গল্প :- পরী বউ,পর্ব :- ০৩
লেখা :- কাব্য আহম্মেদ
ওরা কাঁঠালে আঠার মত আমাদের পিছু লেগে
থাকবে। আর এমনটা হলে সেটা কি ভালো লাগে?
আপনাদের এখানে যেমন বখাটে ছেলেরা
আছে যারা মেয়েদের উত্তক্ত করে একটা
পৈশাচিক আনন্দ পাই? আমাদের ভিতরও ঠিক এমন কিছু
জ্বীন আছে।
আমি একটু মজা করে বললাম,
– আচ্ছা সাফা আপনি কি আমাকে আপনার ডানা দুটো
একটু দেখাবেন?
– আমি বুঝতে পারছি এখনো আপনার বিশ্বাস হচ্ছে
না আমার কথা। আর তাই আমার ডানা দেখে শিওর হতে
চান আসলেই আমি পরী কি না তাই না?
ওর কথায় খানিকটা লজ্জা পেলাম। আমি বললাম,
– না তা না। আসলে আমি তো কখনো পরী দেখিনি
তাই আর কি।
– আপনি যেহেতু আমার উপকার করেছেন।
আপনাকে আমি ডানা দেখাবো। তবে আজ না অন্য
কোনো দিন।
ওর সাথে কথা বলতেছি। এমন সময় দরজা নক করার
শব্দ হলো। বাড়িওয়ালা এসেছে আমি ভিতরে আছি
কিনা জানেতে চাইলো। আমার মনে পড়লো বাড়ি
ভাড়ার টাকাটা দিতে হবে। আর এই কারনে এসেছে।
কিন্তু আমি এখন কি করবো? সাফাকে কোথায়
লুকিয়ে রাখবো? যদি বাড়িওয়ালা ওকে দেখে
ফেলে তাহলে কি হবে? তখনই সাফা বললো,
– আমাকে কোথাও লুকানোর দরকার নাই। আপনি
দরজা খুলে দেন। আমাকে উনি দেখতে পাবে না।
– কি বলেন? দেখতে পাবে না মানে? আমি
যেহেতু দেখতে পাচ্ছি সেহেতু উনিও দেখতে
পাবে।
– না উনি দেখতে পাবেনা। আমি আপনাকে দেখা
দিচ্ছি বলেই আপনি দেখতে পাচ্ছেন। নয়তো
পারতেন না। আমরা যাকে দেখা দিবো শুধুমাত্র
সেই দেখতে পাবে। অন্য কেউ না। আপনি
নিশ্চিন্তে দরজা খুলতে পারেন।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক প্রকার
জোর করে পাঠিয়ে দিলো। দুরু দুরু বুকে দরজাটা
খুলে দিলাম আমি। হ্যাঁ আমার অনুমানই ঠিক দেখলাম
বাড়িওয়ালা এসেছে, এই মাসের ভাড়াটা নিতে।
বাড়িওয়ালাকে ভাড়ার টাকাটা দিয়ে দিলাম। উনি টাকা নিয়ে
চলে গেলো। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো উনি
সাফাকে দেখতেই পাইনি। দেখলে তো অবশ্যই
বলতো। একটা ব্যাচেলর ছেলের ঘরে একটা
মেয়ে কেনো? কে ও? এই সব নানা প্রশ্ন।
তাহলে কি সাফা সত্যিই পরী? মনে মনে বললাম
আমি। এখন একটু একটু ভয় লাগছে আমার। আর ভয়
লাগাটাই স্বাভাবিক। মানুষ হইলে না হয় একটা কথা ছিলো।
আমি ভয়ে ভয়ে ওর কাছে এসে দাড়ালাম। আমাকে
দেখে ও বললো,
– কি এবার বিশ্বাস হয়েছে আপনার?
