দিল।)
.
রুবিনা- নেহা ব্রেকফাস্ট করে নাও…
.
নেহা- না, আন্টি। আমি ব্রেকফাস্ট করে এসেছি। রেহানের সাথে একটু কথা আছে তাই এসেছি।
.
রুবিনা- ওহ আচ্ছা, বসো ও এখনি আসবে।
.
নেহা- আন্টি ও কে?
.
(রুবিনা কিছু বলার আগেই নাফিসা জবাব দিলো….)
নাফিসা- #বউ।
.
নেহা- সরি? বউ মানে?
.
রুবিনা- এ বাড়ির বউ।?
.
নেহা- ? এ বাড়ির বউ মানে!!! কার বউ?
.
(পেছন থেকে)
রেহান- আমার #বউ।
.
নেহা- ?whatt!!! কি বলছো এসব!
.
রেহান- ? yes… যা শুনেছো তাই বলেছি। ও আমার #বউ।
.
নেহা- রেহান, কি যা তা বলছো এসব! তুমি না আমাকে ভালোবাসো!
.
রেহান- ব্রেকাপ করে দিয়েছি তো…. মিস নেহা।
.
নেহা- ? এবার বুঝেছি কেন ব্রেকাপ করেছো! তুমি আমাকে বলো আমি দুশ্চরিত্রা! এদিকে তুমি যে ঘরে মেয়ে নিয়ে বসে আছো সেসব কিছু না! আরে দুশ্চরিত্রতা তো তুমি নিজেই।
.
(কথা বলে শেষ করতে পারে নি নেহা, এদিকে নাফিসা নেহার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। নেহার গলা চেপে ধরেছে…! নেহা ছুটার জন্য হাত পা ছুড়ছে! রুবিনা আর রেহান রীতিমতো শকড নাফিসার আচরণে !? তারা দুজনেই নাফিসাকে টেনে সরাতে চাইছে, নাফিসা ছাড়ছেই না কিছুতে।)
.
নাফিসা- তুই এভাবে কথা বলেছিস কেন! আমার হাসব্যান্ড এর দুশ্চরিত্র, শাশুড়ী আম্মু ছাড়ো আজ ওর খবর নিয়ে ছাড়বো…. ?
.
রুবিনা- আরে ও মরে যাবে তো।
.
রেহান- নাফিসা, ছাড়ো বলছি…..
.
( রেহান হেচকা টান দিয়ে নাফিসাকে ছাড়িয়ে নিজের কাছে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রইল। নাফিসা রেহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু রেহানের শক্তির কাছে পারছে না। নেহা যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। রুবিনা ১গ্লাস পানি এনে নেহাকে খাওয়ালেন।)
.
নাফিসা- ছাড়ো আমাকে… ?
.
রেহান- নাফিসা শান্ত হও…
.
নেহা- ?এসেছিলাম সবকিছু মিটিয়ে নতুনভাবে সম্পর্কটা গুছাতে, এখন বুঝতে পারছি এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। আগে জানলে কখনো আসতাম না…. গুড বাই….
.
রেহান- আরে যাও না… কে বলেছিল তোমাকে আসতে…. যত্তসব ফালতু ?
.
( নেহা চলে গেলো আর এদিকে নাফিসা এতোক্ষণ ছুটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারলো না, অবশেষে কেরাতি স্টাইলে রেহানের পা মেরে ছাড়া পেল।)
.
রেহান- আউচ….!
.
রুবিনা- ?
.
নাফিসা- ?
.
(নাফিসা রেগে রুমে চলে গেলো। আর রেহান সোফায় বসে পা মালিশ করতে শুরু করলো। ব্যাথা পেয়েছে খুব। অবশ্য রেহান তাকে এখন এমনিতেই ছেড়ে দিতো, বেচারা একটু লেট করে ফেলেছে ?)
.
রুবিনা- ব্যাথা পেয়েছিস?
.
রেহান- না, ঠিক আছি। দেখো আব্বু রেডি হয়েছে কিনা! লেট হয়ে যাচ্ছে…
.
রুবিনা- আচ্ছা দেখছি। আরেকজন যে কি! মনে হচ্ছে মেয়েদের মতো মেকাপ করা শুরু করেছে…..
.
রেহান- ?
.
(রুবিনা চলে গেলে দারোয়ান দরজার কাছে এলো পত্রিকা নিয়ে)
রেহান- রেখে যাও। আজ এতো লেট করে পত্রিকা দিলো কেন?
.
দারোয়ান- কি জানি !
.
(দারোয়ান টেবিলে পেপার রেখে চলে গেলো। রেহানের চোখ পত্রিকার উপর পড়তেই দেখলো কর্ণারে নাফিসার ছবি! ? সে দ্রুত হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো ভালো ভাবে। হ্যাঁ এটা নাফিসা ই। ২টা ছবি দেয়া পত্রিকায়। ১টা তে শুধু হাসিমাখা ফেসটা দেয়া, আর ১টা তে নাফিসা অনেক গুলো লাল বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালো জিন্স ও সাদা টিশার্ট, সাদা-কালো মিশ্রিত কেডস সো পড়ে…! রেহান পত্রিকা নিয়ে দ্রুত তার রুমে চলে গেলো। খুব ভয় হচ্ছে তার। সে কি নাফিসাকে হারিয়ে ফেলবে!!! ?)
.
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here