বউ Part- 8

0
2519

বউ
Part- 8
writer: #Nur_Nafisa
.
.
(রেহান তার রুমে দরজা বন্ধ করে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি পড়লো। সেখানে লেখা আছে,
লন্ডন প্রবাসী রিজোয়ান আহমেদের একমাত্র মেয়ে নূর নাফিসা পরিবার সহ বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বাংলাদেশে বন্ধুর বাড়িতে। গত শনিবার থেকে মেয়েটিকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের কোন জায়গা তার পরিচিত না। মেয়েটির পড়নে ছিলো বিয়ের পোশাক। কেউ যদি কোন সন্ধান পেয়ে থাকেন তাহলে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো।
রেহান- তারমানে নাফিসা সেদিন যা বলেছে সব সত্যি ছিল! তার বাসা লন্ডন! এখন কি নাফিসা তার বাবা মায়ের সাথে চলে যাবে লন্ডনে! না! ও তো আমার #বউ! আমি ওকে যেতে দিবো না। আমাদের কাছে থাকবে ও। ওর সন্ধান কাউকে পেতে দেব না।
.
রায়হান- রেহান, অফিসে যাবি না? দ্রুত আয়…
.
রেহান- হ্যাঁ আব্বু আমি আসছি। তুমি গাড়িতে যাও…
নিউজ পেপার আব্বু পড়লে আব্বু নাফিসাকে ফিরিয়ে দিবে! আব্বুকে পেপার পড়তে দিব না…
.
( তারপর রেহান পত্রিকা তার আলমারিতে রেখে বাবার সাথে অফিসে চলে গেলো। অফিসের নিউজ পেপার ও লুকিয়ে ফেলেছে। অফিসে আজ রেহান তার বাবাকে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ব্যস্ত রেখেছে যাতে নিউজ পেপার না পড়তে পারে। বিকেলে বাসায় একটু তারাতাড়ি ফেরায় দেখতে পেল রিয়াদ ও নাফিসা মাত্র বল ব্যাট নিয়ে বেরিয়েছে ক্রিকেট খেলার জন্য। তারা দুজন ফ্রেশ হয়ে রেহান তার বাবাকে ও নিচে নিয়ে এলো ক্রিকেট খেলবে বলে। রুবিনা ও এলো। )
.
রেহান- আমরাও খেলবো…
.
রিয়াদ- ইয়েএএএ,
.
নাফিসা- ওকে, একটা আমার টিম আর একটা তোমার টিম। জিতলে গিফট…
.
রেহান- ওকে ডান..
.
রায়হান- আমি নাফিসার টিমে।
.
রিয়াদ- আমিও ভাবির টিমে।
.
রেহান- ?তাহলে আমার টিমে কে! আমি একা!!
.
নাফিসা- ? শাশুড়ী আম্মু যাও অই টিমে…
.
রুবিনা- না, আমি খেলবো না।
.
নাফিসা- তাহলে! ? দারোয়ান ভাইয়াকে নিয়ে আসো।
.
(তারপর রেহান দারোয়ানকে ডেকে নিয়ে এলো। আর রুবিনা হলো আম্পায়ার ?।নাফিসা বরাবরই পাক্কা খেলোয়াড় আবার সাথে আছে রায়হান চৌধুরী। অন্যদিকে রেহান পাক্কা খেলোয়াড় হলেও দারোয়ান একেবারেই অধম। সুতরাং জয়ী হলো নাফিসা টিম ?। নাফিসা ও রিয়াদ তো খুশিতে লাফাচ্ছে আর সাথে বাকিরাও আত্মহারা। রেহান মুগ্ধ হয়ে দেখছে নাফিসা এ বাড়ির সবার সাথে কত সহজে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি মুহূর্ত সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখছে, না রেহান কিছুতেই নাফিসাকে যেতে দিবে না। সে নাফিসাকে সত্যিই তার #বউ বানাবে।)
.
নাফিসা- ইয়েএএ… নাফিসা টিম ইজ উইনার? গিফট দিতে হবে রেহান চৌধুরী ?
.
রেহান- ?ওকে বলো কি চাও?
.
নাফিসা- ছয় তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে হবে…. ?
.
রেহান- হোয়াট!!!!! ?
.
সবাই- ?
.
