মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,শেষ পর্ব
আদিল খান
।
।
।রুবি বসে বসে “মেম সাহেব” বইটা পড়তেছিলো এমন সময় রোহন এসে এক গ্লাস দুধ দিয়ে বললো এটা খেয়ে নাও।
।
রুবি একটা মুসকি হাসি দিয়ে রোহনের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে
দুধ টুকু খেয়ে নিলো।
।
রুবিকে দুধ খাইয়ে রোহন,,,
রুবির হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে
টেবিলে রেখে বললো,,,,
তুমি এখন শুয়ে পর,,,
আমি একটু ঐ গলির দোকান থেকে একটু ঘুরে আসি।
।
রোহনের কথা মতো রুবি শুয়ে পরলো।
আর রোহন দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে মারিয়ার কাছে চলে গেলো
।
রুবি শুয়ে পরলেও,,,
তার যেন কিছুই ভাল লাগছে না,,,
মাথা ঘুরছে,,, সাথে একটু একটু পেট ব্যাথা,,,,,
প্রথমে এসবকে এমনি হয়তো হচ্ছে ভেবে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে রুবি
।
কিন্তু পেট ব্যাথা ধীরে ধীরে বারতে শুরু করলো।
আর এক পর্য়ায়ে সহ্যের বাইরে চলে গেলো মেয়েটার।
।
বিছানায় পেট ব্যাথায় গড়াগড়ি দিতে শুরু করলো রুবি,,,,
বা হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে ভাজ হয়ে টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে রোহনকে কল দিলে রোহনের মোবাইল সুইচ অফ বলে।
।
কিন্তু বারবার ট্রাই করতে থাকে রুবি,,,
ফলাফল একই।
।
মোবাইলটা রেখে হঠাৎ পেট ব্যাথার কারণ জানতে রোহন যে গ্লাসে করে দুধ নিয়ে আসছিলো সেই গ্লাসটা হাত নে রুবি।
হাতে নিয়ে গ্লাসের তলায় পিলের কিছু গুড়া দেখতে পায় সে।
এসব দেখে নিমিষেই চোখে জল এসে যায় মেয়েটার।
।
গ্লাসটা ফ্লোরে একটা আছার মেরে দরজায় গিয়ে জোরে জোরে আঘাত করতে থাকে সে।
।
আর এর মাঝে রুবি বুঝতে পারে তার ব্লেডিং শুরু হয়ে গেছে,,,,ধীরে ধীরে পা দুটো লাল হয়ে আসছে,,,,
।
এসব দেখে “””না””” বলে একটা চিৎকার দিয়ে সেন্স লেস হয়ে যায় রুবি,,,
।
সেন্সে ফিরে সে নিজেকে আবিষ্কার করে কুমিল্লায়,,, তার বাবার বাসায়।
।
চারদিকে তাকিয়ে দেখে তার বাবা,মা,ছোট ভাই মুবিন বসে আছে।
।
রুবি বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে পেটের ব্যাথার কারনে পারলো না,,,
।
রুবির উঠতে দেখে ওর মা বললো,,,,,
উঠবি না,,, ডক্টর কিছু দিন উঠতে না করেছে।
।
তারপর রুবি জানতে পারে তার কোন প্রতিবেশী তার চিৎকার শুনে তাকে হসপিটালে নেয়,,,
আর সেখান থেকে কুমিল্লা।
।
রোহন কোথায় বলে রুবি তার মাকে প্রশ্ন করলে রুবির মা বল।,,,
ওর কথা এখন আর জানতে চেয়ে লাভ কি…?
।
রুবি তার মায়ের কথায় অবাক হলে বলে কেন….?
