গল্প :-পরী বউ,পর্ব :-০৭ এবং শেষ
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”আমি ওর কথা শুধু চুপচাপ শুনেই যাচ্ছি। কিছুই
বলতে পারছি না বা বলার মত কোনো ভাষা
খুজে পাচ্ছি না আমি। তারপর সাফা ফের
বলতে লাগলো,
জানো সিয়াম? অনেক আশা ছিলো তোমাকে
বিয়ে করবো, সংসার করবো। আমাদের কিউট
কিউট বাবু হবে। কিন্তু তা তো আর হলো না।
অনেক বেশি আশা করলে তা কখনো পুরন
হয়না তাই না?
আমি এবারও চুপ। কারন এই কথাটার উত্তর ও
আমার জানা নাই।
– সিয়াম?
– হুম বলো।
– আমি চলে যাচ্ছি। আর কখনো আসবো না
তোমার সামনে। যাবার আগে তোমাকে
একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে। একবার
জড়িয়ে ধরতে দিবা আমাকে?
কথাটা বলেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে
ধরলো সাফা। ও অনেক কান্না করছে। ওর
চোখের পানিতে আমার জামা প্রায় ভিজে
গেছে। অনেক খারাপ লাগতেছে আমার।
নিজেকে বড় ধরনের সেলফিশ মনে হচ্ছে।
তারপর সাফা বললো,
– সিয়াম আমি এবার চলে যাচ্ছি। ভালো
থেকো।
কথাটা বলেই সাফা আমার চোখের সামনে
অদৃশ্য হয়ে গেলো। সাফা চলে যাবার পর
নিজেকে অনেক একা একা লাগছে। কিছুই
ভালো লাগছে না। রাতে না খেয়েই শুয়ে
পড়লাম। বারবার সাফার কান্না ভেজা মুখটা
চোখের সামনে ভেসে উঠতেছে। অনেক
খারাপ লাগতেছে। অনেক বড় অন্যায় করে
ফেলেছি সাফার সাথে। তাছাড়া কি বা
করার ছিলো আমার? সাফা চলে যাবার পর
থেকেই ওর কথা বেশি বেশি মনে পড়ছে।
রাতে ঘুমিয়ে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম।
দেখলাম সাফা একটা ফাকা মাঠের মধ্যে
বসে আছে। আর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না
করতেছে। ওর হাতে দেখলাম লাল রক্তের মত
কি। মনে হচ্ছে রক্ত। একটু কাছে যেতেই
পরিষ্কার দেখতে পেলাম ওর হাতে রক্ত। আর
অন্য একটা হাতে ছুরির মত কি যেনো ধরে
আছে। ঐটা দিয়েই হয়তো হাত কেটেছে।
আমি সাফাকে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে
গেলাম ওর কাছে। কিন্তু আমি পৌছানোর
আগেই কাঁদতে কাঁদতে ও চলে গেলো।
স্বপ্নটা দেখে আমি ধড়মড় করে বিছানায়
উঠে বসলাম। এমন স্বপ্ন দেখলাম কেনো
আমি? তাহলে কি সাফা সত্যি সত্যি হাত
কেটে ফেলছে? নিজের উপর অনেক রাগ
হচ্ছে। কেনো এমন করতে গেলাম ওর সাথে
আমি? আবার শুয়ে পড়লাম, রাত এখনো অনেক
বাকি। কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলাম না।
হঠাত মনে হলো কে যেনো আমাকে ডাকছে।
– সিয়াম ওঠো। এই সিয়াম দেখো কত বেলা
হয়ে গেছে? এতো বেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমায়?
উঠো তাড়াতাড়ি?
আমি উঠে গেলাম। কিন্তু কাউকে দেখলাম
না। এমন করে কে ডাকছিলো আমাকে? এমন
করে তো সাফা ডাকতো আমাকে। কিন্তু ও
তো চলে গেছে। তাহলে ডাকলো কে? নাকি
আমার মনের ভুল? বুকের ভিতর শুন্য শুন্য
লাগছে এখন। সাফাকে হারিয়ে এখন আমি
বুঝতে পারছি সাফা আমাকে কতটা
ভালোবাসতো। কিন্তু এখন বুঝে আর কি হবে?
