শেষের পাতায় তুমি?
পর্ব-০৭
writer_Shanta_islam
-আপনি তো আস্তো একটা বেয়াদপ মেয়ে,,একে তো আমার উপর এসে পড়েছেন তার উপর আবার চোখ মারছেন,,
উনাকে এভাবে বিরক্ত করতে ভালোই লাগছে,,আমি কিছু না জানার ভান করে বললাম,,,আপনি নিজেই তো আমার উপর পরে আছেন উঠছেন ও না আবার আমাকেই দোষ দিচ্ছেন। কথাটা বলা মাত্রই উনি উঠে যেতে নিলে পায়ে পা লেগে আবার আমার উপর এসে পরে। আমি অট্টোহেসে বললাম,,এবার বলেন কার দোষ। হঠাৎ সাদিক থেমে গেলেন। নিজেকে না সরিয়ে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,উনার চাহুনি দেখে কিছুটা লজ্জায় পরে গেলাম। সাদিক আমার সামনের ছোট ছোট চুলগুলো কানে গুজে দিলো। না এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে আমি একটা চিমটি কেটে বললাম,,,কি আমার প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি? কথাটা বলা মাত্রই মনে হলো সাদিকের মুখ কালোমেঘে ডেকে গেছে। সাদিক তারাহুরো করে আমার উপর থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কি হলো? সাদিক কি আমার দুষ্টুমিতে রাগ হয়েছে! হয়তো রাগ হয়েছে।
,
,
সুচরিতার হাসিটা দেখে কি যে হলো আমার। আমি ওর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছিলাম না। না না এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। ওকে সত্যিটা বলতে হবে। ওর সত্যিটা জানার অধিকার আছে। না চাইলেও ও এখন আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। এভাবে অন্ধকারে রেখে আমি ওকে ঠকাতে পারবো না।
,
,
সাদিক সেই যে কখন বাসা থেকে বের হয়েছে এখনো আসেনি। আমার শাশুড়ী দুকাপ চা নিয়ে রুমে আসলো। আমি উনাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম।
-দাড়াতে হবে না মা। আমাকে তোমার মায়ের মতোই ভাবতে পারো।
আমি উনার কথায় শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মোধন দিলাম,,কিন্তু নিজের মার মতো কি অন্যের মাকে এতো সহজে আপন ভাবা যায়। আমার এখনো মনে আছে ছোট বেলায় যখন মা রাগ করতো তখন বাবার কারণে আমাদের মারতে না পেরে মা জিনিসপত্রের উপর রাগ ঝারতো। আর যখন মার সাথে কথা বলতে যেতাম মা বলতো,,তোদের মা মরে গেছে,,আমি তোদের মা না,,আমাকে মা ডাকবি না। তখন আমিও মজা করে বলতাম,, আচ্ছা আন্টি রাগ কইরেন না। এ কথা শুনে মা আরো রেগে যেতো,,বিয়ের পর সব কিছুই বদলে যায় এমনকি বাবা মা পর্যন্ত। কিন্তু সব কি সহজে মানিয়ে নেওয়া যায়?
আমার শাশুড়ী আমার হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে বললো,,,আমাদের তেমন একটা কথা হয়নি। ভাবলাম কথা বলে আগে দুজন একটু ফ্রি হই,,আমার কোনো মেয়ে নেই,, দুই ছেলে,,তুমি এসে আমার মেয়ের কমতি পূরন করে দিয়েছো। আমি তোমাকে শুধু আমার বউ হিসেবে নয় মেয়ে হিসেবে চাই।
উনার কথা শুনে খুব ভালো লাগছে। মানটা হালকা লাগছে। একটু আগ মুহুর্ত পর্যন্ত উনার সাথে কথা বলতে ইতস্তবোধ হচ্ছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ফ্রিলি কথা বলতে পারবো।
উনি সাদিককে নিচে ঘুমোতে দেখেছেন,,না জানি আমার ব্যাপারে কি ভাবছেন তাই সকালের কথাটা আগে ক্লিয়ার করাই ভালো,,উনি চায়ের কাপে চুমুক দিলো। আমিও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চা টা রেখে
বললাম,,আসলে আজ সকালে যখন আপনি ডাকতে এসেছিলেন,,,কথাটা পুরো বলার আগেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,আমি সব জানি। এটাও জানি যে সাদিক আর তোমার বিয়েটাও ঘটনাচক্রে হয়েছে। কেও বিশ্বাস না করলেও আমি বিশ্বাস করি।
উনি যদি আগে থেকেই জানেন যে সাদিক আর আমার মধ্যে কিছু ছিলো না এক্সিডেন্টলি ওই ঘটনাটা ঘটেছিলো তাহলে বিয়ের আগে কিছু বলেননি কেনো?
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,,,,আপনি যদি সব জেনেই থাকেন তাহলে বিয়েটা থামাননি কেনো? বিয়েতে সম্মোতিই বা দিলেন কেনো?
