শেষের পাতায় তুমি?, পর্ব-০২

0
1521

শেষের পাতায় তুমি?,
পর্ব-০২
writer_shanta_islam

-সেকি ইশা নিমপাতা লাগালি কেনো? বিষ লাগাতে পারলি না,,খেয়ে বুড়িটা মরতো।
তানিয়ার এমন ভয়ংকর কথা শুনে আমার মুখ থেকে অটোমেটিক আস্তাগফিরুলা বের হয়ে গেলো।
এই দুই মেয়ে নিজে মরবে মরবে সাথে আমাকেও মারবে। সকাল থেকেই কলিজাটা মোচরামোচরি করছিলো মনে হচ্ছিলো কিছু একটা হতে চলেছে,,এখন দেখি মেয়েগুলো সত্যি সত্যি ভয়ংকর কিছু একটা ঘটাবে। আমি তানিয়ার হাত থেকে নানির দাতগুলো নিয়ে বললাম দোহাই লাগে বোন,,নানিকে বিষ টিস দিস না,,,কথাটা পুরো বলতে না বলতেই হঠাৎ পিছন থেকে নানির আহাজারি শুনতে পেলাম।
– ওরে মা রে,,ওরে বাবারে,,তবে কি এই ছিলো তোর পেটে সুচরিতা। তুই আমাকে মারার জন্য আমার দাতে বিষ মিশিয়েছিস।
নেও ঠেলা,,,যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর। রীতিমতো নানির আহাজারি শুনে আব্বা আম্মা সবাই এ রুমে এসে জমাট বেধেছে। আম্মা নানিকে ধরতেই নানি আমার নামে আম্মার কাছে বিচার দিতে লাগলো। আমি নাকি উনাকে মারার জন্য উনার দাতে বিষ মিশিয়েছি।
– হয়েছে বুড়ি এতো কান্নাকাটি করার কি আছে। আজ হলেও মরতে হবে কাল হলেও মরতে হবে,,,বলিকি একটু তারাতারি মরলেও তো পারো। আমাদেরও শান্তি হয়।
তানিয়ার এমন কথা শুনে নানি তার হাতে থাকা লাঠিটা নিয়ে তানিয়াকে একটা গুতো মেরে মা কে উদ্দেশ্য করে বললো,,দেখেছিস লতা দেখেছিস তোর তিনটা মেয়ে কেমন খুনি হয়েছে,,,আমাকে খুন করার জন্য বুদ্ধি আটছে। কথাটা বলে যেই নানি আমাকে তেরে মারতে আসবে সাথে সাথে আমি ইশার পিছু যেয়ে লুকাই,,,
– বিশ্বাস করো নানি আমি কিছু করিনি! তোমার দাতে ইশাপু আর তানিয়া নিম পাতা লাগিয়েছে। যাতে আজ তুমি খেতে না পারো,,বিষ লাগানোর প্লেনটাও ওদের ছিলো। আমি তোমাকে মারতে যাবো কেনো?
আমার কথা শুনে ইশা আপু আমার পিঠে একটা কিল বসিয়ে বললো,,,মিথ্যা বলিস কেনো? নানিকে তো তুই বিষ দিতে চেয়েছিস! পিঠে হাত মলাতে মলাতে ইশাপু কে বললাম,,,তুই আমার সাথে এমন করতে পারলি আপু। কথাটা বলেই কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে আসি।
ছাদের এক কোনায় বসে কান্না করছিলাম। হঠাৎ ইশাপু আর তানিয়া এসে আমার পাশে বসলো।
তানিয়া একটা কাচা আম এনে দাত দিয়ে ছিলছে আর বলছে,,,উফফ চুক্কা।
ডাইনিটা ভালো করে জানে আম আমার খুব প্রিয়। তাই বুঝি আমার সামনে আম এনে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে। আমি ওর দিকে তাকালাম না। তাকাবোই বা কেনো? প্রতিবার ওরা দোষ করবে আর ফাসাবে আমাকে!
কিরে তুই কাদছিস কেনো? তোর কি জামাই মরেছে?