।
এই নে,,, তোর ডিভোর্স পেপার,,,
(একটা কাগজ রুবির দিকে এগিয়ে দিয়ে)
রোহন তোকে তিন দিন হলো ডিভোর্স দিয়েছে।
।
ডিভোর্সের কথা শুনে রুবি কি বলবে না বলবে বুঝতে পারে না,,,
শুধু তাকিয়ে থাকে কাগজটার দিকে।
আর মনে মনে ভাবে ৭ বছরের ভালবাসার দলিল এটা….?
কাউকে বুঝি খুব ভালবাসলে এমনটাই হয়….?
কোন কথা না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে রুবি,,,,
।
৮ বছর পর……
।
রুবি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পরে কোরআন তেলাওয়াত করলো।
কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করার পর সকাল ৭ টা বাজলে তারাতারি উঠে সকালের নাস্তা খেয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।।
।
রুবি রাস্তা দিয়ে হাটার সময়
কেউ একজন রুবি বলে ডাক দিলো,,
।
কেউ পিছন থেকে ডাক দিলে পিছনে ঘুরে দাড়ায় রুবি।
পিছনে ফিরে দেখে একটা লোক,,,
মাথার চুলে হালকা পাক ধরেছে,, দেখে চেনা চেনা লাগছে রুবির।
।
রুবি রোহনের দিকে ফিরে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় রোহন,,,,
চোখে কালো ফ্রেমের চশমা,চুলে পাক ধরেছে,,
কাধে একটা ব্যাগ।
রোহন বললো,,,, কেমন আছো রুবি…?
আমাকে চিনতে পারো নি…?
আমি রোহন।
।
জ্বী আমি ভাল আছি,,,,,?
আর এখানে আসছেন…?
।
আমাকে বলবে না আমি কেমন আছি….?
।
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,,, আমি আসি।
বলেই ঘুরে চলে যেতেই রোহন রুবির হাত ধরে বলে
একটু দাড়াও না,,,,
।
কেন…?
।
এমনি…বলে রোহন শুধু রুবিকে দেখেই যাচ্ছে।
।
কি হলো কিছু বললে বলো,,, আমার তারা আছে।
।
কোথায় যাচ্ছো…?
।
সামনেই,,,,
আর শুনলাম মারিয়াকেও নাকি তালাক দিয়েছো…?
।
নাহ আমি দেই নি,,,, সেই দিয়েছে।
।
কেন….?
ভালবাসা কমে গেছে….?
।
হয়তো……
।
ওহহহ
আচ্ছা আমি আসি,,,,
।
তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
।
কি
।
নুপুর
।
কেন…?
।
তোমার পছন্দ ছিলো খুব।
।
আমার তো তোমাকেও পছন্দ ছিলো,,,
।
তুমি অনেকটা বদলে গেছো।
।
দমকা ঝ্বরের পর প্রকৃতি এমনিতেই বদলে যায়।
।
রুবির কথায় মাথা নিচু করে রোহন,,,
।
রুবি বলতে শুরু করে,,,,,
তুমি অবশ্যই সুখ/ ভালবাসার জন্য আমাকে ছেড়ে মারিয়ার কাছে গিয়েছিলে।
কিন্তু তুমি হয়তো এটা জানো না,,,।
সুখ অনেকের মাঝে নয়,,একজনের মাঝে থাকে,,,
যাই হোক,,,
ভাল থেকে বলে চলে যেতে শুরু করে রুবি।
।
রোহন আমার রুবিকে ডাকে,,,
।
রুবি পিছন ফিরে বললো,,,
কি….?
।
আমায় ভালবাসো এখনো….?
।
রুবি চুপ
।
রোহন একটু এগিয়ে গিয়ে রুবি সামনে হাটু গেরে হাত জোর করে বললো
ফিরে আসতে পারবে না….?
।
কি করছো কি এসব….?
উঠে পরো,,,
।
আগে বলো,,, ফিরে আসবে।
।
রোহন আর রুবির কথা বলার মাঝের তিন/চার টা বাচ্চা এসে রুবির আঁচল টেনে বললো
মেম কে উনি….?