উনি এক দীর্ঘশ্বাস ছেরে বললো,,শুধু সাদিকের জন্য। সাদিক যদি তোমার সাথে নতুন জীবন শুরু করতে পারে সেই আশায়। মা হয়ে ওকে এভাবে ধাপে ধাপে মরতে দেখতে পারবোনা।
উনার কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারছি না কিন্তু উনার চেহারায় স্পষ্ট হতাসা দেখতে পারছি হয়তো কিছু একটা আছে,,যেটা উনি আমাকে বলতে চাইছে। আমি উনার হাতে হাত রেখে বললাম,,,আপনি আমাকে নিজের মেয়ের দরজা দিয়েছেন,, নিজেই বলেছেন ফ্রিলি কথা বলতে,,,কি হয়েছে আমাকে বলুন মা।
উনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,এখন তুমিই শুধু পারো আমার সাদিককে বাচাতে। আমার সাদিক প্রতিদিন মরছে,, ওর বাচার আশাস দেখতে পারছি না। আর ওর এই অবস্থার কারণ একটাই ওর প্রাক্তন।
-সাদিকের প্রাক্তন?
-হ্যা সাদিকের প্রাক্তন,,,
শুনে অনেকটা অবাক হলাম,,সাদিকের কোনো প্রাক্তন ছিলো। যে ছেলে সব সময় চুপসে থাকে,, মেয়েদের থেকে দূরে থাকে,,এমন কি সবার সাথে বেশি একটা কথাও বলে না,,সে ছেলে যে এককালে প্রেম করেছিলো বা তারও যে একটা প্রাক্তন আছে কথাটা বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছে। আমি আগ্রহ নিয়ে উনার কথা শুনতে লাগলাম।
– সাদিকের প্রাক্তনের নাম ছিলো রিয়া। কলেজ লাইফ থেকে সাদিক আর রিয়ার সম্পর্ক ছিলো। রিয়া সাদিকের জীবনের প্রথম প্রেম ছিলো। শুরুর দিকে ভালো গেলেও হঠাৎ একদিন রিয়া সাদিকের সাথে ব্রেকাপের কথা বলে কারণটা অবশ্য আমি জানি না। কিন্তু সাদিক রিয়াকে খুব ভালোবাসতো,,,সাদিক কোনো মতেই রিয়াকে ছারতে রাজি ছিলো না। তখন থেকেই সাদিক চিন্তিত থাকতো,,হঠাৎ একদিন সাদিক রিয়াকে কিডনাপ করে। আর তার পরের দিনিই রিয়ার লাশ পাওয়া যায় পাশের ব্রিজ থেকে। পুলিশ তদন্ত করে বের করে রিয়া সুইসাইড করেছিলো। কিন্তু সেদিনের পর থেকে সাদিক নিজেকে দোষারোপ করে যে ওর জন্যই নাকি রিয়া মারা গেছে,,, আমি ওর মা,,আমি ওকে চিনি সাদিক কখনো কারো ক্ষতি করতে পারে না। জানি না সেদিন রাতে এমন কি হয়েছিলো যার জন্য রিয়া সুইসাইড করেছে কিন্তু সাদিককে যতবারি সেদিনের কথা জিজ্ঞেস করেছি সাদিক কিছু বলতে পারেনি। এর জন্য ওকে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ও নিজেকে দোষারোপ করতে করতে মানুষিক ভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। ওই দূর্ঘটনা থেকে ও এখনো বের হতে পারে নি। সাদিক নিজ থেকে কখনোই বিয়ে করতে চাইতো না। তাই তোমার সাথে সাদিকের বিয়েটা আমি মেনে নেই। যাতে সব কিছু ভুলে অন্য কারো হাত ধরে আমার ছেলেটা বাচতে শিখে। এই তিন বছরে সাদিক রিয়ার কবর ছাড়া আর কোথাও যায়নি। এমনো দিন গেছে সাদিক রিয়ার কবরের পাশেই রাত কাটিয়েছে।
আমি সবকিছু শুনে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। একজন মানুষ এতোটা ভালোবাসে কীভাবে যার জন্য নিজেকে গুটিয়েই সারাটা জীবন পার করতে চায়। আমি উনার হাত ধরে বললাম,,,চিন্তা করবেন না মা,,আমি সাদিকের সাথে আছি। যেভাবেই হোক আমি ওকে ওই পরিস্থিতি থেকে বের করবো। নতুন করে বাচতে শিখাবো।
সাদিকের মা কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,সেদিনের অপেক্ষা আছি মা।
,
,
রাত বারোটার বেশি বাজে সাদিক এখনো ফিরেনি। খুব টেনশন হচ্ছে। সাদিকের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভাঙে,,ঘরিতে তাকিয়ে দেখি রাত দুটো বাজে,,সাদিক এসেছে! সাদিককে দেখে আমি সোয়া থেকে ওর কাছে দৌড়ে গেলাম,,,সাদিক আমাকে ইগনোর করে ওয়াসরুমে যেতে চাইলে আমি সাদিকের পথ আটকে দাড়াই।
সাদিক-আজ সকালের জন্য দুখিত,,আসলে আমি ওমনটা করতে চাইনি,,,
আমি একটু রাগী গলায় বললাম,,,আমি কী সকালের কথা বলেছি?
-তাহলে কি অন্য কিছু বলবেন?
-হ্যা বলবো তার আগে আপনি না তুমি,,তুমি করে বলবে বুঝেছো!
-আপনি এভাবে রিয়েক্ট করছেন কেনো? সরুন আমি ওয়াসরুমে যাবো। কথাটা বলতে না বলতেই মেয়েটা রেগে আমার কলার চেপে ধরে,,
– আরে কি করছেন কি?
-আপনি না তুমি ওকে,,,
– আচ্ছা ঠিকাছে তুমি,,ছারো আমার কলার ছারো,,
-ছারবো না আগে বলো সারাদিন কোথায় ছিলে? ঘরে যে তোমার একটা বউ আছে সেটা কী ভুলে গেছো?
চলবে,,,,