ইশাপু আমার কাধে হাত রেখে কথাগুলো বললো,,দেখ বোন রাগ করিস না। ইদানিং মাথাটা এলোমেলো হয়ে থাকে। আর সব হয়েছে ওই বুড়ির জন্য। ওই বুড়ি যদি আমার বিয়েটা না ঠিক করতো তাহলে নীলয় আর আমার ব্রেকাপ হতো না। মাঝে মাঝে মনে হয় ঘুমের মধ্যেই বুড়ির গলাটা টিপে দেই।
তানিয়া ইশাপুর কথায় সহমত পোষণ করে বললো,,,হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছিস! মাঝে মাঝে আমারো মনে হয় বুড়িকে কিছু একটা খাইয়ে মেরে ফেলি। সালি বছরে পাচ ছয় বার মেয়ের বাড়ি বেরাতে আসে আর আমাদের নাকে দম করে রাখে! দুনিয়াতে এতো বুড়ো মানুষ মরে এ যে কেনো মরে না বুঝি না। সুচরিতা চল একটা কাজ করি বুড়িকে আম খাইয়ে মেরে ফেলি! আমের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিব।
তানিয়ার কথাশুনে কান্না বাদ দিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম,,,ও কথাগুলো আমাকে হাসানোর জন্যই বলেছে। ইশাপু আমার হাত ধরে বললো,,,হয়েছে অনেক কান্না করেছিস। আর কান্না করতে হবে না। কাল সকাল সকাল কমেটি সেন্টারে যেতে হবে ওখানেই নাকি হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। ছেলেপক্ষরাও নাকি ওখানেই হলুদ করবে।
আমি আমার বোনদের সাথে বেশিক্ষন রাগ হয়ে থাকতে পারলাম না। বোনদের সাথে সব জামেলা মিটিয়ে রুমে চলে গেলাম। কিন্তু নানি ছাড়বার পাত্র নয়। তিন বোনকে দিয়ে সারারাত সুপারি কাটিয়েছে। অবশ্য আম্মাও কম শুনাইনি আমাদের।
ইশা- বুড়িটা এতো গুলো সুপারি দিয়ে কি করবে,,আর আমার বিয়েতেই আমাকে দিয়ে কাজ করাছে,,বুড়িটার কমনসেন্স বলতে কিছুই নেই।
-বিয়ে বাড়িতে পান সুপারি রাখার একটা নিয়ম আছে তাই হয়তো লাগবে। তানিয়া মুখ ফসকে একবার বলেই ফেললো,,,মনটা চাচ্ছে এই যাতার মধ্যে বুড়ির কল্লাটা রেখে দেই এক যাতা।
,
,
,
সাদিক,,,সাদিক,,,সাদিক,,দরজা খোলো।
মায়ের কন্ঠ পেয়ে সাদিক দরজা খুলে দিলো।
-এভাবে সারাদিন দরজা বন্ধ করে বসে থাকলে হয় নাকি। যা গুছিয়ে নে আমরা সাওনের বিয়েতে যাবো।
-মা আমি কতোবার বলেছি আমি একা থাকতে চাই। আমি কোথাও যেতে চাই না।
-অনেক হয়েছে সাদিক! আর কতদিন তুই নিজেকে এভাবে ঘর বন্ধি করে রাখবি। তোকে এভাবে দেখলে আমার কস্ট হয় তুই বুঝিস না।
– মা চলে যাও,,,
– কেনো? আমি কেনো যাবো? তুই কেনো নিজেকে এতো কস্ট দিছিস সাদিক,,ওই ঘটনার তিন বছর পার হয়ে গেছে।
মায়ের মুখে আবার সেই সৃতির কথা শুনে বুকের বা পাশটা মোচর দিয়ে উঠলো,,,,
– চলে যাও তোমরা। আমাকে একা থাকতে দেও,,,অনেকটা ধমকের সূরে কথাটা বলে মায়ের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলাম।
মা নিশ্চয়ই কস্ট পেয়েছে। ঠিকি তো কোন মাই বা তার ছেলেকে এভাবে বেচে থেকেও মরার মতো দেখলে সুখে থাকে। মা ওইদিনের পর থেকে এই বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনি। কিন্তু আজ বললো। আর আজি আমি মাকে এভাবে কস্ট দিলাম। না এভাবে বেচে থাকা যায় না। আমাকে বাচতে হবে,,আমার মায়ের জন্য। আমার ভাইয়ের জন্য। আমার পরিবারের জন্য।