দেখে তো ফকির মনে হচ্ছে না,,,।কিন্তু উনি ওভাবে কেন বসে হাত পেতে আছে…?
।
কেউ না,,, তোমরা যাও,,,, আমি আসতেছি,,,,
।
রুবির কথায় বাচ্চা গুলো চলে গেলো।
।
তারপর রুবি রোহন কে বললো
।
দেখ রোহন ভেঙ্গে যাওয়া সেতু মেরামত করার চেষ্টা করে লাভ,,নাই,
তাতে বৃথা সময় নষ্ট হবে।
।
তোমার মনে আছে…?
আমার পেটের বাচ্চা টা তোমার কাছে কতটা বোঝা হয়ে গিয়েছিলো….?
কত ছলনা করে ওকে দুনিয়ার আলো দেখার আগেই ওর চোখ দুটো বন্ধ করে দিয়েছিলে…?
((কথাটা বলতেই রুবি তার চোখের কোন চলে আসা জলের ফোটা মুখে নিলো রোহনকে লুকিয়ে।)
কিন্তু আল্লাহর কি মহিমা দেখ…?
আজ আমার কত গুলো বাচ্চা,,,
(চলে যাওয়া বাচ্চা গুলোর দিকে দেখিয়ে দিয়ে)
ওরা যখন আমাকে মেম বলে ডাকে।
আমি মেম শব্দটা শুনা না,,,, আমি শুনি মা।
আর এজন্য আমার পরিবারের ইচ্ছার বাইরে এই স্কুলটায় পড়াই আমি।
আমি ওদের মাঝে আমার সেই সন্তানকে খুজে পাই।
আর আমার সন্তানদের ছেড়ে আবার তোমার কাছে ফেরা সম্ভব না।
তুমি তো ৮ বছর পর আসছো,,,
আমি চাইলে আরো ৫ বছর আগে বিয়ে করতে পারতাম। অনেক প্রস্তাব পয়েছিলাম। কিন্তু আমি তো অনেকের মাঝে সুখ খুজি না,,,তাই করি না আবার বিয়ে।
আরো অনেক কথা বলার ছিলো।
আমাকে ডিভোর্স দেওয়া সহ অনেক কিছু।
কিন্তু সময় নেই,,,
আমার সন্তানেরা ডাকছে আমায়।
ভাল থেকো,,,,
বলেই চলতে শুরু করলো রুবি।
।
রোহন রুবিকে চিৎকার করে ডাকতে গিয়েও পারলো না,,,ভিতর টা রুবির জন্য চিৎকার করলেও।
মুখে কোন কথাই আসছে না।
।
রুবি চলে যাচ্ছে,,,,রোহন দেখছে
শুধু দেখেই যাচ্ছে,,,,
আসতে আসতে কিছু বাচ্চার মাঝে হারিয়ে গেলো রুবি।
রোহন শত চেষ্টা করেও আর রুবিকে খুজে পেলো না।
।
।
কিছু কথা >>> ভালবাসা/সুখ কখনো একের অধিক কারো কাঝে খুজতে যাবেব না,,,
এতে হয়তো সাময়িক একটু সুখ/ভালবাসা পাবেন,, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী নয়।
কারণ……?
।
কারণ ভালবাসা সুখ থাকে একজনের মাঝে,,,
একটু সময় নিন,,,ধর্য ধরুন,,,আপনার প্রিয় মানুষটাকে বুঝতে শিখুন,,তাকে আপনাকে বুঝতে দিন।
বিশ্বাস করুন বস,,,,
আপনি একজনের মাঝে যে সুখ পাবেন তা হাজার জনের মাঝে পাবেন না।
আর সব চেয়ে বড় কথা সুখ আল্লাহর দান,,,
দুজনে মিলে ওনার কাছে নামাজ পড়ে দোয়া করুন।
।
।
সমাপ্ত
।
পুরো গল্পটা কেমব হয়েছে জানাবেন।
ধন্যবাদ