মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,পর্ব: ​৩

0
2110

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,পর্ব: ​৩
আদিল খান


তোমার পেটের সন্তান যে আমার তার প্রমান কি….?

রোহনের মুখে কথাটা শুনেও যেন কিছু শুনতে পেলো না রুবি।
তাই বললো….
কি বললে তুমি…..?

তোমার বাচ্চার বাবা কে….?
কার এই পাপের ফসল…..?

হোয়াট…..? জাস্ট সার্ট আপ রোহন,,,,
তুমি এসব কথা বলতে পারলে….?
২ বছর রিলেশনে ছিলাম আমরা।
তারপর ৫ বছরের সংসার।
পুরো সাত সাতটি বছর তোমার সাথে আছি আমি,,,
আর আজ তুমি….?
তুমি এসব কথা বলছো…..?

কেন বলবো না….?
৫ বছরে তো তুমি কোন দিন এসে বলো নি যে তুমি মা হতে চলেছো।
অথচ একটা ছেলের সাথে তোমাকে কিছুদিন থেকে দেখছি।
আর এখন তুমি প্রেগন্যান্ট….?
হাউ ফানি হা….?

রোহনের মুখে ছেলের কথা শুনে অবাক হলো রুবি
আর বললো,,
ছেলে….?
কোন ছেলের কথা বলছো তুমি…..?

কেন যার সাথে ঘুরতে যাও,,,
যে তোমার এই সন্তানের বাবা।

ব্যাস রোহন ব্যাস এসব মিথ্যা অপবাদ দিও না আমায়।
তুমি কি বুঝতে পারছো,,, কত বড় পাপ করছো তুমি….?

হা হা,,,, নিজে পাপী হয়ে আমাকে বলছো আমি পাপী।

আমি পাপী….?

তা নয় তো কি…?
হঠাৎ করে এসে বলছো তুমি প্রেগন্যান্ট…. আমাকে পাগল মনে হয়….?

আ……
কিছু একটা বলতে গিয়েও পারলো না,,রুবি,,
রুবি আর কোন কথা বললো না,,,
কারণ রোহনের কথা গুলো রুবির কাছে এক একটা তীরের সমান ছিলো।

ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো রুবি।

রাতে ডিনার সের রুবি শুয়ে পরলেও রোহন মারিয়াকে নিয়ে ব্যাস্ত।

পরের দিন রোহন রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতেই রোহনের মোবাইল বেজে উঠে,,,,
পিক করে
হ্যালো

কোথায় তুমি…?

অফিসে যাচ্ছি

আচ্ছা সাবধানে যেও,,,,

হুমমমম
বলে মোবাইল পকেটে রেখে দিলো রোহন।

অফিস থেকে ফিরে এসে দেখলো রুবি শুয়ে আছে।

রুবিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,,,
সে সারা দিন কিছু খায় নি,,,
চুল এলোমেলো,,
পাগলের মতো হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়।

কিন্তু রোহন সেদিকে খেয়াল না করে ব্যাগটা টেবিলে রেখে ওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।

রোহন ওয়াশ রুমে চলে যাওয়ার পর রোহনের মোবাইলে একটা ম্যাসেস আসে।

রুবির প্রায় কাছে মোবাইলটা রেখে ওয়াশ রুমে গেছে রোহন।
তাই ইচ্ছা না থাকা সত্তেও রুবি মোবাইটা হাতে নিলো।
পাওয়ার বাটনে চাপ দিতেই
ম্যাসেস টা ভেসে উটলো।

নাম্বারটা কোন মারিয়া নামে সেভ করা।
তাড়াতাড়ি করে ম্যাসেস টা ওপেন করলো রুবি।
আর ম্যাসেস টা ছিলো,,,
অফিস শেষ….?
যদি সময় হয় তো একটু দেখা করিও,,
কাজী অফিসে কথা বলে রাখবো।

ম্যাসেস টা দেখে রুবির মাথা ঘুরে গেলো।
হাতে বৃদ্ধা আংঙ্গুলটা মোবাইলের স্কৃনের উপর থেকে নিচে নিয়ে আসতেই
রোহন মারিয়া কর আরো কিছু ম্যাসেস দেখতে পেলো সে।