রুম থেকে বের হয়ে মায়ের সামনে যেয়ে দাঁড়াই। মা আর রাফি অনেকটা অবাক হয়েছে। এই তিন বছরে রুম থেকে বের হইনি। মা আর রাফি অনেক চেস্টা করেছে। কিন্তু আজ আমার পুরোনো সব সৃতির গন্ডি পেরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। নতুন করে বাচবো বলে। মা আর রাফি অনেক খুশি হয়।
,
,
কাজ শেষ করতে করতে প্রায় সকাল পাচটা বেজে যায়। আটটা বাজতে না বাজতেই নানির চেচামেচি আরাম্ভ হয়। এমন মনে হলো এখনি চোখের পাতাটা বন্ধ করলাম আর নানির চেচামেচি শুরু হলো।
সবাই রেডি হয়ে দিলাম দৌড় কমিটি সেন্টারে। তারাহুরোয় শাড়ির কুচিটা ভালো করে ঠিক করা হয়নি। বার বার পায়ে বাজছে। ইশাপুকে নাকি পার্লার থেকে সাজিয়ে আনবে। বর পক্ষের মানুষরা নাকি একটু পর আসবে। তাই নানি সবাইকে কাজের উপর রেখেছে। তানিয়া একটা চেয়ারে বসে মেকাপ করছে। হঠাৎ নানি এসে উনার লাঠি দিয়ে তানিয়াকে একটা গুতো মেরে বললো,,আর কতো সাজবি ডেমনি,,এতো সাজলে ইশার আগে তোকেই বিয়ে দিতে হবে।
তানিয়া নানির কথায় ভেংচি কেটে বললো,,,যাও না বুড়ি নিজের কাজ করো,,সাজগুজ সম্পর্কে তুমি কি জানবে। কথাটা শুনে নানি ভিষণ রেগে যায়। আর তানিয়ার হাত থেকে ওর মেকাপের সব জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।
-ঠিক হচ্ছে না বুড়ি ভালোয় ভালোয় আমার মেকাপের জিনিসপত্র দিয়ে দেও। নানি তানিয়াকে না দিয়ে নিজেই ওসব নিয়ে সাজতে বসে গেলো। তোমাকে আমি দেখে নিব কথাটা বলে তানিয়া রেগে গরগর করতে করতে চলে গেলো।
,
,
আজ সাওনের হলুদ। সাওন আমার মামাতো ভাই। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। ওরা কি একজন খুনিকে ওদের অনুষ্ঠানে দেখে খুশি হবে? হলুদের লোকেশনে পৌছে একটা খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। মা আমাকে ডাকছে,,মাকে বললাম কিছুক্ষন পর আসবো। অনেক দিন পর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আকাশটা দেখতে খুব সুন্দর লাগলে। হঠাৎ রিয়ার কথা মনে পরলো,, আমি আকাশের পানে তাকালে রিয়া ওর হাত দিয়ে আমার চোখ দুটো আড়াল করে বলতো,,তুমি আকাশ না শুধু আমাকে দেখবে। রিয়ার হাতে হাত রেখে কত যে আকাশ দেখেছি।
,
,
-দেখ তানিয়া এমন করিস না,,,নানি একবার জানতে পারলে আমাদের মেরে ফেলবে। কথাটা বলেই তানিয়ার হাত থেকে নানির পানের বাটিটা কেরে নিলাম।
– এই সুচরিতা তুই এতো ভয় পাস কেনো রে? কাল বুড়ি আমাদের যা খাটিয়েছে,,বুড়িকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।
-তাই বলে পানের বাটিতে গান্ধিপোকা রাখবি। এমনিতেই নানি আমার উপর অনেক রেগে আছে। আবার এই অনুষ্ঠানে কিছু ঘটলে নানি সবার আগে আমাকে ধরবে। দোহাই লাগে এমন করিস না।
তানিয়া আমার হাত থেকে পানের বাটিটা কেড়ে নিতে এলে আমি বাটিটা নিয়ে দেই এক দৌড়। তানিয়া আমার সাথে দৌড়ে পারছে না। ব্যাপারটা আমার কাছে মজার লাগলো। তাই জোরে জোরে হেসে বললাম,,ভুলে যাস না আমি তোর বড়। পারলে আমাকে ধরে দেখা,,কথাটা বলে আবার দৌড় লাগাই ,,,