নাফিসা- হিহিহিহি ?, আই’ম জাস্ট জোকিং ইয়ার….. লং ড্রাইভে নিয়ে যেতে হবে ?
.
রেহান- ?ওকে….. বাট আজ না, পরশু দিন অফিস অফ আছে, সেদিন নিয়ে যাবো।
.
নাফিসা- ওকে।
.
রিয়াদ- আমিও যাবো…..
.
নাফিসা- ওকে মটো….?
.
রাতে ডিনারের সময়,
রিয়াদ- ভাইয়া, আমার কালার বক্স এনেছো?
.
রেহান- হুম।
.
রিয়াদ- কোথায়?
.
রেহান- আমার বেড সাইড টেবিলে রাখা আছে।
.
রিয়াদ- ওকে। ভাবি আজ কিন্তু বাকি পেইন্টিং শেষ করবা।
.
নাফিসা- ওকে, দ্রুত ডিনার শেষ করো। এখনি শেষ করবো।
.
রিয়াদ- ওকে?
.
(নাফিসা ও রিয়াদ দ্রুত ডিনার শেষ করে চলে গেলো রিয়াদের রুমে। বাকিদের খাবার ও শেষ।)
রায়হান- রেহান, তোকে না বলেছিলাম ছাপাখানায় যেতে। যাসনি কেন?
.
রেহান- ? মনে ছিলো না।
.
(চেয়ার থেকে উঠে যেতে যেতে কথাটা বলে সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো। রায়হান চৌধুরী ও রুবিনা চৌধুরী বেশ বুঝতে পেরেছেন রেহান নিশ্চই এখন মিথ্যে কথাটি বলে গেলো তাদের। রেহান নিশ্চয়ই চাইছে না নিউজটা পত্রিকায় দিতে।)
.
(৬ষ্ঠ দিন……
নামাজ পড়ে সকালে ব্যায়ামের পর রেহান বাগানের পাশে সুইমিং পুলে সাতার কাটছে। নাফিসা রিয়াদের রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পেল রেহানকে।)
.
নাফিসা- রিয়াদ, ফুটবল কোথায়?
.
রিয়াদ- কেন? এখন ফুটবল খেলবে?
.
নাফিসা- না, তারাতাড়ি ফুটবল দাও।
.
রিয়াদ- এই যে, নাও….
.
নাফিসা- ? চলো চলো….
.
রিয়াদ- কোথায়?
.
নাফিসা- আমার পিছু পিছু চলো…
.
(নাফিসা ফুটবল ও রিয়াদকে সাথে নিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে গেলো। তারপর কর্ণারে রেলিং এর পাশে এসে ছয় তলার ওপর থেকে ফুটবল দিয়ে রেহানকে ঢিল মারলো। সোজা রেহানের মাথায়! ? রেহান অবাক হয়ে এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। আর রেহানের অবস্থা দেখে ছাদে দাড়িয়ে রিয়াদ ও নাফিসা হাসতে লাগলো ?। এদিকে রেহান আশেপাশে খুজেই যাচ্ছে, বল তো আর নিজে নিজে আসেনি, কেউ তাকে ঢিল মেরেছে! কিন্তু কে! তারপর রিয়াদ চিৎকার করে রেহানকে ডাকলো..)
.
রিয়াদ- ভাইয়ায়ায়ায়ায়া…..
.
( এবার রেহান উপরে তাকিয়ে দেখলো ছাদে দাড়িয়ে নাফিসা আর রিয়াদ হাসছে। তার আর বুঝতে বাকি নেই এটা নাফিসা ঢিল মেরেছে। রেহান পানিতে থেকে ফুটবল এ ভড় করে সাতার কাটছে আর নাফিসাকে দেখছে। সে হাতে ইশারা করে দুজনকে ডাকলো সুইমিং পুলে আসার জন্য। রিয়াদ দ্রুত ছাদ থেকে নেমে এসে পুলে নেমে পড়লো রেহানের সাথে গোসল করতে । আর নাফিসা দোতলায় রিয়াদের রুমে বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। রেহান আবারো ইশারায় ডাকলো তাকে পুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নাফিসা না করলো সে যাবে না। রেহান রিয়াদ পানিতে ফুটবল খেলে বাসায় চলে এলো। রেহান বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো তার বাবা-মা তার রুমে দরজা লক করে খাটে বসে আছে।)
.