এভাবে আরো অনেক ম্যাসেস দেখলো রুবি,,,,
এমনি সারা দিন কিছু খায় নি,,
তার উপর এসব দেখে প্রায় সেন্স লেস হওয়ার উপক্রম হলো মেয়েটার।

কিন্তু কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বসে পরলো খাটের উপর।
রোহন ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে রুবির হাতে তার মোবাইল দেখে রেগে গিয়ে মোবাইলটা ঝটকা দিয়ে কেরে নিয়ে,,
বললো,, এতো সাহস কোথা থেকে পাও…?
আমার মোবাইল ধরার…?

রুবি অন্য কিছু না বলে সোজা প্রশ্ন করলো
মারিয়া কে….?

কেন…?

আমি বলছি বলো মারিয়া কে


সেটা তোমাকে বলার প্রায়জন মনে করছি না।

রোহনের কথা শেষ না হতেই রুবি বিছানা থেকে উঠে এসে রোহনের একদম সামনে এসে আবার বললো মারিয়া কে বলো..?

ঐ ছেলটা তোমার যা হয়,,,
মারিয়াও আমার সেটাই।

মানে….?

মানে কি বুঝ না…..?

প্লিজ রোহন এমন টা করো না,,,
সত্যি কোন ছেলে নেই আমার জীবনে।
এ জীবনে একজনকেই ভালবেসেছি,,,,
আর সেটা তুমি।
তুমি ছাড়া কেউ নেই আমার।
আমার সাথে এরকম করিও না,,,,
আমাদের অনাগত সন্তানের কথা একবার ভাবো।
প্লিজ

ঐ চুপ,,,,
ঐ সন্তানের কথা আমায় বলবে না,,,
ওটা পাপ,,,
তুমি পাপী।
আমার ওসবের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
আর হ্যা,,,,
পারলে লোকজন জানা জানি হওয়ার আগে বাচ্চাটা নষ্ট করিও।
টাকা লাগলে আমি দেব।
বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রোহন।

রোহনের দিকে হাত বারিয়েও তাকে আটকাতে পারলো না,,,,

রোহন চলে যাওয়ার পর রোহনের কথা গুলো রুবি কানে বার বার বাজতে থাকে,,,,,
তুমি পাপী,,
তোমার পেটে পাপের ফসল,,,

রোহন আর মনিকা একটা হোটেলে বসে আছে,,,
দুজনেই চুপ।

কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে রোহন বললো,,,,
আচ্ছা মারিয়া,,তুমি আমাকে কতটা ভালবাস….?

রোহনের কথায়,,,, মারিয়া একটু অবাক হয়ে বললো,,,
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন….?

এমনি বলো না

একটা মেয়ে কাউকে কতটা ভালবাসলে সে তার পেটে তার প্রেমিকের সন্তান নিয়ে ঘুরে বেড়ায়,,,লোক সমাজের ভয় না করে জানো…?
বলতে পারবে….?

যদি এখন আমি বলি আমি বিবাহিত,,,
তাহলে…?
এসব জেনেও আগের মতো ভালবাসবে আমায়….?

এখন আমি মোটেও ফান করার মুডে নেই রোহন,,,
সো প্লিজ

আমি মোটেও ফান করছি না,,,
আমি সত্যিই বিবাহিত,,,
আমার ঘড়ে রুবি নামের একটা মেয়ে আছে সেও অন্তঃসত্ত্বা।
সে আমার বিবাহিত স্ত্রী

রোহনের কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাড়ায় মারিয়া,,,
মহুর্তেই বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে সে,,,
কোন রকমে বললো,,,,
কি বলছো এসব…..?

রোহন মারিয়ার হাত ধরে বললো,,,,
আমার ঘড়ে স্ত্রী থাকলেও আমি তোমাকে ভালবাসি,,,
তোমার সাথে থাকতে চাই,,,

কিন্তু…?