যখন বুঝার তখন তো বুঝলাম না। ওকে তো
আমি হারিয়েই ফেলেছি আমি। না আমি
সাফাকে খুজবো। যে করেই হোক ওকে আমার
খুজে বের করতেই হবে। খুজে বের করে ওর
কাছে আমি ক্ষমা চাইবো। ওকে হারিয়ে
তারপর বুঝতে পারলাম ওকে আমি
ভালোবেসে ফেলেছি। আমি বের হয়ে
গেলাম বাসা থেকে। খুজতে হবে যেখানে
যেখানে ওর সাথে ঘুরছি। ঐ তো সেই সান
বাধানো পুকুরটা। এই তো এখানে বসে সাফা
আর আমি সেদিন রাতে বসে ছিলাম। আর
আজ? আর আজ ও আমার থেকে কত দুরে।
আমারই দোষে ও আজ চলে গেছে।
ভেবেছিলাম হয়তো এখানে ওকে দেখতে
পাবো কিন্তু পেলাম না। অনেক ডাকাডাকি
করলাম। তবুও সাফা এলো না। বসে থেকে
থেকে উঠে চলে আসলাম। রাতে হালকা কিছু
খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যেখানে ও অজ্ঞান
হয়ে পড়েছিলো সেখানে। কিন্তু ওখানে
যেয়েও নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো।
সাফা হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে।
সত্যি সত্যিই হারিয়ে গেছে। ঠিকই করেছে
ও। আমার মত একটা সেলফিশের সাথে ও
কেনো থাকবে? যে শুধু ওকে কষ্ট আর
অবহেলা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। বুক
ফেটে কান্না চলে আসতেছে আমার। বার
বার মনে হচ্ছে সাফা তুমি ফিরে এসো?
একটিবার আমার কাছে ফিরে এসো। আমি
তোমাকে আর কখনো কোন কষ্ট দিবো না। ও
আসবে না আর। আমার সাফা আর আসবেনা।
জানিনা ও কেমন আছে।
তখনই সেই তান্ত্রিকের কথা মনে পড়লো
আমার। আমি দেরি না করে চলে গেলাম ঐ
তান্ত্রিকের কাছে। যেয়ে উনাকে সব খুলে
বললাম। বললাম সাফাকে আবার আমার
জীবনে ফিরিয়ে এনে দিতে। তান্ত্রিক
বললো,
– এটা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আমি আর
তাকে আনতে পারবো না। যদি ও নিজের
ইচ্ছায় আসে তাহলে হবে নয়তো আমার পক্ষে
আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।
তান্ত্রিকের ওখানে যে আশা নিয়ে গেলাম।
উনার কথা শুনে সে শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে
গেলো। সাফাকে ফিরে পাবার আর কোনো
চান্স নাই। আজ এক সপ্তাহ ধরে ওকে খুজে
চলেছি কিন্তু কোথাও পেলাম না। রাস্তা
দিয়ে হাটছি আর সাফার কথা ভাবছি।
– কি ভাই? মরতে আমার রিকসার নিচে
আসতেছেন কেনো? রিকসার নিচে পড়ে তো
মরতে পারবেন না। শুধু শুধু আমাকে মারবেন।
মরার দরকার হলে বড় বড় গাড়ি আছে, বাস
ট্রাক ট্রেন ঐগুলোর নিচে পড়েন। খুব সহজেই
মরতে পারবেন। যত্তসব পাগলের দল।
রিকসাওয়ালা অনেক গুলো কথা বললো
আমাকে। সাফার কথা ভাবতে ভাবতেই ওর
রিকসার নিচে পড়ছিলাম আমি। তাই
এতোগুলো কথা বললো। কিন্তু ওর কথা গুলোর
দিকে কানও দিলাম না। নিজের মত করেই
হাটতে লাগলাম। হঠাত ওর একটা কথা আমার
মনে ধরলো মরার জন্য বড় বড় গাড়ি আছে।
হ্যাঁ আমি মরবো। সাফাকে যখন পেলাম না এ
জীবন রেখে কি লাভ? সাফার মত করে কেউ