রেহান- (মাথা মুছতে মুছতে) আব্বু আম্মু তোমরা এখানে?
.
রায়হান- বস এখানে। কথা আছে তোর সাথে।
.
রেহান- (সোফায় বসে) বলো…
.
রুবিনা- এই পত্রিকা তোর আলমারিতে কেন?
.
রেহান- ?!
.
রুবিনা- দিন দিন বড় হচ্ছিস আর তোর বুদ্ধি কি লোপ পাচ্ছে নাকি! ? ভাগ্যিস, জামাকাপড় ময়লা হয়েছে কিনা দেখতে আলমারি খুলেছিলাম। তা না হলে তো এটা পেতাম ই না কখনো!
.
রেহান- ওফফ!?
.
রায়হান- রুবিনা শান্ত হও, আমি বলছি….
রেহান, তুই কি চাইছিস তা আমরা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা কি আদও সম্ভব!
.
রেহান- আব্বু, কেন সম্ভব নয়! নাফিসা আমাদের এখানে বেশ ভালো আছে। তার তো কোন প্রব্লেম হচ্ছে না। আমরা তার সন্ধান কাউকে না দিলেই হয়। সে তো একবারও বলছে না এখান থেকে যাবার কথা!
.
রায়হান- বাবা মায়ের কাছ থেকে সন্তান হারিয়ে গেলে তারা কত কষ্ট পায় তা কি একটুও বুঝতে পারছিস! তার উপর নাফিসা রিজোয়ান আহমেদের একমাত্র সন্তান। তারা কতটা কষ্টে আছে মেয়েকে না পেয়ে সেটা কি একবারও ভেবে দেখেছিস! আমার ছেলে দয়ালু সেটা জানতাম কিন্তু এতোটা পাষাণ হতে পারে তা আমি কখনো ভাবতে পারিনি!
দেখ বাবা, সন্তান সামান্য জ্বরে ভুগলে বাবা-মা ছটফট করে তার সন্তানকে দ্রুত সুস্থ করে তোলার জন্য। কোনো বাবা মা ই চায় না তার সন্তান চোখের আড়াল হোক। তোকে সবসময়ই বলি সারাদিন বাইরে থাকলেও সন্ধ্যার পর যেন ঘরে দেখি। তোর মা কিছুক্ষণ পর পর ফোন করে খোঁজ নেয়। কারণ অন্ধকার নেমে এলেই মন ছটফট করে ছেলে কোথায় আছে, কি করছে! আর মেয়েটি ৬দিন ধরে বাবা মায়ের কাছ থেকে দূরে আছে, তাহলে তাদের কি হাল হতে পারে! আজ হয়তো বুঝতে তোর বিবেক বাধা পাচ্ছে। কিন্তু যেদিন তুই বাবা হবি সেদিন বুঝবি সন্তান কি জিনিস।
.
(বাবার কথাগুলো শুনে রেহানের চোখ লাল হয়ে গেছে। বুকের ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। এক নাফিসাকে হারাতে হবে, আর অন্যদিকে সে কোন এক বাবা-মা কে কষ্ট দিতে যাচ্ছিলো। সে ও তো তার বাবা-মা কে, ভাইকে খুব ভালোবাসে। তাহলে নাফিসাও নিশ্চয়ই তার বাবা মাকে খুব ভালোবাসে। এজন্যই তো বারবার কান্না করলে বলতো “আমি আব্বু আম্মুর কাছে যাবো “।)
রেহান- পত্রিকায় ফোন নম্বর ও এড্রেস দেয়া আছে, কল করে বলে দাও।
.
(কথাটি বলে রেহান অফিসের জন্য তৈরি হতে চলে গেলো। ব্রেকফাস্ট করার সময় রেহান অল্প কিছু খেয়েই উঠে পড়লো। তারপর বাবার সাথে অফিসে চলে গেলো। এইটুকু সময়ে সে কারো সাথে তেমন একটা কথা বলেনি। রায়হান চৌধুরী রিজোয়ান আহমেদ কে কল করে তাদের অফিসের ঠিকানা দিলেন। তার বন্ধুসহিত রিজোয়ান আহমেদ ও তার স্ত্রী আয়েশা আহমেদ তাদের অফিসে এলো। বাবা ছেলে দুজনেই রিজোয়ান আহমেদ এর কাছে জানতে পারলো…)

.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here