দৌড়োতে দৌড়োতে হঠাৎ মনে হলো একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। চোখ মেলে দেখি এ কোনো খাম্বা নয় জলজেন্ত একজন মানুষ। তাও আবার আমার উপর পরেছে। মায়াবি দুটো চোখ দিয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছিলো না। আমিও ছেলেটার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ছেলেটা আমার উপর থেকে উঠে গেলো। ভাবলাম আমাকে সরি বলে উঠতে সাহায্য করবে। আমার ধারনা ভুল প্রমান করে ছেলেটা নিজেই দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করতে ব্যস্ত হয়েগেলো।
রিয়ার কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাৎ একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। খিলখিল করে একটা মেয়ে হাসছিলো। ক্রমশ আওয়াজটা বারতে থাকে,,দৌড়ে মেয়েটা আমার পাশ কাটিয়ে যেতে নিয়েছিলো কিন্তু দূরভাগ্যবশত মেয়েটার সাথে আমার ধাক্কা লাগে,,,এক মূহুর্তের জন্য ভেবেছিলাম হয়তো মেয়েটা আমার সাইডে পরবে কিন্তু মেয়েটা আমাকে নিয়েই ধপাস করে পরলো।
-আজব মানুষ তো আপনি। একটা মানুষ পড়ে গেছে তাকে একটু সাহায্যও করলেন না।
আমি মেয়েটার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মেয়েটাকে ক্রোস করে চলে আসলাম।
-আরেএএ আসলেই তো এ ব্যক্তি দেখি একটা আহামক। উনার জন্য পড়ে গেলাম আর মানুষটা একবার সরি পর্যন্ত বললো না। বিরবির করে কথাগুলো বলছিলাম হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি নানির পানের বাটির বারোটা বেজে গেছে। আয় হায় আমি শেষ। আজ আমাকে শুলে চরানো হবে। ভাবতে না ভাবতেই নানি এসে হাজির।
-ওরে মুখপুরি আমার পানের বাটি ফেলেছিস কেনো? কথাটা বলেই নানি তার লাঠিটা হাতে নেয়।
-বিশ্বাস করো নানি আমি কিছু করি নি।
-তুই কিছু করিসনি তাহলে পানের বাটি কি আপনা আপনি গোড়াগুড়ি খাচ্ছে মাটিতে?
কথাটা বলে নানি আমার দিকে তেরে আসলে তানিয়া কোথা থেকে ছো মেরে এসে বললো,,,
-এই বুড়ি তুমি আমার বোনকে বকছো কেনো?
-তোর বোন কি করেছে চোখে দেখছিস না। কথাটা বলেই নানি লাঠি দিয়ে তানিয়াকে পেটানো শুরু করে দেয়।
– উফফ উফফ বুড়ি আমাকে মারছো কেনো? আমি কি করলাম,,আমাকে ছেরে দেও,,,তানিয়া আমাকে সামনে ধাক্কা দিয়ে বললো নেও তুমি সুচরিতাকে মারো।
কথাটা বলেই তানিয়া চলে যেতে নিলে নানি তানিয়ার চুলের মুঠি ধরে বলে তোকে আমি চিনি রে চুন্নি। তুই যে ওদের মাথা তা আমি ভালো করেই জানি।
কথাটা বলে নানি আবার মারা শুরু করে। আমি বেচে যাই,,এক কোনায় দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে তানিয়ার মার খাওয়া দেখছি,,তানিয়া আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর বলছে,,দেখেছিস বলেছিলাম বুড়িকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলি,,কাল মরলে আজ এতো মার খেতে হতো না।
সব হয়েছে ওই ছেলেটার জন্য একবার দেখা পাই ওই ছেলের তারপর বোঝাবো মজা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here