কোন কিন্তু নায়,,,, প্লিজ
ভালবাসি তোমায়,,,,,

মারিয়া মনে মনে ভাবতে লাগলো,,,,
এখন রোহনকে রিজেক্ট করলে তার সমাজে মুখ দেখানো দায় হয়ে যাবে। তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো
ভুল যখন হয়েছে,,, তখন নিজের জন্য ,নিজের সন্তানের জন্য হলেও এসব মেনে নিতে হবে,,
কারণ এখন মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।


কি হলো,,,, কথা বলো,,, আমায় ফিরিয়ে দিয়ো না,,,মারিয়া

আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব না,,,,
কিন্তু তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।

বলো কি কাজ,,,,

তোমাকে তোমার স্ত্রীকে ডিভোর্স তো দিতে হবে,,,
সাথে আমার সন্তানের প্রতিদন্দীকেও সরাতে হবে। যেন ভবিষ্যৎ এ আমার সন্তান ছাড়া অন্য কেউ তোমার সম্পত্তির ভাগিদার না হতে পারে।

সেটা কি রকম….?

তুমি যে বললে তোমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।

হুমমম

যে ভাবেই হোক সেই সন্তানটাকে নষ্ট করতে হবে।

কিভাবে…?

ওকে এসব বলবে।

ও মানবে না,,,

তাহলে অন্যভাবে করবে,,,,
প্রথমে ওর সাথে একটু নাটক করবে,,,
কেয়ার করবে,,,
তারপর সুযোগে বুঝে দুধের বা কোন কিছুর সাথে একটা পিল খাইয়ে দেবে।

ও আচ্ছা বুঝতে পেরে গেছি,,,

হুমমম,,,, চলো

কোথায়…?

কাজী অফিস

আজই….?

হুমমমম

ওকে

তারপর রোহন মারিয়া কাজী অফিসে গিয়ে তাদের বিয়েটা করে নিলো।

কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে রোহন মারিয়াকে ড্রপ করে দিয়ে নিজের বাসায় আসে।
এসে দেখে রুবি ঘুমিয়ে গেছে।
তাই রুবিকে ডেকে তুললো রোহন।

রুবি ঘুম থেকে উঠে,,,, দেখলো রোহন বসে আছে তার হাত ধরে,,,

রুবি কিছু বলার আগে রোহন বললো যাও,,,
ওয়াশ রুম থেকে মুখ ধুয়ে আসো,,,,

রোহনের হঠাৎ কেয়ারিং এ একটু খটকা লাগলো রুবি,,,
কিন্তু পরেই আবার ভাবলো হয়তো রোহন তার ভালবাসাটা বুঝে গেছে।
হয়তো সে তার সব ভুল গুলো বুঝে গেছে।
তারপর আল্লাহকে ডেকে রুবি বললো,,,
আল্লাহ তুমি সত্যিই মহান,,,,

রুবি উঠে ওয়াশ রুমমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলে

রোহন রুবির হাত ধরে বললো
সরি রুবি,,,,
তখন আসলে মাথা ঠিক ছিলো না,,,,
আর ঐ মারিয়া নামের মেয়েটা মাথায় উঠে বসে ছিলো।
তাই কি করবো কিছু বুঝতে পারিনি।
বাসা থেকে বেড়িয়ে নির্জন একটা জায়গায় বসে ভাবে দেখলাম আসলে আমি যা করেছি,,, তা ভুল ছিলো।
আমায় মাফ করে দাও প্লিজ…..?

রুবি রোহনের কথার উত্তরে কিছু বললো না
শুধু রোহনকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।

আর এভাবেই রোহন সাতদিন অপেক্ষা করলো সঠিক সুযোগের।
সাতদিন পর,,,,
একদিন সন্ধায়,,,,
রুবি বসে বসে “মেম সাহেব”” বইটা পড়তেছিলো।
এমন সময় রোহন এসে এক গ্লাস দুধ রুবিকে দিয়ে বললো।
নাও এটা খেয়ে নাও


চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here