আমাকে ভালোবাসবে না। আর সেই
সাফাকেই যখন আর পাবো না তখন আমি
মরবো। আমি হাটতে লাগলাম ট্রেন রাস্তা
ধরে। রাতের শেষ ট্রেনটাই আসবে একটু পরে।
আর এই শেষ ট্রেনের নিচে পড়েই আমার
জীবন শেষ হবে। মরার আগে যদি একটিবার
সাফার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পেতাম।
তাহলে মরেও শান্তি পেতাম। সাফা হয়তো
সারা জীবন আমাকে ভুল বুঝে যাবে। আমার
জাগায় যদি সাফা থাকতো, হয়তো আমি যা
করেছি ওর সাথে ও নিজেও তাই করতো। ঐ
তো ট্রেন আসার শব্দ হচ্ছে। একটু পরেই এই
পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অন্য জগতে চলে
যেতে হবে। আচ্ছা ওখানে যেয়ে কি সাফার
দেখা পাবো কখনো? কি জানি হয়তো পাবো
হয়তো না। ট্রেন দেখা যাচ্ছে চলে এসেছে
আর। হর্ন দিচ্ছে ট্রেনে হয়তো আমাকে
রাস্তা থেকে সরে যেতে বলছে। কিন্তু আমি
তো সরে যাওয়ার জন্য দাড়ায়নি। চোখ বন্ধ
করে ফেললাম। ট্রেন আসতেছে, এসে গেছে
প্রায়। তখনই মনে হলো কে যেনো আমাকে
ধরে টান দিলো। চোখ খুলে দেখি সাফা
দাড়িয়ে আমার সামনে। কাঁদছে ও। আমাকে
বললো,
– কি করছিলে এটা? এখনি তো ট্রেনের নিচে
পড়ে মরে যেতা। যদি আমি ঠিক সময় মত না
আসতাম তাহলে কি হতো বলোতো?
– কি আর হতো? ট্রেনটা আমাকে চাপা দিয়ে
চলে যেতো। তোমাকে কষ্ট দেয়ার শাস্তিটা
তো পেতাম।
– চুপ একদম চুপ। কে বলছে তুমি আমাকে কষ্ট
দিছো? তুমি আমাকে কোনো কষ্ট দাওনি
বরং তুমি যা করছো ঠিকই করছো। আমি
তোমার জাগায় থাকলেও হয়তো একই কাজ
করতাম। শুধু আমি না – প্রতিটা মানুষই এটা
করবে। কোনো মানুষই চাইবে না তার জীবন
আমাদের মত কেউ আসুক। আসলে আমারই ভুল
ছিলো তোমাকে ভালোবাসা। আর তাই বলে
তুমি এমন বাজে একটা কাজ করবে?
– কি করবো? তুমি চলে যাবার পর থেকে আমি
কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। তুমি চলে
যাবার পর আমি বুঝতে পারছি আমিও
তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি। কিন্তু তখন
বুঝতে পারিনি। বুঝলাম যখন তোমাকে
হারালাম। জানো সাফা? এই একটা সপ্তাহ
তোমাকে পাগলের মত খুজেছি কিন্তু পাইনি।
যে জীবনে তুমি নাই সে জীবনও আমি চাইনা।
আর তাই……
– আর তাই তুমি সুইসাইট করতে চাইছিলা?
তাহলে আমার সিয়ামকে আমি কোথায়
পেতাম? আমার ভালোবাসা হেরে যেতো না?
আমি সাফাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর
বললাম,
– আমাকে ছেড়ে আর যাবা না তো বলো?
– না আমার সিয়াম পাখিকে ছেড়ে আমি
কোথাও যাবো না।
– আমি পাখি?
– হুম সিয়াম। তুমি আমার পাখি হিহিহি।
– এই সাফা এবার চলো।
– কোথায় যাবো এখন?
– এখন সোজা কাজি অফিসে যাবো। তারপর
বিয়ে করবো।
– বিয়ে করবা? কিন্তু আমি তো পরী?
– তাতে কি? সবাই তো মানুষ বিয়েব করে।
আর আমি না হয় পরী বিয়ে করলাম। আর তাই
তো তুমি হবে আমার পরী বউ।
– আর তাই তো তুমি হবে আমার সিয়াম পাখি
হিহিহি।
.
.
সমাপ্ত