– আমি আমতা আমতা করে বললাম। হ্যাঁ হইছে।
– কি ব্যাপার আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
– না ভয় পাচ্ছি না। ( কিন্তু ঠিকই ভয় পাচ্ছি আমি)
ও আমাকে বললো,
– আমাকে ভয় পাবার কোনো কারন নেই। আমি
আপনার কোনো ক্ষতি করবো না।
সেদিন কিছু সময় থেকে আমার কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে চলে গেলো ও।
কারন ও তখন অনেকটা সুস্থ। তারপর থেকে ওকে
আর দেখিনি বা দেখা হয়নি। আমি প্রায় ওর কথা ভুলেই
গেছি। নিজের কাজে মন দিছি। একদিন হঠাৎ সাফা
আমার রুমে আসলো। সেদিন ওকে আরো
অনেক বেশি সুন্দর লাগছিলো। মনে হচ্ছে একটু
সেজেছে। ও হ্যাঁ একটা শাড়ি পড়ে এসেছে ও।
শাড়িটাতে অনেক বেশি সুন্দর লাগছিলো। আমার
পাশে বসে আমাকে বললো,
– সিয়াম?
– হুম বলেন?
– আমাকে তুমি করে বলো।
আমি বললাম,
– ঠিক আছে।
সাফা বললো,
– সিয়াম তোমাকে একটা কথা বলবো।
– হ্যাঁ বলো কি বলবে?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে
ভালোবাসবে?
ওর কথা শুনে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে
পড়লো। ও যে এমন একটা কথা বলবে আমি
ভাবতেই পারিনি। আমার অনেক ভয় করতে লাগলো।
কি করবো? কি বলবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। কিছু
বললাম না আমি। চলে গেলো ও। এর পর থেকে
প্রায় আমার কাছে আসতো। অবশেষে না পেরে
লুকিয়ে ঐ বাসা ছেড়ে আজকে এই বাসায় চলে
আসলাম। কিন্তু লাভ হলো না কোনো। ও ঠিকই
এখানেও চলে আসলো। আমি কিছুতেই ওর হাত
থেকে মুক্তি পাচ্ছিনা। শুয়ে শুয়ে ভাবছি এই সব।
কিছুতেই ঘুম আসতেছে না। যে আনন্দ নিয়ে এই
বাড়িতে আসলাম। সে আনন্দ আমার মাটি হয়ে
গেলো সাফাকে দেখে। ভাবতে ভাবতে কখন
যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা টেরই পাইনি।
হঠাৎ মনে হলো কে যেনো আমাকে ধরে
ঝাকি দিচ্ছে আর ডাকছে। ডাকটা যেনো অনেক
দুর থেকে ভেসে আসছে। ঘুমটা ভেঙে
গেলো আমার। তাকিয়ে দেখি সাফা বসে আছে
আমার পাশে। ও মিটি মিটি হাসছে। ও ই ডাকছিলো
আমাকে। আমার অসহ্য লাগছে ওকে। ও বললো,
– কত ঘুমাতে হয়? নয়টা বেজে গেছে। আমি
সেই কখন এসেছি। এসে দেখলাম তুমি এখনো
উঠোনি, ঘুমিয়ে আছো তাই আর ডাকিনি। বসে ছিলাম
তোমার কাছে। দেখছিলাম তোমাকে। অনেক
বেলা হয়ে গেছে তাই না পেরে ডাকলাম।
– তুমি আবার কেনো এসেছো?
– তোমার জন্য নিজের হাতে নাস্তা করে নিয়ে
আসছি। আমিও এখনো নাস্তা করিনি। তোমার সাথে
করবো বলে।
ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– কোনো দরকার ছিলো না এসব করার। তুমি চলে
যাও। আর না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতে
তোমাকে কে বলেছে?
আমি বুঝতে পারছি এই কথাটাই ও অনেক কষ্ট
পেয়েছে। চোখে পানি চলে এসেছে ওর।
ওর চোখে আমি কখনো পানি আসতে দেখিনি।
আজ প্রথম দেখলাম। ও বললো,
– তুমি কেনো এতো অবহেলা করো আমাকে?
আমি তো তোমাকে লাভ করি আর তাই তোমার
জন্য না খেয়ে আছি। একসাথে খাবো বলে।
হ্যাঁ সত্যিই তো আমি ওকে অনেক অবহেলা করি।
কিন্তু কি করবো আমি? আমি ওকে কিছুতেই
মেনে নিতে পারিনা। ও এক জাতি আর আমি আর এক
জাতি। এটা কিভাবে সম্ভব?
ও যদি মানুষ হতো তাহলে আমি ওকে ভালোবাসতাম।
কিন্তু ও তো আর মানুষ না। আমি ওকে অবহেলা করি
যাতে ও আমাকে ছেড়ে চলে যায় কিন্তু ও তাও
যাচ্ছে না। আর আমি ওকে ভয় পাই যার কারনে ওর
কথা শুনতে হয় আমার। আমি বললাম,
– আচ্ছা সাফা তুমি তো মানুষ না ভিন্ন একটা জাতি। আর
বয়সেও আমি তোমার অনেক ছোট। হিসাবে তুমি
আমার দাদির বয়সের। তাহলে কেনো আমাকে
ভালোবাসতে গেলে? তুমি তো তোমাদের
ভিতর কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করতে পারতে
বা পারো। সেটা কেনো করছো না?
– আমি তোমার দাদি হয়ে গেলাম সিয়াম? হিহিহি। হ্যাঁ
আমার বয়স অনেক বেশি আর তুমিও আমার অনেক
ছোট। এটা জাষ্ট তোমার আমার বয়সের দিক
থেকে হিসাব করলে এমনটা হবে। কিন্তু অন্য
ভাবে ধরলে আমি তোমার ছোট হবো।
– সেটা কিভাবে? জানতে চাইলাম আমি।
– শোনো আমাদের মাধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে
অনেক বছর লাগে। কিন্তু তোমাদের তা লাগে না।
তোমরা তাড়াতাড়ি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাও। তোমরা
বড় জোর ষাট থেকে সত্তর বছর বাঁচো। যার
কারনে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও। আমরা কিন্তু অনেক
বছর বাঁচি? এজন্য আমাদের বয়সটা বেশি মনে হয়।
এই যে এখন তুমি প্রাপ্ত বয়স্ক । আমি কিন্তু
এখনো প্রাপ্ত বয়স্ক হইনি। তাহলে কি দাঁড়ালো?
তুমি আমার বড় আর আমি তোমার ছোট তাই নয় কি?
– হুম তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে
গেলে কেনো? তোমাদের ভিতরে কাউকে
কেনো বাসলেনা?
– আমি কখনোই ভাবিনি আমি মানুষ জাতির কাউকে
ভালোবাসবো বা বিয়ে করবো। প্রেম ভালোবাসা
আমার মাথায়ই আসেনি কোনো দিন। কিন্তু সেদিন
যখন তুমি আমাকে নিয়ে এসে সেবা যত্ন করে
আমাকে সুস্থ করে তুললে। আমার কোনো
ক্ষতি করলে না, তোমার এই সরল মন দেখে
তোমাকে আমার কেমন ভালো লেগে যায়। আমি
তোমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন চলে যায়।
আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। বার বার তোমার কথা
মনে হচ্ছিলো। আর মনে হচ্ছিলো যদি তুমি
আমাকে না নিয়ে আসতে তাহলে আমার কি হতো?
হয়তো মারা যাইতাম নয়তো অন্য কারোর হাতে
যেয়ে পড়তাম। যে আমাকে অন্য কাজে ব্যাবহার
করতো। কিন্তু তুমি সেটা করোনি। তোমার এই
সরলতা দেখে আমি তোমাকে ভালোবেসে
ফেললাম। আমি ভুলে যেতে অনেক চেষ্টা
করেছি কিন্তু পারিনি আমি বার বার এটাও ভেবেছি যে
তুমি এক জাতি আমি এক জাতি এটা কিভাবে সম্ভব?
তারপরও যখন তোমাকে ভুলতে পারলাম না তখন
সিদ্ধান্ত নিলাম। যা হয় হবে আমি তোমাকেই
ভালোবাসবো। আমার ভালোবাসা যদি সত্য হয়
তাহলে আমি তোমাকে পাবো। চলবে………
।
।
চলবে………………♥